‘ফ্লিপ-ফ্লপ' আফ্রিকায় দারুণ জনপ্রিয়...৷ ভাবছেন সেটা আবার কী? আরে ভারত-বাংলাদেশে একেই তো আমরা চিনি ‘হাওয়াই চটি' নামে! মুশকিল হলো, রাবার দিয়ে তৈরি বলে, চটি জোড়া সহজেই ছিড়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ে সমুদ্রতটে৷
বিজ্ঞাপন
আমাদের দেশে রাবারোর অতি সাধারণ এই স্যান্ডেলগুলো সাধারণত বাড়িতে পরার চটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ তবে হাওয়াইয়ের দাম কম হওয়ায় অনেক গরিব মানুষের অবশ্য এ চটিই একমাত্র সম্বল৷ আফ্রিকাতেও তাই৷
দামে কম, আর গরমের দেশে পরেও আরাম৷ তাই পথে-ঘাটে, বাড়িতে-সমুদ্রসৈকতে – আফ্রিকার প্রায় সব দেশেই অগুন্তি মানুষের পায়ে দেখা যায় এই চটি৷ কিন্তু ছিড়ে গেলে অথবা পুরোনো হয়ে গেলে – হাওয়াই চপ্পলের আর যে কোনো কাজ নেই৷ তাই লক্ষ লক্ষ ফ্লিপ-ফ্লপের সামাধিস্থল এখন আফ্রিকার সাগরপাড়৷
প্লাস্টিকে ভরে যাওয়া পৃথিবী
লক্ষ লক্ষ টন প্লাস্টিক আবর্জনায় সাগরের পানি ভরে যাচ্ছে, ক্ষতি হচ্ছে মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর৷ গতকাল ছিল বিশ্ব সমুদ্র দিবস৷ এ উপলক্ষ্যে আমরা নজর দেব সাগরে প্লাস্টিক দূষণের দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Nelson
টন টন আবর্জনা
প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক আবর্জনা সাগরে গিয়ে পড়ে বলে এলেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশনের একটি রিপোর্টে প্রকাশ৷ রিপোর্টে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে যে, জরুরিভাবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিক আবর্জনার পরিমাণই বেশি হবে৷ প্রশান্ত মহাসাগরের এক প্রান্তে অবস্থিত মিডওয়ে আইল্যান্ডের সৈকতও আজ আবর্জনামুক্ত নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Olenick
প্লাস্টিকের খদ্দের
সবাই যে প্লাস্টিক অপছন্দ করে, এমন নয়৷ প্লাস্টিক ভেঙে ছোট ছোট টুকরো হয়ে গেলে সাগরের প্রাণীরা তাকে খাদ্য বলে ভুল করে৷ উপশালা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, প্লাস্টিক খাওয়ার ফলে মাছের বৃদ্ধি কমে যায়, মৃত্যুহার বাড়ে৷ মজার কথা, কিছু কিছু মাছ যেন প্লাস্টিক খেতেই ভালোবাসে! কিন্তু এভাবে মাছ থেকে মানুষের খাদ্যচক্রেও এসে পড়ে প্লাস্টিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Olenick
যে প্লাস্টিক খাওয়া যায়
ওসেন কনজারভেন্সি সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬৯০টি প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী প্লাস্টিক দূষণের কবলে পড়েছে৷ কাজেই কোম্পানিগুলি প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের নানা বিকল্প বের করার চেষ্টা করছে৷ ফ্লোরিডার একটি বিয়ার তৈরির কোম্পানি, ডেলরায় বিচ ক্রাফ্ট ব্রুয়ারি, তাদের ছয় ক্যানের সিক্সপ্যাক বাঁধার রিং, বিয়ার তৈরি থেকে উদ্বৃত্ত গম আর বার্লি দিয়ে বানানোর পরিকল্পনা করছে৷ আগামী অক্টোবরে প্রোডাকশন শুরু হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. McDonald
বায়োডিগ্রেডেবল প্যাকেজিং
ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক প্যাকেজিং সাগরে প্লাস্টিক আবর্জনার একটা বড় অংশ৷ কোম্পানিরা যার বায়োডিগ্রেডেবল, অর্থাৎ সহজে পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়, এমন বিকল্প বার করার চেষ্টা করছে৷ পোল্যান্ডের একটি কারখানায় সে কাজে গমের ফ্যান ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ইয়ের্জি ভিসোচকি যে বিওট্রেম প্যাকেজিং আবিষ্কার করেছেন, তা ওভেন কিংবা ডিপ ফ্রিজে ব্যবহার করা চলে; ত্রিশ দিনের মধ্যে ক্ষয় পেয়ে যায়; আবার খাওয়াও চলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Reszko
প্লাস্টিকের বিকল্প বাঁশ
বাঁশগাছ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে, তাই বাঁশ প্লাস্টিকের বিকল্প হতে পারে৷ বাঁশ থেকে টুথব্রাশ, বাথরুমে পর্দা ঝোলানোর ডান্ডা, রান্নার বাসনকোসন, এমনকি কম্পিউটারের পার্টস পর্যন্ত তৈরি করা যায়৷ টংগু জিয়াংকিয়াও ব্যাম্বু অ্যান্ড উড ইনডাস্ট্রি কোম্পানি বাঁশের কি-বোর্ড, মাউস আর মনিটরের কেস তৈরি করা শুরু করে ২০০৮ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z.Haibin
ওসেন স্কিমার
প্লাস্টিকের বিকল্প দিয়ে প্লাস্টিক আবর্জনার পরিমাণ কমানো যেতে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ টন প্লাস্টিক বহ শতাব্দি ধরে সাগরের পানিতে ভেসে বেড়াবে ও ধীরে ধীরে ক্ষয় পাবে৷ ওলন্দাজ ওসেন ক্লিনআপ সংস্থা একটি ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘের ভাসমান বাঁধ দিয়ে সেই প্লাস্টিক আবর্জনাকে ধরে রাখবে৷ প্রশান্ত মহাসাগরে ২০২০ সালের মধ্যে এরকম একটি ভাসন্ত বাঁধ নিয়োগ করার কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E.Zwart
আবর্জনা থেকে ফ্যাশন
প্লাস্টিকের একাংশ রিসাইকেল করায় কোনো বাধা নেই: তা দিয়ে ফুলের টব, বাড়িঘরের ইনসুলেশন, এমনকি জামাকাপড় পর্যন্ত তৈরি করা যায় - যেমন স্পেনের ইকোঅ্যাল্ফ কোম্পানির তৈরি জ্যাকেট৷ ২০০টি মাছধরার নৌকো প্রতিদিন ভূমধ্যসাগর থেকে যে পরিমাণ প্লাস্টিক আবর্জনা সংগ্রহ করে, তা গুঁড়ো করে তা থেকে পলিয়েস্টার ফাইবার বানিয়ে, সেই ফাইবার দিয়ে এই সব জ্যাকেট ও অন্যান্য ফ্যাশনেবল জামাকাপড় তৈরি করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/P. Armestre
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাও, রিসাইকল করো
প্লাস্টিকের আবর্জনা অপরিবর্তিত রেখেই তা পুনর্ব্যবহার করা চলে৷ ২০১২ সালে রিও ডি জানিরো-য় জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সম্মেলনে রিও-র ওয়াটারফ্রন্টে যে সুবিশাল মাছের ভাষ্কর্য প্রদর্শন করা হয়েছিল, তা ছিল প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Lacerda
8 ছবি1 | 8
তবে এবার, নাইরোবির একটি সংস্থা এগিয়ে এসেছে৷ তারা মানুষকে টেকসই উন্নয়নের কথা বলছে, বোঝাচ্ছে পরিবেশ সরক্ষণের উপায় আর শেখাচ্ছে ফেলে দেয়া ফ্লিপ-ফ্লপগুলোকে পুনর্ব্যবহারের উপায়৷ শুধু তাই নয়, #ডিইংইয়োরবিট নামের এটি হ্যাশট্যাগও চালু করেছে তারা, যার মধ্যে তারা সকলেই বলছে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে৷
ডিজি/এসিবি
বন্ধু, কেমন লাগলো আপনাদের ভিডিওটি? আচ্ছা, বাংলাদেশে এমন একটা বিপ্লব করলে কেমন হয়?
