1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন্দ্রের ‘জিরো টলারেন্সেও’ তৃণমূলে বেসামাল বিএনপি

১ জুন ২০২৫

ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার কথা বললেও তৃণমূলে নেতাকর্মীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না বিএনপি৷ ঘটছে দখল, চাঁদাবাজি ও সংঘাতের ঘটনা৷

২৬ মার্চ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর সময়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র-আসকের হিসাবে, চলতি বছরের প্রথম চারমাসে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে মোট ৩০জন নিহত হয়েছেন৷ তবে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ পাওয়ার পর তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ অপরাধের সঙ্গে যারা যুক্ত হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানানোর কথাও তারা বলছে৷

পরিস্থিতি সামলাতে বিএনপি একটি মনিটরিং সেল খুলেছে৷ তিন হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ তবে তাতেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না৷ তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে গ্রুপিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছে৷ সেই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশ ও প্রশাসনও বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে৷ তবে কয়েকটি জায়গায় বিএনপি বা তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশ হামলারও শিকার হয়েছে৷

পুলিশের ওপর হামলা, থানা ঘেরাও

২৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ তা থামাতে গেলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে৷ ৬ এপ্রিল শেরপুরের ঝিনাইগাতী বাজারে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের তত্ত্বাবধানে জুয়ার আসরে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয় পুলিশ৷

গত ১৮ মার্চ জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায়  একটি চাঁদাবাজির মামলায়  বিএনপির তিন কর্মীকে আটক করে পুলিশ৷ তারা চাঁদার দাবিতে একটি পরিবারের সদস্যদের মারধোর করছ এমন তথ্য পেয়ে পুলিশ আহতদের উদ্ধার এবং ওই তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়৷ পরে তাদেরকে ছাড়িয়ে নিতে  উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন থানায় হামলা করে বলে অভিযোগ রয়েছে৷

পুলিশের ওপর হামলা ছাড়াও আসামিকে ছেড়ে দেয়ার জন্যও পুলিশকে হুমকি দেয়ার অভিযোগও আছে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে৷

১২ মার্চ বরিশালের মুলাদি থানায় ডাকাতির মামলায় আটক পাঁচজনকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ি তার লোকজন নিয়ে থানা ঘেরাও করেন৷

বিএনপির নেতৃত্ব সেই পুরণো, মেয়াদ উত্তীর্ণ: মাসুদ কামাল

This browser does not support the audio element.

দখল-চাঁদাবাজির যত অভিযোগ

সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজির অভিযোগের বিভিন্ন খবর উঠে এসেছে৷

  • গত ১০ মার্চ পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাট এলাকায় এমটিসি টাওয়ার নামের বিপণিবিতানের দখল নিয়ে যুবদলের দুই গ্রুপের সংঘাতের ঘটনা ঘটে৷ এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ছয়জন আহত হন৷
  • ৮ মার্চ ঢাকা কলেজের সামনে ফুটপাতের ব্যবসা দখল নিয়ে হকারদের মারধোর করার অভিযোগ ওঠে ঢাকা কলেজ ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে৷
  • গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ‘বন্ধন পরিবহন' বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ৷ এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন৷
  • গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজি ও সবজি মার্কেট দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন৷ যারা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন তারা স্থানীয় শ্রমিক দলের সদস্য বলে অভিযোগ৷
  • ১২ মে দলের নামে অফিস খুলে চাঁদাবাজির অভিযোগে নাটোরের সিংড়া থেকে পুলিশ আটক করে স্থানীয় বিএনপি নেতা হাজী কুদ্দুস আখন্দকে৷ তিনি উপজেলা মৎসজীবী দলের সাবেক সভাপতি৷
  • ২৮ মে কুঁড়িগ্রাম সদর উপজেলায় গরুর হাটে চাঁদবাজির অভিযোগে আটক হন বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই নেতা৷
  • ২৯ এপ্রিল নাটোরে ধানের ট্রাকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আটক হন বিএনপি ও যুবদলের তিন নেতা৷
  • ১৩ এপ্রিল পাবনার ইশ্বরদীতে অটোরিকশার স্ট্যান্ড দখল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়৷
  • ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার এমসি বাজারে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম মাইকে ঘোষণা দিয়ে বাজার দখল করে  চাঁদা দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেন৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণার ভিডিও ভাইরাল হলে তাকে যুবদল থেকে বহিস্কার করা হয়৷
  • ১১ আগস্ট বরিশাল শহরে তিনটি সরকারি পুকুর দখল করে তা বালু দিয়ে ভরাট করার উদ্যোগের অভিযোগে বিএনপির বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের দলীয় সদস্যপদ স্থগিত হয়৷

