1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কৃষক আন্দোলন ও পরিবেশ রক্ষা: জার্মান সরকারের চ্যালেঞ্জ

২৬ অক্টোবর ২০১৯

সরকারের কৃষি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জার্মানির বিভিন্ন শহরে গত সপ্তাহে বড় ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন দেশটির কৃষকেরা৷ অন্যদিকে এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাচ্ছেন পরিবেশ ও প্রাণী অধিকার আন্দোলনকারীরা৷

Deutschland Bonn | Protest der Landwirte gegen Agrarpolitik der Bundesregierung
ছবি: DW/N. Ranjan

মুন্সটার প্লাটজ৷ বন শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই চত্বরে কনসার্ট হয়, মেলা বসে, প্রদর্শনীও চলে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে৷ গত সোমবার সেই চত্ত্বরেই জড়ো হয়েছিলেন জার্মানির হাজারো কৃষক৷ তারা এসেছেন আশপাশ কিংবা কয়েকশো মাইল দূরের লোয়ার স্যাক্সোনি থেকে৷ কেউ এসেছেন একা, কেউ গোটা পরিবার নিয়ে৷ তাদের মধ্যে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী যেমন ছিল তেমনি উপস্থিতি ছিল বয়স্কদেরও৷ তাঁদের কেউ চাষী, কেউবা খামারী৷ অনেকের হাতেই ছিল সূর্যমুখী ফুল যা দেশটির অন্যতম কৃষি পণ্য ৷

কৃষকেরা সাথে করে নিয়ে এসেছেন হাজার খানেক ট্রাক্টরও৷ সেগুলো সাধারণত সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ হলেও বন শহরের প্রবেশদ্বারগুলোতে তারা ঘিরে ফেলেন যানগুলো দিয়ে৷ তাতে গোটা শহরই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে৷

এই কর্মসূচি ছিল সরকারের বিরুদ্ধে, দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক পদক্ষেপের প্রতিবাদে৷ আর মন্ত্রণালয়টির অবস্থান বন শহরেই৷

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর হিসাবে এক হাজার ট্রাক্টর নিয়ে ১০ হাজারের বেশি কৃষক এদিন বন শহরের প্রতিবাদ সমাবেশে সামিল হন৷ এর বাইরে বার্লিন, মিউনিখ, হ্যানোভারসহ আরো ১৭ টি শহরে একযোগে এই কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া গেছে৷

কৃষকেরা সাথে করে নিয়ে এসেছেন হাজার খানেক ট্রাক্টরওছবি: DW/N. Ranjan

কেন ক্ষুব্ধ জার্মান কৃষকরা

গত সেপ্টেম্বরে জার্মানির কৃষিমন্ত্রী  এবং পরিবেশমন্ত্রী দেশটির সংসদ-বুণ্ডেসটাগে একটি কৃষি পরিকল্পনা পেশ করেন৷ এতে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো, পরিবেশ রক্ষা ও প্রাণীদের অধিকার সংরক্ষণের বিভিন্ন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷ যার মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালে মধ্যে জমিতে ঘাসসহ আগাছা উৎপাটনের জন্য ব্যবহৃত গ্লাইফোসেটের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা৷ লাগাম টেনে ধরা হবে সার ও রাসায়নিক ব্যবহারেও৷ যাতে ভূগর্ভস্থ পানিতে ক্ষতিকর নাইট্রেটের উপস্থিতি হ্রাস করা যায়৷ 

কিন্তু সরকারের এই পরিকল্পনাকে ফ্যামিলি ফার্মিং বা পরিবারভিত্তিক কৃষি ধ্বংসের প্রস্তাব বলে মনে করছেন কৃষকরা৷ তাদের দাবি অতীতে মজুদ নাইট্রেটই এখনও ব্যবহার করে যাচ্ছেন তারা৷ আর সারের ব্যবহার কমানোর কথা বলা হয়েছে যথাযথ বিশেষজ্ঞ মতামত ছাড়াই৷ 

প্রতিবাদকারীরা কৃষিমন্ত্রী ইয়ুলিয়া ক্ল্যোকনার এবং পরিবেশমন্ত্রী স্ফেনিয়া শুলৎসকে অবিলম্বের পরিকল্পনাটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন৷ এ বিষয়ে কোন আলোচনা করতেও রাজি নন তারা৷