আবর্জনা থেকে বিস্ময় জাগানো শিল্পকর্ম
সমুদ্রসৈকত নোংরা করে ফেলে প্লাস্টিকের ব্যাগ, স্যান্ডেল, খেলনা, টুথব্রাশসহ নানারকম পরিত্যক্ত জিনিস৷ সবার চোখে আবর্জনা হলেও ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর কাছে এ সব অমূল্য বস্তু৷ তাই এগুলো দিয়েই দারুণ সব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করছে তারা৷
ছবি: Washed Ashore
আবর্জনাই যখন শিল্পীর হাতে...
এই বিশাল মাছঠি তৈরি হয়েছে শুধু সমুদ্র সৈকতে কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের আবর্জনা দিয়ে৷ ভালো মনের শিল্পীর হাতে আবর্জনাও কত অপরূপ, কত অসাধারণ কিছু হয়ে উঠতে পারে – এ ছবিটা তারই নিদর্শন, তাই নয় কি?
ছবি: Washed Ashore
যেখানে দেখিবে প্লাস্টিক
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই/পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’ – ছাই কুড়ালে রতন তো পায়ই অনেকে৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সংগঠন প্লাস্টিক কুড়িয়েই তৈরি করছেন অমূল সব শিল্পকর্ম৷ শিল্প সৃষ্টির আগে ওরেগনের সমুদ্রসৈকত থেকে প্লাস্টিকের জিনিস সংগ্রহ করে, ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার পর সব জিনিস রং অনুযায়ী আলাদা করাও কিন্তু খুব শ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ কাজ৷
ছবি: Washed Ashore
আসল উদ্যোক্তা
ছবির এই মানুষটির নাম অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি৷ ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ প্রকল্পের প্রধান তিনি৷ পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের নানা জিনিস দিয়ে নানা ধরনের প্রাণীর যে সব মূর্তি গড়া হয়, সেগুলোর সবচেয়ে কঠিন অংশটুকুও তিনিই করেন৷
ছবি: Washed Ashore
স্বেচ্ছাসেবা দিতে এসে শিক্ষার্থী
‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর উদ্যোগের অংশ হতে আজ অনেকেই আগ্রহী৷ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর হয়ে কাজও করছেন অনেকে৷ পরিবেশ রক্ষা এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে শরিক হয়ে শিল্প সৃষ্টির নেশায়ও মেতেছেন কেউ কেউ৷
ছবি: Washed Ashore
সচেতনতা বৃদ্ধি
প্লাস্টিকের বড় প্রাণী তৈরি করেই কিন্তু কাজ শেষ নয়৷ শিল্পকর্মগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করে তারা৷ এ সব প্রদর্শনীর একটাই উদ্দেশ্য – পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি৷
ছবি: Washed Ashore
মনে দাগ কাটার মতো বড়
‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সব সময় প্লাস্টিকের বড় বড় মূর্তিই তৈরি করে৷ বেশির ভাগ মূর্তিই সাড়ে তিন থেকে চার মিটার লম্বা এবং প্রায় তিন মিটার উঁচু৷ সবচেয়ে বড় একটি পাখির মূর্তি৷ সেই পাখির ডানার দৈর্ঘ্যই সাত মিটারের মতো!
ছবি: Washed Ashore
সবাই তাদের অনুসরণ করুন
অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি মনে করেন, ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ যে কাজটি করছে তা যদি বিশ্বের সব প্রান্তে অনেক মানুষ করতে শুরু করে তাহলেই তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে৷ যেখানে-সেখানে প্লাস্টিকের জিনিস ফেলার প্রবণতা কমিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা তাহলেই যে সম্ভব৷