সংঘাত-সংঘর্ষের পেছনের কারণ

দেশের কয়েকটি এলাকায় কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত বেড়ে যাচ্ছে৷৷ এর সঙ্গে টেন্ডার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতার প্রতিযোগিতা নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে৷ মার্চের শেষে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের  বারইয়ারহাট এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়৷ এতে একজন নিহত হন৷ ১৮ মার্চ রাজশাহীর তানোরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত গানিউল হক নামের একজন কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান৷

৮ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় টিসিবির পণ্যের কার্ড বিতরণ নিয়ে সদর উপজেলা ও দর্শনা থানার তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির দুই গ্রপের সংঘর্ষে  ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম নিহত হন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন৷ গত কয়েক মাসে এমন সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন জেলায়৷

দলটির এসব সংঘাত সংঘর্ষের চিত্র উঠে এসেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানেও৷ তাদের হিসাবে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) বিএনপির নিজেদের মধ্যে সংঘাতে সারাদেশে ১৭ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন এক হাজার ২০১ জন৷ এই সময়ে তাদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ১০৫টি৷ বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ১০টি৷ এতে চারজন নিহত এবং ৭২ জন আহত হয়েছেন৷  ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ছয়টি৷ এতে ৫৭ জন আহত হয়েছেন৷ স্বেচ্ছাসেক দলের একটি অভ্যন্তরীণ সংঘাতে দুইজন আহত হয়েছেন৷ শ্রমিক দলের দুইটি অভ্যন্তরীণ সংঘাতে একজন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন৷

এছাড়া বিএনপি ও যুবদলের মধ্যে আটটি সংঘর্ষে দুইজন নিহত এবং ৭৭ জন আহত হয়েছেন৷ বিএনপি ও কৃষক দলের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনায়  তিনজন আহত হয়েছেন৷ কৃষক দল ও স্বেচ্ছাসেক দলের মধ্যে একটি সংঘর্ষে  দুইজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন৷ বিএনপি এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের মধ্যে দুইটি সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন৷ স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের মধ্যে দুইটি সংঘর্ষে ২৯ জন আহত এবং দুইজন নিহত হয়েছেন৷ ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের মধ্যে একটি সংঘর্ষে তিন জন আহত হয়েছেন৷ বিএনপি ও ছাত্রদলের মধ্যে চারটি সংঘর্ষে একজন নিহত এবং ৩৮ জন আহত হয়েছেন৷ যুবদল ও ছাত্রদলের মধ্যে সাতটি  সংঘাতে  দুইজন নিহত এবং ৮১ জন আহত হয়েছেন৷ স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের মধ্যে দুইটি সংঘাতে ৩১ জন আহত এবং একজন নিহত হয়েছেন৷

বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যা বলছেন

বিভিন্ন স্থানে বিএনপিকর্মীদের চাঁদাবাজি, দখল, সংঘাত-সংঘর্ষের অভিযোগ অস্বীকার করছেন না তৃণমূলের কোনো কোনো নেতা-কর্মীরাও৷ তবে দলের পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তারা৷

ভোলার বিএনপির তৃণমূলের একজন নেতা এবং চরফ্যাশন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আল ইমরান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ চলে যাওয়ার পর এখন তাদের ফেলে যাওয়া সাম্রাজ্য দখল নিয়েই বিএনপির মধ্যে সংঘাত হচ্ছে৷ মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নানা গ্রুপ গড়ে তোলায়ও সংঘাত বাড়ছে৷ তবে এইসব দখল চাঁদাজির সাথে বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীরা জড়িত নয়৷ সব দলেই কিছু সুযোগসন্ধানী থাকে৷ তারা এইসব কাজ করছে৷”

তিনি দাবি করেন কেন্দ্র থেকে কড়া নির্দেশনা আছে এইসব আইনবিরোধী কাজে যাতে কেউ যুক্ত না হয়৷

বাগেরহাটের বিএনপি নেতা ও কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘‘তৃণমূলে দখল চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে৷ তবে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি৷ আর স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্যের বিষয় তো আছে৷ আছে নানা গ্রুপিং৷ সামনে নির্বাচনে মনোনয়ন পেতেও অনেকে আধিপত্য বিস্তার করছেন৷”

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি জুয়েল মৃধা বলেন, ‘‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে তৃণমূলে সংঘাত, চাঁদাবাজি ও দখলের মতো ঘটনায় কেউ কেউ জড়াচ্ছেন৷ তবে আওয়ামী লীগের সময়ে যা হয়েছে বর্তমানে তার চেয়ে অনেক কম৷ আর কেন্দ্র থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷”

তিনি দাবি করেন, তথ্য প্রযুক্তির কারণে কোনো ঘটনা ঘটলেই দ্রুত তার খবর ছড়িয়ে পরে৷ এতে মনে হচ্ছে চাঁদাবাজি, দখলদারী বেশি হচ্ছে৷ তার দাবি, ‘‘আমরা অভিযোগ উঠলেই ব্যবস্থা নেই৷”

ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না: এমরান সালেহ

This browser does not support the audio element.

‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণকারীদের’ বিরুদ্ধে বিএনপির বার্তা

বিএনপির দপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তিন হাজার ২০০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে বিএনপির এক হাজার ৮০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে৷ ৮০০ জনকে বহিষ্কার, ৫০ জনের পদ স্থগিত, কমপক্ষে ৭০০ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ, ১০০ জনকে সতর্ক এবং ১৫০ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে৷

ছাত্রদল এখন পর্যন্ত  ৪০০ জনকে বহিষ্কার ও ৬০০'র বেশি নেতা-কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবক দলের কমপক্ষে ১০০ জনকে বহিষ্কার ও ১৫০ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে৷ এ ছাড়া যুবদলের শতাধিক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা আমাদের সেলে সার্বক্ষণিক অভিযোগ নিচ্ছি৷ অনলাইনেও অভিযোগ নিই৷ আর আমরা সংবাদ মাধ্যমে যেসব অভিযোগ পাই তাও আমলে নিই৷”

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘বিএনপি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল৷ লাখ লাখ নেতা-কর্মী৷ তাদের মধ্যে যে সবাই ভালো তা নয়৷ খারাপ লোকও আছে৷ তারা পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইছে৷ কিন্তু আমাদের অবস্থান হলো এইসব ব্যাপারে জিরো টলারেন্স৷ যারা এইসব অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ আরো নেয়া হবে৷ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে তাদের আর দলে ফেরত নেয়া হবে না৷ দলের ভাবমূর্তি যারা ক্ষুণ্ন করবে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না৷”

এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও সমালোচনা করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘আমরা তো আর ক্ষমতায় নেই৷ তাই সরকারেরও দায়িত্ব আছে৷ আমরা পুলিশকেও ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি৷ কিন্তু তারা কখনো ব্যবস্থা নেয় আবার কখনো ঢিলেমি করে৷”

নেতা-কর্মীদের কেন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না বিএনপি?

মারবাধিকারকর্মী নূর খান এই পরিস্থিতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে দায়ী করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের সময়ে যে দখল , চাঁদাবাজি ছিলো তারই  হাত বদল হচ্ছে৷ এখানে সব রাজনৈতিক দলেরই দায় আছে৷ তবে বিএনপি যেহেতু বড় রাজনৈতিক সংগঠন তাই তার নেতা-কর্মীরাও এতে বেশি যুক্ত হচ্ছে৷”

তার মতে এই পরিস্থিতির জন্য পুলিশের পাশাপাশি বিএনপির রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও ব্যর্থতা আছে৷ তারা তাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না৷ ‘‘এখন দেশের সব জায়গায়ই দখল-চাঁদাবাজি-সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে৷ দল হিসাবে বিএনপিকেও তাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে৷ নয়তো তাদের ইমেজ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে,” বলেন তিনি৷

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল মনে করে দেশে যে চাঁদাবাজি, দখলদারি চলছে তার জন্য প্রধানত বিএনপি সংশ্লিষ্টরাই বেশি দায়ী৷ কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্য পুলিশের ব্যর্থতাকেও বড় করে দেখছেন তিনি৷ মাসুদ কামাল বলেন, ‘‘কিন্তু এমন যদি হতো তাদের ধরার পর যদি বিএনপি ছাড়ানোর জন্য মিছিল দিতো তাহলে বিএনপিকে দোষ দেয়া যেত৷ কিন্তু বিএনপির দায় হলো তারা তাদের নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না৷ বিএনপির দেশে যারা নেতৃত্বে রয়েছেন তারা আসলে সেই পুরণো, মেয়াদ উত্তীর্ণ৷  তারেক রহমান কী কারণে দেশে ফিরছেন না তার রহস্য আমি জানি না৷ কিন্তু এই সময়ে তার দেশে ফেরা উচিত ছিল৷ তিনি দেশে আসলে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন৷”

সরকারের প্রতি অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘আমার সন্দেহ হয় এই সরকার পরিকল্পিতভাবে এখন চাঁদাবাজি, দখলদারী, মব হতে দিচ্ছে, বাধা দিচ্ছেনা৷ যাতে বর্তমান রাজনীতির প্রতিও মানুষের খারাপ ধারণা হয়৷ এর মাধ্যমে তারা বিরাজনীতিকরণ করতে চাইছে৷ আর সেটা অবশ্যই বিএনপিকে বুঝতে হবে৷”

তবে নিজেদের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করছে পুলিশ৷ পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি(মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, "আমরা  এটাকে রাজনৈতিকভাবে দেখছি না৷ যারা অপরাধ করে তাদের আমরা অপরাধী হিসাবেই দেখি আমরা যখনই চাঁদাবাজি, দখলদারির অভিযোগ পাচ্ছি ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ অপরাধীদের আটক করছি৷”

পুলিশের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা না দেয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