যুক্তরাজ্যের জাহাজ লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে রাশিয়া। সতর্ক করতে গুলি বলে দাবি রাশিয়ার।
বিজ্ঞাপন
কৃষ্ণসাগরে যুক্তরাজ্যের জাহাজ লক্ষ্য করে সতর্কতামূলক গুলি চালানো হয়েছে বলে রাশিয়া দাবি করেছে। ক্রেমলিনে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিকে তলব করা হয়েছে বলেও রাশিয়া জানিয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য দুইটি বিষয়ই অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, রাশিয়া যা বলছে, তেমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। রাশিয়ার দাবি যুক্তরাজ্য নৌসেনার জাহাজ ডিফেন্ডার ইউক্রেনের জল সীমান্ত ছাড়িয়ে রাশিয়ার জলে ঢুকে পড়েছিল। রাশিয়ার নৌসেনা তখন তাদের থামতে বলে। কিন্তু রাশিয়ার দাবি, তারপরেও জাহাজটি রাশিয়ার জলে ঢুকতে থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের দিকে ওয়ার্নিং শট ছোড়া হয়। এরপর অবশ্য জাহাজটি রাশিয়ার জলসীমান্ত ছেড়ে চলে যায়। কেন যুক্তরাজ্য রাশিয়ার জলে ঢুকল তা নিয়ে তাদের কাছে জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে রাশিয়া। তলব করা হয়েছে রাশিয়ায় অবস্থিত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতকে।
দক্ষিণ চীন সাগরে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধসজ্জা
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বিতর্কিত এলাকাগুলোর একটি দক্ষিণ চীন সাগর৷ এর আশেপাশে দেশগুলো নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনে বাড়াচ্ছে নৌবাহিনীর শক্তি৷ অন্য সব দেশ মিলে এই এলাকায় যে পরিমাণ খরচ করে, চীন একাই করে তার চেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Drake
চীনা নৌবহর
দেশটির প্রথম এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বা বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ লিয়াওনিং৷ ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে তৈরি হয় এটি৷ ১৯৯৮ সালে এটিকে ভেঙে চীনের কাছে বিক্রি করে ইউক্রেন, তারপর ডাইলিয়ান শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি এটিকে আবার তৈরির কাজ হাতে নেয়৷ ২০১২ সালে নির্মাণ শেষে ২০১৬ থেকে এই জাহাজ যুক্ত হয় চীনা নৌবাহিনীতে৷
ছবি: imago/Xinhua
ভিয়েতনামের ‘ব্ল্যাক হোল’
সম্প্রতি রাশিয়ার কাছ থেকে ছয়টি কিলো-ক্লাস সাবমেরিন পাচ্ছে ভিয়েতনাম৷ এর মধ্যে দুইটি ২০১৭ সাল থেকে আছে দেশটির নৌবাহিনীর সাথে৷ পানির তলদেশে নীরবে চলাচল এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন, এ কারণে মার্কিন নৌবাহিনী এই সাবমেরিনের নাম দিয়েছে ‘ব্ল্যাক হোল’৷ এই সাবমেরিন অগভীর পানিতেও চলতে পারে এবং শত্রু জাহাজ বা সাবমেরিন রুখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে৷
ছবি: Vietnam News Agency/AFP/Getty Images
ফিলিপিন্স মূল শক্তি
ফিলিপিন্স নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগশিপের নাম বিআরপি গ্রেগরিও দেল পিলার৷ মার্কিন নৌবাহিনীর তিনটি কোস্ট গার্ড কাটারের একটি পেয়েছে ফিলিপিন্স৷ সর্বপ্রথম এটির ব্যবহার হয় ১৯৬৭ সালে, আধুনিকায়ন হয় ২০১১ সালে৷ ২০১২ সালে দক্ষিণ চীন সাগরের স্কারবরো শোল নিয়ে চীনা নৌবাহিনীর সাথে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গিয়েছিল এই জাহাজ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Favila
এশিয়ায় ইউরোপের যুদ্ধজাহাজ
নতুন যুদ্ধজাহাজ কিনে নিজের নৌবাহিনী শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়া৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে কেআরআই সুলতান হাসানুদ্দিন নামে সিগমা-ক্লাস করভেট৷ ২০০৭ সালে নেদারল্যান্ডসে তৈরি হয় এই জাহাজ৷ জার্মানিও এই অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ সরবরাহ করে৷ মালয়েশিয়ার কস্তুরি-ক্লাস করভেট এবং ব্রুনাইয়ের দারুসসালাম-ক্লাস টহল জাহাজ জার্মানির কারখানায় তৈরি৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Ibrahim
সিঙ্গাপুরের চোরা-জাহাজ
উচ্চপ্রযুক্তির ব্যবহারে এই অঞ্চলে সিঙ্গাপুরের সমতুল্য কেউ নেই৷ ২০০৭ সাল থেকে সিঙ্গাপুর ছয়টি ফরমিডেবল-ক্লাস চোরা-জাহাজ ব্যবহার করে আসছে৷ সহজে অবস্থান সনাক্ত করা যায় না বলে এই ধরনের জাহাজকে চোরা-জাহাজ বলা হয়৷ এর সব কয়টিই তৈরি করেছে ফ্রান্স৷
ছবি: Imago/China Foto Press
এখানেও মার্কিন রণতরী
সত্যিকার অর্থে একমাত্র বৈশ্বিক নৌশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ প্রশান্ত অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে সপ্তম নৌবহর৷ এতে আছে ৫০-৬০টি জাহাজ, ৩৫০টি যুদ্ধবিমান এবং প্রায় ৬০ হাজার সৈন্য৷ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অবস্থানরত একমাত্র বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস রোনাল্ড রিগান-ও আছে এই রণতরীতে৷ এর অবস্থান জাপানের ইয়োকোসুকা নৌঘাঁটিতে৷
ছবি: AP
6 ছবি1 | 6
যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্য অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন মেনে ইউক্রেনের সমুদ্র সীমান্ত দিয়ে যাচ্ছিল ডিফেন্ডার জাহাজটি। রাশিয়ার জলসীমান্তে তা ঢোকেনি।
সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়ার বক্তব্য নিয়ে তিনি বিচলিত নন। রাশিয়া এ ধরনের ভুল অভিযোগ এবং দাবি করেই থাকে। ওই অঞ্চলে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্যের জাহাজ ভূমধ্যসাগর এবং কৃষ্ণসাগরে আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে ইউক্রেন। তাদের দাবি, কৃষ্ণসাগরে ক্রিমিয়া অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে উঠে পড়ে লেগেছে রাশিয়া। ফলে ওই অঞ্চলে তারা সবসময়ই নিজেদের দাপট দেখানোর চেষ্টা করে। রাশিয়া যুক্তরাজ্যের জাহাজ নিয়ে যে দাবি করেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেও জানিয়েছে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বরং রাশিয়াকেই পাল্টা সচেতন হতে বলেছে তারা।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য, কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে ন্যাটো এবং ইউক্রেনের নতুন করে সমঝোতা করা দরকার। নইলে ওই অঞ্চলে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যুক্তরাজ্যের জাহাজ লক্ষ্য করে ওয়ার্নিং শট ছোড়া অজুহাত মাত্র। রাশিয়া আসলে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ক্রিমিয়া বিতর্ক আবার সামনে আনতে চেয়েছে।