জাতিসংঘ, ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে নিয়ে ফের বৈঠকে বসতে চায় তুরস্ক। এর আগেও এবিষয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে তুরস্ক।
বিজ্ঞাপন
এখনো অবরুদ্ধ কৃষ্ণসাগর। হাজার হাজার টন খাদ্যশস্য নিয়ে আটকে বহু জাহাজ। মূলত দুইটি কারণে জাহাজগুলি কৃষ্ণসাগর দিয়ে যেতে পারছে না। এক, রাশিয়ার অবরোধ এবং দুই ইউক্রেনের মাইন। রাশিয়ার দাবি, সমুদ্রে মাইন ছড়িয়ে রেখেছে ইউক্রেনের সেনা। সে কারণেই তারা ওই রাস্তায় অবরোধ তৈরি করেছে। কিন্তু এর ফলে খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে আফ্রিকা-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তা নিয়ে ফের বৈঠকে বসতে চায় তুরস্ক। এর আগে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে তুরস্ক। কিন্তু সমাধানসূত্র মেলেনি। এবার জাতিসংঘকেও সঙ্গে রাখতে চাইছে তারা।
ইউক্রেন ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যকে কেন পাশে পাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র?
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সৌদি আরবকে উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু সফল হয়নি৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতেরও সহায়তা চেয়ে পায়নি যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু কেন?
সৌদি যুবরাজ কথা বলতে চাননি?
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেলের মূল্য বেড়ে গেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল৷ কিন্তু সালমান তার সঙ্গে কথা বলতে চাননি বলে সেই সময় জানা গিয়েছিল৷ যদিও মার্কিন প্রশাসন এই খবর অস্বীকার করেছিল৷ এর কিছুদিন পরই রাশিয়া ও চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেন সালমান৷
আরব আমিরাতও কথা শোনেনি
রাশিয়ার ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাদের সুপারইয়ট ও সম্পদ লুকাতে না পারেন সেই অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু সেই অনুরোধ শোনেনি আরব আমিরাত৷ ছবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক রুশ ধনীর ইয়ট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Kamran Jebreili/AP/picture alliance
জাতিসংঘে সহায়তা দিতে অনিচ্ছুক
ইউক্রেন দখলের বিরোধিতা ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিভিন্ন রেজুলেশন পাস করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সমর্থন প্রয়োজন৷ কিন্তু সেই সমর্থন দিতে মধ্যপ্রাচ্যকে অনিচ্ছুক দেখা গেছে৷
ছবি: Spencer Platt/Getty Images
কারণ কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র নিজে তেল উৎপাদন শুরুর পর তাদের কাছে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্ব কিছুটা কমে গিয়েছিল৷ সে কারণে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ৷ মার্কিন সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যারন ডি. মিলার বলেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের অংশীদাররা বুঝতে পেরেছিল যে তাদের এখন কম গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ সে কারণে তারা অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছে৷’’
ছবি: Kirill Kukhmar/TASS/dpa/picture alliance
চীনা বিনিয়োগ
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক চীন৷ মোট তেল আমদানির ৪৭ শতাংশ করা হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে৷ এছাড়া সৌদি আরবের ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচিতে সহায়তা করছে চীন৷ ইরাকের তেলক্ষেত্র কিনে নেয়া এবং অবকাঠামোতেও বিনিয়োগ করছে চীন৷ ছবিতে গতবছর বাগদাদে চালু হওয়া চীনা ভাষা শিক্ষার একটি ক্লাস দেখা যাচ্ছে৷
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন৷ আর প্রেসিডেন্ট বাইডেন জুলাই মাসে সৌদি আরব যাচ্ছেন৷
ছবি: REUTERS
6 ছবি1 | 6
কৃষ্ণসাগরে অবস্থিত ইউক্রেনের বন্দর থেকে খাদ্যশস্য কীভাবে বাইরে বার করা যায়, তা নিয়ে জাতিসংঘ একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে বলে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ছেন। সেই পরিকল্পনা নিয়েই ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
রাশিয়ার জর্জিয়া ঢাল
রাশিয়ার শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের মূল প্রতিনিধি ডেভিড আরাখামিয়া। বুধবার তিনি অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রমরমিয়ে ব্যবসা করছে রাশিয়ার একাধিক সংস্থা এবং ব্যক্তি। তারা জর্জিয়ার ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করছেন। আরাখামিয়ার বক্তব্য, ওই সংস্থা বা ব্যক্তিরা প্রথমে ইন্টারনেটে একটি নতুন কোম্পানি তৈরি করছে। তারপর জর্জিয়ার ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে জর্জিয়াতেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করছে। সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই তারা নতুন করে ব্যবসা শুরু করছে। ওয়াশিংটনকে এবিষয়ে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ তিনি দিতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন।
ক্যামেরায় ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে আগামীর স্বপ্ন
যুদ্ধের সময়েও ইউক্রেনের মানুষ ভেঙে পড়েনি৷ তাই ধ্বংসযজ্ঞ আর মৃত্যুর মিছিলের মাঝেও চলছে স্বপ্ন রচনা৷ ফটোগ্রাফার স্তানিস্লাভ সেনিকের ক্যামেরায় চেরনিহিভের ধ্বংসস্তূপে স্কুল পরীক্ষার্থীদের ছবিগুলো সে কথাই বলে...
