ছবিটির কথা মনে আছে নিশ্চয়? খুব বেশি দিন আগের তো কথা নয়৷ এই তো গত জুলাই মাসের ১৫ তারিখে এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল৷ শরণার্থী এক মেয়ে কাঁদছে, আর তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
বিজ্ঞাপন
১৪ বছর বয়সি রিম সাহউইল একজন ফিলিস্তিনি শরণার্থী৷ গত চার বছর ধরে সে তাঁর বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে জার্মানির রস্টক শহরে থাকছে৷ তার আগে সে ও তার পরিবার লেবাননের একটি শরণার্থী শিবিরে ছিল৷
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাহউইলের পরিবারকে জার্মানি ছেড়ে চলে যেতে হতে পারে বলে টেলিভিশনে প্রচারিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ম্যার্কেলকে জানিয়েছিল সে৷ পরিষ্কার জার্মান ভাষায় সে জার্মান চ্যান্সেলরকে বলেছিল, ‘‘আমি জার্মানিতে পড়াশোনা করতে চাই৷ এটা আমার ইচ্ছা৷''
উত্তরে ম্যার্কেল তাঁকে বলেন যে, জার্মানি সবাইকে নিতে সমর্থ নয়৷ এই কথা শুনে সাহউইল কান্নায় ভেঙে পড়ে৷ তখন ম্যার্কেল তাকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে যান৷
শেষ খবর হচ্ছে, সাহউইল ও তার পরিবারের জার্মানিতে থাকার মেয়াদ ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে৷ জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড' দিয়েছে এই খবর৷ সফলভাবে জার্মান সমাজের সঙ্গে একীভূত হতে পারার কারণে সাহউইলের পরিবারের থাকার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে অভিবাসন কার্যালয়৷
সাহউইলের বাবা বর্তমানে অন্য শরণার্থীদের সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করছেন৷
শরণার্থীদের প্রিয় জার্মানি, আরো প্রিয় ম্যার্কেল
শরণার্থীদের নিয়ে একটা ছবি সবারই নজর কেড়েছে৷ প্ল্যাকার্ড হাতে এক শিশু, প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘উই ওয়ান্ট জার্মানি’’৷ অনেকেই এসে পৌঁছেছেন তাঁদের কাঙ্খিত ঠিকানা জার্মানিতে৷ পছন্দের মানুষ ম্যার্কেলের দেশে এসে খুশি তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bernd von Jutrczenka
জার্মানিকে চাই...
সেই ছবি৷ বুদাপেস্টে তখন শরণার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে৷ অস্ট্রিয়া বা জার্মানির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে না পারায় তাঁরা ক্ষুব্ধ৷ সবাই ছুটছিলেন প্ল্যাটফর্মের দিকে৷ পুলিশ ফিরিয়ে দিলো৷ স্টেশনের বাইরে শুরু হলো বিক্ষোভ৷ কারো কারো হাতে তখন ট্রেনের টিকিট৷ কেউ ক্ষোভ জানালেন কোলের সন্তানকে নিয়ে৷ অনেক শিশুর হাতে দেখা গেল, ‘উই ওয়ান্ট জার্মানি’ লেখা কাগজ৷ ইউরোপে এত দেশ থাকতে কেন জার্মানি?
ছবি: Reuters/L. Foeger
আছে নব্য নাৎসি, পুড়েছে শরণার্থী শিবির, তবুও...
জার্মানির কোথাও কোথাও শরণার্থীবিরোধী বিক্ষোভ দেখা গেছে৷ অনেক জায়গায় রাতের অন্ধকারে আশ্রয় শিবিরে লেগেছে আগুন৷ তারপরও অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জার্মানিকেই বেছে নিতে চায়৷
ছবি: Getty Images/M. Rietschel
বড় কারণ ম্যার্কেল এবং...
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে শুরু থেকেই উদার জার্মানি৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল সবসময়ই অভিবাসী এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পাশে ছিলেন৷ পেগিডা আন্দোলনের সময়ও সরকারের অভিবাসীদের পাশে থাকার কথা স্পষ্ট করেই বলেছেন ম্যার্কেল৷ পাশে থেকেছেও৷ জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষও ছিল তাঁর পাশে৷ এখনও আছে৷ এই বিষয়গুলোও মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মনে জার্মানির প্রতি আরো আস্থাশীল করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NDR
তোমাদের স্বাগত
অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জার্মানিতে পা রেখেই দেখেছে অবাক হওয়ার মতো দৃশ্য৷ এখানে তাঁরা অনাহূত নয়৷ নিজের দেশ থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসে জার্মানিতে পাচ্ছেন সাদর সম্ভাষণ!
ছবি: Getty Images/A. Beier
জার্মানির নেতৃত্বে ম্যার্কেল, ইউরোপের নেতৃত্বে জার্মানি
বৃহস্পতিবার আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, শরণার্থীদের বিষয়ে জার্মানির ভূমিকা হতে হবে অনুসরণীয়, দৃষ্টান্তমূলক৷ জার্মানির সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে বক্তব্য রাখার সময় তিনি আরো বলেন, অভিবাসন সংকট মোকাবেলায় ইউরোপকেও সফল হতে হবে৷
দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটিকে শরণার্থীরা নিজেদের একজন হিসেবেই বরণ করে নিয়েছিলেন৷ শরণার্থীদের সঙ্গে বন্ধুর মতোই সময় কাটিয়েছেন ম্যার্কেল৷ কয়েকজন শরণার্থী তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে চেয়েছিলেন৷ সানন্দে তাঁদের আশা পূরণ করেছেন ম্যার্কেল৷