কৃষি বিলের প্রতিবাদে কৃষক সংগঠনগুলির ডাকা ভারত বনধে ভাল সাড়া মিলেছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা ছাড়াও কর্ণাটক, বিহার, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্রসহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে রেল রোকো (অবরোধ) ও রাস্তা রোকোর ফলে জনজীবনে প্রভাব পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
কৃষি বিল নিয়ে মোদী সরকারের উপর চাপ বাড়ল। কৃষক সংগঠনগুলির ডাকা ভারত বনধের ফলে অনেক রাজ্যেই রেল ও রাস্তা রোকো হয়েছে। অমৃতসর-দিল্লি জাতীয় সড়ক অবরোধের ফলে পুরোপুরি বন্ধ। একই অবস্থা কর্ণাটক-তামিলনাড়ুর মধ্যে যোগাযোগকারী জাতীয় সড়কেও। কৃষকদের অবরোধের ফলে লখনউ-অযোধ্যা জাতীয় সড়কেও বিশাল যানজট দেখা দিয়েছে। বিহারে কৃষকদের পাশাপাশি আরজেডি-ও বিক্ষোভে সামিল হয়েছে। লালু প্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব ট্র্যাক্টর নিয়ে রাস্তায় নামেন।
ভারত বনধে সব চেয়ে বেশি সাড়া মিলেছে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ এবং কর্ণাটকে। বাকি অনেক রাজ্যেই কৃষকরা বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন এবং রেললাইন অবরোধ করেছেন। পাঞ্জাবে কংগ্রেস, অকালি এবং আপ কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং ঘোষণা করেছেন, আন্দোলনকারীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলেও পুলিশ এফআইআর করবে না। পাঞ্জাবে কৃষক সংগঠনের নেতারা আগামী ১ অক্টোবর থেকে লাগাতার সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছেন।
করোনা যেভাবে পালটে দিচ্ছে কৃষি
করোনা লকডাউন মানবজীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাকে পালটে দিচ্ছে৷ এর বাইরে নয় কৃষিও৷ ছবিঘরে দেখুন কৃষি ও পশুপালনে কী প্রভাব ফেলছে এই মহামারি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bernetti
খামারে পশুপালন নিয়ে ভাবনা
বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না ঠিক কিভাবে কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি হয়েছে৷ তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোয়াইন ফ্লু এবং বার্ড ফ্লু শূকর এবং মুরগি থেকে ছড়িয়েছে এটা অন্তত নিশ্চিত৷ মহামারির ঝুঁকি বাড়তে থাকা এবং এর সঙ্গে প্রাণীদের সংযোগ পাওয়ায় খামারে পশুপালন নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে চিন্তাভাবনা৷
ছবি: picture alliance/Augenklick/Kunz
বন্যপ্রাণীর ব্যবসা
এখন পর্যন্ত গবেষকেরা ধারণা করছেন নভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে চীনের উহানের বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে৷ মহামারির আগে বন্যপ্রাণীর বিশাল ব্যবসা সম্পর্কে মানুষের ধারণা কমই ছিল৷ কিন্তু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর চীন সরকার দেশজুড়ে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৯ হাজার বন্যপ্রাণীর বাজার বন্ধ করে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bernetti
স্থিতিশীল খাতের সন্ধানে
মহামারি আমাদের খাদ্য সরবরাহেও ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে৷ লকডাউন ও বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ বন্ধের ফলে এই খাত স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের কাছে খাবার সরবরাহে নানা পন্থা বেছে নিয়েছে৷ পশুচারণ থেকে শুরু করে শ্রমিক সংকট সবক্ষেত্রেই কৃষকেরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন৷ তাদের অপেক্ষা সব স্বাভাবিক হওয়ার অথবা বিকল্প কোনো পথ খুঁজে নেয়ার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শহুরে চাষবাস বাড়ছে
