কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের প্রথম আইনে সম্মত ইইউ
৯ ডিসেম্বর ২০২৩
চেহারা শনাক্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে ৩৬ ঘণ্টার বেশি সময় বিতর্কের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো এই আইনে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। অবশ্য এটাই এই আইনের চূড়ান্ত পরিণতি নয়।
বিজ্ঞাপন
ইইউ সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধি এবং আইনপ্রণেতারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন তৈরির বিষয়ে প্রাথমিক চুক্তিতে একমত হয়েছেন। বিশ্বে এটিই হবে এমন প্রথম আইন। এই যুগান্তকারী চুক্তির লক্ষ্য হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। এই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে চ্যাটজিপিটি এবং সরকারের বায়োমেট্রিক নজরদারিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মতো বিষয়ও।
ইইউ কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, "ঐতিহাসিক! ইইউ প্রথম মহাদেশ হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের জন্য সুস্পষ্ট নিয়ম নির্ধারণ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন শুধু একটি নিয়মের সংকলন নয়। বরং এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্টার্টআপ এবং গবেষকদের জন্য বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌঁড়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একটি লঞ্চ প্যাড হিসাবে কাজ করবে।"
ইন্টারনেটে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে এআই-ডাক্তার
এআই দিয়ে বানানো যান্ত্রিক ডাক্তার ইন্টারনেটে ভুল তথ্য ছড়িয়ে লাখ লাখ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে৷ এর সত্যতা কতটুকু, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Nikos Pekiaridis/NurPhoto/picture alliance
ফ্যাক্টচেক: নকল, এআই ডাক্তার
সোশাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে এমন ভিডিও যেখানে দেখানো ডাক্তার আসল নয়, এআই দিয়ে তৈরি সেটা! গলায় স্টেথোস্কোপ ঝোলানো এই ডাক্তারদের দেখতে আসল মনে হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তাদের দেওয়া উপদেশ বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক৷ ডয়চে ভেলে এবিষয়টির সত্যতা যাচাই করেছে৷
চিয়া সিড খেলে কমবে ডায়াবেটিস?
ফেসবুকে জনপ্রিয় একটি ভিডিওতে এমন কথাই বলছে এক এআই-সৃষ্ট নকল ডাক্তার৷ বলছে, চিয়া সিড খেলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে, যা পুরোপুরি মিথ্যা৷ গবেষণা বলছে, চিয়া সিডের সুপ্রভাব রয়েছে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে৷ কিন্তু ডায়বেটিস বা রক্তে চিনির মাত্রার ওঠানামা পুরোপুরি সেরে যাবে, এমনটা নয় মোটেই৷
ছবি: Olga Sergeeva/Zoonar/picture alliance
ভারতে জনপ্রিয় নকল ডাক্তারের ভিডিও
এই ধরনের বেশ কয়েকটি ভিডিও তৈরি হয় হিন্দি ভাষায়, ভারতের জনতার উদ্দেশ্যে৷ ২০২১ সালের একটি গবেষণা জানায় যে করোনাকালীন সময় থেকেই ভারত ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের মুক্তাঙ্গন হয়ে উঠছে৷ অ্যামেরিকা, ব্রাজিল বা স্পেনের তুলনায় অনেক দ্রুত ভারতে ছড়াচ্ছে এমন ‘ফেক নিউজ’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
কেন সহজেই বিশ্বাসযোগ্য হন নকল ডাক্তাররা
ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন গিলবার্টের মতে, ইন্টারনেটে ডাক্তার তখনই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে যখন তারা আর পাঁচটা ডাক্তারের মতোই প্রেসক্রিপশন দেন, রোগ নির্ণয় করেন এবং ইন্টারনেটে এসব দেখে মানুষ ভেবে বসেন যে এরা হয়তো আসলেই ডাক্তার৷
ছবি: Taidgh Barron/ZUMAPRESS.com/picture alliance
মস্তিষ্কের রোগের চিকিৎসাও ইন্টারনেটে?
আরেকটি ভাইরাল ভিডিওতে বলা হয় যে কাঠবাদাম, চিনির মণ্ড, মৌরি গরম দুধে দিয়ে খেলে নাকি ব্রেনের সব রোগ সেরে যায়! ডয়চে ভেলেকে জার্মান ব্রেন ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানী ফ্রাংক এরবগুথ জানান যে এটি পুরোপুরি মিথ্যা৷ এমন কোনো তথ্য কোনো গবেষণাতে পাওয়া যায়নি৷ এই ভিডিওতেও ছিল সাদা কোট গায়ে এক নকল এআই-ডাক্তার৷
ছবি: ersin arslan/Zoonar/picture alliance
কীভাবে চিনবেন নকল ডাক্তার?
