পাঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে আবার দিল্লি এসে বিক্ষোভ করতে চাইছেন কৃষকেরা। সেজন্য হরিয়ানার সঙ্গে দিল্লির সীমানা সিল করে দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কৃষকদের দাবি, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আইন করতে হবে। সেই আইন অনুসারে প্রতিবছর প্রধান ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করতে হবে সরকারকে। কৃষকদের ঋণ মাফ করতে হবে। কৃষকদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
২০২১ সালে কৃষকেরা পুলিশ ও প্রশাসনের যাবতীয় অবরোধ সরিয়ে দিয়ে দিল্লি সীমান্তে এসে প্রতিবাদ করেছিলেন। তাদের সেই প্রতিবাদ এক বছর স্থায়ী হয়েছিল। সেসময় কৃষকদের দাবি মেনে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় মোদী সরকার। এবার তাই কৃষকদের দিল্লির সীমানায় আসতে দিতেই রাজি নয় সরকার।
এবার দুইশটি কৃষক সংগঠন দিল্লি চল-র ডাক দিয়েছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে তাদের সেই যাত্রা শুরু হওয়ার কথা মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি। কৃষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সোমবার আলোচনায় বসছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই আলোচনা ভেস্তে গেলে দিল্লি অভিযান করার ব্যাপারে কৃষক সংগঠনগুলি বদ্ধপরিকর।
কৃষক বিক্ষোভ ও ট্রাক্টর প্রতিবাদ
দিল্লির সীমানায় কৃষক বিক্ষোভ চলছে। প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষকরা দিল্লিতে ট্রাক্টর মার্চ করার পরিকল্পনা করেছে।
ছবি: Altaf Qadri/AP/picture-alliance
সরকারি আলোচনা বিফল
মোদী সরকারের সঙ্গে বহুবার আলোচনায় বসেছেন বিক্ষোভরত কৃষক নেতারা। কিন্তু এতবার আলোচনার পরেও কোনো সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি। কৃষকদের মূল দাবি মানতে চায়নি সরকার।
ছবি: Sameeratmaj Mishra/DW
সুপ্রিম কোর্টের কমিটি
বিক্ষোভরত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মেটাবার জন্য কমিটি করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সরকারও আগে কমিটি করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তখনো কৃষকরা রাজি হয়নি। এবারও তাঁরা বলেছেন, কমিটি তার কাজ করতে পারে। কিন্তু তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo
কৃষকদের মূল দাবি
কৃষকদের প্রধান দাবি হলো, বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। আইন করে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল কেনা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আর তাঁদের চুক্তি চাষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাধ্য করা যাবে না।
ছবি: Mohsin Javed
সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছে
সুপ্রিম কোর্টের রায় হলো, আপাতত তিনটি কৃষি আইনের রূপায়ণ স্থগিত থাকবে। একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানসূত্র খুঁজে বের করবেন।
ছবি: Mohsin Javed
কৃষকরা কেন মানছেন না
কৃষক নেতারা মনে করেন, সরকার চাইছে, কৃষকরা আন্দোলন থামিয়ে দিল্লির সীমানা ছেড়ে চলে যাক। সুপ্রিম কোর্টের কমিটি যে তাঁদের দাবি মানবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কমিটির অধিকাংশ সদস্যই অতীতে কৃষি বিলের সমর্থন করেছেন। তাই দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন করবেন।
ছবি: Seerat Chabba/DW
দিল্লির সীমানায় বসে কৃষকরা
গত ৪৯ দিন ধরে কৃষকরা দিল্লির সীমানায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশের সঙ্গে দিল্লির যে সীমানা আছে, তার বেশির ভাগ জায়গায় কৃষকদের বিক্ষোভ চলছে। দিল্লিতে এখন প্রবল শীত। তার মধ্যেই কৃষকরা বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Seerat Chabba/DW
