ইউরোপের দেশগুলোর কৃষি ও মৎস সম্পদ মন্ত্রীদের সম্মেলন হবে জার্মানিতে৷ সম্মেলন শুরুর আগে এক বিক্ষোভ সমাবেশ হয়ে গেল কোবলেনৎস শহরে৷ সমাবেশে অংশ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কৃষি নীতির সংস্কার দাবি জানিয়েছেন তারা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির কৃষি মন্ত্রী ইউলিয়া ক্লোকনারের আমন্ত্রণে কোবলেনৎস শহরে আসছেন ইউরোপের দেশগুলোর কৃষি ও মৎস সম্পদ মন্ত্রীরা৷ দুদিনের এক সম্মেলনে যোগ দিতে জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলীয় এ শহরে আসছেন তারা৷ তবে সম্মেলন শুরুর আগেই শুরু হয়ে গেছে বিক্ষোভ৷
জার্মান পুলিশ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সাড়ে তিনশর মতো মানুষ এ বিক্ষোভে অংশ নেন৷ ২০টি ট্রাক্টর ছিল তাদের সঙ্গে৷ তবে আয়োজকদের দাবি, অন্তত এক হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে ইইউ'র কৃষি নীতি ঢেলে সাজানোর দাবি তুলেছেন৷ অংশগ্রহণকারীদের সবাই পারিবারিক খামারের মালিক৷ তাদের দাবি, কৃষি নীতি হতে হবে এমন যাতে পরিবেশ রক্ষা পায়, পোকাও রক্ষা পায়৷ এর পাশাপাশি কৃষি নীতিকে পারিবারিক খামার রক্ষার উপযোগী করার দাবিও জানিয়েছেন তারা৷
২০০৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আর্থিক সঙ্কটের কারণে ইউরোপের অন্তত ৪০ লাখ পারিবারিক খামার বন্ধ হয়েছে৷
ইউরোপিয়ান ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন (কোপা)-র সভাপতি ইওয়াখিম রুকভিড বলেন, ‘‘ইইউর উচিত সমাধানকেন্দ্রিক কৌশল অবলম্বন করা৷’’ এ সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোকার ওষুধ ব্যবহার না করার নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বানও জানান তিনি৷
এসিবি/জেডএইচ (ডিপিএ, এএফপি)
জানুয়ারি মাসের ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মান কৃষকেরা ক্ষেপে আছেন কেন?
সম্প্রতি হাজার হাজার কৃষক জার্মানির রাস্তায় নেমে এসেছিলেন৷ শ্লোগান দিয়েছেন, ‘আমরা ক্ষিপ্ত’৷ কিন্তু কেন? তারা বলছেন, তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Gateau
‘আমরা ক্ষিপ্ত’
১৮ জানুয়ারি বিক্ষোভটি হয় রাজধানী বার্লিনে৷ এতে অংশ নেন প্রায় ২৭ হাজার মানুষ৷ তারা রাস্তা বন্ধ করতে শত শত ট্রাকটর নামান৷ কৃষকেরা ছাড়াও পরিবেশবাদীরা অংশ নেন এতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
আয়োজনে কারা ছিলেন?
এর আগেও কৃষকরা বিক্ষোভ করেছেন নানা সময়৷ কিন্তু এবারেরটি আলাদা ছিল৷ একেবারে তৃণমূলের কৃষকদের নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠনগুলোর বাইরে গিয়ে এই আন্দোলন৷ একে বলা হচ্ছে ‘লান্ড শাফট ফেয়ারবিন্ডুং’ বা ‘যে সংযোগ দেশ তৈরি করে’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
ফেসবুক গ্রুপ দিয়ে যাত্রা শুরু
২০১৯ সালের অক্টোবরে একটি ফেসবুক গ্রুপ দিয়ে এই আন্দোলনের যাত্রা শুরু৷ এর মধ্যেই এটি এক লাখ কৃষকের নেটওয়ার্কে দাঁড়িয়ে গেছে৷ জার্মানির ১৬টি রাজ্যের অন্তত সাতটিতে এর সাংগঠনিক কাঠামো আছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Gateau
সরকারের নতুন নীতি
জার্মানির সরকার নতুন সরকারি নীতি তৈরি করেছে৷ সেখানে চাষিদের নির্দিষ্ট সার ও পোকা মারার ওষুধ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে৷ কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি জার্মানিতে পোকামাকড়ের সংখ্যা অনেক কমে গেছে৷ ভূ-গর্ভস্থ পানিতে বেড়েছে নাইট্রেটের মাত্রা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে
জার্মানিতে কৃষকদের নির্ভর করতে হয় সুপারমার্কেটদের দয়ার ওপর৷ গড়ে একেকজন বছরে ২২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২৪ লাখ টাকা কামান, যা জার্মানির তুলনায় যথেষ্ট নয়৷ অনেকে কৃষি ব্যবসা বন্ধই করে দিচ্ছেন৷ তারওপর নতুন নীতির কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে৷ তখন সুপারমার্কেটগুলো পণ্য বাইরে থেকে আমদানি করবে৷ এতে তারা আর বাঁচতে পারবেন না বলে দাবি করছেন কৃষকেরা৷
ছবি: picture-alliance/HMB Media/Schumacher
ক্ষতি হবে পরিবেশেরও
পরিবেশবাদীরা বলছেন, আমদানির কারণে বাড়তি কার্বন নিঃসরণ হবে৷ আমদানিকৃত খাবার ব্যবস্থাপনা ও পরিবহণ খরচ এর কারণ৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Gobet
সমাধানও আছে
কৃষকরা বলছেন, পোকামাকড়ের সংখ্যা কেন কমছে তার একটা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা করা হোক৷ তার ওপর ভিত্তি করে কোন পদ্ধতিতে ও আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চাষ করতে হবে তা বলা হোক৷ এর সঙ্গে নাইট্রেটের মাত্রা বাড়ার কৃষি ও অকৃষি কারণগুলো আলাদা করে বিচার করে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া হোক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
তবে কি খাবারের দাম বাড়ছে?
জার্মানির কৃষিমন্ত্রী ইউলিয়া ক্ল্যোকনার বলেছেন, পরিবেশগত উদ্যোগগুলো না নেয়ার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বছরে আট কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয় সরকারকে৷ তবে সরকারের পক্ষ থেকে নাইট্রেটের বিষয়টি ভেবে দেখার ব্যাপারে তিনি একমত৷ তিনি এও যোগ করেন যে, জার্মানির জনগণকে খাবারের পেছনে ব্যয় বাড়াতে হবে৷