চিড়িয়াখানায় দর্শকদের মনোরঞ্জন ঘটলেও প্রাণীদের জন্য এমন কৃত্রিম পরিবেশ কতটা উপযুক্ত? সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের চিড়িয়াখানায় হাতিদের জন্য এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহায়ক৷
বিজ্ঞাপন
এলিফ্যান্ট বুল বা এই ষাঁড় হাতির নাম মাক্সি৷ খাবারের সন্ধানে তাকে রোজ বেরোতে হয়৷ এর মধ্যে সে ৪০০ কিলোগ্রাম ওজন কমিয়ে ফেলেছে৷ কারণ, বছর দুয়েক ধরে জুরিখ শহরের চিড়িয়াখানায় কিছু রদবদল চলছে৷ হাতিদের ডেরা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, খাবারের নাগাল পেতে হাতিদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে৷ দিনে তাদের প্রায় ২০০ কিলোগ্রাম খোরাকের প্রয়োজন পড়ে৷ আর্টুর কেল হাতিদের দেখাশোনা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আগে দিনে প্রধানত একবার খেতে দেওয়া হতো৷ আর এখন ২৪ ঘণ্টায় বেশ কয়েকবার খোরাক দেওয়া হয়৷ পাইপ, বলসহ নানা জায়গায় সেই খাদ্য রাখা থাকে৷ তাদের সেসব বের করে নিতে হয়৷ এমন পরিশ্রম তাদের জন্য ভালো৷ তাতে ওজনও কমে, পা'গুলি ঠিকমতো কাজে লাগে৷ এটা একটা বিশাল সুবিধা৷’’
হাতির পিঠে না চড়াই ভালো
একটি আন্তর্জাতিক পশু অধিকার সংস্থা বলছে, পর্যটকরা যে নানা দেশে হাতির পিঠে চড়ে আনন্দ করেন, তার মাধ্যমে আসলে প্রকারান্তরে হাতিদের ওপর ভয়ংকর নিপীড়নকেই উৎসাহিত করা হয়৷ তাই সবাইকে হাতির পিঠে চড়তে নিরুৎসাহিত করেছেন তারা৷
ছবি: Jennifer Pastorini/Centre for Conservation and Research Sri Lanka
হাতিদের নিয়তি
লন্ডনভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড অ্যানিমেল প্রোটেকশন’ (ডাব্লিউএপি) এশিয়ার কয়েকটি দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে হাতিদের কাজ করতে বাধ্য করার প্রমাণ পেয়েছে৷ তাদের এক সমীক্ষার তথ্য প্রকাশ করে ডাব্লিউএপি জানিয়েছে, এশিয়ার অনেক দেশে, বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় কিছু স্থানে প্রতি চারটি হাতির মধ্যে তিনটিকেই নির্যাতন করে নানা ধরনের কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷
ছবি: Picture alliance/dpaepa/H. H. Young
দুঃসহ যন্ত্রণা
ডাব্লিউএপি জানাচ্ছে, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতে বুনো হাতিদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়৷ মূলত নির্যাতন করেই বশ করা হয় তাদের৷ এশিয়ায় হাতি কমছে৷ তবে এখনো এ অঞ্চলে ৫০ হাজারের মতো হাতি আছে বলে জানিয়েছে ডাব্লিউএপি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
হাতিশিশু নির্যাতন
বশ করার কাজটা সাধারণত শুরু করা হয় হাতিদের একেবারে শৈশব থেকে৷ শিশু হাতিকে প্রথমে মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়৷ কয়েক সপ্তাহ বন্দি রাখা হয় তাকে৷ বন্দিদশায় অনেক ধরনের নির্যাতনও সইতে হয় হাতিশিশুকে৷ সার্কাস বা অন্য কাজের জন্য ভবিষ্যতে যা যা তাকে করতে হবে, সেগুলো রপ্ত করতে দেরি হলে পিটুনি তো চলেই, কোথাও কোথাও নাকি ছুরিও চালানো হয় শিশুদেহে৷
থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের মোট ২২০টি পর্যটন কেন্দ্রের তিন হাজার হাতির অবস্থা দেখে ডাব্লিউএপি জানিয়েছে, হাতিগুলোকে অনেকক্ষেত্রে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়৷ খুব কম ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত এবং উপযুক্ত খাবার দেয়া হয় বলে অপুষ্টিতেও ভোগে হাতিরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. S. Peifer
কালোবাজারে হাতি
মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বেশ কিছু ওয়াইল্ড লাইফ টুরিজম সেন্টারে গিয়েও হাতিদের দুরবস্থা দেখেছে ডাব্লিউএপি৷ দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের হাতি সংরক্ষন কর্মসূচির ফাঁক গলে কালো বাজারে হাতি ক্রয়-বিক্রয়ও চলছে দেদার৷ মানুষের হাতির পিঠে চড়ার শখের শিকার করতে থাইল্যান্ডে একটা বাচ্চা হাতি নাকি ২৫ হাজার ডলারেও বিক্রি করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Kochetkov
হাতি শুধুই আয়ের উৎস
থাইল্যান্ডে পোষা হাতি আছে ৪ হাজারের মতো৷ প্রায় সব হাতিই পর্যটকদের বিনোদনে নিয়োজিত৷ এর বাইরে প্রায় আড়াই হাজার বুনো হাতিকেও মানুষের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে৷ এশিয়ার আরেক দেশ মিয়ানমারেও বিপুল সংখ্যক হাতিকে ‘কর্মজীবী’ হতে বাধ্য করা হয়৷ সে দেশে সরকারি হিসেবেই ২৮৫০টি হাতি বনাঞ্চলে গাছ বহন করে জীবিকা নির্বাহ করে৷
ছবি: Jennifer Pastorini/Centre for Conservation and Research Sri Lanka
পর্যটনই শত্রু?
এশিয়ার হাতিদের সবচেয়ে বেশি দুর্দশা পর্যটন শিল্পে৷ থাইল্যান্ড সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সে দেশে পর্যটকদের শতকরা অন্তত ৪০ ভাগই নাকি হাতির পিঠে চড়তে না পারলে ভ্রমণসুখ যথার্থ হয়েছে বলে মনে করেন না৷ হাতিনিপীড়ন কমাতে পর্যটকদের তাই হাতির পিঠে চড়তে নিরুৎসাহিত করছে ডাব্লিউএপি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
7 ছবি1 | 7
তবে এই আয়োজনের জন্যও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়৷ দেখতে লুকোচুরি খেলার মতো মনে হলেও এর পেছনে দক্ষ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ রয়েছে৷ আর্টুর কেল ও তাঁর সহকর্মীরা প্রতিদিন হাতির ডেরায় ৪০টিরও বেশি আধারে খাদ্য ভরেন৷ হাতিদের জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ বটে৷
রোব্যার্ট সিং-এর জন্য হাতিদের সুষ্ঠু প্রতিপালনের ক্ষেত্রে খোরাক একটি অংশ মাত্র৷ তিনি নতুন এই ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন এবং চিড়িয়াখানায় যে পশুদের উপযুক্ত প্রতিপালন সম্ভব, তিনি সে কথা বিশ্বাস করেন৷ রোব্যার্ট বলেন, ‘‘হাতিরা আসলে তাদের প্রজাতির দূত৷ মুক্ত প্রকৃতিতে যেসব প্রাণী থাকে, হাতিরা তাদেরই প্রতিনিধি৷ আমরা সেইসব প্রাণীর জন্য কাজ করছি৷ হাতিরা শুধু চিড়িয়াখানায় টিকে থাকবে, এমনটা হতে পারে না৷ তারা মুক্ত প্রকৃতির প্রাণীদের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের বার্তা বহন করবে এবং তাদের সুরক্ষায় অবদান রাখবে৷’’
