আফ্রিকার কেনিয়ার একটি স্কুলে ধাক্কাধাক্কিতে পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছে ১৩টি শিশু৷ পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরো অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার কেনিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের শহর কাকামেগার একটি প্রাইমারি স্কুলে হঠাৎ করেই ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়৷ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অজানা কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়৷ ধাক্কাধাক্কির ঠেলায় পদপিষ্ট হয়ে মারা যায় ১৩টি শিশু৷
তদন্তকারী পুলিশ এখনও আতঙ্ক ছড়ানোর পেছনে কোনো কারণ খুঁজে পায়নি৷ ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং স্কুল চত্বর ব্যারিকেড করে বন্ধ করে দেয় ও শিক্ষকদের বিবৃতি নেয়৷
কী ঘটেছে স্কুলে?
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাকামেগা পুলিশ প্রধান ডেভিড কাবেনা জানান, ‘‘ঠিক কী হয়েছে তা জানতে আমরা তদন্ত শুরু করেছি৷ এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৩জন এবং আহতরা হাসপাতালে রয়েছেন৷''
কেনিয়ায় স্কুল ভবন ধসে ৭ শিশুর মৃত্যু
00:38
কিন্তু মৃত এক শিশুর অভিভাবক দোষী সাব্যস্ত করছেন শিক্ষকদের৷ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘যারা প্রাণে বেঁচে বেরোতে পেরেছে তারা জানিয়েছে যে শিক্ষকরা তাদের খুব মারছিলেন৷ সেই মার থেকে পালাতেই শিশুরা দৌড়াচ্ছিল৷ সেখান থেকেই ধাক্কাধাক্কির সূত্রপাত৷''
স্কুল কর্তৃপক্ষ এখনও এবিষয়ে কোনো খোলসা করেনি৷ স্কুলের সহ-সভাপতি উইরিয়াম রুটো টুইটারে জানান, ‘‘কাকামেগাস্কুলের ভয়াবহ ঘটনায় আমরা দুঃখিত৷ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা রইল৷''
কেনিয়ায় কোনো স্কুলে শিক্ষার্থীদের মারা আইনত অপরাধ৷ তাই এই দিকটিকেও মাথায় রাখছেন তদন্তকারীরা৷ অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার কথা জানিয়ে এগিয়ে এসেছে রেড ক্রস ইন্টারন্যাশনাল৷ ইতিমধ্যে, মানসিকভাবে ত্রস্ত শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে তারা৷
সারা বিশ্বে শিশুমৃত্যু
গত কয়েক দশকে সারা বিশ্বে শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রভুত অগ্রগতি হয়েছে৷ কমেছে শিশুমৃত্যুর হার৷ ইউনিসেফ-এর ২০১৭ সালের রিপোর্ট দিচ্ছে এমন তথ্য৷ তারপরও এখনো যেতে হবে বহুদূর৷ ছবিঘরে বিস্তারিত দেখুন৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
আড়াই দশকে কমেছে ৫৭ ভাগ
১৯৯০ সালে সারাবিশ্বে গড়ে প্রতিদিন ৩৫ হাজার পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মারা যেত৷ ২০১৬ সালে সংখ্যাটি কমে ১৫ হাজার হয়েছে৷ অর্থাৎ আড়াই দশকে প্রায় ৫৭ ভাগ কমেছে পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সি শিশুমৃত্যুর হার৷
ছবি: AP
নবজাতকের মৃত্যুর হার
২০১৬ সালে সারাবিশ্বে ২৬ লাখ নবজাতক (এক মাস বয়সি বা তার কম) মারা গেছে৷ অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার৷ এই সংখ্যা পাঁচ বছরের কম যত শিশু মারা যায় তার ৪৬ শতাংশ৷ অথচ ২০০০ সালে এই হার ছিল ৪১ শতাংশ৷ তুলনামূলক হারে বাড়লেও নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি হাজারে ২৫ বছরে ৩৭ থেকে কমে ১৯ হয়েছে৷
ছবি: DW/J. Abdullah
প্রথম মাসেই ঝুঁকি বেশি
জন্মের প্রথম মাসেই শিশুর মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম মাসে প্রতি হাজারে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯, যেখানে এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত তা ১২ এবং এক বছর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সেটি ১১৷ ইউনিসেফ বলছে, ১ থেকে ৫৯ মাস পর্যন্ত নবজাতকের মৃত্যুর হার কমাতে যথেষ্ট সাফল্য পাওয়া গেলেও নবজাতকের মৃত্যুর হার কমানোর গতি খুবই শ্লথ৷
ছবি: imago/i Images/A. Parsons
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি
জনসংখ্যা বেশি, তাই সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৩৯ ভাগ শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়ায়৷ এরপর সাবসাহারান আফ্রিকায়, ৩৮ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে পাঁচ দেশে সবচেয়ে বেশি শিশুমৃত্যু
যত নবজাতকের মৃত্যু হয় তার অর্ধেকই হয় পাঁচটি দেশে৷ এগুলো হলো, পাকিস্তান, ভারত, নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও ইথিওপিয়া৷ সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয় এমন দশটি দেশের আটটিই আফ্রিকার৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
সবচেয়ে কম জাপানে
জাপান শিশুস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা বলে চিহ্নিত হয়েছে৷ সেখানে প্রতি ১ হাজার ১শ ১১ জন শিশুর মধ্য একজন প্রথম মাসে মারা যায়৷ এছাড়া আইসল্যান্ডে প্রতি হাজারে, সিঙ্গাপুরে প্রতি ৯০৯ জনে, ফিনল্যান্ডে প্রতি ৮৩৩ জনে, এস্তোনিয়া ও স্লোভেনিয়ায় প্রতি ৭৬৯ জনে, সাইপ্রাসে প্রতি ৭১৪ জনে এবং বেলারুশ, লুক্সেমবুর্গ, নরওয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি ৬৬৭ জনে একজন নবজাতক মারা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Matthys
পার্থক্য কমাতে হবে
উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনুন্নত দেশগুলোতে, মূলত আফ্রিকার দেশগুলোতে কমপক্ষে ৫০ গুণ খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে৷ এই পার্থক্য কমিয়ে আনা খুব দরকার বলে মনে করছে ইউনিসেফ৷ তাদের হিসেবে, যদি প্রতিটি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার রোধে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জন করতে পারে তাহলে ২০১৭ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে এক কোটি শিশুর জীবন বাঁচবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/blickwinkel/W. Dolder
চিকিৎসা আছে
ইউনিসেফ-এর গবেষণা অনুযায়ী, যেসব রোগে বেশির কম বয়সি শিশু (০-৫ বছর) মারা যায়, তার অধিকাংশেরই প্রমাণিত চিকিৎসা আছে এবং মোটেই ব্যয়বহুল নয়৷ তারা বলছে, বড় বাচ্চাদের (৫-১৪ বছর) চেয়ে ছোট বাচ্চারাই সংক্রামক রোগে বেশি আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়৷ তবে বড় বাচ্চারা বেশি মারা যায় দুর্ঘটনা বা অসংক্রামক রোগে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
বাংলাদেশ ভালো করছে, তবে...
অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো করছে৷ আড়াই দশকে বাংলাদেশ পাঁচ বছরের কম শিশুমৃত্যু বছরে ২ রাখ ৪১ হাজার থেকে কমিয়ে ৬২ হাজারে নামিয়েছে৷ অর্থাৎ হার কমিয়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ৷ তবে নবজাতকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এখনো পৃথিবীর দশটি সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়ে গেছে৷ এছাড়া এখনো বছরে ৮৩ হাজার শিশু জন্মের সময়েই মারা যায়৷