জার্মান কৃষকরা আপত্তি জানিয়েছেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর জোটের সাথে করা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও৷ এর ফলে প্রতিযোগিতা সুবিধা হারাবেন বলে দাবি করেছেন তারা৷

ভর্তুকির টাকা পায় না কৃষকরা

টেকসই ও পরিবেশসম্মত পদ্ধতিতে কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রতিবছর এই খাতে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে ইউরোপ, যার পরিমান এখন ৬৮ বিলিয়য়ন ডলার৷ এর মধ্যে জার্মানি পায় ছয় দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার৷

ভর্তুকির টাকার বড় অংশটিই বৃহৎ ফার্মগুলো পকেটে যায় বলে অভিযোগ করে আসছে কৃষকদের৷ আন্দোলনকারীদের দাবি প্রতি বছর জার্মানির ৩,৩০০ বৃহৎ খামার ১১৪ কোটি ডলার ভর্তুকি নিচ্ছে৷ যেখানে পরিবারভিত্তিক ২ লাখ কৃষি খামার পাচ্ছে ৭৯ কোটি ডলার৷ এই ভর্তুকির কারণে বড় কোম্পানিগুলো লাভবান হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের৷       

ট্রাক্টর নিয়ে বিক্ষোভ, হাজার কিলোমিটার যানজট

02:13

This browser does not support the video element.

প্রাণী রক্ষা নাকি কৃষক

বনে মুন্সটার প্লাটজের মূল চত্ত্বরে যখন কৃষকদের সমাবেশ চলছে তখন পাশে দাড়িয়ে প্রতিবাদ করছিল আরেকটি গ্রুপ৷ তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড৷ এই আন্দোলনকারীরা মনে করেন সরকার নতুন কৃষি পরিকল্পনা যথাযথ হয়েছে৷ তাদের মতে শুধু কৃষক আর মানুষ নিয়ে চিন্তা করলেই হবে না, ভাবতে হবে প্রাণীদের কথা, দিতে তাদের বাঁচার অধিকার৷ আন্দোলনের মুখপাত্র হাইকো বলেন, ‘‘যাদের কণ্ঠস্বর নেই সেইসব প্রাণীদের জন্য আমাদের কণ্ঠস্বর জাগ্রত করতে হবে৷ শুধু প্রাণী না, মানুষ, পরিবেশ, জলবায়ু সবকিছুর জন্যই আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে৷ প্রাণী কিংবা মানুষে দুই পক্ষের উপরই শোষণের ইতি ঘটাতে হবে৷ ''

তাঁর মতে বর্তমান যে কৃষি ব্যবস্থা টিকে আছে সেখানে কৃষকরাও উপকৃত হতে পারেন না৷ মূলত সরকারই লাভবান হয়৷ এজন্য তাঁর পরামর্শ কৃষকরা নিজেরাও যাতে নিরামিষভোজী হয় এবং প্রাণী খামার গড়ে না তুলে সবজি চাষ করে৷ তাতে সবাই লাভবান হবে৷

কী করবে সরকার?

জলবায়ু পরিবর্তনের জের ধরে বিশ্বজুড়ে মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের তাগিদ দিয়ে আসছে পরিবেশ আন্দোলকারীরা৷ বলা হচ্ছে মাংসের চাহিদা মেটাতে গিয়ে পশু পালনের কারণে বিশ্বে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণের পরিমান বাড়ছে৷ ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইউরোপে সাড়ে নয় ভাগের বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হয়েছে কৃষিখাত থেকে৷ এমন অবস্থায় টেকসই কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশবাদীরা ক্রমশ এইসব দেশের সরকারকে চাপ দিয়ে আসছে৷ অন্যদিকে প্রাণী হত্যা বন্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে প্রাণী অধিকারের জন্য লড়া সংগঠনগুলো৷

ঠিক এমন এক অবস্থাতেই জার্মান সরকার নতুন কৃষি পরিকল্পনা হাজির করেছে সংসদে৷ কিন্তু এই নীতি গ্রহণ করা হলে যে পরিবর্তন ঘটবে তাতে কৃষকরা কীভাবে খাপ খাওয়াবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন৷ ৫০ বিলিয়ন ইউরোর যেই খাতটির উপর জড়িত দেশটির প্রায় ১০ লাখ মানুষ, দুই লাখ ৭০ হাজার কৃষিভিত্তিক শিল্পও৷

এফএস/কেএম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