কৃষক সংগঠনগুলির ডাকে সোমবার শুরু হয়েছে ভারত বনধ। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানার অনেক রাস্তাই বন্ধ।
বিজ্ঞাপন
তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে একযোগে আন্দোলন করছে ৪০টি কৃষক সংগঠন। দিল্লির সীমানায় তারা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দেখাচ্ছে। সরকার তাদের দাবি না মানায় সোমবার তারা ভারত বনধের ডাক দিয়েছে। সকাল ছয়টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত বনধ হবে বলে জানিয়েছে সংযুক্ত কৃষক মোর্চা। আর তাদের ডাকা বনধকে সমর্থন করছে, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, বাম, স্বরাজ দল, এনসিপি, ডিএমকে, আরজেডি এবং তেলুগু দেশম পার্টি।
কৃষকরা ইতিমধ্যেই গাজিপুরে দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশে যাওয়ার সড়ক বন্ধ করে দিয়েছেন। দিল্লি-মিরাট হাইওয়েতেও বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তারা। মানেসরের কাছে তারা দিল্লি-হরিয়ানা সড়কও বন্ধ করেছেন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা সীমানাও তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। নিরাপত্তার কথা ভেবে লালকেল্লার সামনে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এই বিক্ষোভের ফলে দিল্লি ও গুরুগ্রাম সীমানায় সকাল থেকেই ব্যাপক যানজট হয়েছে। কৃষকরা বিভিন্ন জায়গায় রেললাইনের উপরেও বসে পড়েছেন।
পাঞ্জাবের বিভিন্ন জায়গায় কৃষকরা রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। অমৃতসরে প্রচুর কৃষক জড়ো হয়েছেন। তারা রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। কৃষক নেতা শরণ সিং বলেছেন, দিল্লির সীমানায় কৃষক নেতারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সরকার তাদের কথা শুনছে না। তাই তারা ভারত বনধ ডাকতে বাধ্য হয়েছেন।
মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস, এনসিপি ভারত বনধকে সমর্থন করছে। মুম্বই-আমদাবাদ হাইওয়ে সকালে দীর্ঘক্ষণ বন্ধ ছিল। ফলে বিশাল যানজট দেখা যায়।
কেরালায় ক্ষমতাসীন বাম ও প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ভারত বনধকে সমর্থন করছে। তাই কেরালা পুরোপুরি বন্ধ। হরিয়ানাতেও বনধের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ও উত্তরাখণ্ডেও কৃষকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
কৃষকদের সমর্থনে বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা
দিল্লির সীমানায় বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। তাঁদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা।
ছবি: Imtiyaz Khan/AA/picture alliance
সমর্থনে ধর্মেন্দ্র
৮৬ বছর বয়সী ধর্মেন্দ্র টুইট করে বলেছেন, ''আমার কৃষক ভাইয়েরা কষ্ট পাচ্ছেন দেখে আমি খুবই বেদনা বোধ করছি। সরকার দ্রুত কিছু করুক।'' ধর্মেন্দ্র একসময় লোকসভার সাংসদ ছিলেন। বিজেপি-র হয়ে দাঁড়িয়ে রাজস্থানের বিকানেরে জিতেছিলেন।
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/J. Kapoor
প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সমর্থন
শুরু করেছিলেন পাঞ্জাবি শিল্পী দলজিৎ দোসাঞ্জ। তারপর একের পর এক তারকা কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। যেমন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। তিনি বলেছেন, ''কৃষকরা হলেন আমাদের খাদ্য-সৈনিক। তাঁদের ভয় দূর করতে হবে। তাঁদের আশা পূরণ করতে হবে।''
ছবি: Imago/Zumapress
ইনস্টাগ্রামে সোনম কাপুর
বলিউডের আরেক নায়িকা সোনম কাপুর ইনস্টাগ্রামে কৃষক বিক্ষোভের একাধিক ছবি দিয়ে ড্যানিয়েল ওয়েবস্টারের একটা বিখ্যাত উদ্ধৃতি তুলে দিয়েছেন, ''যখন কৃষিকাজ শুরু হয়, অন্য সব শিল্প তাকে অনুসরণ করে।''
