‘অনেক নারীই ফ্যাশনের অঙ্গ হিসাবে হিজাব ব্যবহার করেন' – বাংলাদেশে হিজাব পরার প্রবণতা বাড়ার কারণ সম্পর্কে এ রকম মন্তব্য ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় বহু পাঠকে৷ তবে ভিন্নমতও রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
নারীদের হিজাব পরা সম্পর্কে ডিডাব্লিউ-র ফেসবুক পাতায় পাঠক ফরিদ উদ্দীন মাসুদ লিখেছেন, ‘‘সারাজীবন আমার দাদি, নানি, মা কাপড় পরেই আবরু রক্ষা করেছেন, মাথা থেকে তাঁদের কাপড় পরে যেতে দেখি নাই৷'' তাঁর প্রশ্ন, তাহলে কেন হিজাব লাগবে? এটা বর্তমানে একটি ফ্যাশন হয়ে গেছে বলে?''
বন্ধু ক্রান্তি মৃধার মন্তব্য, ‘‘কথাটা সত্য৷ আমি সারা শরীর টাইট হিজাব দিয়ে ঢাকলাম আর ভেতরে ভেতরে আকামের বন্যা বহিয়ে দিলাম৷ এর থেকে না পরাই ভালো৷ যে নারী ভালো, তাঁর কিন্তু হিজাব লাগে না৷''
পাঠক খোরশেদ আলম হিজাব পরা নিয়ে তাঁর মতামত জানাতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘বর্তমানে নারী তথা মেয়েরা যে হিজাব পরে, তা ধর্মীয় অনুভূতি থেকে নয় বরং এটা এক ধরনের ফ্যাশন৷ হিজাব পরিধান করলে মেয়েদের আরো আকর্ষণীয় লাগে৷ অথচ ইসলামি শরিয়তে যে হিজাবের কথা বলা হয়েছে, তা হলো কালো রঙের এক ধরনের ঢিলেঢালা পোশাক, যা পরিধান করলে শরীরের কোনো অংশ প্রকাশ পাবে না৷''
বোরকার আগেই নিষিদ্ধ পাঁচটি পোশাক
বোরকা এবং বুর্কিনির ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ পোশাক নিয়ে এমন বিতর্ক নতুন কিছু নয়৷ বিশ্বের নানা দেশে নানা সময় অন্য পোশাকও নিষিদ্ধ হয়েছে৷ এখনো হচ্ছে৷ ছবিঘরে আজ সেরকম পাঁচটি পোশাকের কথা৷
ছবি: AP
জার্মানির একাংশে নিষিদ্ধ ছিল জিন্স
জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের আগে পূর্ব জার্মানির অনেক নাইট ক্লাবের সামনে পরিষ্কার লেখা থাকতো, ‘‘জিন্স পরে প্রবেশ নিষেধ৷’’ জিন্স পরে গেলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বের করে দেয়া হতো৷ শেষে অবশ্য তরুণ প্রজন্মের চাহিদার কাছে তখনকার কমিউনিস্ট সরকার নতি স্বীকার করে৷ এরিক হ্যোনেকারের নির্দেশে নাকি এক সঙ্গে ১০ লক্ষ লেভি’স জিন্স আমদানি তরুণ প্রজন্মের চাহিদা মেটানো হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তুরস্কে নিষিদ্ধ ‘ফেজ’ টুপি
১৯২০-এর দশক পর্যন্ত তুরস্কে লাল রঙের টুপি ‘ফেজ’ খুব জনপ্রিয় ছিল৷ কিন্তু অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর, বিশেষ করে কামাল আতার্তুকের সময় সেই টুপি নিষিদ্ধ করা হয়৷ পুরোনো দিনের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় বলেই নাকি এ ধরনের টুপি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ নিষেধাজ্ঞা এখনো আছে, তবে তার কোনো কার্যকারিতা নেই৷
ছবি: Fotolia/Ivonne Wierink
স্কটল্যান্ডে বহুকাল নিষিদ্ধ ছিল কিল্ট
স্কটল্যান্ডে ১৮ শতকের অনেকটা সময় এই ধরনের ঝালরওয়ালা ঘাগড়া নিষিদ্ধ ছিল৷ ঐতিহ্যবাহী এই পোশাক স্কটরা প্রতিরোধ এবং দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে পরিধান করে – এমন এক ধারণা থেকেই ইংরেজরা এটি নিষিদ্ধ করেছিল৷ ১৭৪৭ সালের পর থেকে প্রায় ৩৭ বছর নিষিদ্ধ ছিল এই ঘাগড়া৷ এখন অবশ্য স্কটল্যান্ডের ঘরে ঘরে আছে এই পোশাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাশিয়ায় আন্ডারওয়্যার নিষিদ্ধ
দু’বছর ধরে রাশিয়ায় বিদেশ থেকে আন্ডারওয়্যার আমদানি প্রায় বন্ধ৷ সরকার আইন করে শতকরা ৬ ভাগেরও কম সূতি আছে, এমন সব আন্ডারওয়্যার নিষিদ্ধ করার ফলে বিদেশি আন্ডারওয়্যার বাজার থেকে প্রায় উধাও৷ সূতি ছাড়া অন্য সব আন্ডারওয়্যার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর – এই যুক্তি দেখিয়েই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়৷ নিষেধাজ্ঞার আগ পর্যন্ত রাশিয়ার বাজার বিদেশি আন্ডারওয়্যারে সয়লাব ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Oliver Berg
যুক্তরাষ্ট্রে ‘হুডি’...
এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব শহরেই এই ধরণের পোশাক, অর্থাৎ ‘হুডি’ কেনা যায়, পরাও যায়৷ তবে ১০ বছর আগে কিন্তু সে দেশের সব জায়গায় হুডি পরা যেতো না৷ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্কুলে হুডি এখনো নিষিদ্ধ৷
ছবি: BortN66 - Fotolia.com
5 ছবি1 | 5
পাঠক শান্তা খোরশেদ আলমের এই মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন৷
তবে সৈয়দ ফুয়াদ করিম ফাতমি পাঠক খোরশেদ আলমের বক্তব্যের বিরোধীতা করে লিখেছেন, ‘‘হিজাবে ‘মেয়েদের আরো আকর্ষণীয় লাগে' – এ কথা সত্য হলে বলিউড, হলিউডের নায়িকারা সব বাদ দিয়ে হিজাবি হয়ে উঠত৷ কিন্তু তা তো দেখা যাচ্ছে না৷ অর্থাৎ, আপনার বক্তব্য (ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ বিবেচনায় নিলে) সম্পূর্ণ অযোক্তিক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে হিজাব পরা মহিলাদের প্রতি অসম্মানজনক৷''
অন্যদিকে ডয়চে ভেলের পাঠক আশরাফুল হাসান লিখছেন, ‘‘নিজেকে আচ্ছাদিত করে রাখাই তো পর্দা৷ যদি কোনো নারী ১২ হাত শাড়িতে নিজেকে আচ্ছাদিত করে রাখতে পারেন, তবে তাঁর আলাদা করে বোরকা বা হিজাবের কোনো প্রয়োজন নেই৷''
ফেসবুকবন্ধু নাজিয়া জাহান তৃশা তাঁর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন এভাবে: ‘‘আমার মা, খালা, ফুপু সবাই গ্রামে বড় হয়েছেন৷ তাঁদের কখনো হিজাব পরতে দেখিনি৷ সারাজীবন তাঁরা শাড়ি দিয়ে ঘোমটা দিয়েছেন৷''
সাখাওয়াত হোসেন অবশ্য সকলকে ইসলামের বিরুদ্ধে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘মাথা ঢাকাই হলো ইসলাম ধর্মের লক্ষ্য৷ তা আপনি যেভাবেই ঢাকুন না কেন৷''
আবার ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু রুহুল আমিনের ধরণা, ‘‘কিছু কিছু নারীর হিজাব পরার ক্ষেত্রে পারিবারিক বাধ্যবাধকতাই দায়ী৷ কিন্তু বর্তমানে হিজাব যাকে বলা হচ্ছে, সেটা তো হিজাব না৷ বরং কিছু ক্ষেত্র বাদে হিজাব এক ধরনের ফ্যাশন!''
