আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের মতো সংগীত জগতেও প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ অসংখ্য মানুষের পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে এআই সাফল্যের ফর্মুলা দিতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
যে সংগীত শুনে গায়ে কাঁটা দেয়, এখনো পর্যন্ত সেটির ক্ষেত্রেও নিশ্চিত কোনো ফর্মুলা পাওয়া যায়নি৷ গবেষক হিসেবে ইয়ুলিয়া ব্রিশটেল গান শোনার সময় শ্রোতার ত্বকের পরিবাহিতা পরিমাপ করেছেন৷ সেই প্রক্রিয়ায় মানসিক চাপ বা ইতিবাচক আবেগ চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ একটি গান তার মধ্যে এমন আবেগ জাগিয়ে তোলে৷ ব্রিশটেল মনে করেন, সেই গানে নারীকণ্ঠের সঙ্গে সুরের এমন সংযোগ রয়েছে, তা তার হৃদয় ছুঁয়ে যায়, সেই সৌন্দর্য্য গভীরভাবে নাড়া দেয়৷ সিগন্যালের মধ্যেও সেই প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷
এমন অনুভূতি কি শুধু তার একারই হয়? বড় আকারে পরিমাপ চালিয়ে লার্নিং সফটওয়্যারের জন্য এমন তথ্য সংগ্রহ করা যায়, যা বেশিরভাগ মানুষের আবেগের চাবিকাঠি৷
একটি ফর্মুলায় বেশ কাজ হয়৷ সফল সংগীত নতুন করে সাজালেও মানুষের তা পছন্দ হয়৷ আজকাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই সেই কাজ সারতে পারে৷ ২০১৬ সালের গান ‘ড্যাডিস কার' প্রথম এআই কম্পোজিশন৷ কম্পিউটারকে বিটলস গোষ্ঠীর ৪৫টি গানের ভিত্তিতে নতুন কিছু সৃষ্টি করার কাজও দেওয়া হয়েছিল৷ সর্বাধুনিক আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স সফটওয়্যার এমনকি পুরানো হিট গানও স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করতে পারে৷ তবে একটি কারণে নতুন হিট সৃষ্টি এখনো সম্ভব নয়৷
বিটলসের জন্মস্থানে করোনা তুচ্ছ করা উৎসব
করোনা মহামারির সময়েও লিভারপুলে হয়ে গেল ছয় ঘণ্টার এক মিউজিক ফেস্টিভ্যাল৷ পরীক্ষামূলক এ উৎসবে সুরে বুঁদ থেকে করোনার ভয় ভুলে ছিলেন সংগীতপ্রেমীরা৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: JASON CAIRNDUFF/REUTERS
পাঁচ হাজার মানুষের সমাবেশ
সপ্তাহান্তে আয়োজিত এ উৎসবে সংগীতের সুরে, তালে মেতে ছিলেন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ৷ মহামারি শুরুর পর খোলা আকাশের নীচে এই প্রথম এমন আয়োজন দেখলো লিভারপুলের মানুষ৷ ছবিতে উৎসবে আসা দর্শকদের উদ্দাম নাচ৷
ছবি: Jason Cairnduff/REUTERS
আনন্দ আর ভালোবাসার উৎসব
ইংল্যান্ডের বিখ্যাত রক সংগীত দল বিটলস-এর জন্মভূমি লিভারপুলের সেফটন পার্কে আয়োজন করা হয় এই উৎসব৷ করোনার কারণে দীর্ঘদিন প্রায় গৃহবন্দি থাকা পাঁচ হাজার শ্রোতার মনের আনন্দ প্রকাশ পেয়েছে মেগান বাটলারের কথায়, ‘‘খুব ভালো লাগছে... চমৎকার লাগছে৷ কতদিন পর...!’’ ছবিতে ভালোবাসার চিহ্ন দেখাচ্ছেন ১৯ বছর বয়সি মেগান৷
ছবি: JASON CAIRNDUFF/REUTERS
পথ দেখানো উৎসব
আয়োজক সংগঠন ফেস্টিভ্যাল রিপাবলিক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেলভিন বেন মনে করেন, এ উৎসবের সাফল্য দেখে অনেকেই হয়ত ভবিষ্যতে এমন আয়োজনে উৎসাহিত হবেন৷ তার মতে, ‘‘এভাবে আয়োজন করলে সবাই ২০১৯ সালের মতো পার্টির মেজাজে ফিরে যেতে পারবে৷’’ ছবিতে চার সংগীতপ্রেমী তরুণীর আনন্দ৷