ছবি: AFP/Getty Images/S. Jaiswal
কৃষকদের পক্ষে প্রীতি জিন্টা
প্রীতি জিন্টাও টুইট করে বলেছেন, ''ঠান্ডা ও করোনার মধ্যে কৃষকরা সপরিবারে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁরা এই মাটির সৈনিক। আমি আশা করব, সরকার ও কৃষকদের মধ্যে আলোচনায় ফল হবে। সমস্যা মিটবে।''
ছবি: AP
পরিনীতি চোপড়ার সমর্থন
মাত্র একটি লাইন লিখেছেন পরিনীতি চোপড়া। তাতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি কৃষকদের পাশে। বলিউড-তারকা বলেছেন, ''ডিনার খেয়েছেন, একজন কৃষককে ধন্যবাদ দিন।''
ছবি: Getty Images/AFP/S. Panthaky
তাপসী পান্নু এবং অন্যরা
একের পর এক বলিউড তারকা কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। তাপসী পান্নু কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রীতেশ দেশমুখ, চিত্রাঙ্গদা সিং, সোনু সুদ, স্বর্ণ ভাস্কর, হানসাল মেহতা, হিমাংশি খুরানা, জিপ্পি গ্রেওয়ালরাও কৃষকদের পক্ষে কথা বলেছেন।
ছবি: Imago Images/Hindustan Times/S. Wankhade
কমেডিয়ান কপিলও
কমেডিয়ান কপিল শর্মা, গায়ক হানি সিং-রা কৃষকদের সমর্থন জানিয়েছেন। ছবিতে চন্দন প্রভাকর ও কিকু শারদার সঙ্গে কপিল শর্মা(মাঝখানে)।
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
উল্টো সুর কঙ্গনার
কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে উল্টো সুর কঙ্গনার। তিনি কৃষকদের সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে বলেছেন, কৃষকরা ভারতের বিভাজন চায়, যাতে চীন এসে তা দখল করে নিতে পারে। সম্প্রতি নানা বিষয়ে বিতর্কিত কথা বলেছেন কঙ্গনা।
ছবি: Getty Images
সোচ্চার হরভজন
ইডেনে তাঁর অফস্পিনের জাদুতে ধরাশায়ী হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বহু ম্যাচে তিনি ভারতকে জিতিয়েছেন। সেই হরভজন সিং এবার কৃষকদের পক্ষে ব্যাট করেছেন। তাঁর টুইট, ''কৃষকরা আমাদের খাবার দেন। আমরা কি তাঁদের জন্য একটু সময় দিতে পারি না। তাঁদের কথা শুনতে পারি না? পুলিশ দিয়ে তাঁদের মোকাবিলা না করে, আলোচনা করতে পারি না?''
ছবি: AP
বিজেন্দ্র সিং-এর প্রতিবাদ
বেজিং অলিম্পিক গেমসে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন বক্সার বিজেন্দ্র সিং। তিনি কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। তিনি তাঁর জাতীয় খেল রত্ন পুরস্কার ফেরত দিতে চান। শুধু তিনিই নন, পাঞ্জাবের প্রচুর ক্রীড়াবিদ পুরস্কার ফেরত দেয়ার কথা বলেছেন। সেই তালিকায় আছেন, কুস্তিগির কর্তার সিং, বাস্কেটবল প্লেয়ার সজ্জন সিং চিমা, হকি প্লেয়ার রাজবীর কাউর।
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
সরকারের বক্তব্য
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর বলেছেন, সরকার কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। তাই কৃষকদের উচিত এই ধরনের আন্দোলন থেকে বিরত থাকা এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা।
তবে কৃষক নেতারা এর আগে বলেছেন, সরকার তাদের মূল দাবি মানতে রাজি নয়। সরকার কিছুতেই তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিল করবে না। তাই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো লাভ হচ্ছে না। সরকার তাদের মূল দাবি মানতে না চাইলে আলোচনায় বসে কোনো লাভ নেই।
ভোটের আগে
উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে তো আগামী বছরের গোড়ায় বিধানসভা নির্বাচন। তাই, কৃষকরাও এখন আবার আন্দোলন জোরদার করে সরকারের উপর বাড়তি চাপ দেয়ার চেষ্টা করছেন। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভরত কৃষকদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।