ভারতের আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল রবিবার তৃতীয়বারের মতো দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন৷ ২০১৩ সালে তাঁর প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময় থেকেই অনেকে বাংলাদেশে একজন কেজরিওয়ালের আশা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
তাঁরা মনে করছেন, কেজরিওয়ালের মতো রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ একজন মানুষ যেভাবে কংগ্রেস, বিজেপির মতো প্রতিষ্ঠিত দলকে হারিয়ে দিল্লি জয় করেছেন, বাংলাদেশেও তেমন একজনকে প্রয়োজন৷ এছাড়া কেজরিওয়াল সরকার দিল্লির মানুষকে যেভাবে সেবা দিয়েছে সেটা দেখেও আরো বেশি করে একজন কেজরিওয়ালকে চাইছেন বাংলাদেশের অনেক মানুষ৷
কিন্তু কেজরিওয়ালের মতো কারও কি বাংলাদেশের রাজনীতি করা সম্ভব? বাংলাদেশে কি সেই পরিস্থিতি আছে?
কাগজে কলমে বাংলাদেশে ভারতের মতোই গণতন্ত্র আছে৷ তবে পার্থক্যটা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে৷ তাইতো সদ্য অনুষ্ঠিত দক্ষিণ ঢাকার নির্বাচনে মাত্র ২৯ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন৷ আর উত্তরে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ৷
আর কেজরিওয়াল যে নির্বাচনে জিতেছেন সেই নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ৷
এছাড়া ঢাকা সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচারণায় সরকার দলীয় কর্মীদের বাধা এবং বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি ও গ্রেপ্তারের মতো ঘটনা দিল্লির নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি৷
এই অবস্থায় প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, কেজরিওয়াল যদি ঢাকায় নির্বাচন করতেন তাহলে কি জিততে পারতেন?
আবার অন্যভাবেও বিষয়টি দেখা যেতে পারে৷ আমরা কেন বাংলাদেশে একজন কেজরিওয়াল আশা করছি? তিনিতো শুধু রাজ্য নির্বাচনে জিতছেন৷ তাঁর দলতো ভারত জুড়ে জিততে পারছে না৷ ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ৪৩৪ জন প্রার্থী দাঁড় করিয়ে কেজরিওয়ালের দল জিতেছিল মাত্র চারটি আসনে৷ কেজরিওয়াল নিজেও নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়ে হেরেছিলেন৷ এরপর ২০১৯ সালে আর এত বেশি প্রার্থীর দিকে না গিয়ে মাত্র ৪০টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল আম আদমি পার্টি৷ জিতেছে মাত্র একটিতে৷
তাই বলে কেজরিওয়ালের দিল্লি জয়কে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই৷ বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর মতো ক্যারিশমার লোক প্রয়োজন৷ সেটা সম্ভব হলেই কেবল একের অধিক কেজরিওয়ালের সন্ধান পাওয়া সম্ভব৷
দেখুন ৬ ফেব্রুয়ারির ছবিঘর...
কেজরিওয়ালের প্রচারে একদিন
শনিবার দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের শেষ দিনের প্রচার দেখল ডয়চে ভেলে।
ছবি: DW/S. Kumar
কে হবেন মুখ্যমন্ত্রী
হাতে আর মাত্র দুই দিন। আগামী শনিবার দিল্লির জনগণ স্থির করবেন কে হবেন রাজ্যের আগামী পাঁচ বছরের মুখ্যমন্ত্রী। তবে সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, এখনও পর্যন্ত দৌড়ে এগিয়ে আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিন-রাত এক করে শেষ মুহূর্তের প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।
ছবি: DW/S. Kumar
কাজের হিসেব
বিজেপির প্রচারে বার বার উঠে আসছে হিন্দুত্ববাদ, ধর্মীয় মেরুকরণ, জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গ। কিন্তু কেজরিওয়াল সে রাস্তায় হাঁটছেন না। জনসভা হোক কিংবা রোড শো-- কেজরিওয়াল বলছেন গত পাঁচ বছরে তাঁর সরকার কী কী কাজ করেছে। সেই কাজের নিরিখেই ভোট চাইছেন তিনি।
ছবি: DW/S. Kumar
প্রচারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য
গত পাঁচ বছরে দিল্লির সরকারি স্কুলগুলির চেহারা বদলে দিয়েছে কেজরিওয়ালের সরকার। এ কথা স্বীকার করেন বিজেপি নেতাদের একাংশ৷ প্রতিটি পাড়ায় শুরু হয়েছে বিনামূল্যের মহল্লা ক্লিনিক। যে কেউ সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারেন। ওষুধও ফ্রি৷ আপ নেতাদের বক্তব্য, প্রচারে কেবল এই কথাগুলো বলারই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁদের।
ছবি: DW/S. Kumar
গলিতে গলিতে কেজরিওয়াল
দুপুর থেকে বিকেল দিল্লির অলি তস্য গলি জিপে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেজরিওয়াল। তাঁর জন্য তৈরি হয়েছে বিশেষ ভাবে বানানো জিপ। যার মাথায় রয়েছে একটি চেয়ার। সেখানেই বসছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ছবি: DW/S. Kumar
তাঁকে ঘিরে নিরাপত্তার বলয়
এত দিন নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ বাড়াবাড়ি ছিল না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু প্রচারে তাঁকে ঘিরে থাকছে নিরাপত্তার চাদর। তবে সেই নিরাপত্তার বেষ্টনী এড়িয়েও সময়ে সময়ে দোকানে নেমে পড়ছেন কেজরিওয়াল। হাত মেলাচ্ছএন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। শুনে নিচ্ছেন সুখ-দুঃখের কাহিনি।
ছবি: DW/S. Kumar
প্রচারে নতুন মুখ
এত দিন কেজরিওয়ালকে ঘিরে দেখা যেত মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মুখ। কিন্তু এ বারের প্রচারে কেজরিওয়ালের মিছিলে অনেক বেশি চোখে পড়ছে গরিব মানুষ। অটো চালক, টোটো চালকরা প্রতিদিন যোগ দিচ্ছেন কেজরিওয়ালের মিছিলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল দিয়ে সাধারণ মানুষের মন জিতে নিয়েছেন কেজরিওয়াল।
ছবি: DW/S. Kumar
লড়াই কঠিন
গত বারের নির্বাচনে ৭০টির মধ্যে ৬৭টি আসন একাই জিতেছিল আপ। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩টি আসন। কিন্তু এ বারের নির্বাচন কঠিন। শেষ মুহূর্তে ধর্মীয় মেরুকরণের কার্ড খেলে জমি শক্ত করেছে বিজেপি।
ছবি: DW/S. Kumar
দেশের মুখ
সংসদে সিএএ পাশ হওয়ার পরে ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। তবু দিল্লির নির্বাচনের প্রচারে সিএএ-কেই হাতিয়ার করেছে বিজেপি। যদি তারা সফল হয়, তা হলে বিজেপি প্রমাণ করার চেষ্টা করবে, মানুষ সিএএ-র পক্ষে ভোট দিয়েছে। উল্টো দিকে কেজরিওয়াল বিজেপিকে আটকে দিলে গোটা দেশের বিরোধীপক্ষ বলবে, মানুষ সিএএ খারিজ করেছে।