মুসলিম নারীরা যেসব উপায়ে ‘পর্দা’ করে
হিজাব, বোরকা বা নিকাবের মতো নারীদের জন্য বিভিন্ন ইসলামি পোশাক নিয়ে ইউরোপে এখন তুমুল বিতর্ক চলছে৷ কোনো কোনো দেশ এ সব পোশাক নিষিদ্ধের পক্ষে৷ মুসলমান নারীদের শরীর ঢাকার পোশাকগুলি কী কী – চলুন জেনে নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হিজাব
দেশ এবং সংস্কৃতিভেদে অনেক মুসলমান নারী হিজাব পরিধান করেন৷ মূলত মাথা, চুল এবং গলা এবং ঘাড়ের খোলা অংশ ঢাকা হয় এই পোশাক দিয়ে৷ বিভিন্ন ডিজাইনের এবং রঙের হিজাব পাওয়া যায় যেগুলো পরলে চেহারা পুরোটাই দেখা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Seyllou
নিকাব
নিকাব পরলে নারীর পুরো শরীর ঢেকে যায়, শুধু চোখ দু’টো খোলা থাকে৷ সাধারণত পুরোপুরি রক্ষণশীল মুসলমান নারীরা নিকাব পরেন৷ নিকাব মূলত কালো রঙের হলেও অন্যান্য রঙের নিকাবও ইদানীং দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
দোপাট্টা
দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় দোপাট্টা বা ওড়না৷ নিকাব বা বোরকার মতো না হলেও এই পোশাকেও নারীর শরীর অনেকটা ঢাকা থাকে৷ তবে চুলের কিছুটা, চেহারা এবং গলা দেখা যায়৷ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য ধর্মের মেয়েরাও দোপাট্টা পরেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.Jaiswal
আল-আমিরা
মূলত দুই টুকরো কাপড় দিয়ে আল-আমিরা তৈরি করা হয়৷ একটি টুকরো দিয়ে চুল পুরোপুরি ঢেকে দেয়া হয় আর অন্য টুকরোটা হিজাবের মতো জড়িয়ে দেয়া হয়৷ কম বয়সি মুসলিম নারীদের মধ্যে এই আল-আমিরা বেশ জনপ্রিয়৷
শায়লা
শায়লা হচ্ছে লম্বা, চারকোনা এক ধরনের স্কার্ফ, যা গল্ফ অঞ্চলের মুসলিম নারীদের মধ্যে জনপ্রিয়৷ এটি সাধারণত কালো রঙের হয় এবং কাঁধের কাছে পিন দিয়ে আটকাতে হয় এটিকে৷ তবে হিজাবের মতো সবকিছু ঢেকে রাখে না শায়লা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A.Rochman
এশার্প
অনেকটা হিজাবের মতো হলেই এসার্প তৈরি হয় সিল্ক দিয়ে এবং বেশ উজ্জ্বল রঙের হয়৷ মূলত তুরস্কের মুসলিম নারীরা এটা পরিধান করেন৷ এটি বিভিন্ন রং এবং ডিজাইনে পাওয়া যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
কেরুডুং আর টুডুং
ইন্দোনেশিয়ার আধুনিক মেয়েরা আজকাল যে হিজাব ব্যবহার করছে, তার নাম কেরুডুং৷ আর প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ায় নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় টুডুং৷ এই দু’টি অনেকটা চাদরের মতো হলেও, একটি অংশে সুন্দর প্যার্টার্ন থাকে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকে বিভিন্ন রঙের শেডও৷ হিজাবের মতো টুডুং বা কেরুডুং-ও চুল, গলা এবং কাঁধ পুরোপুরি ঢেকে ফেলে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.Khan
চাদর
ইরানের মেয়েদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় চাদর৷ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সাধারণত সে দেশের নারীরা চাদর পরে নেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Mehri
বোরকা
মুসলিম নারীরা সারা চেহারা এবং সারা শরীর পুরোপুরি ঢেকে ফেলে বোরকা পরিধান করেন৷ ক্ষেত্রবিশেষে বোরকার চোখের অংশে জাল দেয়া থাকে, যাতে তারা দেখতে পারেন৷ কালো ছাড়াও বিভিন্ন রংঙের বোরকা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Arshad Arbab
