কৃষক ও রাজনীতিবিদদের বিরোধিতার মুখে একটু শিথিল করেই ইউরোপের সংসদে পাস হলো প্রকৃতি আইন৷ আইনটি চূড়ান্তভাবে পাস হলে প্রকৃতি সংরক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে এখন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর ৩২৯-২৭৫ ভোটে পাস হয়৷ ২৪ জন ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকেন৷
আইনটি ২৭ দেশের এই জোটের একটি ইউরোপীয় সবুজ চুক্তির মূল অংশ৷ এর লক্ষ্য উচ্চাভিলাষী৷ জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় বড় বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তৈরি এই আইনের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো ব্লকটিকে জলবায়ু বিষয়ক সব রেফারেন্সের বৈশ্বিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা৷
তবে এই আইনের বিরুদ্ধে কৃষকরা আন্দোলন করেছেন৷ এমনকি সোমবার ব্রাসেলসে এই আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠেছিল৷ এছাড়া ইউরোপীয়ান সংসদের বৃহত্তম দল পিপলস পার্টি বিরোধিতা করে৷ তাই আইনটিকে কিছুটা দুর্বল করে সংসদে পাস করানো হয়েছে৷
পরিকল্পনার অধীনে ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ২০৩০ সাল নাগাদ স্থল ও সমুদ্র অঞ্চলের কমপক্ষে ২০ ভাগ এলাকার প্রকৃতি ও প্রাণিবৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে হবে৷
ইইউ পরিবেশ কমিশনার ভার্জিনিউস সিনকেভিসিউস বলেন, নীতিটি ইইউ-র ‘জীববৈচিত্র্য, মূল্যবান বাস্তুতন্ত্র, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ মাটি ও পানি'র জন্যই শুধু নয়, কৃষকদের জন্যও একটি বড় অবদান৷ ইউরোপের বাস্তুতন্ত্রকে পুনঃসংরক্ষণের জন্য এই নীতি অবদান রাখবে বলে মনে করেন তিনি৷
তবে আইনটি প্রথমবার ২০২২ সালে আলোচনায় আসার পর থেকে তা কট্টরপন্থিদের বাধার মুখে পড়ে৷ কৃষকরা এই আইনের বিরোধিতা করেন৷ তাদের বিরোধিতার কারণ হলো, আইনে কীটনাশক ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ এবং আরো বেশি জমি প্রকৃতির জন্য ছেড়ে দেবার কথা বলা হয়৷ আইনের এই দুই অংশকে আপাতত শিথিল রেখেই তা পাশ করা হয়েছে৷
তবে তা চূড়ান্তভাবে কার্যকর করার জন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে এখন তার অনুমোদন দিতে হবে৷
জেডএ/এসিবি (এপি, রয়টার্স)
ইউরোপে উৎসব যেভাবে পরিবেশবান্ধব হতে পারে
শুরু হয় আনন্দ, উত্তেজনা দিয়ে৷ পরে সেই স্থান পরিণত হয় ময়লার স্তূপে৷ কীভাবে বদল সম্ভব? জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Jens Niering/picture alliance
ফেস্টিভ্যালের সংস্কৃতি
ইউরোপে গ্রীষ্মকাল আসা মানেই বিভিন্ন শহরে নানা ধরনের উৎসব শুরু৷ কখনো রক মিউজিক, কখনো হেভি মেটাল৷ আবার কখনো নিছক ফেলে আসা দিনের গান বা কখনো বসন্তের বদলে হোলি - উৎসব হতে পারে যে কোনো ধরনের৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে উৎসব শেষে পড়ে থাকে আবর্জনা৷
ছবি: Daniel Reinhardt/dpa/picture alliance
উৎসবের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ
আর পাঁচটা সংস্থার মতো সব উৎসবেরও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকার কথা৷ কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ, চলাফেরার ব্যবস্থা বা আবর্জনা ব্যবস্থাপনার মতো চ্যালেঞ্জ তাদের জন্য থাকে সাধারণের চেয়ে বেশি৷
ছবি: Tobias Schwarz/AFP
ছোট শহরের সমান আবর্জনা!
যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, ৩০ লাখ ফেস্টিভ্যালের অংশগ্রহণকারীরা বছরে ৫০ লাখ লিটার ডিজেল ব্যবহার করে৷ এতে করে যতটা কার্বন নিসৃত হয়, তা একটা ছোট শহরের কার্বন নিঃসরণের সমান৷ ফ্রান্সে এর দ্বিগুণ সংখ্যক ফেস্টিভ্যাল-যাত্রী রয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা যুক্তরাজ্যের দশগুণ!
ছবি: Jens Niering/picture alliance
তাঁবু ও তারপর...
ফেস্টিভ্যালের আবর্জনা মানেই কেবল ফাঁকা প্লেট, গ্লাস, সাজানোর জিনিস নয়৷ বেশিরভাগ ফেস্টিভ্যালে আবর্জনার স্তূপে এসে জড়ো হয় অংশগ্রহণকারীদের ফেলে রাখা তাঁবু৷ একেকটা তাঁবুর ওজন গড়ে সাড়ে তিন কিলো পর্যন্ত হয় এবং পুরোটাই প্লাস্টিকের তৈরি হয়৷ এটা প্রায় নয় হাজার প্লাস্টিক স্ট্র বা ২৫০ বিয়ার কাপের সমান! এই তাঁবুগুলি পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয় বলে অপচয় হয় বেশি৷
ছবি: Devlin/PA/dpa/picture-alliance
শুরু থেকে শেষ, পরিবেশবান্ধব
নেদারল্যান্ডসের ‘ডিজিটিএল’ ফেস্টিভ্যাল বিশ্বের প্রথম সার্কুলার ইকোনমি ফেস্টিভ্যাল, অর্থাৎ, এই ফেস্টিভ্যালে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ পুরোটাই আসছে সৌর শক্তি ও জলজ শক্তি থেকে৷ ফেস্টিভ্যালে ব্যবহৃত পানিও পরিশুদ্ধ করে আবার ব্যবহার করা হয়৷ এখানে বর্জ্যও প্রক্রিয়াজাত করা হয়, গ্লাস বা কাপ ফেরত দিলে টাকাও পাওয়া যায়৷
ছবি: Scott Garfitt/Invision/AP/picture alliance
ছোট অথচ সাশ্রয়ী
মিলানের টেরাফর্ম ফেস্টিভ্যালে আসেন মাত্র দুই হাজার মানুষ৷ সেখানে পেট্রলের বদলে ব্যাটারিচালিত গাড়ি রয়েছে৷ ফেস্টিভ্যালের মূল মঞ্চ বানানো হয় ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের কাঠ দিয়ে৷ এই ফেস্টিভ্যালে প্লাস্টিক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷
ছবি: JOSEP LAGO/AFP/Getty Images
অংশগ্রহণকারীদের দায়িত্ব
গাড়ি নিয়ে তেল পুড়িয়ে যাবার বদলে ফেস্টিভ্যালের অংশগ্রহণকারীরা ট্রেনে বা অন্যান্য গণপরিবহণ ব্যবহার করতে পারেন৷ এটা আরো পরিবেশবান্ধব হবে৷ আর খুব দূরে ফেস্টিভ্যাল হলে একাধিকজন একসাথে মিলে গেলে কম হবে মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ৷
ছবি: Jonathan Horwitz /The Desert Sun/USA Today Network/IMAGO
ট্রেনে হোটেল?
জার্মানির মেল্ট ফেস্টিভ্যাল তার অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি বিশেষ হোটেল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে৷ কোলন বা মিউনিখ থেকে যাত্রীরা চাপতে পারেন এই ট্রেনে৷ ফেস্টিভ্যাল চলাকালীন হোটেলে না থেকে রাত কাটানো যাবে ট্রেনের কামরাতেই৷ তারপর সব শেষে আবার এই ট্রেনেই ঘরে ফেরা৷ কয়েক টন কার্বন নিঃসরণ কম হবে এই পন্থায়৷