ছবি: Instagram/@senykstas
ধ্বংসস্তূপে অন্যরকম পরীক্ষা
যুদ্ধ শুরুর পর অনেকেই ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তবে যারা দেশ ছাড়েননি, তারা হয় দেশরক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন, নয়ত নিজেকে তৈরি রাখছেন, তৈরি করছেন দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য৷ যুদ্ধের মাঝেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ ধ্বংসপ্রায় চেরনিহিভের শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাইনালও দিয়েছে৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়ে স্তানিস্লাভ সেনিকের ফটোশুটটাও ছিল অন্যরকম এক পরীক্ষা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
অচেনা রূপে চেনা শহর
এই দুই কিশোরীর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভেই জন্ম, বেড়ে ওঠা৷ তাদের প্রিয় শহর আজ রুশ হামলায় ধ্বংসপ্রায়৷ তবে ধ্বংসপ্রায় শহরটিও তাদের প্রিয়৷ এই শহরকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা৷ স্তানিস্লাভ সেনিকের আইডিয়াটা তাই পছন্দ হয়েছে তাদের৷ বোমায় ভেঙে পড়া এক ভবনেই তাই ফটোশুটে অংশ নিয়েছে তারা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
দুঃস্বপ্নময় বর্তমানে সুন্দর এক স্বপ্ন
স্তানিস্লাভ সেনিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফটোশুটটা ওরা চেরননিহিভের জীর্ণ, বিবর্ণ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে করতে রাজি হয়েছে মূলত একটি কারণে৷ বাকিদের মতো ওরাও ভেবেছে, এই ছবি থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে৷ দিন বদলাবে৷ আসবে সুদিন৷ চেরনিহিভ একদিন আবার সেজে উঠবে নতুন সাজে৷ তখন এই দুই কিশোরী তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই ছবি দেখিয়ে বলতে পারবে, ‘‘দেখো, আমরা এই ধ্বংসপ্রায় শহরটাকে ভালোবেসে বেসে আবার বাঁচিয়ে তুলেছি৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ওরা আর ভয় পায় না, মন খারাপ করে না’
ছবির এই মানুষটিই স্তানিস্লাভ সেনিক৷ ছবি তোলাকে পেশা করেছেন পাঁচ বছর আগে৷ রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত চেরনিহিভ শহরে শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে ফটোশুটে অংশ নেবে কিনা- এ নিয়ে তার অনেক সংশয় ছিল৷ কিন্তু কথা বলে বুঝলেন, শিক্ষার্থীদের ফটোশুটে কোনো আপত্তি নেই৷ আরো দেখলেন, ‘‘ওরা এখন আর ভয় পায় না, প্রিয় শহরের ধ্বংসপ্রায় রূপ দেখে খুব বেশি মন খারাপও করে না৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
দুমড়ানো-মোচড়ানো গাড়ির ছাদে ওরা পাঁচজন
স্বাভাবিক অবস্থায় এই চেহারার গাড়ি কোনো শহরেই যত্ন করে রাখা হয় না৷ যুদ্ধ শেষ হলে এই দুটোকেও হয়ত আর কোথাও দেখা যাবে না৷ তবে এই পাঁচ শিক্ষার্থীর এই ফটোশুটের কল্যাণে আগামী পৃথিবীর অনেকেই নিশ্চয়ই মনে রাখবে গাড়ি দুটোর কথা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ভুল বুঝবেন না’
ফটোশুটে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে, কেউ যদি ছবিগুলো দেখে মনে করেন, চেরনিহিভের ধ্বংসপ্রায় চেহারা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্বিত আর এ কারণেই তারা সেখানে ফটোশুটে অংশ নিয়েছে- তাহলে খুব বড় ভুল করা হবে৷ তাদের অনুরোধ, ‘‘প্লিজ, আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আসলে এই দুঃসময়টাকে ফ্রেমে ধরে রাখতে চাই, আগামী প্রজন্মকে ছবি দেখিয়ে বলতে চাই ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের কথা৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
6 ছবি1 | 6
মার্কিন নাগরিকদের ইউক্রেন যেতে নিষেধ
সম্প্রতি দুই মার্কিননাগরিককে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সেনা অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ। তারপরেই একটি বিবৃতি জারি করেছে অ্যামেরিকা। মার্কিন নাগরিকদের ইউক্রেন যেতে নিষেধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, ওই দুই মার্কিন নাগরিককে দেশে ফেরানোর জন্য অ্যামেরিকা সবরকম ব্যবস্থা করবে।
আরো এক বিলিয়ন মার্কিন সহায়তা
ইউক্রেনকে আরো এক বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র এবং অন্যান্য সাহায্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অ্যামেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওয়াশিংটনে জানিয়েছেন, ডনবাস অঞ্চলে ইউক্রেনের নাগরিক এবং যোদ্ধাদের সবরকমভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত অ্যামেরিকা। সেকথা মাথায় রেখেই নতুন সাহায্য ঘোষণা করা হচ্ছে।
হাউইৎজার, অ্যান্টি শিপ মিসাইল-সহ একাধিক অস্ত্র ইউক্রেনকে দেওয়া হবে। পাশাপাশি মানবিধ সাহায্যও করা হবে। জল, খাবার, ওষুধ দিয়ে সাহায্য করা হবে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষকে।