গত বছর ভারতে আত্মহত্যা করেছেন ৫ হাজার ৬৫০ জন কৃষক৷ সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা হয়েছে মহারাষ্ট্র রাজ্যে৷ সেখানে ২ হাজার ৫৬৮ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন এক বছরে! মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চলে আত্মহত্যার হার রীতিমতো আতঙ্কজনক৷
বিজ্ঞাপন
ভারতে দুর্নীতির রেকর্ড সংরক্ষণ ব্যুরো এনসিআরবি-র প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে এ সব তথ্য৷ আত্মহত্যার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছে বেশ কয়েকটি কৃষক সংগঠন৷ ‘কিষান মিত্র' নামের ব্যানারে কাজ করেছে তারা৷ তাদের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ফসল ভালো না হওয়া এবং চাষের জন্য নেয়া ঋণ কৃষকদের আত্মহত্যার অন্যতম কারণ৷
মহারাষ্ট্রের কৃষকদের ভয়াবহ দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরেছে সেখানকার পরিসংখ্যান৷ সেই রাজ্যের শুধু বিদর্ভ অঞ্চলেই গত তিন বছরে আত্মহত্যা করেছেন মোট ৩ হাজার ১৪৫ জন কৃষক৷ তাঁদের মধ্যে ৯০০-রও বেশি, অর্থাৎ প্রায় এক তৃতীয়াংশের ঋণ ছিল৷ খুব বেশি নয়, মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ঋণ ছিল তাঁদের৷ কিন্তু ওই টাকা পরিষোধ করারও সামর্থ্য নেই বলেই তাঁরা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে৷
যেসব দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, সারা বিশ্বে গড়ে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করে৷ ছবিঘরে থাকছে শীর্ষ পাঁচটি দেশের কথা যেখানে আত্মহত্যার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: Fotolia/Dan Race
গায়ানা
ক্যারিবীয় দেশ গায়ানায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ২০১২ সালে সেখানকার প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ৪৪.২ জন আত্মহত্যা করেছে৷ প্রচণ্ড দারিদ্র্য, মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন এর কারণ বলে জানা গেছে৷ তরল বিষ পান করেই গায়ানার মানুষ বেশি আত্মহত্যা করেছে৷
ছবি: C. Rose/Getty Images
উত্তর কোরিয়া
তালিকায় গায়ানার পরেই উত্তর কোরিয়ার অবস্থান৷ প্রতি বছর গড়ে সেখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে৷ মানবাধিকার লঙ্ঘন, আর্থিক দৈন্যতা, সরকারি নির্যাতনের ভয় থেকে সৃষ্ট চাপ – এসব কারণে সেদেশের মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দক্ষিণ কোরিয়া
চাকরির চাহিদা পূরণের চাপ এবং পড়ালেখা ও সামাজিক চাপের কারণে দক্ষিণ কোরীয়রা আত্মহত্যা করে থাকে৷ বিশেষ করে নভেম্বরে কলেজ ভর্তি পরীক্ষার আগে আত্মহত্যার হার যায় বেড়ে৷ বিষয়টি এতটাই উদ্বেগজনক যে, সরকার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর উপর নজরদারি করে সম্ভাব্য আত্মহত্যা ঠেকানোর পদক্ষেপ নিয়ে থাকে৷ জাতিসংঘের হিসেবে ২০১২ সালে সেদেশে এক লক্ষ জনের মধ্যে ২৮.৯ জন আত্মহত্যা করেছে৷
ছবি: picture alliance/Yonhap
শ্রীলঙ্কা
দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কাতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে৷ ২০১২ সালে সে দেশে প্রতি এক লক্ষের মধ্যে ২৮.৮ জন আত্মহত্যা করে৷ দারিদ্র্য ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা এর কারণ বলে জানা গেছে৷
ছবি: Reuters/Dinuka Liyanawatte
লিথুয়েনিয়া
ইউরোপের মধ্যে এই দেশটিতেই আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ২০১২ সালে লিথুয়েনিয়ার এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ২৮.২ জন আত্মহত্যা করেছে৷ সামাজিক ও আর্থিক সমস্যাই সেখানকার মানুষের আত্মহত্যার মূল কারণ৷ গত শতকের নব্বইয়ের দশকে দেশটিতে আত্মহত্যার হার আরও বেশি ছিল৷
ছবি: DW/M. Griebeler
বাংলাদেশের অবস্থান?
