কাশ্মীরের ভূমিগত বাস্তবতার নিরিখে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজতে সোমবার কাশ্মীরে গেছেন কেন্দ্রের বিশেষ প্রতিনিধি দীনেশ্বর শর্মা৷ সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে সাড়া না এলেও, কথোপকথনের ধারাটা বজায় রাখা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
বিজ্ঞাপন
অশান্ত কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পাঁচ দিনের সফরে জম্মু-কাশ্মীরে গেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি দীনেশ্বর শর্মা৷ তিনি শ্রীনগরে পা রাখতে না রাখতেই কাশ্মীরের ফুলওয়ামা জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত হয় তিনজন জঙ্গি৷ নিহতদের একজন সম্পর্কে জয়স-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজাহারের ভাইপো৷ এছাড়া ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একজন জওয়ানও প্রাণ হারায় কান্দি-আগলার গ্রামে৷
কেন্দ্রের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে প্রাক্তন এই গোয়েন্দা কর্তার নাম ঘোষণার সময় থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল, এই কাজে তিনি কতটা সক্ষম হবেন? তবে কাশ্মীরের হালহকিকত সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল তিনি৷ বিরোধী পক্ষগুলির বক্তব্য শোনার ধৈর্য ও সহনশীলতা আছে তাঁর৷ এমনকি কাশ্মীর ইস্যুর সংবেদনশীলতাও তিনি বোঝেন৷ নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, সব শিবিরের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত তিনি৷ সেকথা চিঠি দিয়েও তিনি জানিয়েছেন৷ কিন্তু গলদ রয়ে গেছে গোড়াতেই৷ কাশ্মীরের রাজনৈতিক দল, বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এবং যুব সমাজ ভালোভাবেই জানে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের যে-কোনো শান্তি আলোচনাকারীকে সংবিধানের মধ্যেই থাকতে হবে৷ অর্থাৎ সমাধানের কোনো সূত্রই সংবিধানের লক্ষণরেখার বাইরে গিয়ে হবে না৷
দেশভাগের আগুন, যা এখনো জ্বলছে
১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷ সেই থেকে দুই দেশের কিছু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং শত্রুতা বেড়েই চলেছে৷
ছবি: AP
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়৷ জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র৷ ভারত ও পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ প্রথমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান৷ জিন্নাহ’র বিশ্বাস ছিল হিন্দু আর মুসলিমরা ভবিষ্যতে একসাথে থাকতে পারবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
রক্তাক্ত পথ
পার্টিশন বা দেশ বিভাগ নৃশংস এবং ভয়াবহ এক অধ্যায়ের নাম৷ ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে৷ ইতিহাসবিদরা বলেন, ঐ দাঙ্গায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারো বিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল হিন্দু নেতার হাতে৷ কিন্তু জিন্নাহ চাইলেন এটা যাতে পাকিস্তানের অধীন হয়৷ ১৯৪৮ সালে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনারা৷ কিন্তু সেই সংঘর্ষের জের অব্যাহত আছে আজও৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো
উদারপন্থি ইতিহাসবিদরা বলেন, জিন্নাহ এবং মহাত্মা গান্ধী নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন চেয়েছিলেন৷ জিন্নাহ’র আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো সম্পর্ক হবে ভারত-পাকিস্তানের৷ কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা নতুন দিল্লির সঙ্গে বিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: AP
উপস্থাপনের ভিন্নতা
ভারত ও পাকিস্তান সরকার দেশভাগের ব্যাপারটিকে একেবারে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে৷ ভারত এটাকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে, যেখানে মহাত্মা গান্ধীকে এর স্থপতি বলা হয়৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশ এবং হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৪ আগস্টকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
সম্পর্কের টানা-পোড়েন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত সাত দশক ধরেই তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ আর গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি জঙ্গিবাদের কারণে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে৷ নয়া দিল্লি বরাবরই পাকিস্তানকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে আসছে৷ আর ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে৷
ছবি: Picture alliance/AP Photo/D. Yasin
6 ছবি1 | 6