জুরিখ শহরের চিড়িয়াখানায় প্রায় ১১,০০০ বর্গমিটার বিশাল এলাকায় ৮টি হাতি রয়েছে৷ এভাবে তাদের মৌলিক সামাজিক আচরণ বজায় রাখার চেষ্টা চলছে৷ বিশেষ করে শাবকদের হাতির পালের সঙ্গে গভীর সম্পর্কের প্রয়োজন৷ তবে সব হাতি বাকিদের বরদাস্ত করতে পারে না৷ সে কারণে হাতিরা প্রায়ই দল বদলায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট অংশে বিচরণ করে৷
আফ্রিকার হাতিদের জন্য চীন থেকে সুখবর
গত তিন বছরে হাতির দাঁতের দাম কমেছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ৷ ‘সেভ দ্য এলিফ্যান্ট’ সংস্থা চীনে জরিপ করে এই তথ্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: AP
দাম পড়ল
২০১৪ সালে হাতির দাঁতের দাম উঠেছিল চরমে৷ তখন চীনের কালোবাজারে গজদন্তের দাম উঠেছিল কিলো প্রতি ২,১০০ ডলারে৷ কিন্তু ২০১৭ সালের সূচনায় সেই দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৭৩০ ডলারে৷
ছবি: Anup Shah
চাহিদা কমছে
হাতির দাঁতের ব্যবসার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা দুনিয়ায় হাতির দাঁতের সবচেয়ে বড় গ্রাহক দেশ চীনে হাতির দাঁতের চাহিদা কমছে, যার ফলে হাতির দাঁতের দাম কমছে৷ তবুও হাতির চোরাশিকার বন্ধ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/W. Hong
বলি
চীনে হাতির দাঁতের বিপুল চাহিদার কারণে গত এক দশকের মধ্যে আফ্রিকায় হাতির সংখ্যা ১,১০,০০০ কমে ৪,১৫,০০০-এ দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Okapia
চাহিদা কমার কারণ
চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস এবং সেই সঙ্গে সরকারের দুর্নীতি রোধ কর্মসূচি হাতির দাঁতের চাহিদা কমার জন্য দায়ী, বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান৷ বিশেষ করে যখন সরকারি কর্মচারীদের ঘুস হিসেবে হাতির দাঁতের জিনিসপত্র দেওয়া আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hofford
সচেতনতা বেড়েছে
জনসাধারণের মধ্যে বর্ধিত সচেতনতাও হাতির দাঁতের চাহিদা কমার একটা কারণ হতে পারে৷ সাধারণ মানুষ বুঝতে শুরু করেছে যে, হাতির দাঁতের ব্যবসা চলতে থাকলে, হাতিদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে৷
ছবি: Getty Images
হস্তি নড়ান হস্তিরে চড়ান...
‘সেভ দ্য এলিফ্যান্ট’ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ইয়ান ডগলাস-হ্যামিল্টনের মতে, হাতির দাঁতের সামগ্রীর সঙ্গে হাতির অস্তিত্বের সংকটের যোগসূত্রটি চীনের মানুষের অজ্ঞাত ছিল না, কিন্তু এখন ক্রমেই আরো বেশি মানুষ তার গুরুত্ব উপলব্ধি করছেন৷
ছবি: Getty Images
কারখানা বন্ধ
হাতির দাঁতের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লাইসেন্স-প্রাপ্ত ৩৪টি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে চীন৷ ২০১৭ সালের মার্চ মাসে এই আজ্ঞা বলবৎ হয়৷ এ বছর শেষ হওয়ার আগে হাতির দাঁতের সামগ্রী বিক্রির বিপণীগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হবে৷
ছবি: Imago/Gong Bing
বেআইনি ব্যবসা
এখন প্রশ্ন হলো, হাতির দাঁত নিয়ে অবৈধ ব্যবসা কিভাবে রোখা যায়, কেননা, তা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে চোরাশিকার পুরোপুরি বন্ধ করার কোনো উপায় নেই৷
