দুই বছর পর কৃষকদের কাছ থেকে আয়কর আদায় শুরু করার পরিকল্পনা করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত৷ তবে তিনি বলেছেন, কৃষকদের আয়ের ওপর করারোপ করতে হবে, পুরো উৎপাদনের ওপর নয়৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ঢাকায় এক আলোচনা সভায় এই মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন সময় হয়েছে আমাদের চাষী কিষাণরা, তাদেরও এখন ট্যাক্স দিতে হবে৷ কারণ এখন ‘বেশ বড় কৃষক' অনেক হয়ে গেছে৷ এলাকা বেশি হয় নাই, কিন্তু এলাকার প্রোডাক্টিভিটি এত বেড়েছে যে তাদের ওপর করারোপ করা যায়৷ যদিও এখন পর্যন্ত তারা কর অব্যাহতি পায়৷ তবে তাদের আয়ের ওপর করারোপ করতে হবে, পুরো উৎপাদনের ওপর নয়৷''
বর্তমানে চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে যাঁদের বাৎসরিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার বেশি, তাঁদের কর দিতে হয়৷ কৃষকদের ক্ষেত্রে তাঁদের আয়ের উপর করারোপের কথা বললেও সেই সীমা কতখানি হবে, সেটি বলেননি অর্থমন্ত্রী৷
তবে কৃষকদের ট্যাক্স দিতে হবে জেনে সামাজিক মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন অনেকে৷ অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রবিন আহসান৷ ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘যে কৃষক ফসলের দাম পায় না, তাকেও ট্যাক্স দিতে হবে!!! (আওয়ামী লীগ নীলকর ইংরেজ সরকার হতে যাচ্ছে)৷''
শাহীন হোসেনও একই ধরণের মন্তব্য করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এমনিতেই কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যয্যমূল্য পায় না, তার উপর আবার কর আরোপ৷''
মো. সুমন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘হাস্যকর' মনে করছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘যেখানে ফসল উৎপাদন করে প্রতি বিঘা জমিতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা লোকসান হয়, সেখানে কৃষক দেবে ভ্যাট এমন ঘোষণা আমার কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে৷'' অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘...দুর্নীতি করার মতো টাকা বোধহয় আপনাদের তহবিলে ঘাটতি হয়েছে যা পূরণ করতে কৃষকদের ভ্যাট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷ নাকি সরকারি কর্মচারীদের বেতন আরেকগুণ বাড়াতে চাচ্ছেন?''
পানির উপর হচ্ছে সবজি চাষ
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামের বেশিরভাগই বছরের পুরোটা সময় জলাবদ্ধ থাকে৷ এ সব গ্রামের মানুষেরা ভাসমান পদ্ধতিতে গাছের চারা এবং সবজি উৎপাদন করে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছেন৷
ছবি: DW
কৃষকের কৌশল
বছর জুড়েই জলাবদ্ধতা, সাথে কচুরিপানার মিছিল৷ ফলে পিরোজপুরের নাজিরপুর এলাকার নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক উপায়ে কৃষিকাজ কার্যত অসম্ভব৷ তবে বৈরী এই পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে নাজিরপুরের কৃষকরা নিজেদের কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষিকাজ৷
ছবি: DW
ভাসমান কৃষিক্ষেত্র