জাতিসংঘের হিসেবে ২০১২ সালে বাংলাদেশের প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে গড়ে ৭.৮ জন আত্মহত্যা করেছে৷ এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬.৮, আর নারীর সংখ্যা ৮.৭৷ অর্থাৎ নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি সংখ্যায় আত্মহত্যা করেছে৷ যদিও জাতিসংঘের হিসেবে ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী পুরুষদের আত্মহত্যার সংখ্যা মেয়েদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি ছিল৷
ছবি: DW/M. Mamun
6 ছবি1 | 6
আত্মহত্যা করেছেন এমন কৃষকদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগেরই বয়স ৩০ বা তার কম৷ শতকরা ৩৫ ভাগের বয়স ৩১ থেকে ৪৫-এর মধ্যে৷ গত তিন বছরে ভারতে যতজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ২০৮ জনের বয়স ৬৫ বছরের বেশি ছিল৷
বিদর্ভে গত তিন বছরে যে ৩ হাজার ১৪৫ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন, তাঁদের মধ্যে ৯২৫ জন মনে করতেন যে, সরকার তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়৷ শতকরা ১০ ভাগ তাঁদের বিপর্যয়ের জন্য খরা, অতিবৃষ্টি এবং বজ্রপাতকে দায়ী ভাবতেন৷ ১১৭ জন ফসলের ক্ষতিজনিত বিপর্যয়ের কারণে পরিবারের বিবাহযোগ্য মেয়ের বিয়ে যাতে ভেঙে না যায় – সেই কথা ভেবে নিজের জীবনে ইতি টেনেছেন৷ এছাড়া ২৯৬ জন অসুস্থতাজনিত কারণে এবং মোট আত্মহত্যাকারীর শতকরা ১২ ভাগ পারিবারিক কলহের জেরে আত্মঘাতী হয়েছেন৷
২০১৪ সালে সবচেয়ে বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন মহারাষ্ট্র রাজ্যে৷ সারা দেশের মোট ৫ হাজার ৬৫০ জনের মধ্যে ২ হাজার ৫৬৮ জনই সেই রাজ্যের৷ কৃষকের আত্মহত্যার হারের দিক থেকে মহারাষ্ট্রের পরে আছে যথাক্রমে তেলেঙ্গানা (৮৯৮জন) ও মধ্যপ্রদেশ (৮২৬)৷ আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৫ হাজার ১৭৮ জন পুরুষ আর ৪৭২ জন নারী৷
জলপরি নয়, এরা হলো ‘জলপত্নী’
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত গ্রামে পুরুষরা শুধুমাত্র পানি এনে দেওয়ার জন্য বহুবিবাহ করেন! দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্ত্রীর কাজ বাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণ পানির ব্যবস্থা করা৷ এরাই হলো ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
একজন পুরুষের তিনজন স্ত্রী
৬৬ বছর বয়সি সাখারাম ভাগতের এখন মোট তিনজন স্ত্রী৷ ওঁদের একজনের নাম সাখরি, পরের জন টুকি এবং তৃতীয় বউ ভাগি৷ ‘‘আমার প্রথম স্ত্রীকে সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয়, তাই পানি আনার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করি৷ কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী যখন অসুস্থ হয়ে যায়, তখন পানি আনতে ভীষণ সমস্যা হতো৷ তাই তৃতীয়বার বিয়ে করি আমি’’, বলেন শাখারাম৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
‘ওয়াটার ওয়াইফ’-এর সম্মান
ছবিতে ভাগত তাঁর দুই স্ত্রী ভাগি এবং সাখরিকে নিয়ে পানি আনতে যাচ্ছেন৷ এর জন্য তাঁদের গ্রাম ছাড়িয়ে অনেকটা পথ যেতে হয়৷ সংসারের প্রয়োজনে যাঁরা এতদূর থেকে পানি বয়ে আনেন, তাঁদের, অর্থাৎ এই ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’-দের গ্রামের মানুষরা কিন্তু খুবই সম্মানের চোখে দেখেন৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ
ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ফেডারেল রাজ্য ‘মহারাষ্ট্রের’ এমনই একটি গ্রামর চিত্র এটি৷ কুয়ার সামনে স্থানীয় এক ‘জলপত্নী’ পানির পাত্র আর কলসিগুলোতো একে একে পানি ঢালছেন৷ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, গত বছর ভারতের প্রায় ১৯ হাজার গ্রামে খাবার পানি ছিল না৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
বাঁচার জন্য পানি সঞ্চয়
মহারাষ্ট্রে খরা নতুন কিছু নয়৷ শেষবারের খরার সময় সাখারাম ভাগতের পরিবার জলকষ্টে ভীষণভাবে ভুগেছে৷ তাই আর জলের কষ্ট নয়! পিতলের কলসিগুলোতে আজকাল সব সময়েই যথেষ্ট পরিমাণে পানি ভরে রাখছে ওরা, যাতে আর ভোগান্তি না হয়৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
ভারতে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ
ভারতে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যন্ত এ সমস্ত গ্রামে ‘ওয়াটার ওয়াইফ’-এর রীতি বেড়ে চলেছে৷ তবে বেশিরভাগ সময়ই যেসব পুরুষ শুধু পানি আনার জন্য বিয়ে করেন, তাঁরা ‘জলপত্নী’-দের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মতো এক বিছানায় ঘুমান না৷ ঠিক সেরকমই একটি পরিবারের কর্তা নামদেব৷ তাঁর দুই স্ত্রী শিবারতি (বামে) এবং বাগাবাই৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
মাথায় পানি, কোলে নাতি
নামদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী শিবারতি অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাথায় পানি বহন করে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে৷ কোলে নাতিটিকেও সঙ্গে নিতে হয়েছে তাঁর৷ ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’-দের জীবন এরকমই৷ তাঁরা এক হয় বিধবা অথবা একক মা৷ আগের পক্ষের সন্তান বা নাতি-নাতনিকে বড় করে তোলার জন্য অনেকক্ষেত্রে একাই অভিভাবকের সমস্ত দায়িত্ব পালন করতে হয় তাঁদের৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
সাদা-কালো স্মৃতি চিহ্ন
নামদেবের প্রথম স্ত্রী বাগাবাই৷ তাঁর ঘরের দেয়ালে টাঙানো রয়েছে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের পুরনো আমলের সাদা-কালো একটি ছবি৷ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্ত্রীর মর্যাদা যে প্রথম স্ত্রীর সমান নয়, দেয়ালের ঠিক মাঝখানে টাঙানো ছবিটি সেটাই বলে দিচ্ছে৷ তারপরও স্বামীকে একেবারে নিজের বলার উপায় আছে কি?