বহু কৃষকের মৃত্যু
কৃষক বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত আন্দোলনরত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েকজন আত্মহত্যা করেছেন। শীত সহ্য করতে না পেরে অনেকে মারা গেছেন। তবে তারপরেও বিক্ষোভ থামেনি।
ছবি: Sameeratmaj Mishra/DW
প্রজাতন্ত্র দিবসের পরিকল্পনা
আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে সামরিক বাহিনীর প্যারেড হয়। সেখানে ভারতের সামরিক শক্তির পাশাপাশি উন্নয়নের নজির এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। কৃষকরা ঠিক করেছেন, সেদিন তাঁরাও দিল্লিতে ট্রাক্টর প্যারেড করবেন।
ছবি: Reuters/A. Hussain
সরকারের আপত্তি
মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠনে কোনো ব্যাঘাত ঘটলে তা দেশের কাছে বিড়ম্বনার কারণ হবে। কিন্তু যোগেন্দ্র যাদবের দাবি, তাঁরা জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানাতেই এই পরিকল্পনা করেছেন।
ছবি: Seerat Chabba/DW
9 ছবি1 | 9
আর তাদের থামাবার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে, হরিয়ানা ও কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লির সিঙ্ঘু, টিকরি ও গাজিয়াবাদ সীমানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে রাস্তায় বড় বড় পাথর ও সিমেন্টের চাঙড় ফেলা হয়েছে। তার সামনে সিমেন্ট দিয়ে মোটা মোটা লোহার পেরেক বসানো হয়েছে। লাগানো হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।
দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যাবতীয় প্রতিবাদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দিল্লিতে কোনো ট্রাক্টর ঢুকতে দেয়া হবে না। ট্রাকে করে মানুষকেও ঢুকতে দেয়া হবে না বলে প্রশাসন জানিয়েছে। এমনকি বিয়ে ও শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের জন্যও অনুমতি নিতে হবে। সেখানেও কোনো লাউড স্পিকার ব্যবহার করা যাবে না। উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা থেকে আসা গাড়িগুলি খুব ভালো করে তল্লাশি করে দেখা হবে।
দিল্লিতে প্রচুর লোহার ব্যারিকেডও লাগানো হয়েছে। প্রচুর জলকামান রাখা হয়েছে। কয়েক হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কৃষকেরা যাতে কোনোভাবে দিল্লিতে ঢুকতে না পারে, তার জন্য পুলিশ একেবারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে।
কৃষকদের সমর্থনে বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা
দিল্লির সীমানায় বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। তাঁদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা।
ছবি: Imtiyaz Khan/AA/picture alliance
সমর্থনে ধর্মেন্দ্র
৮৬ বছর বয়সী ধর্মেন্দ্র টুইট করে বলেছেন, ''আমার কৃষক ভাইয়েরা কষ্ট পাচ্ছেন দেখে আমি খুবই বেদনা বোধ করছি। সরকার দ্রুত কিছু করুক।'' ধর্মেন্দ্র একসময় লোকসভার সাংসদ ছিলেন। বিজেপি-র হয়ে দাঁড়িয়ে রাজস্থানের বিকানেরে জিতেছিলেন।
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/J. Kapoor
প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সমর্থন
শুরু করেছিলেন পাঞ্জাবি শিল্পী দলজিৎ দোসাঞ্জ। তারপর একের পর এক তারকা কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। যেমন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। তিনি বলেছেন, ''কৃষকরা হলেন আমাদের খাদ্য-সৈনিক। তাঁদের ভয় দূর করতে হবে। তাঁদের আশা পূরণ করতে হবে।''
ছবি: Imago/Zumapress
ইনস্টাগ্রামে সোনম কাপুর
বলিউডের আরেক নায়িকা সোনম কাপুর ইনস্টাগ্রামে কৃষক বিক্ষোভের একাধিক ছবি দিয়ে ড্যানিয়েল ওয়েবস্টারের একটা বিখ্যাত উদ্ধৃতি তুলে দিয়েছেন, ''যখন কৃষিকাজ শুরু হয়, অন্য সব শিল্প তাকে অনুসরণ করে।''