জিলবুবস
সারা শরীর ঢেকে রেখেও নারীর স্তন এবং পশ্চাতদেশের আকার ফুটিয়ে তোলা যায় এই পোশাকে৷ এ জন্যই একে জিলবুবস বলা হয়৷ ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পোশাকের ব্যবহার দেখা যায়৷ তবে এই পোশাক নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ দ্রষ্টব্য: মুসলিম নারীদের পোশাক সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Indahono
10 ছবি1 | 10
অ্যামেরিকা থেকে সাঈদ আলমের মন্তব্য, ‘‘আমি নিজেও দেখেছি হিজাবের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷....অনেকেই হিজাবকে ফ্যাশন হিসাবে ব্যবহার করেন, কারণ তারা নামাজই পরেন না৷''
আলী আকবর বলছেন, ‘‘হিজাব পরা ভালো, কিন্তু বোরকা যদি শরীরের ভাঁজের ভিতর ডুকে পড়ে আর সাথে হিজাবও পরা থাকে, তাহলে এই হিজাবের মানে কী? হিজাব কেউ পরে পর্দা করার জন্য আর কেউ নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য৷ আর বোরকার ডিজাইন? ....কিছু ডিজাইন দেখলে বিব্রত হতে হয়৷''
‘‘পর্দা হলো, কোনো নারী যাতে পরপুরুষের ছায়াও মাড়াতে না পারেন৷ ....আসলে পর্দা ও হিজাব দু'টো আলাদা জিনিস৷ পর্দা হলো জীবনব্যাপী সাধনা৷ যারা হিজাব মাথায় দেয়, তারা সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে হিজাব খুলে পার্লার থেকে খোঁপা করে আসে৷ কিন্তু যারা পর্দা করে, তারা কখনোই এমনটা করে না৷'' বাংলাদেশে নারীদের হিজাব পরা নিয়ে ডয়চে ভেলের ফেসবুকে এই মন্তব্য করেছেন পাঠক জিশান শাহরিয়ার৷
শরীফুল ইসলামের মতে, ‘‘হিজাব নাকি বেশিরভাগই ক্ষেত্রেই স্টাইল৷ তবে তারপরও তো শালীনতা বজায় রেখে চলছেন নারীরা৷''
পোশাক নিয়ে ইরানি মহিলাদের চোর-পুলিশ খেলা
ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানের মহিলাদের পোশাক-আশাকের ব্যাপারে কড়া বিধিনিয়ম মেনে চলতে হয়৷ তবে প্রতিরোধ দানা বাঁধছে, তরুণীরা ক্রমেই আরো বেশি করে রঙিন সাজপোশাকের দিকে ঝুঁকছেন৷
ছবি: IRNA
মাথার চুল দেখানো চলবে না
১৯৭৯ সালের পর থেকে ইরানের শাসকবর্গ মহিলাদের ‘শালীন’ পোশাক-আশাক পরিধানের নির্দেশ দিয়েছেন৷ এই ‘ড্রেস কোড’ অনুযায়ী মহিলাদের মাথার চুল পুরোপুরি ঢাকা থাকতে হবে; লম্বা ঢোলা পাতলুন আর ওভারকোট পড়তে হবে; সেগুলো যতদূর সম্ভব কালো বা ছাই রঙের হলেই ভালো৷
ছবি: Isna
নীরব প্রতিরোধ
প্রায় চার দশকের নিপীড়ন সত্ত্বেও মহিলাদের সাহস অটুট৷ বহু ইরানি মহিলা কড়া ড্রেস কোডের নিজস্ব ব্যাখ্যা করে নিয়েছেন৷ তারা হিজাব আর বোরখা পরেন বটে, তবে নিজেদের মতো করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
সর্বত্র নিয়ন্ত্রণ
রঙচঙে আর খোলামেলা ফ্যাশন কাম্য নয়৷ প্রতিবছর গরমে পথেঘাটে নৈতিকতার প্রহরীদের নজরদারি বাড়ে৷ বিধিনিয়ম মেনে না চললে, পুলিশ পথ আটকায়, শুরু হয় লম্বা তর্ক-বিতর্ক, বাগবিতণ্ডা...
ছবি: ISNA
ফলশ্রুতি
‘মরাল পুলিশ’-কে সন্তোষজনক কারণ না দেখাতে পারলে অর্থদণ্ড, এমনকি কারাদণ্ডও হতে পারে৷ আটক মহিলাদের মুচলেকা দিতে হয় যে, তারা ভবিষ্যতে নিয়ম মেনে চলবেন৷ জেলহাজতে থাকাকালীন মহিলাদের জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে নোংরা কালো ‘চাদর’ পরিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়৷
ছবি: FARS
রঙচঙে, আঁটোসাটো আর ছোট...