নাজিরপুরের মুগাঝোর এলাকার জলাভূমিতে ভাসমান কৃষিক্ষিত্র৷ নিজেদের উদ্ভাবিত ‘ধাপ’ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন এ সব এলাকার মানুষরা৷ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ‘কৃষি ঐতিহ্য অঞ্চল’ হিসেবেও স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে নাজিরপুরে উদ্ভাবিত ভাসমান পদ্ধতির এ চাষাবাদ৷
ছবি: DW
যেভাবে তৈরি হয় ধাপ
নাজিরপুরের পানিতে ডোবা নিম্নাঞ্চল কচুরিপানা, দুলালীলতা, শ্যাওলা ও বিভিন্ন জল সহিষ্ণু ঘাসসহ নানান জলজ উদ্ভিদে ভরপুর৷ এ সব জলজ উদ্ভিদকে স্তূপ করে পচিয়ে তারা তৈরি করেন ভাসমান এক ধরণের ধাপ৷ এই ভাসমান ধাপের উপরেই চাষাবাদের এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন তাঁরা৷
ছবি: DW
পুরনো ধারা
কৃষি জমির বিকল্প হিসেবে জলাশয়ে ভাসমান চাষাবাদ দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে এ অঞ্চলে৷ কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পদ্ধতিতে কৃষির উৎপাদনশীলতা জমির চেয়ে ১০ গুণ বেশি৷
ছবি: DW
জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ
ধাপ পদ্ধতির এ চাষাবাদ হয় সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে৷ রাসায়নিক সারের ব্যবহার নেই বললেই চলে৷ ফলে উৎপাদন খরচও কম এবং স্বাস্থ্যকর৷
ছবি: DW
ভাসমান বীজতলা
জলাভূমিতে প্রথমে কচুরিপানা, শ্যাওলা ও বিভিন্ন জলজ ঘাস স্তরে স্তরে সাজিয়ে দুই ফুট পুরু ধাপ বা ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়৷ এগুলো কয়েকদিন ধরে পচানো হয়৷ একেকটি ভাসমান ধাপ ৫০-৬০ মিটার লম্বা ও দেড় মিটার চওড়া হয়৷
ছবি: DW
চাষ করা যায় অনেককিছু
ভাসমান এ সব ধাপে সাধারণত লাউ, সিম, বেগুন, বরবটি, করলা, পেঁপে, টমেটো, শশা, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, মরিচ ইত্যাদি শাকসবজি ও মশলার চারা উৎপাদন করে থাকেন কৃষকরা৷ অনেক কৃষক আবার লাল শাক, ঢেঁড়স, হলুদ ইত্যাদিও চাষ করে থাকেন৷
ছবি: DW
নেই কোনো কৃষিঋণের ব্যবস্থা
মুগারঝোরের চাষীদের জন্য কৃষি ঋণের কোনো ব্যবস্থা নেই৷ স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চরা হারে সুদ নিয়ে গরিব এ চাষীরা তাঁদের কৃষি কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন৷ স্থানীয় কৃষক আশুতোষ জানান, সরকার সহজশর্তে ঋণ দিলে তাঁরা ভাসমান এ চাষাবাদের আরও বিস্তৃতি ঘটাতে পারবেন৷
ছবি: DW
বিক্রি হয় কচুরিপানা
নাজিরপুরের মুগারঝোরে নৌকা বোঝাই কচুরিপানা নিয়ে ক্রেতার খোঁজে এক বিক্রেতা৷ এক নৌকা কচুরিপানা সাধারণত বিক্রি হয় ২-৩ হাজার টাকায়৷ এছাড়া নাজিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় এসব কচুরিপানার হাটও বসে৷
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
এদিকে, রতন কুমার মজুমদার মনে করছেন, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে অনেকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছেন৷ কৃষক হলেই যে তাঁকে কর দিতে হবে এমন মন্তব্য অর্থমন্ত্রী করেননি বলে ফেসবুকে লিখেছেন তিনি৷ দেশের সবাইকে কর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে রতন কুমার মজুমদার বলেন, ‘‘পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের নাগরিক ট্যাক্স দিয়ে গর্ববোধ করে৷ দেশের উন্নয়নে তাঁদের অবদান রাখার জন্যই স্বপ্রণোদিত হয়ে ট্যাক্স দেয়৷''
ইফতেখার মোহাম্মদের প্রশ্ন, ‘‘কৃষক যদি করমুক্ত আয় সীমার উপরে ওঠে, কেন সে কর দেবে না?''