পর পর দুই দিন দুই কৃষকের মৃত্যু হলো দিল্লি সীমান্তে। সুপ্রিম কোর্ট দ্রুত সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দিয়েছে সরকারকে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার আত্মহত্যা করেছিলেন একজন। বৃহস্পতিবার ফের এক কৃষকের মৃত্যু হলো দিল্লি সীমানায়। আন্দোলনকারী কৃষকদের দাবি, ঠান্ডায় মৃত্যু হয়েছে ওই কৃষকের। এর আগে বুধবার হরিয়ানার সন্ত রাম সিং সিংঘু সীমানায় আত্মঘাতী হন। সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন, কৃষকদের এই দুর্দশা সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করলেন। নিজের জীবন দিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়ালেন। দুই ঘটনাতেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে বিক্ষোভরত কৃষকদের মধ্যে।
বুধবার সিংঘু সীমানায় কৃষক বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন সন্ত রাম সিং। হরিয়ানায় সন্ত হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। তাঁর বেশ কিছু ভক্তও আছে। বুধবার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলার পরে রাস্তাতেই নিজের দিকে তাক করে গুলি ছোড়েন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় পানিপথের হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। সন্তের কাছ থেকে একটি চিরকুট মিলেছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, কৃষকদের দুর্দশা সহ্য করতে না পেরেই তিনি আত্মহত্যা করলেন। নিজের জীবন দিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়ালেন।
দিল্লির রাজপথের দখল নিচ্ছেন কৃষকরা
বিতর্কিত আইন প্রণয়নের প্রতিবাদে পাঞ্জাবের কৃষকরা ভারতের রাজধানী দিল্লির পথে নেমেছে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: IANS
ব্যর্থ আলোচনা
রাজধানী দিল্লি ও হরিয়ানার সীমান্তে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ জানাচ্ছেন কৃষকরা৷ সদ্য পাস হওয়া কৃষি বিল মানতে না পারায় সরকারের সাথে আলোচনায় বসছে কৃষক সংগঠনগুলির নেতৃত্ব৷ কিন্তু এখনো কোনো সুরাহা হয়নি৷ চলছে কৃষকদের অবস্থান বিক্ষোভ৷
ছবি: Moshin Javed
ছাড় নেই
কৃষকদের দাবির মুখে এখনো অনড় কেন্দ্রীয় সরকার৷ প্রতিবাদী কৃষকরা যাতে দিল্লির মূল রাস্তায় না ঢুকতে পারেন, সেজন্য যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Moshin Javed
কর্পোরেটের দখল
ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সম্প্রতি সংসদে তিনটি কৃষি বিল পাশ করেছে৷ নতুন নিয়মের আওতায় এখন আর ফসলের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করতে পারবেন না কৃষকরা৷ খোলা বাজারের নিয়ম মেনেই ঠিক হবে ফসলের দাম৷ কৃষকদের বক্তব্য, এই নিয়মের কারণে কর্পোরেট সংস্থাগুলির প্রভাব বাড়বে, কমবে ফসল ফলানো কৃষকদের অধিকার৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
ফসলের ন্যূনতম দাম
এমএসপি বা মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইসের ব্যবস্থা এতদিন নিশ্চিত করেছে ফসলের দাম৷ এই এমএসপির সুবিধা তুলে দেওয়ায় বড় বড় কর্পোরেট সংস্থা কৃষকদের ক্ষতির কারণ হতে পারে৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
চাপে স্থানীয় নেতৃত্ব
যদিও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব বলছে যে, এমএসপির সুবিধা সরানো হবে না, কৃষক সংগঠনগুলির মত, তবুও বাড়বে কৃষিক্ষেত্রে কর্পোরেট হস্তক্ষেপ, যার কোপ এসে পড়বে ছোট চাষীদের ওপরেই৷ প্রতিবাদে বিজেপি কার্যালয়গুলির সামনে ও নেতাদের বাসস্থানের বাইরেও অবস্থানে রয়েছেন কৃষকরা৷ অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামাঞ্চলে, যেখানে কৃষিনির্ভর পরিবারের বাস, সেখানে সমর্থন হারাচ্ছে বিজেপি৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
পাঞ্জাবের রাজনীতিতে প্রভাব
কৃষক সংগঠনগুলি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলকে এই প্রতিবাদে না টানলেও, তাদের এই প্রতিবাদ সরকারকে চাপে রাখছে৷ পাঞ্জাবে বহুদিন ধরেই বিজেপির জোটসঙ্গী আকালি দল, যারা চলমান প্রতিবাদের পরিস্থিতিতে জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে৷ বলা হচ্ছে, এমনটা তারা করেছে স্থানীয় সমর্থন না হারাতে৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
সম্মানের, জীবিকার প্রশ্ন
পাঞ্জাবে একজন কৃষক গড়ে এক থেকে দুই হেক্টর জমির মালিক৷ তবে সেই জমি থেকে আয় খুব একটা বেশি নয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের খরচ চালানোর জন্য তা যথেষ্টই হয়৷ ভারতের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ প্রায় ১২০ কোটি মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল৷ ফলে, তাদের জন্য এই প্রতিবাদ গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
কিছু বদলাবে কি?
কৃষকদের মত, তাদের সমস্যা শুনতে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ৷ উল্টোদিকে, কৃষকদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযোগ, তারা ‘নতুন বিলগুলি ঠিক করে পড়েনি’, তারা‘অর্থনীতি বুঝতে নারাজ’, এবং তারা ‘অতীতেই আটকে আছে’৷ কৃষকরা ‘রাজনৈতিক ঘুঁটি’, এমনটাও শোনা গেছে সরকারের তরফে৷ কৃষকরা হলফ করে বলতে পারছেন না এখনো কতদিন পথ আঁকড়ে পড়ে থাকবেন৷ কিন্তু প্রতিবাদ থেকে সরে এলে তাঁদের কথা প্রচার করবার কোনো পন্থা থাকবে না বলে মনে করেন তারা৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
8 ছবি1 | 8
এ দিকে বৃহস্পতিবার আরো এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। প্রবল ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বস্তুত, বৃহস্পতিবার দিল্লির তাপমাত্রা চার ডিগ্রি। প্রবল শীতের মধ্যেই রাস্তায় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। সেই শীত সহ্য করতে না পেরেই ওই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এ দিকে বুধবারই সুপ্রিম কোর্ট কৃষক আন্দোলন নিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার বার বারই এই আন্দোলনকে কয়েকটি অঞ্চলের কৃষকের বিক্ষোভ বলে দেখানোর চেষ্টা করছে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, বিষয়টি দ্রুত জাতীয় বিষয় হয়ে উঠবে। তার আগেই সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক। কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দরকারে একটি কমিটি গঠন করা হোক।
কৃষকরা অবশ্য কমিটি গঠনের বিরোধী। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের আইন বৈধ কি না, সুপ্রিম কোর্ট তা বিচার করুক। কমিটি করে আলোচনায় রাজি নন তাঁরা। কেন্দ্রীয় সরকারও আইন পরিবর্তনে সায় দেয়নি। ফলে আলোচনা প্রক্রিয়া এখনো বিশবাঁও জলে। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, দ্রুত সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। এখন দেখার দুই কৃষকের মৃত্যুর পর সরকার কী পদক্ষেপ নেয়। বস্তুত, বুধ ও বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর আন্দোলনকারী কৃষকরা আরো উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রয়োজনে আরো প্রাণ যাবে, কিন্তু নিজেদের দাবি থেকে তাঁরা সরবেন না।