অনেক তরুণী শাস্তির ভয়েও সাজ ছাড়তে রাজি নন৷ নৈতিকতার প্রহরীদের দৌরাত্ম্য সত্ত্বেও কমবয়সি মহিলারা ক্রমেই আরো বেশি করে আধুনিক সাজপোশাকের দিকে ঝুঁকছেন৷ বহু মডেল সোশ্যাল মিডিয়ায় এই হালফ্যাশন পরিবেশন করে থাকেন৷
ছবি: Hasan Koleini
নিপীড়ন সত্ত্বেও ফ্যাশন
ইরানি মডেল শবনম মোলাভি এমনকি মার্কিন ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘এফএসএইচএন’-এর প্রচ্ছদও অলঙ্কৃত করেছেন৷ গত মে মাসে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, ‘ইসলাম পরিপন্থি সংস্কৃতি’ প্রচারের দায়ে৷ কয়েকদিন পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান৷
ছবি: fshnmagazine.com
রোহানির আমলেও বোরখা বাধ্যতামূলক
তবে ফ্যাশন সচেতনতাকে অত সহজে নিষিদ্ধ করা যায় না৷ নৈতিকতার প্রহরীদের যাবতীয় উৎপাত ইরানি মহিলাদের ফ্যাশনেবল জামাকাপড় পরার শখ রোধ করতে পারেনি৷
ছবি: Isna
নিষ্ফল প্রতিশ্রুতি
প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি ২০১২ সালের নির্বাচনি প্রচার অভিযানে ‘খোলা রাস্তায় হয়রানি’ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্তু যে বিশটির বেশি সংস্থা মহিলাদের পোশাক-আশাকের উপর নজর রাখার দায়িত্বে, তাদের একটি বড় অংশ রোহানির নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত৷
ছবি: FARS
নৈতিক গোয়েন্দা পুলিশ
২০১৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে সরকার নিজেই আরো প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ তেহরানের পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন যে, মোট সাত হাজার পুরুষ ও মহিলা সাদাপোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ হিসেবে মহিলাদের সাজপোশাক ও আচার-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছেন৷
ছবি: cdn
ইন্টারনেটে সংহতি
গত জুলাই মাসের শেষে ইরানি পুরুষরা #মাইনহিজাব (অর্থাৎ আমার হিজাব) হ্যাশট্যাগ দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অভিযান শুরু করেন৷ তারা ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম নিজেদের হিজাব পরা অবস্থায় ছবি পোস্ট করে ইরানি মহিলাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছেন৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
10 ছবি1 | 10
সালমা শান্তার ভাষায়, ‘‘কী আর বলবো, হিজাব তো হলো এখনকার ফ্যাশন৷ ওরা মাথাটাকে এমনভাবে বাঁধে – মনে হয় তিনটা মাথা৷ সেখানে ধর্মীয় কোনো প্রবণতা নাই, সবই পাগলামি৷''
ডয়চে ভেলের পাতায় বিষয়টি পড়ে ‘‘চমৎকৃত হলাম!!'' এই মন্তব্য মেহেদি আসিফের৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘হিজাব পরার প্রবণতা সম্পর্কে আপনি একেবারে সঠিক দিকটা ধরেছেন!! আসলে কোনো ছেলেই আগে মেয়েদের মাথা বা চুলের দিকে তাকায় না! তাকায় চেহারার দিকে!! কিন্তু সবাই চেহারা খুলে মাথা ঢাকে!! আমি নিজেও অবাক হই যে, এই অদ্ভুত ফ্যাশনের ধারণা এরা পেল কোথায়?এখানে না আছে ধর্ম, না আছে চিন্তা-ভাবনা!''
তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘হিজাব পরার প্রবণতা আসলেই বেড়েছে! তবে তা ধর্মীয় অনুভূতি থেকে নয়! বরঞ্চ ধর্মের নামে ফ্যাশন হিসেবে!!'' হিজাব এখন শহুরে মেয়েদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় একটি ফ্যাশন! ধর্মীয় রীতিনীতি এরা পালন করে না এবং এদের অধিকাংশ তা জানেও না৷