কর বৃদ্ধির প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে উত্তাল কেনিয়ার পার্লামেন্ট। হামলা, গুলি। আহত বহু। পার্লামেন্টে আগুন।
পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বিক্ষোভছবি: LUIS TATO/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
উত্তাল নাইরোবি। বিক্ষভকারীরা পার্লামেন্টের একটি অংশে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছেন, যারা একাজ করেছে, তারা দেশবিরোধী। সকলের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এবং তার জন্য পুলিশের পাশাপাশি বিক্ষোভ রুখতে রাস্তায় সেনা বাহিনীও নামানো হয়েছে।
বিক্ষোভের সূত্রপাত
সম্প্রতি কেনিয়ার পার্লামেন্টে একটি আর্থিক বিলের প্রস্তাব আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, জাতীয় বাজেটের ঘাটতি কমাতে কর ব্য়বস্থায় পরিবর্তন আনা হবে। বেশ কিছু নতুন কর বসানো হবে। আর এতেই উত্তেজিত হয়ে পড়েছে কেনিয়ার যুব সমাজ। তাদের বক্তব্য, নতুন করের চাপ সরাসরি তাদের উপর এসে পড়বে। আর সে কারণেই তারা প্রতিবাদ শুরু করেছে। মঙ্গলবার সেই আন্দোলনই সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টে আক্রমণ চালায়। আগুন লাগানোর চেষ্টা হয় পার্লামেন্টের একাংশে। পুলিশ পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। তাতে বেশ কিছু মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঝলক
এবারে প্রতিদ্বন্দ্বী, দীর্ঘদিনের বিরোধী নেতা রাইলা ওডিঙ্গার মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করছে কেনিয়া। বিস্তারিত দেখুন ছবিঘরে।
ছবি: Thomas Mukoya/REUTERS
লম্বা লাইন
ইনডিপেন্ডেন্ট ইলেক্টোরাল অ্যান্ড বাউন্ডারিজ কমিশন আয়োজিত এই সাধারণ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোটার ভোট দেন। নাইরোবির কিবেরা বস্তিতে ভোটারদের ভিড়ের ছবি দেখা গিয়েছে। সহিংসতা এবং অনিয়মকে দূরে সরিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে তারা।
ছবি: Monicah Mwangi/REUTERS
ভোট দেওয়ার প্রথম ধাপ
ভোটারের পরিচয় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যাচাই করা হয়। ভোটকেন্দ্রের একটি বৈদ্যুতিন সিস্টেমে তাদের আঙুলের ছাপ স্ক্যান করা হয়। কেনিয়া ইন্টিগ্রেটেড ইলেক্টোরাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে (কেআইইএমএস) একজন ভোটারের তথ্য যাচাই করেন নির্বাচনী আধিকারিক।
ছবি: Patrick Meinhardt/AFP
সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ
ইনডিপেন্ডেন্ট ইলেক্টোরাল অ্যান্ড বাউন্ডারি কমিশন এবং প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা ভোটারদের কাছে গিয়ে তাদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছে। যোগ্য নেতা বাছাই করার অনুরোধ জানিয়েছে ভোটারদের।
ছবি: Patrick Meinhardt/AFP
ছয়টি ব্যালট
রাষ্ট্রপতি, গভর্নর, সেনেটর (উচ্চ ও নিম্ন কক্ষ) নারী প্রতিনিধি এবং ওয়ার্ড প্রতিনিধিদের জন্য প্রত্যেক ভোটারকে ছয়টি ব্যালট পেপার দেয়া হয়। প্রতিটির রং ভিন্ন। ভোটদানের পর ভোটারের আঙুলে কালি দেয়া হয় যাতে কোনো কারচুপি না ঘটে।
ছবি: Luis Tato/AFP
৪৬ হাজার ২২৯টি ভোটকেন্দ্র
পাঁচ কোটি কেনিয়াবাসীর মধ্যে দুই কোটি ২১ লক্ষ ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সি। তাদের ভোটদানের জন্য মোট ৪৬ হাজার ২২৯টি ভোটকেন্দ্র খোলা থাকবে।
ছবি: Yasuyoshi Chiba/AFP
দেড় লাখ পুলিশ মোতায়েন
নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ অফিসার মোতায়েন করা হয়েছে, পুলিশ প্রধান হিলারি মুতিয়াম্বাই এ কথা জানিয়েছেন। ভোটের দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত স্কুলগুলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপারমার্কেটের তরফে জনগণকে অতিরিক্ত বাজার করে রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।