ছবি: AP Photo/Courtesy Karl Amman
নিষেধাজ্ঞা
হাতির দাঁতের আন্তর্জাতিক ব্যবসা ১৯৮৯ সালে নিষিদ্ধ করা হয়৷ কিন্তু কালোবাজারে হাতির দাঁত কেনা-বেচা যতদিন চলবে, ততদিন হাতির চোরাশিকার বন্ধ হবে না, কেননা, অপরাধী আর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তারা হাতির দাঁতের চোরাচালান থেকে বিপুল মুনাফা করে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images GmbH
অগ্নিতে আহুতি
২০১৬ সালে কেনিয়া সরকার কোটি কোটি ডলার মূল্যের হাতির দাঁত জনসমক্ষে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেন৷ উদ্দেশ্য ছিল, সর্বসাধারণের কাছে জ্ঞাপন করা যে, কেনিয়া সরকার হাতির দাঁত নিয়ে ব্যবসা করার বিরোধী৷ মালাউয়িতেও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. de Souza
দূর অস্ত
‘সেভ দ্য এলিফ্যান্ট’ সংগঠনের ইয়ান ডগলাস-হ্যামিল্টনের মতে, চীনে যে হাতির দাঁতের চাহিদা কমেছে, সেটা খুব ভালো খবর৷ কিন্তু হাতিদের বাঁচানোর জন্য তা পর্যাপ্ত নয়, কেননা, চীনে যখন চাহিদা কমছে, ঠিক তখনই লাওস, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামে হাতির দাঁতের চাহিদা বাড়ছে৷
ছবি: AP
11 ছবি1 | 11
জুরিখ চিড়িয়াখানার হাতিদের ডেরা ইউরোপের সবচেয়ে আধুনিক ব্যবস্থা৷ কিন্তু সেখানে কি হাতিদের সত্যি সুষ্ঠু প্রতিপালন হচ্ছে? বিখ্যাত হাতি-গবেষক আঙ্গেলা স্ট্যোগার-হোরভাট-কে তার মূল্যায়ন করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘মুক্ত পরিবেশে হাতিরা অনেক সময় খাবার সংগ্রহ ও খাবারের জন্য সময় ব্যয় করে৷ চিড়িয়াখানায় সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারলে তো ভালোই৷ কারণ, এভাবে তাদের ব্যস্ত রাখা যায়৷’’
দলবদ্ধ এই প্রাণীদের জন্য চিড়িয়াখানায় কি সত্যি যথেষ্ট জায়গা রয়েছে? কারণ, মুক্ত পরিবেশে হাতিরা দিনে কয়েক কিলোমিটার অতিক্রম করে থাকে৷ ড. স্ট্যোগার-হোরভাট বলেন, ‘‘মজ্জাগতভাবে তারা অনেক দূর চলে যায় বটে, কিন্তু খাদ্য ও পানির খোঁজেই তাদের সেটা করতে হয়৷ তাছাড়া ঋতু অনুযায়ী তারা আলাদা জায়গায় খাদ্য ও পানি খুঁজে পায়৷ শুষ্ক বা বর্ষার সময় তাদের গন্তব্য বদলে যায়৷’’
জুরিখ চিড়িয়াখানায় কোনো কিছুর অভাব নেই৷ তেষ্টা পেলে হাতিদের বেশি সময় ধরে পানি খুঁজতে হয় না৷ চারিদিকে জলপ্রপাত ও পুকুর রয়েছে৷ দর্শকদের কাছে সে সবের আকর্ষণ কম নয়৷ হাতিদের জন্য পানির উৎস অত্যন্ত জরুরি৷ ত্বকের যত্ন নিতে সম্ভব হলে সপরিবারেও স্নান করে তারা৷ শুধু দর্শকদের মনোরঞ্জন নয়, তাদের সুস্থ সামাজিক আচরণের জন্যও এটা প্রয়োজন৷
মোনিকা কোভাকসিক্স/এসবি
পশুজগতে ঘুমের অভ্যাস
মানুষ হিসেবে দিনে আমাদের ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন পড়ে৷ হাতি, তিমিসহ নানা প্রাণীর ঘুমের সময় ও কায়দা কিন্তু বেশ বিস্ময়কর৷
ছবি: picture-alliance/OKAPIA KG, Germany
হাতি ঘুমায় বড় কম
