খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখল, সিলমারা, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোটের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন একটি ভোট কোন্দ্রের ভোট বাতিল ঘোষণা করেছে৷
বিজ্ঞাপন
খুলনার ইকবাল নগর কেন্দ্রের বাইরে বিএনপির ক্যাম্পে ভাঙচুর করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার ঘটনায় খুলনা মহানগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২০২ নম্বর ভোটকেন্দ্র ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভোট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে৷ দুপুর ১২টার দিকে রিটার্নিং অফিসার ইউনুস আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন৷ এছাড়া কেন্দ্রের বাইরে বিএনপির ক্যাম্পে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
এর আগে সকাল ৮ টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়৷ সকালে রহিমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটদান শেষে বিএনপি প্রার্থী মঞ্জু অভিযোগ করেন, ‘‘আমার এজেন্টদের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার খবর পেয়েছি৷ এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ খবর পেয়েছি ২২, ২৫, ২৯, ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কোনো কেন্দ্রেই বিএনপির এজেন্ট নেই৷ তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে৷ ৩০টি সেন্টারের খবর পেয়েছি যেখান থেকে আমার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে৷’’
তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক দাবি করেন,‘‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হচ্ছে৷ কোথাও কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাইনি৷’’
ইকবাল নগর কেন্দ্রের সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বেলা ১১টার দিকে স্কুলের অ্যাকাডেমিক ভবন-২ সাত নম্বর বুথে ১৫-২০ জনের একটি দল দোতলায় উঠে আসে৷ তাঁর কাছ থেকে ব্যালটের বই ছিনিয়ে নিয়ে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে দেয়৷ এরপর তিনি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারকে বিষয়টি জানান৷ তিনি ঘটনাস্থল পরির্দশনের পর তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বাতিল করে দেন৷
বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপি’র এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে: হেদায়েত হোসেন
নির্বাচনের খবর সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপি'র এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ সিল মারা ও ব্যালট পেপার কেড়ে নেয়ার অভিযোগও আছে৷ কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার শেষ৷’’
বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন কোনো অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না৷ এটা কোনো ভোট নয়৷ প্রকাশ্যে সিল মারা হচ্ছে, আমার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে৷ এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনোভাবেই আগামীতে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়৷ আমি ভোট কাটা, কেন্দ্র দখলের সাক্ষী হয়ে থাকলাম আরকি৷’’
খুলনা সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক আর বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম ছাড়াও আরো তিনজন মেয়র প্রার্থী আছেন৷ মোট ওয়ার্ড ৩১টি৷ কাউন্সিলর প্রার্থী ১৪৮ জন৷ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১০টি পদে প্রার্থী ৩৫ জন৷ এই সিটিতে মোট ভোটার চার লাখ ৯৩ হাজার৷
এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনোভাবেই আগামীতে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়: নজরুল ইসলাম মঞ্জু
খুলনায় ২৮৯টি ভোট কোন্দ্রের মধ্যে ২৪৫টি ভোট কেন্দ্রকেই ঝুকিপূর্ণ ধরা হয়েছে৷ ১৬ প্লাটুন বিজিবিসহ চার হাজারের মতো ফোর্স নিয়োজিত আছে৷ আছে ম্যাজিস্ট্রেট৷
নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন ঢাকায় জানান, ‘‘বিএনপির অভিযোগ সুনির্দিষ্ট নয়৷ যা হয়েছে, তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা৷ একটি কেন্দ্রের নির্বাচন সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বাতিল করা হয়েছে৷ এছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই হচ্ছে৷’’
বিকেল চারটায় ভোটগ্রহণ শেষ হবে৷
আপনি কি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন? তাহলে আমাদের জানান সেখানকার পরিস্থিতি, লিখুন নীচের ঘরে৷
খুলনা সিটি নির্বাচন: নৌকা এগিয়ে
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রাথমিক ফলাফলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক এগিয়ে আছেন৷ উত্তাপ ছড়ালেও মোটামুটি গোলযোগহীনভাবে শেষ হয় ভোটগ্রহণ৷
ছবি: bdnews24.com
দু’টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত
জোরপূর্বক ব্যালটে সিল মারার কারণে দু’টি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়৷ সেগুলো হলো ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র (পুরুষ) ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় কেন্দ্র৷
ছবি: bdnews24.com
৮৫টি ভোট বাতিল
আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বাড়ির কাছে ফাতেমা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে জাল ভোট দেওয়ার ঘটনায় ভোটগ্রহণ বিঘ্নিত হয়৷ বিশৃঙ্খলার মধ্যে প্রায় আধা ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ৮৫টি ভোট বাতিল করে আবারও শুরু হয় ভোটগ্রহণ৷ অন্তত পাঁচটি কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্পে ভাঙচুর ও গোলযোগের খবর পাওয়া গেছে৷
ছবি: bdnews24.com
ব্যালট পেপার শেষ হওয়ার দাবি
৩০ নম্বর ওয়ার্ডে রূপসা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ইবনুর রহমান বলেন, ব্যালট শেষ হয়ে গেছে, তাই ভোট বন্ধ৷ তবে কীভাবে ব্যালট শেষ হলো সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেননি৷
ছবি: bdnews24.com
জাল ভোট
ভোট শুরুর ঘণ্টা দেড়েক পর গগনবাবু রোডের ফাতেমা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৮১ নম্বর কেন্দ্রে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা৷ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একদল যুবক কেন্দ্রের এক নম্বর বুথে ঢুকে নৌকা মার্কায় সিল মারা শুরু করে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টরা৷
ছবি: bdnews24.com
ভোট গ্রহণ ও ভোটার
খুলনায় মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোট চলে বিকাল চারটা পর্যন্ত৷ ২৮৯টি কেন্দ্রে ভোট শুরু হলেও অনিয়মের কারণে দু’টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়৷ এছাড়া দু’টি কেন্দ্রে নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এ ভোটগ্রহণ হয়েছে৷ ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন৷ এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ জন ও মহিলা ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন৷
ছবি: bdnews24.com
ওয়ার্ড
সাধারণ ওয়ার্ড ৩১ টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০টি৷
ছবি: bdnews24.com
প্রতিদ্বন্দ্বী
মেয়র পদে পাঁচজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন৷ ইভিএমের দুই কেন্দ্র প্রধান দুই দলের প্রার্থী ভাগাভাগি করে নিলেও ভোটের মোট হিসাবে এগিয়ে আছেন নৌকার মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক৷ আওয়ামী লীগের প্রার্থী খালেক পেয়েছেন মোট ৭৭৭ ভোট। আর বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ৭১০ ভোট পেয়েছেন৷
ছবি: bdnews24.com
২০১৩ সালের নির্বাচন
খুলনায় ২০১৩ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৯ শতাংশ৷ সেবার খুলনায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন ভোটারের মধ্যে ৩ লাখ ২ হাজার ৫১৯ জন ভোট দেন৷
ছবি: bdnews24.com
বিএনপির অভিযোগ
ভোটগ্রহণে নানা অনিয়মের বিষয়ে জানানো হলেও নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি৷ আওয়ামী লীগের সমর্থকরা সুষ্ঠু ভোটের পথে ‘প্রতিবন্ধকতা’ সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর৷
ছবি: bdnews24.com
আওয়ামী লীগের দাবি
দলীয় মেয়রপ্রার্থীর পরাজয় অবশ্যম্ভাবী জেনে ‘শান্তিপূর্ণ ও অবাধ’ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ৷