জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় খাদ্যশস্য রপ্তানির লক্ষ্যে করা কৃষ্ণসাগর চুক্তি থেকে সপ্তাহান্তে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া৷ ফলে আমদানিনির্ভর দেশগুলো বিপদে পড়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক খাদ্য সংকট আরো বাড়তে পারে৷
বিজ্ঞাপন
সিঙ্গাপুরভিত্তিক দুই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন যে রাশিয়া চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর জন্য নির্ধারিত লাখ লাখ টন গমের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে৷ একইসঙ্গে ইউরোপে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানিতেও ধাক্কা লাগবে৷
রাশিয়া শনিবার অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য শস্য রপ্তানি বিষয়ক জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় করা চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়৷ ক্রাইমিয়ায় রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিটে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালানোয় মস্কো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে
ডনবাস অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর অন্য কয়েকটি ইউক্রেনীয় শহর দখলে রাশিয়া নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে৷ অন্যদিকে ইউক্রেনও ডনবাস পুনরুদ্ধারে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে৷ ছবিঘরে থাকছে যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনের কিছু ছবি৷
ছবি: Vyacheslav Madiyevskyy/REUTERS
বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো...
খারকিভকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া৷ তবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চলটি নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া ইউক্রেনও৷ খারকিভের ফ্রন্টলাইনে রুশ সৈন্যদের লক্ষ্য করে মর্টার নিক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে৷
ছবি: Vyacheslav Madiyevskyy/REUTERS
পর্যাপ্ত সরবরাহ কি আছে?
দিনের পর দিন রাশিয়া আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে৷ অ্যামেরিকাসহ ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে নিয়মিতই সরবরাহ হচ্ছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ৷ তবে তা অব্যাহত না থাকলে রুশ সৈন্যদের ঠেকিয়ে রাখতে বেশ বেগ পেতে হবে ইউক্রেনকে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক সৈন্য গাড়িতে রাখা মর্টার নিয়ে যাচ্ছেন রুশ সৈন্যদের ঠেকিয়ে রাখার অংশ হিসাবে৷
ছবি: Vyacheslav Madiyevskyy/REUTERS
বেসামরিক স্থাপনাও রক্ষা পাচ্ছে না
ছবিটি ইউক্রেনের মাইকোলাইভ শহরের৷ রাশিয়ার বোমা হামলায় একটি স্কুল ধ্বংস হয়েছে৷ তবে ইউক্রেনের সৈন্যরা এখনো শহরটি রাশিয়ার সৈন্যদের দখলে চলে যাওয়া থেকে ঠেকিয়ে রেখেছেন৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
মেরামত চলছে...
ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের কুপিয়ানস্ক শহরে একটি ট্যাংকের ওপর এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ বোমার আঘাতে নষ্ট হওয়া ট্যাংক মেরামত করছেন তার সহকর্মী৷ রুশ সৈন্যরা খারকিভ দখলে নিলেও পরবর্তীতে ইউক্রেনের পালটা আক্রমণে দখল হারায় রাশিয়া৷ তবে এখনো এর দখল নিয়ে দুই পক্ষে ব্যাপক লড়াই চলছে৷
ছবি: Clodagh Kilcoyne/REUTERS
মুখোমুখি লড়াই
কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী মাইকোলাইভ অঞ্চলে লড়াই তীব্র হয়েছে৷ ইউক্রেনের সৈন্য মাইকোলা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন৷ অদূরে অবস্থান করছে রুশ সৈন্যরা৷ তাদের ঠেকিয়ে রাখতে একে-৪৭ হাতে পাহারা দিচ্ছেন মাইকোলা৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
মাতৃভূমি রক্ষার লড়াই
আরেক ইউক্রেনীয় সৈন্য ভালেরি একে-৪৭ হাতে পরিখার মধ্যে বসে রয়েছেন৷ তবে সতর্ক প্রহরার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে অন্যদিকেও নজর থাকছে তাদের৷ ফ্রন্টলাইনেই এক কুকুরকে দেখে ভালেরির হৃদয় আর্দ্র হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
পালটা আক্রমণ
ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঝাপোরিজঝিয়া রয়েছে রাশিয়ার দখলে৷ এর নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার৷ শহরটি পুনর্দখলের জন্য লড়াই করছে ইউক্রেনের সৈন্যরা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে গাড়িতে মোতায়েন করা হাওয়িৎজার এফএইচ-৭০ প্রস্তুত করতে৷
ছবি: REUTERS
7 ছবি1 | 7
রাশিয়ার এই ঘোষণার পর রোববার কোনো জাহাজ সামুদ্রিক মানবিক করিডোর পার হয়নি৷ তবে জাতিসংঘ, তুরস্ক এবং ইউক্রেন রাশিয়ার সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও কৃষ্ণ সাগর চুক্তি অনুযায়ী সোমবার শস্যবাহী ১৬টি জাহাজ এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ব্যবসায়ীরা আপাতত পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন৷ তাদের একজন বলেন, ‘‘পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটা দেখতে হবে৷ ইউক্রেন শস্য রপ্তানি অব্যাহত রাখবে কিনা তা এখনো পরিষ্কার নয়৷ রাশিয়ার রপ্তানির কী হবে তাও বোঝা যাচ্ছে না৷''
এশিয়ার যেসব দেশ ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করতে চাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম ইন্দোনেশিয়া৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ শস্য আমদানিকারক দেশটি মূলত অস্ট্রেলিয়া এবং উত্তর আমেরিকার উপর নির্ভরশীল৷ সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি ইউক্রেনের কাছ থেকে দুই লাখ টন শস্য কেনার চুক্তি করেছে বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরভিত্তিক ব্যবসায়ীরা৷ ভিয়েতনামও একই পথে হেঁটেছিল৷ কিন্তু এখন তারা পণ্য পাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে৷
গত সপ্তাহে পাকিস্তানও একটি আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে তিন লাখ ৮৫ হাজার টন গম কিনেছে যার সরবরাহ রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে হওয়ার কথা৷
এদিকে, রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তের ফলে গম, শস্য আর সূর্যমুখী তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে আবারো বাড়তে শুরু করেছে৷ চলতি বছরের শুরুতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গমের দাম সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছিল৷