কেজরিওয়াল জামিন পেলেন না, মঙ্গলবার রায় দেবে হাইকোর্ট
২১ জুন ২০২৪
অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জামিন দিয়েছিল নিম্ন আদালত। ইডি এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যায়। শুনানির পর হাইকোর্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার তারা রায় দেবে।
বিজ্ঞাপন
দিল্লির রাউস অ্যাভিনাউয়ের আদালত বৃহস্পতিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জামিন দিয়েছিল। শুক্রবার কেজরিওয়ালের মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। মুক্তির কয়েক ঘণ্টা আগে দিল্লি হাইকোর্টে ওই জামিনের বিরুদ্ধে আবেদন জানায় ইডি। হাইকোর্ট জানায়, যতক্ষণ তারা কোনো সিদ্ধান্ত না নিচ্ছে, ততক্ষণ কেজরিওয়ালকে জামিন দেয়া যাবে না।
এরপর কয়েকঘণ্টা ধরে শুনানি চলে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট জানায়, তারা শুক্রবার রায় দিচ্ছে না, তারা আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত রায়দান স্থগিত রাখছে।
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু হাইকোর্টে ইডি-র হয়ে সওয়াল করেন। তিনি বলেন, ''নিম্ন আদালতের রায় পুরো ভুল। আদালত বলেছে, কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কোনো সরাসরি প্রমাণ নেই- এই বিবৃতিটাও ভুল।''
এস ভি রাজু আরো বলেন, ''আমরা নিম্ন আদালতে তথ্যপ্রমাণ দিয়েছিলাম, সে সব গ্রাহ্য করা হয়নি। অপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলি খতিয়ে দেখা হয়েছে। নিম্ন আদালতের রায় বিকৃত।''
হাইকোর্ট শুক্রবার সকালে জানিয়েছিল, কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ইডির বক্তব্য শোনা দরকার। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের যুক্তি শোনা না হচ্ছে, সেই সব যুক্তি খতিয়ে দেখা না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেজরিওয়ালের জামিন স্থগিত থাকবে।
নিম্ন আদালতে যা হয়েছে
কেজরিওয়ালের আইনজীবী আদালতে জানান, ''দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ ইডির হাতে নেই। কিছু অভিযুক্ত, যারা পরে রাজসাক্ষী হয়েছে, তাদের বয়ানের ভিত্তিতে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।''
কেজরিওয়ালের আইনজীবীর দাবি, ''যারা নিজেদের দোষী বলে স্বীকার করে নিয়েছে, তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা কেউ সাধু নয়। তারা অভিযুক্ত।’’ তিনি বলেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে, তাদের জামিন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তাদের ক্ষমা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে।''
কেজরিওয়ালের আইনজীবীর আরো দাবি, ''দক্ষিণ ভারতের গোষ্ঠীর কাছ থেকে একশ কোটি টাকা এসেছিল, তারও কোনো প্রমাণ ইডি দিতে পারেনি।''
কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করার পরই দিল্লিতে আপ কর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়েছেন। গভীর রাত পর্যন্ত তারা দিল্লির রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আপ নেতৃত্ব জানিয়েছে, শুক্রবার সারা দেশে তারা বিক্ষোভ দেখাবেন। দিল্লিতে সবচেয়ে জোরালো বিক্ষোভ হবে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
রাহুল গান্ধীর প্রতিক্রিয়া
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্স-এ লিখেছেন, ''শাহেনশাহ ভয় পেয়ে গেছেন। তিনি একটা মৃত গণতন্ত্র চান। মিডিয়া-সহ সব সংস্থাকে কব্জা করার পর, দলগুলিকে ভাঙা হচ্ছে, কোম্পানিগুলি থেকে হপ্তা-উসুলি করা হচ্ছে, প্রধান বিরোধী দলের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হচ্ছে। তারপরেও অসুর-শক্তি থামেনি। এখন তারা নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করছে।'' প্রিয়ংকা গান্ধী বলেছেন, কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি অন্যায় ও অসাংবিধানিক।
ছবি: Anuwar Hazarika/NurPhoto/picture alliance
অখিলেশের বক্তব্য
সমাজবাদী পার্টি নেতা রাহুল গান্ধীর টুইটের জবাবে বলেছেন, ''বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও।''
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ''বিজেপি অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা করছিল। সুঘোগ পেলেই তারা যে গ্রেপ্তার করবে তা বোঝা যাচ্ছিল। বিজেপি বুঝতে পারছিল, আপ তাদের পক্ষে যাবে না। আপকে নিয়ে তাদের সুবিধা হচ্ছে না। তাই এইভাবে তাকে গ্রেপ্তার করলো। যারা বিজেপি-কে সাহায্য করছে, তাদের জন্য সব ঠিক আছে। সাহায্য না করলে এটাই করছে।''
ছবি: DW/P. Samanta
তৃণমূলের বক্তব্য
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ওব্রায়েন বলেছেন, ''আমরা কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের নিন্দা করছি। তিনি একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। এখন নির্বাচন কমিশনই প্রশাসনের দায়িত্বে এবং আদর্শ আচরণবিধি চলু আছে।'' তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন,“লোকসভা নির্বাচন হার হবে জেনে বিজেপি এখন মরিয়া হয়ে কামড় দিচ্ছে। এজেন্সি দিয়ে অ-বিজেপি নেতাদের গ্রেপ্তার করা, তাঁদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরির চক্রান্ত চলছে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজেপি যা বলেছে
বিজেপি নেতা রবিশংকর প্রসাদ বলেছেন, ''উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের আদালতও কোনো রেহাই দিচ্ছে না। আমরা একটা কথাই বলব, আইনকে নিজের কাজ করতে দেয়া উচিত। এটা শুধুমাত্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কিছু নয়।''
ছবি: UNI Photo
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সভাপতির ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য
পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘যতই করো কান্নাকাটি, মাফলারের পর হাওয়াই চটি।’’ কেজরিওয়াল মাফলার ম্যান বলে পরিচিত। আর মমতা বন্দোপাধ্যায়কে হাওয়াই চটি নিয়ে নিয়মিত কটাক্ষ করে বিজেপি। এরপর কুণাল ঘোষ বলেছেন, ''বোঝা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে বিজেপি-ই চালাচ্ছে। সুকান্তবাবু এসব না ভেবে বালুরঘাট আগে সামলান।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
7 ছবি1 | 7
গত ২১ মার্চ দিল্লির আবগারি নীতি সংক্রান্ত দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ইডির অভিযোগ ছিল, কেজরিওয়াল মদ বিক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা পেয়েছিলেন এবং সেই অর্থ দিয়ে তিনি গোয়ায় নির্বাচনি প্রচার চালিয়েছেন।
কেজরিওয়াল এবং আপ প্রথম থেকেই বলেছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে প্রচার করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট কেজরিওয়ালকে জামিন দিয়েছিল। তারপর ২ জুন তাকে আবার তিহার জেলে যেতে হয়।