ছবি: JASON CAIRNDUFF/REUTERS
৪১৩ দিন পর
ব্রিটিশ ব্যান্ড ব্লসমস-এর মূল গায়ক টম অগডেন তো এত দর্শকের উপস্থিতিতে আবার গাইতে পেরে মহাখুশি, ‘‘৪১৩ দিন পর আবার স্টেজে উঠলাম আমরা৷ সত্যিই অনেক দিন পর... এখানে আসতে পেরে আমরা খুব আনন্দিত৷’’
ছবি: JASON CAIRNDUFF/REUTERS
ছয় ঘণ্টায় জীবন উপভোগ
রাত দশটা থেকে শুরু হয়ে যায় কারফিউ৷ তার আগেই শেষ হওয়া গানের এ আয়োজনে আবার একটু জীবন উপভোগের সুযোগ পেয়েছেন ২৫ বছর বয়সি শ্রমিক হ্যারি স্মিথ৷ তাই বললেন, ‘‘চলুন আবার জীবন উপভোগ করি, চলুন সবাই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাই৷’’
ছবি: JASON CAIRNDUFF/REUTERS
সব জায়গায় স্যানিটাইজার
তবে উৎসবে করোনাকে দূরে রাখার সব ব্যবস্থাই ছিল৷ এমনকি স্থানান্তরযোগ্য টয়লেটেও ছিল স্যানিটাইজারের ডিসপেন্সিং স্টেশন৷
ছবি: JASON CAIRNDUFF/REUTERS
সর্বোচ্চ সতর্কতা
এমনকি প্রবেশপথের রেলিংকেও স্যানিটাইজ করে বারবার জীবাণুমুক্ত রাখতে ভোলেননি আয়োজকরা৷
ছবি: JASON CAIRNDUFF/REUTERS
7 ছবি1 | 7
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক হিসেবে ড. স্টেফান বাউমান সেই কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘ব্যর্থ প্রেম, মানসিক অবসাদ, মাদকে আসক্তি বা প্রবল উৎসাহের সময় কত গান লেখা হয়েছে৷ যন্ত্রের তো আর ঘাম হয় না! বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেই সেটি কাজ করে৷ কম্পিউটারের নশ্বরতার বোধ নেই৷ সেটি চলতেই থাকে৷''
এআই বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তিনি নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েন৷ তার মতে, খাঁটি হিট গানের নিজস্বতা থাকতে হবে, হৃদয় স্পর্শ করতে হবে৷ অথচ স্পটিফাই পরিষেবার অ্যালগোরিদম দেখিয়ে দিচ্ছে যে, হিট পপ গানগুলির মধ্যে মিল বেড়েই চলেছে৷ অর্থাৎ সাফল্য এলে সেই ধারাই বার বার নকল করা হচ্ছে৷
যে সব প্রোডিউসার অনেক তারকার জন্য কাজ করেন, তারাও তাদের সেই স্টাইল বার বার সৃষ্টি করছেন৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও প্রত্যাশার এই চক্র আরো শক্তিশালী করে তুলবে৷
নিখুঁত হিট পপ গানের প্রণালী অবশ্য বাস্তব হয়ে উঠতে পারে৷ তবে সংখ্যাগুরু মানুষের পছন্দ সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে সেই গান ভীষণই বোরিং বা বিরক্তিকর লাগতে পারে৷
শিল্পীদের কেন টাকা নেই?
বাংলাদেশে শিল্পীরা সঙ্গীত জীবনের শেষ দিকে এসে পড়ছেন আর্থিক সঙ্কটে৷ তাদেরকে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে হয় শুভাকাঙ্খী অথবা সরকারের সহযোগিতা নিয়ে৷ কেন এই পরিস্থিতি, কী বলছেন সঙ্গীত শিল্পীরা? পড়ুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
সাবিনা ইয়াসমিন
সঙ্গীতা বলেন, সাউন্ডটেক বলেন, এদের অ্যালবাম বিক্রির উপর কোনো ভাগ আমরা কোনোদিনও পাইনি৷ এককালীন একটা লামসাম দিয়ে দিতো৷ শিল্পীদের কোটি টাকা সবাই লুটেপুটে খাচ্ছে৷ কারা খাচ্ছে আমি জানি না৷ আমাদের আয়ের কিছুই নাই এখন৷ ইউটিউবে আমার হাজার হাজার গান আছে, কোনেকিছুই জানি না কারা আপলোড করছে৷ রয়্যালটির টাকা মেরেকেটে না খেলে কি আমাদের কারো কাছে হাত পাততে হয়?