নতুন এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকার দুই মাদী হাতি দিনে মাত্র ২ ঘণ্টা ঘুমায়৷ কয়েকদিন তো তাদের একেবারেই ঘুমই হয়নি৷ ফলে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে কম ঘুমানোর ক্ষেত্রে তারাই রেকর্ড করেছে৷ গবেষকদের মতে, পরিবারের সুরক্ষার চিন্তায় হাতিদের ঘুম কম হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/T. Karumba
মাটিতে শুয়ে ছোট্ট ঘুম
হাতির মতো জিরাফও দিনেই ঝিমাতে ভালবাসে৷ দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ঘুমায় জিরাফরা৷ তবে মাটিতে শুয়ে মাত্র আধ ঘণ্টা ঘুম হয়৷ গবেষকদের মতে, মানুষের মতো তাদেরও ঘুমের মধ্যে ‘ব়্যাপিড আই মুভমেন্ট’ পর্যায় রয়েছে৷
ছবি: Florian Sicks
দাঁড়িয়ে ঘুমাতে ওস্তাদ
ঘোড়াদের দিনে সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টা ঘুমালেই চলে৷ তারাও দাঁড়িয়ে ঘুমাতে ভালোবাসে৷ তবে তার জন্য বেশি শক্তিক্ষয় হয় না৷ পায়ে শিরা ও ধমনীর এক জটিল কাঠামোর দৌলতে এভাবে ঘুমানোর সময় তাদের পেশি কাজে লাগাতে হয় না৷
ছবি: DPA
অন্য ধরনের আধা-ঘুম
ডলফিন বা শুশুক মস্তিষ্কের একটা অংশ ‘সুইচ অফ’ করে দেয়৷ এটা না করলে তাদের ডুবে মরতে হতো, কারণ, প্রতি ৫ মিনিট অন্তর তাদের তাজা বাতাস নিতে সমুদ্রপৃষ্ঠে যেতে হয়৷ ফুসফুসে জল যাতে না ঢোকে, সেই খেয়ালও রাখতে হয়৷ দু’ঘণ্টা পর মস্তিষ্কের অন্য অংশের ঘুমানোর পালা৷
ছবি: Pascal Kobeh
জলের নীচে আড়াআড়ি ঘুম
স্পার্ম হোয়েল গোত্রের তিমির ঘুমানোর ভঙ্গিকে গবেষকরা ‘ড্রিফট ডাইভিং’ নাম দিয়েছেন৷ ৩০ মিনিট পর্যন্ত তিমির দেহ নিথর হয়ে যায়৷ এখনো পর্যন্ত দিনে ৩ ঘণ্টা ঘুমের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ বাড়তি ঘুমের জন্য এই গোত্রের তিমিরা ডলফিনদের কায়দা কাজে লাগায়৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife
ঘুম যখন মৃত্যুর ফাঁদ
ব্লু শার্ক গোত্রের হাঙরকে মৃত্যু এড়াতে সর্বক্ষণ গতিশীল থাকতে হয়৷ কানকোর মধ্য দিয়ে জল না বয়ে গেলে তারা অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না৷ অর্থাৎ জলের মধ্যে স্থির হলেই মৃত্যু অনিবার্য৷ তাই সমুদ্রপৃষ্ঠে সাঁতার কাটতে কাটতে ঘুমের সময় তারা নীচে ডুব দেয়৷ এমনটা চলতেই থাকে৷ সমুদ্র-গবেষকরা এই প্রক্রিয়াকে ‘ইয়ো-ইয়ো ডাইভিং’ বলে থাকেন৷
ছবি: gemeinfrei
ঘুমকাতুরে বাদুড়
দিনে মাত্র ৪ ঘণ্টা জেগে থাকে বাদুড় – তাও দিনের বেলা নয়, শুধু রাতে শিকারের সময়৷ শরীরে রক্ত সঞ্চালনের বিশেষ কাঠামোর দৌলতে তারা মাথা নীচু করে ঝুলতে পারে৷
বন্দিদশায় আলস্য
মানুষের জিম্মায় থাকার সময় স্লথ নামের বানরের মতো দেখতে স্তন্যপায়ী প্রাণী দিনে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমায়৷ পরিবেশভেদে তাদের ঘুমের প্রবণতা বদলে যায়৷ জঙ্গলে থাকলে হামলা প্রতিহত করতে আর খাদ্য সংগ্রহে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়৷ তাই ঘুমের সময় কমে যায়৷
ছবি: Imago/imagebroker
ইউক্যালিপটাস ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়
কোয়ালা ভালুক দিনে প্রায় ৪০০ গ্রাম পাতা খায়৷ সেই পাতায় পুষ্টি বড় কম, সেইসঙ্গে রয়েছে টক্সিন৷ ফলে হজম করতে সময় লাগে৷ সেই সময়ে শক্তিক্ষয় কমাতে তারা দিনে প্রায় ২০ ঘণ্টা ঘুমায়৷