ছবি: AFP/Getty Images/S. Jaiswal
কৃষকদের পক্ষে প্রীতি জিন্টা
প্রীতি জিন্টাও টুইট করে বলেছেন, ''ঠান্ডা ও করোনার মধ্যে কৃষকরা সপরিবারে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁরা এই মাটির সৈনিক। আমি আশা করব, সরকার ও কৃষকদের মধ্যে আলোচনায় ফল হবে। সমস্যা মিটবে।''
ছবি: AP
পরিনীতি চোপড়ার সমর্থন
মাত্র একটি লাইন লিখেছেন পরিনীতি চোপড়া। তাতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি কৃষকদের পাশে। বলিউড-তারকা বলেছেন, ''ডিনার খেয়েছেন, একজন কৃষককে ধন্যবাদ দিন।''
ছবি: Getty Images/AFP/S. Panthaky
তাপসী পান্নু এবং অন্যরা
একের পর এক বলিউড তারকা কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। তাপসী পান্নু কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রীতেশ দেশমুখ, চিত্রাঙ্গদা সিং, সোনু সুদ, স্বর্ণ ভাস্কর, হানসাল মেহতা, হিমাংশি খুরানা, জিপ্পি গ্রেওয়ালরাও কৃষকদের পক্ষে কথা বলেছেন।
ছবি: Imago Images/Hindustan Times/S. Wankhade
কমেডিয়ান কপিলও
কমেডিয়ান কপিল শর্মা, গায়ক হানি সিং-রা কৃষকদের সমর্থন জানিয়েছেন। ছবিতে চন্দন প্রভাকর ও কিকু শারদার সঙ্গে কপিল শর্মা(মাঝখানে)।
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
উল্টো সুর কঙ্গনার
কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে উল্টো সুর কঙ্গনার। তিনি কৃষকদের সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে বলেছেন, কৃষকরা ভারতের বিভাজন চায়, যাতে চীন এসে তা দখল করে নিতে পারে। সম্প্রতি নানা বিষয়ে বিতর্কিত কথা বলেছেন কঙ্গনা।
ছবি: Getty Images
সোচ্চার হরভজন
ইডেনে তাঁর অফস্পিনের জাদুতে ধরাশায়ী হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বহু ম্যাচে তিনি ভারতকে জিতিয়েছেন। সেই হরভজন সিং এবার কৃষকদের পক্ষে ব্যাট করেছেন। তাঁর টুইট, ''কৃষকরা আমাদের খাবার দেন। আমরা কি তাঁদের জন্য একটু সময় দিতে পারি না। তাঁদের কথা শুনতে পারি না? পুলিশ দিয়ে তাঁদের মোকাবিলা না করে, আলোচনা করতে পারি না?''
ছবি: AP
বিজেন্দ্র সিং-এর প্রতিবাদ
বেজিং অলিম্পিক গেমসে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন বক্সার বিজেন্দ্র সিং। তিনি কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। তিনি তাঁর জাতীয় খেল রত্ন পুরস্কার ফেরত দিতে চান। শুধু তিনিই নন, পাঞ্জাবের প্রচুর ক্রীড়াবিদ পুরস্কার ফেরত দেয়ার কথা বলেছেন। সেই তালিকায় আছেন, কুস্তিগির কর্তার সিং, বাস্কেটবল প্লেয়ার সজ্জন সিং চিমা, হকি প্লেয়ার রাজবীর কাউর।
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
হরিয়ানায় সব পেট্রোল পাম্পকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ট্রাক্টরে ১০ লিটারের বেশি ডিজেল দেয়া যাবে না। হরিয়ানায় দুইটি স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী জেল হিসাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে কৃষকদের এখানে আটক করে রাখা হবে। পাঞ্জাব থেকে দিল্লি পর্যন্ত প্রচুর জায়গায় রাস্তা আটকে দেয়া হচ্ছে।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মান বলেছেন, পাকিস্তানের সীমান্তেও এতটা কড়াকড়ি থাকে না, যতটা কৃষকদের আটকাতে করা হয়েছে।
কেন এই ব্যবস্থা?
সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদীকে একমাত্র কৃষকদের আন্দোলনের সামনে নতিস্বীকার করতে হয়েছে। চাপের মুখে পড়ে তাকে সংসদে পাশ করা তিনটি কৃষি আইনকে বাতিল করতে হয়েছিল। দিল্লির সীমানায় যাবতীয় চাপ অগ্রাহ্য করে এক বছর ধরে আন্দোলন করেছিলেন কৃষকেরা। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে কৃষকেরা যাতে দিল্লিতে ওই ধরনের আন্দোলন আবার না করতে পারে, তার জন্য মোদী সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে।''