ছবি: bdnews24.com
আসিফ আকবর
আমাদের দেশে কোন কপিরাইট সোসাইটি নাই, শিল্পীদের কোনো ঐক্য নাই৷ ৪৮ বছরেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি নাই যে কারণেই এই ঘটনাগুলো ঘটছে৷ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে যে রিয়েলিটি শো হয়, বিভিন্ন এফ এম চ্যানেলে আমাদের গান বাজে সেখান থেকে শিল্পী, সুরকার, গীতিকারের ভাগটা কী, সেটা নিয়ে আমাদের কোন নীতিমালা নাই৷ যতদিন পর্যন্ত শিল্পীরা ঐক্যবদ্ধ না হবে ততদিন কোন সমাধান হবে না৷
ছবি: bdnews24
নকিব খান
প্রত্যেকটা শিল্পী শেষ বয়সে এসে কষ্ট পায় এবং চিকিৎসার জন্য যখন অর্থ দরকার হয় তখন দুস্থ শিল্পী হয়ে যায়৷ সব শিল্পীরা মিলে তাকে সাহায্য করতে হয়, এটা খুবই দুঃখজনক, করুণ একটা ব্যাপার, আমাদের শিল্পীদের খুবই কষ্টের একটি জায়গা৷ আমাদের সৃষ্ট গানের কিছুই আমরা পাই না৷ কোম্পানিগুলোতে যারা আছে তারা হয়তো কিছু আয় করছে৷ আমাদের পাশের দেশে ভারতে শিল্পীরা রয়্যালটি পায়, সেজন্য তাদের এতো অভাব থাকে না৷
ছবি: Sazzad Hossain
কুদ্দুস বয়াতী
আমাদের শিল্পীরা মরলে পরে শহীদ মিনারে নিয়া ফুলের মালা দেয়৷ থাকলে দেখে না, কেউ নাই৷ এটা এখন প্রমাণিত৷ আমাদের শিল্পীদের এখন আয় নাই৷ মোবাইল, ইউটিউবের জন্য এক একজন আসে (গান রেকর্ড) করে দুই-তিন হাজার টাকা দেয়৷ ক্যামেরা করে তারা রেখে দেয়, তারপর ইউটিউবে চালায়৷ আমাদের লোকশিল্পীরা খুব কষ্টের মধ্যে আছে৷ যন্ত্রশিল্পীরা স্টুডিওতে বাজিয়ে একটা গানের জন্য মাত্র দুই হাজার টাকা পায়৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
প্রীতম আহমেদ
অনুদান নয় বরং অনিয়ম বন্ধ করার কার্যকর নির্দেশ প্রয়োজন৷ অন্তত একটি মামলার আদালতের রায় প্রয়োজন৷ অবৈধ ভাবে অনুমতিহীন গান বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশনা প্রয়োজন৷ তাহলেই অপরাধীরা শিল্পীদের টাকা লুট করা বন্ধ করবে৷ দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মিল রেখে শিল্পীদের ৭০% রয়েলিটি নিশ্চিত করতে হবে৷ তবেই একজন শিল্পী সুস্থ ও সচ্ছল জীবন যাপন করতে পারবে৷
ছবি: Pritom Ahmed
খুরশীদ আলম
সিএনজি ওয়ালাদের সংগঠন আছে বলেই যখন ইচ্ছা তখন সিএনজি বন্ধ করে দিচ্ছে৷ বাস মালিকদের সংগঠন আছে, তারা যখন ইচ্ছা বাস বন্ধ করে দিচ্ছে৷ আমাদের সংগঠন নাই, আমরা পারছি না৷ আমাদের এভাবেই চলতে হবে৷ প্রেসিডেন্টের বেতন বাড়ে, প্রধানমন্ত্রীর বেতন বাড়ে, সচিবের বাড়ে, মন্ত্রীর বাড়ে, এমপির বাড়ে, প্রধান বিচারপতির বাড়ে, কিন্তু শিল্পীদের পেমেন্ট বাড়ানো হয় না৷ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু একটা রেট দিয়ে গেছেন সেটাই এখানো চলছে৷
ছবি: Sazzad Hossain
ব্যরিস্টার তানজীব উল আলম
একজন শিল্পী যখন গানের জন্য স্টুডিও’র সঙ্গে চুক্তি করেন তখন তারা এককালীন পেমেন্ট নিয়ে পুরো গানটাই দিয়ে দেন স্টুডিওকে৷ শিল্পীরা যদি আরেকটু বুদ্ধিমান হতেন তাহলে তারা একবারে টাকা না নিয়ে প্রতিবার প্লে’র জন্য তার সম্মানি চাইতে পারতেন৷ যেটা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে হয়৷ ওইসব দেশে কিন্তু পারফর্মিং আর্ট সোসাইটি স্টুডিও’র সঙ্গে শিল্পী নেগোসিয়েশনের কাজটা করে৷ আমাদের দেশের শিল্পীরা এই বিষয়ে অবগত না৷