গিলবার্টের মতে, গায়ে সাদা কোট থাকলেই কোনো ব্যক্তিকে ডাক্তার বলে ভাববেন না৷ বরং নজর দিন তার মুখের বা হাতের নড়াচড়ার দিকে, জানাচ্ছেন তিনি এআই-ডাক্তারের ছবিতে ঠোঁট ছাড়া মুখের আর কোনো পেশি নড়তে দেখা যায়না৷ ভিডিওতে দেখানো এক্সরে বা সিটিস্ক্যানের ছবিকেও নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়া বিশ্বাস করতে মানা করেন তিনি৷
ভরসা করবেন না চ্যাটবটকেও
কিছু চিকিৎসাবিষয়ক ওয়েবসাইটে চ্যাটবট থাকে৷ চ্যাটবট এমন প্রযুক্তি যা কয়েক মিনিটেই আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে৷ কিন্তু চিকিৎসাবিষয়ক প্রশ্নের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে৷ বিশেষ করে চ্যাটবটের বলা সমাধানকে চোখ বুজে বিশ্বাস করার আগে কোনো চিকিৎসকের থেকে তা যাচাই করে নেওয়া উচিত৷ ভবিষ্যতে চিকিৎসকেরা নিজেরাই যদি চ্যাটবট তৈরি করেন, তা হয়তো চিকিৎসাকে আরো মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারবে৷
ছবি: Nikos Pekiaridis/NurPhoto/picture alliance
7 ছবি1 | 7
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লেয়েন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইনের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, "মানুষ ও ব্যবসার নিরাপত্তা এবং মৌলিক অধিকারের জন্য এটিই বিশ্বব্যাপী প্রথম।"
ইইউ রাষ্ট্রগুলোর একমত হওয়া নিয়ে নিশ্চিতভাবেই উদ্বিগ্ন হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন কোম্পানি। পাস হলে এই আইন বিশ্বের নানা প্রান্তে এরই মধ্যে এ নিয়ে চিন্তা করতে থাকা অন্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে উদাহরণ হিসাবে উপস্থাপিত হবে।
চেহারা শনাক্তকরণ নজরদারির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ছিল বিতর্কের কেন্দ্রে এবং এ নিয়েই সবচেয়ে জোরালো বিতর্ক হয়েছে।
চুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে স্বচ্ছতা এবং সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে এবং তা না করা হলে সাড়ে তিন কোটি ইউরো বা প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক রাজস্বের সাত শতাংশ জরিমানার মতো গুরুতর দণ্ডের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
দ্রুতই এই আইন চূড়ান্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছে সদস্য রাষ্ট্রগুলো। ব্রাসেলস আশা করছে, ২০২৫ সালের মধ্যে আইনটি কার্যকর করা হতে পারে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্বেগ
ইউরোপের এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে এমন এক সময়ে আলোচনা হচ্ছে, যখন ওপেনএআই-এর মতো কোম্পানিগুলো তাদের নানা প্রকল্পের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। গুগলের সত্ত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট বৃহস্পতিবার জেমিনি নামের একটি নতুন এআই মডেল প্রকাশ করেছে।
অক্টোবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এআই নিরাপত্তার মানদণ্ড নির্ধারণে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। আগস্টে চীনও একই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল।
চ্যাটজিপিটিসহ জেনারেটিভ এআই বা সৃজনভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনলাইন টুলগুলো রীতিমত পুরো বিশ্বকে উলটে পালটে দিচ্ছে৷ এ অবস্থায় দেশে দেশে চলছে একে নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণের নানা কৌশল আবিষ্কারের চেষ্টা৷
ছবি: Lionel Bonaventure/AFP
অস্ট্রেলিয়া
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার টুলগুলো নিয়ন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়ার সরকার সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চেয়েছে৷ তারা তাদের প্রধান সায়েন্স অ্যাডভাইজরি বডির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে৷ একইভাবে আয়ারল্যান্ডও তাদের দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চেয়েছে৷
ছবি: Manuel Ruiz/Addictive Stock/IMAGO
ব্রিটেন
ব্রিটেনের বাজার প্রতিযোগিতার নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, তারা শিগগিরই গ্রাহক, ব্যবসা ও অর্থনীতির ওপর এআইয়ের প্রভাব খতিয়ে দেখবে, এবং সিদ্ধান্ত নেবে কোনো নতুন আইনের প্রয়োজন আছে কি না৷
ছবি: Stefani Reynold/AFP/Getty Images
চীন
এপ্রিল মাসে চীনের সাইবারস্পেস নিয়ন্ত্রক জেনারেটিভ এআই নিয়ে তাদের খসড়া ব্যবস্থাপনা উদ্যোগগুলো তুলে ধরেছে৷ তারা বিভিন্ন কোম্পানিকে তাদের এআই সেবা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার আগে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন, তা কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছে৷
ছবি: Lintao Zhang/Getty Images
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সম্প্রতি ব্লকের প্রথম আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স অ্যাক্টের খসড়া তৈরি করেছে৷ এই আইনের মূলে রয়েছে, কপিরাইট নিয়ন্ত্রণ৷ ইউরোপীয়ান ড্যাটা প্রটেকশন বোর্ড এপ্রিলে চ্যাটজিপিটির জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে৷ ইটালি মার্চে চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল৷ কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে৷ স্পেনও চ্যাটজিপিটি সীমা লঙ্ঘন করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে৷
ছবি: Patrick Seeger/AP Images/picture alliance
জি সেভেন
জাপানে সম্প্রতি গ্রুপ অফ সেভেন বা জি সেভেন দেশগুলোর বৈঠকে দেশগুলোর প্রযুক্তি মন্ত্রীরা একমত হয়েছেন যে, এআইয়ের ঝুঁকি সংক্রান্ত সাধারণ আইন তৈরি করা উচিত৷
ছবি: Torsten Sukrow/SULUPRESS.DE/picture alliance
যু্ক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন বলছে, তারা বিদ্যমান আইনেই নিয়ন্ত্রণ জোরদার করবে৷ ২৭ এপ্রিল সেনেটর মাইকেল বেনেট এআই নিয়ন্ত্রণে টাস্ক ফোর্স গঠনে নতুন বিল উত্থাপন করেছেন৷ বাইডেন প্রশাসন এ ব্যাপারে জনমত যাচাই করছে৷