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এখন বাড়িতে আটকা পড়ে আছেন৷ তাদের অনেকেই ছাদে বা বারান্দায় সীমিত পরিসরে হলেও কৃষি কাজ করছেন৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি ভালো ফল বয়ে আনতে পারে৷ ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই শহরে বাস করবে৷ ফলে তখন শহুরে চাষবাস ও খামার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷ পাশাপাশি স্বল্প খরচ ও জমির চাহিদার কারণে পরিবেশে তা ভালো প্রভাব ফেলবে৷
ছবি: Imago/UIG
প্রকৃতির ওপর চাপ কমছে
২০৫০ সালের দিকে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছাড়াবে ১০০০ কোটি৷ ফলে খাবারের উৎপাদনও বাড়াতে হবে সে হারেই৷ এতদিন কৃষিজমির পরিমাণ বাড়ানোকেই এর একমাত্র সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হতো৷ কিন্তু শহরে চাষাবাদ বাড়তে থাকায় এই সংকটের নতুন সমাধান মিলতে পারে৷
ছবি: Kate Evans / Center for International Forestry Research (CIFOR)
উদ্ভিজ্জ আমিষের খোঁজ
মাংসের চাহিদা যত বাড়ছে, স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে৷ এক গবেষণায় দেখা গেছে চীনে উদ্ভিজ্জ পণ্য়ের দিকে মানুষ ঝুঁকছে৷ পশ্চিমা দেশগুলোতেও বেশ কয়েক বছর ধরে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ করোনা ভাইরাস মহামারি এই প্রবণতা আরো ত্বরান্বিত করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Neibergall
খাদ্য নিরাপত্তা
খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ উন্নত দেশের চেয়ে উন্নয়নশীল দেশে প্রভাব ফেলবে বেশি৷ জাতিসংঘ এরইমধ্য়ে ভয়াবহ খাদ্যসংকটের হুঁশিয়ারি দিয়েছে৷ দুর্ভিক্ষ রোধে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ, খাবার সরবরাহের ব্যবস্থার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের শস্যের চাষ, কৃষি জমির সুরক্ষাসহ নানা দিক নিয়ে ভাবতে হবে দেশগুলোকে৷
ছবি: DW/K. Makoye
7 ছবি1 | 7
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা মোটামুটি বন্ধ। উত্তর প্রদেশেও অনেক জায়গায় কৃষকরা রাস্তা অবরোধ করেছেন। বারাবাঙ্কিতে সকাল থেকেই অবরোধ চলছে। অবরোধের ফলে লখনউ-অযোধ্যা সড়ক সহ বেশ কিছু জায়গায় প্রবল যানজট হয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বলেছেন, ''এই অন্যায় মেনে নেয়া হবে না। মোদী সরকার কৃষকদের বড় কর্পোরেটের দাসে পরিণত করতে চাইছে। তাঁদের নিজ জমিতে তাঁরা দাস হয়ে পড়বেন। তাঁদের সম্মান ও অধিকার দুইই যাবে।'' দিল্লি ও উত্তর প্রদেশের সীমানায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিহারে আরজেডি ও কংগ্রেস কর্মীরা পাটনা, দ্বারভাঙ্গা সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রতিবাদ জানিয়েছে। রাস্তায় গরু, মোষ নিয়ে এসে অবরোধ করা হয়েছে। বিহারে শুক্রবারই ভোটের দিন ঘোষণা করা হবে। তার আগে কৃষি বিল নিয়ে প্রবল আন্দোলনে নেমেছে বিরোধী জোট। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জানিয়েছেন, বিল নিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে বিরোধীরা।
দক্ষিণের রাজ্যগুলিতেও কৃষকরা পথে নেমেছেন। কর্ণাটক-তামিলনাড়ু সড়ক তাঁরা অবরোধ করে রেখেছেন। কর্ণাটকে বেশ কয়েকটি জায়গায় রেল ও সড়ক অবরোধ হয়েছে। বেশ কিছু ট্রেন বাতিল হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, কৃষকদের এই আন্দোলনের ফলে মোদী সরকার চাপে পড়েছে। তবে সরকারও কৃষি সংক্রান্ত তিনটি আইন চালু করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু কৃষক আন্দোলন বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে এই চাপ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।