কেন্দ্রীয় বাহিনী বসেছিল, নিয়োগ করা হয়নি: বিএসএফ আইজি
১০ জুলাই ২০২৩
পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বুথে ডিউটি না দিয়ে অনেক জায়গায় বসিয়ে রাখা হয়েছিল, দাবি বিএসএফ আইজি-র।
বিজ্ঞাপন
চরম সহিংসতার মধ্যে শেষ হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। যেসব বুথে সোমবার আবার ভোট হচ্ছে, সেখান থেকেও সহিংসতার খবর আসছে। কিন্তু শনিবার ভোটের দিন বহু কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েনই করা হয়নি। তারপর প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যে আসা ৬৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী গেল কোথায়? বিএসএফের আইজি নির্বাচন কমিশনকে একটা চিঠি লিখেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, ''শুক্রবার রাত থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী বসেছিল। উত্তেজনাপ্রবণ জেলা ও বুথে বাহিনী ছিল না। কেন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সেই জায়গায় পাঠানো হলো না?''
আইজি-র অভিযোগ, ''যেখানেই কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়েছে, সেখানেই তাদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়নি।'' তার অভিযোগ, ''স্পর্শকাতর বুথের তালিকাও তাদের দেয়া হয়নি। তাই বাহিনীকে সেখানে পাঠানোও যায়নি।''
এরপর নির্বাচন কমিশনার বিএসএফের আইজিকে ডেকে পাঠান। কমিশনের দাবি, উত্তেজনাপ্রবণ বুথের তালিকা দিয়ে দেয়া হয়েছিল। জেলাশাসকদেরও সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত খবরের শিরোনামে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকা। মনোনয়নের দিনগুলিতে ভাঙড়-২ নম্বর বিডিওর চেহারা শাসক-বিরোধীদের যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তরিত হয়েছিল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বোমা, গুলি, গাড়ি পোড়ানো
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে প্রতি দিনই বোমাবাজি, গুলি, ইটবৃষ্টি, পুলিশের উপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এলাকা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দোকানে আগুন
মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন অশান্তির আঁচ পেয়ে অনেকেই দোকান বন্ধ করে চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু দুষ্কৃতিরা বন্ধ দোকানেও আগুন লাগিয়ে দেয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বন্ধ দোকান লুট
বিজয়গঞ্জ বাজারে পান-বিড়ির দোকান চালান মেহেতাব আলি। তার বন্ধ দোকানেও লুটপাট চালানো হয়ে বলে জানান তিনি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ছড়িয়ে আছে সহিংসতার চিহ্ন
মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও এলাকায় ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে বোমা, কার্তুজের বাক্স, বন্দুকের অংশ। পড়ে আছে পোড়া গাড়িগুলি। দেখেই বোঝা যায়, কী হয়েছে ভাঙড়ে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সহিংসতার শীর্যে ভাঙড়
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে অশান্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা। তবে অশান্তিতে শীর্ষে উঠে এসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। ছবিতে উদ্ধার হওয়া বোমা ও কার্তুজের প্যাকেট।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মৃত তিন
এই অশান্তিতে তিন জনের প্রাণ গিয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। তাঁদের মধ্যে এক জন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) কর্মী, অন্য দু’জন শাসক তৃণমূলের কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে। মতান্তরে দুইজন আইএসএফ এবং একজন তৃণমূল কর্মী মারা গেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এই সেই বিডিও অফিস
এখানেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে হচ্ছিল। কিন্তু অভিযোগ, এই অফিস-চত্বরের মধ্যে ও বাইরের জায়গা শাসক দলের কর্মীরা শাসন করেছে। কাউকে ঢুকতে দেয়নি। ফলে অনেক বিরোধী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ব্যবস্থা ছিল, তাও অভিযোগের অন্ত নেই
সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল, পুলিশ ছিল, তাও মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। ফলে অনেক জায়গায় তৃণমূল কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া জিতে গেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দোকানপাট এবার খুলছে
গত কয়েকদিন বন্ধই ছিল দোকানপাট থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য। রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছিলেন এলাকার সাধারণ মানুষ। তবে বৃহস্পতিবার মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার পর শুক্রবার থেকে ভাঙড়ের পরিস্থিতিতে সামান্য বদল এসেছে বলছে স্থানীয় মানুষ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রাজ্যপাল ভাঙড়ে
শুক্রবার দুপুরে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার পৌঁছান পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তার পর যান ভাঙড় ২ নং ব্লক অফিসে। সেখানে কথা বলেন আধিকারিকদের সঙ্গে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সাধারণ মানুষের সঙ্গে
রাজ্যপাল কথা বলেন স্থানীয়দের সঙ্গেও। বোঝার চেষ্টা করেন অশান্তির কারণ। পরে রাজভবনে একটা হেলপলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। সেখানে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারলে ফোন করে জানানো যাচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রাজ্যপালের বৈঠক
এরপর রাজ্যপাল পৌঁছান ভাঙড় কলেজে। কলেজে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। কলেজের বাইরে আইএসএফ কর্মীরা রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মনোনয়ন দিতে পারেনি
বহু আইএসএফ কর্মীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। তারা মনোনয়নপত্র হাতে নিয়ে জমায়েত করেন কলেজের ক্যাম্পাসে। রাজ্যপালের বেরনোর অপেক্ষা করতে থাকেন তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
আইজির বক্তব্য, ''ব্যবস্থাপনার প্রবল সমস্যা ছিল। বাহিনী কোথায় আছে, তার খোঁজ প্রশাসন রাখেনি। বাহিনীকে বুথে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো ব্যবস্থাই করা হয়নি।''
ভোটপর্ব শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছিল, বাহিনী চাওয়ার পর তাদের কোথায় পাঠাতে হবে তা বলেনি নির্বাচন কমিশন। বাহিনীকে ট্রেন বা অন্য বাহনে করে নিয়ে যাওয়া হয়। আগে থেকে না জানালে সেই ব্যবস্থা করা যায় না।
কেন এই অবস্থা?
প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনের হাতে থাকে। অতীতেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে প্রচুর উঠেছে। তাদের বসিয়ে রাখার বিষয়টি সামনে এসেছে। এবারও তাই হলো। আর পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে এবং তারা তৎপর থাকলে হয়ত এত প্রাণ যেত না।''
তবে সাংবাদিক আশিস গুপ্তের মতে, ''এত কম সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বুথে পৌঁছানোর কাজটা খুবই কঠিন। তার জন্য অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। না হলে পঞ্চায়েতের মতো তৃণমূল স্তরের নির্বাচনে, যেখানে ৬১ হাজারের বেশি বুথ ছিল, সেখানে তাদের নিয়োগ করটা খুব সহজ কথা নয়।''
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিযুক্ত হওয়ার একদিনের মধ্যে রাজীব সিং ভোটের দিন ঘোষণা করে দিলেন। তারপর হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে মামলা নিয়ে অনেকটা সময় গেল। এরপর কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও তাদের নিয়োগ নিয়ে অভিয়োগ উঠেছে। পঞ্চায়েতে ভয়ংকর সহিংসতা হয়েছে। এর ফলে রাজ্য সরকার বিশেষ করে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে।''
শুভাশিস জানিয়েছেন, ২০০৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পাঁচটি পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২৭০ জনের প্রাণ গেল।