শারীরিক প্রতিবন্ধকতা অনেক মানুষকেই দমিয়ে রাখতে পারে না৷ একদিকে মনের জোর, অন্যদিকে প্রযুক্তির উন্নতি কাজে লাগিয়ে তাঁরা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখান৷ এমনই এক অ্যাথলিট-এর কাহিনি অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
খেলাধুলাই হাইনরিশ পপফ-এর ধ্যানজ্ঞান৷ ২৮ বছর বয়স্ক এই যুবক প্রতিবন্ধীদের অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় সেরা অ্যাথলিটদের একজন৷ ন'বছর বয়সে এক টিউমারের কারণে তাঁর বাঁ পায়ের একটা অংশ হারাতে হয়৷ ফলে বাধ্য হয়ে তাঁকে পেশাদারি ফুটবল খেলোয়াড় হবার স্বপ্ন ত্যাগ করতে হয়৷ পপফ বলেন, ‘‘অ্যাম্পুটেশনের পর হাসপাতালের জানালার বাইরে তাকিয়ে বাচ্চাদের ফুটবল খেলা দেখতে খুব কষ্ট হয়েছিল৷ বাইরে যেতে না পারার কষ্ট মনকে যতটা পীড়া দিত, কেমোথেরাপি ততটা কষ্টকর ছিল না৷ অঙ্গহানি মেনে নেবার এটাই ছিল প্রথম ধাপ৷ খেলার মাঠে আমার আর জায়গা নেই৷ এতে কার না মেজাজ খারাপ হয়! তখন হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়, যে আর খেলা যাবে না৷ দু'টো না একটা পা আছে, তাতে কিছুই এসে যায় না৷ তখন খেলার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেল৷ নিজের প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে পড়লাম৷''
গর্বিত প্রতিবন্ধীদের অন্যরকম শোভাযাত্রা
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে হয়ে গেল অন্যরকম এক প্যারেড বা শোভাযাত্রা৷ প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রথম এ শোভাযাত্রার নামই ছিল, ‘প্রতিবন্ধীদের গর্বের প্যারেড’৷ দেখুন তিন হাজারেরও বেশি মানুষের অংশ নেয়া সেই শোভাযাত্রার কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
কেউ হুইল চেয়ারে, কেউবা ওয়াকারে...
তাঁরা হাঁটতে পারেন না৷ তাই ম্যানহাটানের রাস্তায় প্রায় সবাই এসেছিলে হুইল চেয়ার বা ওয়াকারে৷ চাকা লাগানো চেয়ারে চড়ে এবং হাঁটার জন্য তৈরি যন্ত্রের সহায়তায় হাসিমুখেই প্যারেডে অংশ নিয়েছেন সবাই৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
‘আমি শক্তিশালী’
জেরার্ড মিলস নামের এই ভদ্রলোক সবার নজর কেড়েছিলেন সঙ্গের এই প্ল্যাকার্ডের কারণে৷ হুইল চেয়ারে বসে থাকলে কী হবে, প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে নিজেকে কিন্তু শক্তিশালী হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন মিলস, দুর্বল বা অক্ষম হিসেবে নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/S. Wenig
প্রধানত খুশি
১৪ বছর বয়সি এই মেয়েটি ‘ডাউন সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত৷ ওর নাম রক্সানে ফার্নান্দেজ৷ নিজেকে মোটেই প্রতিবন্ধী মনে করেনা সে৷ মায়ের দেয়া মুকুটটি মাথায় পরে এসে সে জানিয়েছে, ‘‘আমি প্রধানত খুশি৷’’ জীবনে দুঃখ-কষ্ট থাকেই৷ তারপরও খুশির সময় উপভোগ করতে হয়৷ খুশি থাকতে হয়৷ রক্সানের হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে ‘ডাউন সিনড্রোম’ তার খুশি একটুও কাড়তে পারেনি৷