ছবি: Yasuyoshi Chiba/AFP
তরুণদের অংশগ্রহণ কম
নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, অনেক তরুণ ভোটার নাম নিবন্ধন করেননি। অনেকের ধারণা, বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়া এবং একই ছাঁচে ঢালা রাজনৈতিক ব্যবস্থা দেখে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
ছবি: Monicah Mwangi/REUTERS
বড়সড় আয়োজন
নাইরোবির কিবেরা প্রাথমিক স্কুলে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী রাইলা ওডিঙ্গা আসার অপেক্ষা করছিলেন কিবোরা বস্তির বাসিন্দারা। সেইসময় স্ট্রিট পারফর্মাররা তাদের জন্য বিনোদনের আয়োজন করেন। নিবন্ধিত ভোটারদের ৩০ শতাংশেরও বেশি মানুষ এ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।
ছবি: James Oatway/REUTERS
জার্মানিতে ভোট কেনীয়দের!
জার্মানিতে কেনিয়ার রাষ্ট্রদূত, টমাস বনিফেস অ্যামোলো। তিনি অন্যান্য কেনীয়দের সঙ্গে বার্লিনে কেনিয়ার দূতাবাসে ভোট দিয়েছেন।
ছবি: Thomas Kalunge
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ
কেনিয়ার এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের আওতায় রয়েছে। তানজানিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং ইস্ট আফ্রিকান কমিউনিটির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের প্রধান জাকায়া কিকওয়েতে নাইরোবির ওল্ড কিবেরা ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
ছবি: Gordwin Odhiambo/AFP
10 ছবি1 | 10
সাংবাদিকের বক্তব্য়
ডিডাব্লিউ-র সাংবাদিক এডিথ কিমানি জানিয়েছেন, বিক্ষোভ নিয়ে সরকারের দাবি পুরোপুরি মেনে নেয়া যায় না। যারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তারা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অংশ নন। এরা মূলত যুব সমাজ। করের প্রস্তাব পার্লামেন্টে তোলার পর এই যুব সমাজ রাস্তায় নেমেছে। এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ শুরু করেছে। তারা ভেবেছিল, পার্লামেন্টের রাজনীতিবিদেরা তাদের কথা শুনবেন। কিন্তু তাদের কথায় কর্ণপাত না করায় মঙ্গলবার বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠেছে।
এডিথের বক্তব্য়, কেনিয়ায় এখন যুবসমাজের সংখ্যা বেশি। গোটা দেশের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই যুবক। নতুন কর ব্য়বস্থা সরাসরি তাদের রোজগার কমাবে। এমনিতেই কেনিয়ায় যুব সমাজের একটি অংশ হতাশ। চাকরি নেই, কাজ নেই। তার মধ্যে আয়ের উপর নতুন কর কেউ ভালো চোখে দেখছেন না। সেখান থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।
অ্যামনেস্টির বক্তব্য
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, পুলিশ আসল গুলি চালিয়েছে। বেশ কিছু বিক্ষোভকারীর বুলেট লেগেছে। বুলেটে আহত অন্তত পাঁচ। একজনের মৃত্য়ু হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। গুরুতর আহত অন্তত ৩১ জন। ৫২ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আরো গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা আছে। শুধু নাইরোবি নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সর্বত্র সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনার নিন্দা করেছে অ্যামনেস্টি। যেভাবে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়েছে, তার সমালোচনা করা হয়েছে। অন্য়দিকে অ্যামেরিকা জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।