কেনিয়ার উদ্ভাবকের ব্যাটারিচালিত হুইলচেয়ার
৩০ অক্টোবর ২০২০লিংকন ওয়ামে পরিত্যক্ত বস্তুর গুদাম ঘুরে নানা উপকরণ সংগ্রহ করেছেন৷ এবার সেগুলি জোড়া দেবার পালা৷ তিনি একটি হুইলচেয়ার তৈরি করছেন৷ শুধু মোটরসাইকেলের শক অ্যাবজর্বারটি নতুন৷ লিংকন বলেন, ‘‘কেনিয়ায় পথঘাটের অবস্থা ভালো নয়৷ খানাখন্দে পড়লে সাধারণ হুইলচেয়ার সহজেই ভেঙে যাবে৷ এটি কিন্তু ধাক্কা সামলে নিয়ে অক্ষত অবস্থায় এগিয়ে যাবে৷’’
তাঁর গ্রাহকদেরও ঠিক সেটাই প্রয়োজন৷ যেমন কেটি সিয়োকাউ-এর হাড়ের রোগ রয়েছে৷ তাঁর শরীরে হাড় বেশ ভঙ্গুর৷ ২৯ বছর বয়সি এই নারী ডাক্তারদের মারাত্মক পূর্বাভাষ সত্ত্বেও স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করেন৷
তিনি অবশ্য বেসরকারি মিনি বাসের উপর তেমন নির্ভর করতে চান না৷ ভিড়ে ঠাসা সেই যানের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে৷ তাঁর প্রথম হুইলচেয়ার এসেছিল চীন থেকে, দ্বিতীয়টি তুরস্ক থেকে৷ কিন্তু সেটি বার বার বিকল হয়ে পড়তো৷ কেটি বলেন, ‘‘এই হুইলচেয়ারের সঙ্গে যে ব্যাটারি ছিল, সেটি আমি নিজে তুলতেই পারতাম না৷ নতুন ব্যাটারি আসার পর সবাই লক্ষ্য করলো, যে সেটি অনেক হালকা৷ লিংকন যেন ঈশ্বরের পাঠানো দেবদূত৷ তাঁর সৃষ্টির দৌলতে আমাকে আর মিনিবাস চড়তে হচ্ছে না৷ লিংকনের তৈরি হুইলচেয়ারে বসে আমি নিজেই ভ্রমণ করতে পারি৷’’
লিংকনের তৈরি মডেলের দাম প্রায় এক হাজার ইউরো, যা কেটির সামর্থ্যের বাইরে৷ তিনি শুধু সেটি পরীক্ষা করে দেখতে চান৷ দ্রুতগতির এই যান দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে৷
লিংকন নিজে সাইকেল চালাতে খুব ভালবাসেন৷ সাইকেল মেরামতি ছিল তাঁর প্রথম পেশা৷ তার কিছুকাল পর তিনি মালপত্র পরিবহণের উপযুক্ত সাইকেল তৈরির কাজ শুরু করেন৷ তারপর হুইলচেয়ার তৈরির কাজ শুরু হলো৷ লিংকন বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধী মানুষের পক্ষে মিনিবাসে প্রবেশ করা কতটা কঠিন, তা আমি দেখতাম৷ তখন মনে হলো, কীভাবে আমি এর সমাধানসূত্র দিতে পারি৷ তাদের জন্য বিশেষ যান তৈরি করাই ছিল আমার জবাব৷’’
তবে সবার আগে তাঁকে সেই কাজ শিখতে হয়েছিল৷ ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার ও ইউটিউব তারকা মেহেদি সাদাগদার তাঁকে সাহায্য করেছিলেন৷ লিংকন বলেন, ‘‘ইলেকট্রোবুম নামে পরিচিত এই ব্যক্তির ভিডিও দেখতে আমার খুব ভালো লাগে, কারণ তিনি সবকিছু বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলেন৷ তাঁর কথা সহজেই বোঝা যায়৷ কার্যপ্রণালী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়৷ আমার কাছে তিনি ভালো শিক্ষক৷’’
যানগুলিতে মোটর বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান মেহেদির কাছ থেকে পেয়েছিলেন লিংকন৷ ছোট কর্মশালায় তিনি প্রথমে প্রোটোটাইপ তৈরি করেছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এগুলি চালু অথবা বিকল ল্যাপটপের খারাপ হয়ে যাওয়া ব্যাটারি৷ সেগুলি দিয়েই আমি হুইলচেয়ারের মতো যান তৈরি করি৷ আরও বেশি মানুষ পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করুন, এটাই আমার স্বপ্ন৷ অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করাই সেই লক্ষ্য পূরণের একমাত্র পথ বলে আমি মনে করি৷’’
লিংকন প্রমাণ করতে চান, যে সবুজ প্রযুক্তি শুধু ধনীদের একচেটিয়া অধিকার নয়, বরং শহর ও গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জন্য তা জরুরি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে সেরা নায়ক হলেন এলন মাস্ক৷ তিনি যদি কেনিয়ায় আসতে পারতেন! কারণ আমরা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছি৷ ঘটনা হলো, আমার কখনোই টেসলা কেনার সামর্থ্য হবে না, হয়তো ধার করে চড়তে পারবো৷ ততদিন পর্যন্ত আমাকেই নিজের যান তৈরি করতে হবে৷’’
নিজের ছোট্ট কর্মশালায় সৃষ্টির কাজে ব্যস্ত লিংকন৷
বির্গিট ফিমিচ/এসবি
গতবছর আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...