ছবি: Getty Images/S. Keith
একজন ডোনাল্ড লি
দুর্ঘটনায় দুটি পা-ই হারিয়েছেন ডোনাল্ড লি৷ তাই বলে থেমে থাকেননি৷ নকল পা লাগিয়ে দিব্যি চলাফেরা করেন৷ প্যারেডেও অংশ নিয়েছেন পূর্ণ উদ্যম নিয়ে৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
গর্বের জুলাই
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবন্ধীদের জন্য জুলাই খুব উল্লেখযোগ্য মাস৷ ১৯৯০ সালে এ মাসেই প্রবর্তিত হয়েছিল প্রতিবন্ধী অধিকার আইন৷ সেই আইন প্রবর্তনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্ল্যাসন জুলাই মাসের চমৎকার একটি নাম দিয়েছেন- ‘প্রতিবন্ধীদের গর্বের মাস’৷ ছবিতে যাঁদের পা দেখা যাচ্ছে, তাঁরা সবাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী৷ ছড়ি হাতে তাঁরাও এসেছিলেন গর্বের মাসের বিশেষ প্যারেডে অংশ নিতে৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
নিউইয়র্ক এখনো যেখানে পিছিয়ে
যাঁদের হুইল চেয়ার নিয়ে চলাফেরা করতে হয়, নিউইয়র্ক এখনো তাঁদের জন্য আদর্শ নগরী হয়ে ওঠেনি৷ বিশেষ করে দূরে কোথাও যেতে চাইলে এখনো মুশকিলে পড়তে হয় তাঁদের৷ নিউইয়র্কের মাত্র চার শতাংশ ‘ক্যাব’ হুইল চেয়ারসহ যাত্রী পরিবহণে সক্ষম৷ এক্ষেত্রে লন্ডন অনেক এগিয়ে৷ সেখানে সব ট্যাক্সিতেই সেই ব্যবস্থা আছে৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
‘অ্যামেরিকার ছোট মানুষ’
এই দুজনকে শিশুর মতো দেখালেও আসলে তাঁরা পুরোপুরি মহিলা৷ শরীরের বৃদ্ধি স্বাভাবিক না হলেও সব কাজেই তাঁরা স্বাভাবিক৷ এই দুই নারী সেদিন প্যারেডে নিজেদের তুলে ধরেছিলেন, ‘‘অ্যামেরিকার ছোট মানুষ’’ হিসেবে৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
7 ছবি1 | 7
হাইনরিশ পপফ সেই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও হার মানেননি৷ বছরের পর বছর ধরে অনুশীলন ও কৃত্রিম অঙ্গের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির দৌলতে তাঁর মুভমেন্ট বাকি খেলোয়াড়দের থেকে আলাদা নয়৷ ২০১২ সালের গ্রীষ্মে পপফ লন্ডনে প্যারালিমপিক্স-এর জন্য অনুশীলন করেছেন৷ ১০০ মিটার দৌড়ে তিনিই ছিলেন ফেভারিট৷ পপফ বলেন, ‘‘এথেন্সে তৃতীয় ও বেইজিং-এ দ্বিতীয় স্থান পেয়েছি৷ আমার মটো হলো ৩-২-১৷ এভাবেই গুনতে শিখেছি৷ লন্ডনে জিততেই যাচ্ছি৷ দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান আগেই পেয়েছি৷ এবার আমি জয় চাই৷''
পপভ ১০০ মিটার দৌড়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন৷ তাঁর জন্য বিশেষভাবে কার্বনের তৈরি কৃত্রিম অঙ্গই এমন ক্ষমতা নিশ্চিত করছে৷ পপফ বলেন, ‘‘এই কৃত্রিম অঙ্গের বৈশিষ্ট্য হলো, এর উপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায়৷ মাঝরাস্তায় বিকল হয়ে যায় না৷ একশ' শতাংশ আস্থা করা যায়৷''
অটো বক কোম্পানি বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রস্তুত করে৷ প্রত্যেকটি আলাদা করে ব্যবহারকারীর বিশেষ প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি করা হয়৷ ফলে তাঁরা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ পান৷