এটা বুঝেই সম্ভবত প্রধান প্রধান পক্ষ, যেমন হুরিয়াতের কট্টরপন্থি, মধ্যপন্থি এবং রাজ্যের শাসক বিরোধী রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স দীনেশ্বরের ‘মিশন কাশ্মীর'-এর প্রতি আগ্রহ দেখায়নি৷ উপত্যকার শান্তি আলোচনায় বিশেষ প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করতেও নারাজ তারা৷ হুরিয়াত জানিয়েছে, এইসব শান্তি আলোচনা অর্থহীন৷ স্রেফ কালক্ষেপ করা৷ তাদের ভাষায়, কাশ্মীর আন্দোলনে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, এই ধরনের আলোচনায় যোগ দেওয়া মানে তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা৷ উল্লেখ্য গিলানি, মিরওয়াইজ, ইয়াসিন মালিকের মতো শীর্ষ নেতারাই এখন হুরিয়াত, তথা কাশ্মীরের জনগণের সর্বেসর্বা৷
ওদিকে কাশ্মীরের উত্তপ্ত বাতাবরণে সম্প্রতি ঘি ঢেলেছেন কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী চিদামবরমের একটি মন্তব্য৷ তিনি কাশ্মীরে স্বশাসনের প্রসঙ্গটি তুলেছেন৷ এহ বাহ্য, সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা এবং ৩৫-এ সংশোধন করার ইস্যু নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক৷ আর এতে বিজেপি সরকার পড়েছে আরো বেকায়দায়৷ সমস্যা আরও জটিল হয়েছে৷ কাজেই প্রথমে শান্তি-সমঝোতার দু'টো প্রধান কাঁটা তুলতে হবে৷ এক, যে করেই হোক হুরিয়াতকে আলোচনার টেবিলে আনা৷ কিন্তু পাকিস্তানের অঙুলে লেহন ছাড়া হুরিয়াতকে আলোচনার টেবিলে আনা কার্যত অসম্ভব৷ দিল্লি তা মেনে নেবে না৷ দুই, সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা নিয়ে যাবতীয় বিতর্কের অবসান করা৷ কাশ্মীরিদের আশঙ্কা, এভাবে সংবিধান সংশোধন করা হলে কাশ্মীরি মুসলিমরা শেষ পর্যন্ত রাজ্যে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে৷
প্রতীপ চট্টোপাধ্যায়
তবে প্রথমদিন শ্রীনগরে দীনেশ্বর শর্মার সঙ্গে বৈঠকেযোগ দেন রাজ্যের ১০টি যুব গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা৷ তাঁরা জানান, কাশ্মীরিদের আস্থা অর্জন করতে হলে নিরাপত্তা বাহিনীকে ছররা গুলি চালানো বন্ধ করতে হবে৷ তুলে নিতে হবে কাশ্মীরি যুবকদের ওপর করা যাবতীয় মামলা৷ সীমান্তবর্তী গুজ্জর বাক্কারওয়াল সম্প্রদায়ের জেনারেল সেক্রেটারি ইয়াসিন পসওয়াল বলেন, দীনেশ্বর শর্মার মনোভাব ইতিবাচক৷ তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর কাশ্মীর সফরের সময়ে তাঁর কাছেও অনুরুপ দাবি রাখা হয়েছিল৷ দীনেশ্বর অবশ্য ইতিমধ্যেই তাঁর উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷ এর মধ্যে উল্লেখ্য, কাশ্মীরের যুব সমাজকে চরম পথ থেকে ফিরিয়ে আনা এবং কাশ্মীরকে আর একটি সিরিয়া হতে না দেওয়া৷
কাশ্মীর সমস্যার জট খোলা কি কেন্দ্রের বিশেষ প্রতিনিধি দীনেশ্বর শর্মার পক্ষে সম্ভব হবে? ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাশ্মীরে যাঁরাই গেছেন তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি সব সময়েই সামরিক বা রাজনৈতিক ছিল৷ রাজ্যে জঙ্গি তত্পরতা চলছে, কাজেই ধরাবাঁধা পথেই তাঁরা সামরিক সমাধানের চেষ্টা করে এসেছেন৷ কাশ্মীরের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিতের দিকে নজর দেওয়া হয়নি৷ তাই ‘‘কেন্দ্রের দৃষ্টিভঙ্গির যতক্ষণ না বদল হবে, সমাজের মুখ যতক্ষণ না তাতে সামিল হবে, ততক্ষণ মরীচিকা হয়ে থাকবে শান্তি৷'' তিনি জানান, ‘‘কেন্দ্রের উচিত আম কাশ্মীরিদের মনের কথা খোলাখুলিভাবে আদানপ্রদান করা৷ আর সেজন্য অন-লাইন, ভিডিও কনফারেন্স বা সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে৷ এছাড়া সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে কাশ্মীরিদের আশঙ্কা দূর করতে হবে৷''
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে যেন গলার ফাঁস হয়ে রয়েছে কাশ্মীর৷ তাই কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘটনাবলী আজ নিজেরাই ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bhat
১৯৪৭
বলা হয় দেশবিভাগের পর পাকিস্তান থেকে আগত উপজাতিক যোদ্ধারা কাশ্মীর আক্রমণ করে৷ তখন কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সাথে সংযোজনের চুক্তি করেন, যা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়৷
ছবি: dapd
১৯৪৮
ভারত জাতিসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে পর, ৪৭ ক্রমিক সংখ্যক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়৷ ঐ প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
১৯৪৮
কিন্তু পাকিস্তান প্রস্তাব অনুযায়ী, কাশ্মীর থেকে সৈন্যাপসারণ করতে অস্বীকার করে৷ অতঃপর কাশ্মীরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়৷
ছবি: Getty Images
১৯৫১
ভারতীয় কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে সমর্থন করা হয়৷ অতঃপর ভারত বলে, আর গণভোট অনুষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন নেই৷ জাতিসংঘ ও পাকিস্তানের মতে, গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৫৩
কাশ্মীরের ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ আব্দুল্লাহ গণভোটের সমর্থক ছিলেন ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেন৷ ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ জম্মু-কাশ্মীরের নতুন সরকার ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযোজনকে পাকা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৬২-৬৩
১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন আকসাই দখল করে৷ তার আগের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট এলাকাটি চীনকে প্রদান করে৷
ছবি: Getty Images
১৯৬৫
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়৷ কিন্তু যুদ্ধশেষে উভয় দেশের সেনা তাদের পুরোনো অবস্থানে ফিরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
১৯৭১-৭২
আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ৷ যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৭২ সালে৷ যুদ্ধবিরতি রেখাকে লাইন অফ কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিণত করা হয় ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ সমাধান সম্পর্কে ঐকমত্য অর্জিত হয়৷
ছবি: AP
১৯৮৪
ভারত সিয়াচেন হিমবাহ নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার পর পাকিস্তান তা একাধিকবার দখল করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি৷
ছবি: AP
১৯৮৭
জম্মু-কাশ্মীরে বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়৷ ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থাকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করে, কিন্তু পাকিস্তান সে দোষারোপ চিরকাল অস্বীকার করে এসেছে৷
ছবি: AP
১৯৯০
গওকাদল সেতুর কাছে ভারতীয় সিআরপি রক্ষীবাহিনী কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালালে পর শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হন৷ প্রায় সমস্ত হিন্দু কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যান৷ জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীকে আফসা বা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Tauseef Mustafa
১৯৯৯
কাশ্মীর ভ্যালিতে গোটা নব্বই-এর দশক ধরে অশান্তি চলে৷ ১৯৯৯ সালে আবার ভারত-পাকিস্তানের লড়াই হয়, এবার কারগিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০১-২০০৮
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলাপ-আলোচনার যাবতীয় প্রচেষ্টা প্রথমে নতুন দিল্লির সংসদ ভবন ও পরে মুম্বই হামলার ফলে ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/F. Khan
২০১০
ভারতীয় সেনার গুলি লেগে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর পর কাশ্মীর ভ্যালি উত্তেজনায় ফেটে পড়ে৷ বিক্ষোভ চলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে, প্রাণ হারান অন্তত ১০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/U. Asif
২০১৩
সংসদ ভবনের উপর হামলার মুখ্য অপরাধী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ এর পর যে বিক্ষোভ চলে, তা-তে দু’জন প্রাণ হারায়৷ এই বছরই ভারত আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় মিলিত হয়ে উত্তেজনা উপশমের কথা বলেন৷
ছবি: Reuters
২০১৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উপস্থিত থাকেন৷ কিন্তু এর পর নতুন দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় ভারত আলাপ-আলোচনা স্থগিত রাখে৷
ছবি: Reuters
২০১৬
আজাদ কাশ্মীর ভিত্তিক হিজবুল মুজাহিদীন-এর অধিনায়ক বুরহান ওয়ানি-র মৃত্যুর পর কাশ্মীরে স্বাধীনতা সমর্থকরা আবার পথে নেমেছেন৷ এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে ও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.S.Hussain
২০১৯
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর গাড়িবহরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ এতে ৪২ জওয়ান নিহত হন৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/P. Kumar Verma
২০১৯
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের কাছে কিছু বিশেষ অধিকার ছিল। ৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারাটি অবসানের দাবি তোলেন৷ বিল পাস হয়। একই দিনে তাতে সই করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' বাতিল হয়। তাছাড়া মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারায়। জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।