1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে কৃষক বিক্ষোভ

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
১৮ জুন ২০১৭

কৃষিঋণ মকুবের দাবিতে বিভিন্ন রাজ্যে কৃষক বিক্ষোভে মোদী সরকার বেশ বড় রকমের ধাক্কা খেলো৷ পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে৷ কৃষিঋণ মকুব ইস্যুতে বিরোধী দলগুলির ঐক্যবদ্ধ হবার সুযোগ আছে৷

ফাইল ছবিছবি: Reuters/Stringer

কৃষিঋণ মকুবের দাবিতে কৃষক বিক্ষোভের আগুন ছড়ালো বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশে৷ সেখানে বিক্ষোভ থামাতে গিয়ে মন্দসৌরে গত মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে মারা গেল পাঁচজন কৃষক৷ আত্মহত্যা করেছে ঋণভারে জর্জরিত আরও চারজন কৃষিজীবী৷ এই নিয়ে রাজ্যে মোট নয় জন আত্মহত্যা করল৷ কেন তাঁরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিল, তার সদুত্তর মেলেনি শাসক শিবির থেকে৷ এর আঁচ ছড়িয়ে পড়ে উত্তরপ্রদেশ মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাবসহ অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও৷ নিখিল ভারত কিষাণ সভার নেতৃত্বে কৃষক সংগঠনগুলি গত বৃস্পতিবার দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখায়৷  একজোট হয়ে দেশ জুড়ে আন্দোলনের কথা ঘোষণা করে৷ পথ অবরোধ চলছে বিভিন্ন রাজ্যে৷

নিহত কৃষক পরিবারগুলিকে সমবেদনা জানাবার সুযোগ দেয়নি রাজ্য প্রশাসন৷ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা মন্দসৌরে যাবার চেষ্টা করলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ বিজেপি মনে করে, সমবেদনা নয়, কৃষকদের প্ররোচনা দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য৷ কৃষক সংগঠনগুলি এবং সরকারের মধ্যে আলোচনাই সমাধানের প্রকৃষ্ট পথ৷

উৎপাদিত ফসলের দাম পাচ্ছে না চাষিরা৷ আর মূলত এ কারণেই কৃষক বিক্ষোভ৷ এতো বেশি উত্পাদন হয়েছে যে, বাজারে বিভিন্ন ফসলের দাম এসে তলানিতে ঠেকেছে৷ যেমন, পেঁয়াজের দাম এক টাকা কিলো, আলুর দাম ৮০ পয়সা কিলো, হলুদ ৫০ পয়সা কিলো, সয়াবিনের দাম অর্ধেক৷ কৃষকরা বলছেন, এতে উত্পাদন খরচই ওঠে না৷ সংসার চালানো কঠিন৷ ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ করা অসম্ভব৷ এ অবস্থায় আগামী বছর ফসল চাষের কথা ভাবাবেন কী করে?  চাষিদের দাবি সরকার মোটামুটি দামে তাঁদের ফসল কিনে নিক, অথবা ঋণে ছাড় দেওয়া হোক৷ ক্ষোভটা অমূলক নয় মেনে নিয়েও এর অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিচার করলে দেখা যাবে, দেশে কৃষি ঋণের মোট পরিমাণ প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকা৷ এত টাকা যদি ঋণদানকারী ব্যাঙ্কগুলি মকুব করে তাহলে ব্যাঙ্কে তালা পড়বে৷ গত বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব নয়, বহন করলে রাজ্যকেই করতে হবে৷ সেক্ষেত্রে তাদের বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাবে৷  পরিস্থিতি সামাল দিতে একদিন পরেই মোদী মন্ত্রিসভা স্বল্প মেয়াদি কৃষিঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার কম করার জন্য ভর্তুকি দেবার সিদ্ধান্ত নেন৷ তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণে সুদ হবে বার্ষিক ৪ শতাংশ৷ অবশ্য এটা সাময়িক সমাধান হয়ত হবে,  তবে স্থায়ী সমাধান নয়৷

এই প্রসঙ্গ নিয়ে কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ডক্টর মধুসূদন দত্ত ডয়চে ভেলেকে বললেন, সরকারি তহবিল থেকে ২ লক্ষ বা ৪ লক্ষ টাকা দিতে হবে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার থেকে বড় কথা, ঋণ গ্রহীতাকে বুঝতে হবে ঋণ নিলে তা শোধ করা জরুরি৷ এই বোধ বা এই চেতনা বা সংস্কৃতি না থাকলে দেশের ব্যাঙ্কিং সিস্টেম ভেঙ্গে পড়বে৷ একই সঙ্গে সরকারের উচিত হবে সহায়ক দামে চাষিদের ফসল কিনে নেওয়া৷ তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য কৃষি অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন৷ ফসল মজুত রাখবার মতো যথেষ্ট হিমঘর থাকলে বাজারের গতিপ্রকৃতি বুঝে ফসল ছাড়া যাবে৷ দ্বিতীয় প্রয়োজন ফসল বিমা৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কারণে ফসল নষ্ট হলে কৃষকরা যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায়, সেটা সুনিশ্চিত করা যায়৷ পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকেও এরসঙ্গে জুড়তে হবে৷

ডক্টর মধুসূদন দত্ত

This browser does not support the audio element.

 কৃষি বিপণনে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিযোগ সম্পর্কে ডক্টর দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ স্বাগত, কিন্তু নিঃশর্তে নয়৷ চোখ বুঁজে ছাড়পত্র দেওয়া উচিত হবে না৷ বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলি সবকিছু বিদেশ থেকে এনে  ভারতের বাজারে বিক্রি করবে, তা হয় না৷ ভারতের কৃষিপণ্য কিনে দেশেই বিক্রি করতে হবে৷ তাতে কৃষকরা যেমন ন্যায্য দাম পাবেন, ক্রেতাদেরও সাশ্রয় হবে৷ একই সঙ্গে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের হাত ধরে দেশে আসবে আধুনিক টেকনোলজি এবং ম্যানেজমেন্ট৷ দেশীয় কোম্পানিগুলি প্রতিযোগিতায় শঙ্কিত নয়৷

এখন দেশীয় কোম্পানিগুলি এতটাই উন্নত যে, তারা সমান তালে পাল্লা দিতে পারবে৷ এর আগে খুচরো বিপণনে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল৷ যদিও কৃষি বিপণনে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিযোগের বিরোধিতা আসতে পারে  মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির দিক থেকে৷

কৃষক আন্দোলনের রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধিরা একজোট হবার চেষ্টা করছে৷ মোদী সরকারকে চাপে রাখতে চাইছে৷ কংগ্রেস নেতারা শুরু করেছেন সত্যাগ্রহ৷ বিজেপি নেতৃত্ব যে সেটা বুঝতে পারছে না, তা নয়৷ মহারাষ্ট্র সরকার এবং উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার ইতিমধ্যেই আর্থিক সাহায়তা মঞ্জুর করেছেন৷ কারণ, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির নির্বাচনি প্রচারে এই রকমই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল৷ আগামী বছর কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বচনের কথা মাথায় রেখে মোদী তাই সতর্কতার সঙ্গেই পা ফেলতে চাইছেন যাতে  সাপও মরে লাঠিও না ভাঙ্গে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