আবারো কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা, অবিচার, বিক্ষোভ, এবার স্থান নিউ ইয়র্ক৷ যুক্তরাষ্ট্রে এক নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গকে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শ্বেতাঙ্গ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে শহরটির গ্র্যান্ড জুরি৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর কয়েক হাজার মানুষ ‘টাইমস স্কয়ার'-এ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান৷ শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ থেকে আটক করা হয়েছে অন্তত ৩০ জনকে৷ বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরেও৷ রাতভর বিক্ষোভ চলতে থাকে৷ ওই মৃত্যুর ঘটনায় নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন হয়েছিল কিনা – তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয়ভাবে তদন্তের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার৷
গত ১৭ই জুলাই নিউ ইয়র্কের রাস্তায় অবৈধভাবে সিগারেট বিক্রির অভিযোগে এরিক গার্নারকে আটক করে পুলিশ৷ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁকে জোর করে রাস্তায় ফেলে চেপে ধরলে, শ্বাসরোধ হয়ে এই কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু হয়৷ যিনি শ্বাসরোধ করেছিলেন, সেই পুলিশ কর্মকর্তা ড্যানিয়েল প্যান্টালিওর দাবি, গার্নার গ্রেপ্তারে বাধা দেওয়ায় তাদের ওই পদক্ষেপ নিতে হয়৷ তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ওই ঘটনাকে হত্যা হিসাবে উল্লেখ করা হলে, বিষয়টি গ্র্যান্ড জুরিতে যায়৷
ঐ ঘটনার সময় তোলা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে৷ আবারো উঠেছে মার্কিন নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ৷
‘প্লিজ গুলি কোরো না’
সাদা পুলিশের হাতে নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্রের মিসুরি রাজ্যের শহর ফার্গুসন৷ মাত্র ২১ হাজার অধিবাসীর এই শহরের প্রতিবাদের খবর এখন বিশ্ব মিডিয়ায়৷
ছবি: DW/M. Soric
ঘটনার সূত্রপাত
৯ আগস্ট রাত, নিরস্ত্র মাইকেল ব্রাউন নিহত হন পুলিশের গুলিতে৷ পুলিশ শ্বেতাঙ্গ আর ১৮ বছরের মাইকেল কৃষ্ণাঙ্গ৷ ব্রাউন বর্ণবাদের বলি হয়েছেন, এ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছেন কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত ওই এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: Getty Images
‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’
বিক্ষোভের সময় প্রতিটি বিক্ষোভকারী হাত উপরে তুলে ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন৷ স্লোগানটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে৷
ছবি: Reuters
কিছুটা স্তিমিত
৯ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত বিক্ষোভ হয়েছে ফার্গুসনে৷ তবে ২০ তারিখ বিচার বিভাগের প্রধান অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ কিছুটা স্তিমিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান হোল্ডার৷
ছবি: Reuters
ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য
গত ১১ দিনে বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা সদস্যদের পাঠান৷
ছবি: Getty Images
প্রতিবাদ রূপ নেয় সহিংসতায়
বিক্ষোভ কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল৷ মনে হচ্ছিল ফার্গুসন যে রণক্ষেত্র৷ বুধবারও ছয় বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷ এর আগে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গভীর রাতের দিকে কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে পানি ও প্রস্রাব ভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মারলে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়৷
ছবি: Reuters
বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগ
ফার্গুসনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ ফার্গুসনের জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকান-অ্যামেরিকান৷ কিন্তু নিরাপত্তা, প্রশাসন, রাজনীতিসহ সব বিভাগেই শ্বেতাঙ্গ মানুষের পদচারণা৷
ছবি: Reuters
আর এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু
১৯ আগস্ট দুই পুলিশের গুলিতে ২৩ বছর বয়সের আরেক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক সেন্ট লুইস এলাকায় নিহত হন৷ সে অঞ্চলের পুলিশ প্রধান স্যাম ডস্টন দাবি করেন, ঐ যুবক পুলিশদের দিকে ধেয়ে আসেন এবং হাতে থাকা ছুরি বের করে বলতে থাকেন, ‘‘আমাকে গুলি করো, মেরে ফেলো আমাকে’’৷ যুবকটি তাঁদের দিকে ধেয়ে এলে গুলি করতে বাধ্য হন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
ঘটনার তদন্তে শুনানি
এরিক হোল্ডার বুধবার ব্রাউনের মৃত্যুর তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ বুধবারই ঘটনার তদন্তে শুনানি শুরু হয়েছে বলে খবর৷ তবে ড্যারেন উইলসন নামের পুলিশ কর্মকর্তা, যাঁর গুলিতে ব্রাউনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে কিনা – সে বিষয়ে এখনও ‘ফাইনাল’ সিদ্ধান্ত জানা যায়নি৷
ছবি: DW/M. Soric
8 ছবি1 | 8
টাইমস স্কয়ার এবং কেন্দ্রীয় স্টেশনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে থাকেন ‘আই কান্ট ব্রিদ', ‘আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে', যা গার্নারকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল৷ এছাড়া আর একটি স্লোগান, যেখানে বলা হচ্ছে তোমার কাছে বর্ণবাদীর সংজ্ঞা কী? উত্তর এনওয়াইপিডি, অর্থাৎ নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট৷
শান্তির জন্য আহ্বান
গার্নারের মা বিক্ষোভকারীদের এই আন্দোলনকে সমনর্থন জানিয়েছেন, তবে বিক্ষোভ যাতে শান্তিপূর্ণ হয় সে আবেদনও জানিয়েছেন তিনি৷ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, এই ঘটনা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে বড় ধরনের সমস্যার কথাই তুলে ধরেছে৷
মাত্র ন'দিন আগে মিসুরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসনেও একটি গ্র্যান্ড জুরি একই ধরনের একটি রায় দেয়, যাতে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসনের বিচার না করার সিদ্ধান্ত আসে৷
গ্র্যান্ড জুরির ওই রায়ের পর তাৎক্ষণিকভাবে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয় ফার্গুসনেও৷