1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন্দ্র-‌রাজ্যের দ্বৈরথে নাজেহাল সিবিআই!

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে রক্ষা করতে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে ধর্নায় বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অন্যদিকে কাজে বাধা দেয়া এবং হেনস্তার অভিযোগে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই৷

Indien, Mumbai: 
Unterstützer von Indiens Oppositionspartei protestieren in der Nähe des Central Bureau of Investigation (CBI)
ছবি: Reuters/D. Siddiqui

সিবিআই বনাম কলকাতা পুলিশের লড়াইয়ের মূলে রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ৷ মমতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে বাধা সৃষ্টি করে তাতে রাজনৈতিক রং লাগানোর অভিযোগে সরব কেন্দ্রীয় সরকার এবং শাসক দল বিজেপি৷ মমতা অবশ্য পাশে পেয়েছেন অতীতে সিবিআইয়ের ‘খোঁচা খাওয়া' একাধিক নেতা-নেত্রীকে৷

 মমতা যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছেন তার জবাবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেছেন, ‘‘‌সারদা কেলেঙ্কারি সামনে এসেছে ইউপিএ আমলে৷ সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত৷ ফলে এতে এনডিএ সরকারের কোনো ভূমিকা নেই৷'‌'‌

 অন্যদিকে সিবিআইয়ের দাবি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তার করা হলে অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ পাবে৷প্রসঙ্গত, চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তকারী দলের প্রধান ছিলেন রাজীব কুমার৷ সেই তদন্তকারী দল গঠন করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  রাজ্য সরকার৷ অভিযুক্তদের প্রায় সবাই রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ৷ কেউ নেতা, কেউ মন্ত্রী৷ আইপিএস অফিসার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ– তদন্তের দায়িত্ব পেলেও তিনি আসলে অভিযোগের প্রমাণ লোপাট করেছেন৷ সারদা‌কাণ্ডে মামলাকারী কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান ও বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যরা শুরু থেকেই এই অভিযোগ করে আসছেন৷ সিবিআইয়ের তদন্তে রাজীব কুমারের অসহযোগিতার অভিযোগ আগেও জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে৷ সেবার সুপ্রিম কোর্ট উভয় পক্ষকে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে বলেছিল৷ তখন রাজীব কুমার কলকাতার বিধাননগর পুলিশ কমিশনার ছিলেন৷ বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে তিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনার৷ সিবিআই আধিকারিকরা বলছেন, গত কয়েক মাসে অনেকবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলেও রাজীব কুমার তাতে কোনো সাড়া দেননি৷ সিবিআই-এর বক্তব্য হলো, ‘‌‘‌গত কয়েক মাসে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলেও তিনি আসেননি৷ তাই বাধ্য হয়েই তাঁর বাড়িতে যেতে হয়েছিল৷'‌'‌ সিবিআই আরো বলেছে, শুধু রাজীব কুমার নন, তালিকায় নাম আছে আরো অনেক পুলিশ কর্মকর্তার৷

‌ওদিকে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং৷ রাজ্যপালের রিপোর্ট হাতে এলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কেন্দ্র৷ এখানেই অনেকে মনে করছেন, বাংলায় আইন-‌শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অজুহাতে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হতে পারে৷ তবে কেন্দ্রীয় সরকার বা শাসক দল বিজেপি'‌র তরফে তেমন কোনো ইঙ্গিত মেলেনি৷

রাজনাথ সংসদে বলেছেন, ‘‌‘‌কলকাতায় যা ঘটেছে তা অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, দুর্ভাগ্যজনক৷ রাজ্যে গণতন্ত্র বিপন্ন হতে চলেছে৷ সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে চিটফান্ড মামলার তদন্ত করছে সিবিআই৷ এই মামলায় বহু প্রভাবশালী রাজনীতিকের নাম জড়িয়েছে৷ রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আছে৷ এতকিছুর পর কোনো রাজ্য সরকার বা তাদের পুলিশ সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে না৷ সিবিআই আধিকারিকদের আটক করে, হেনস্থা করে থানায় আটকে রাখার ঘটনা স্বাধীন ভারতে নজিরবিহীন৷'‌'‌

যদিও রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অন্য কথা বলছে৷

‌তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র  কাকলি ঘোষদস্তিদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‌‘‌গত পাঁচ বছর ধরে নানাভাবে ভারতীয় সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে বিজেপি সরকার৷ শুধু বাংলা নয়, সব রাজ্যেই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে বিরোধীদের জব্দ করার অপচেষ্টা চলছে৷  মনে রাখতে হবে, রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না সিবিআই৷ তা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের অঙ্গুলি হেলনে সিবিআইয়ের ৪০জন অফিসার রাতের অন্ধকারে শহরের পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে চড়াও হয়েছেন৷ ওঁরা আদালতের নির্দেশ অবমাননা করেছেন৷'‌'‌

 দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তে রাজ্যের প্রধান হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাস্তায় নেমে অভিযুক্তের গ্রেপ্তারিআটকানো ও তদন্তে বাধা দেওয়ার ঘটনা মোটেই ভালো চোখে দেখছে না বহু মানুষ৷ প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রী যদি নিজেই অভিযুক্তকে আড়াল করেন, তাহলে তদন্ত হবে কীভাবে?‌ আইন, বিচার সবই তো প্রহসন হবে৷

‌রাজনৈতিক বিশ্লেষক  ‌সুগত হাজরা ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‌‘‌নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে৷ একজন মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে গিয়েছেন, যাঁকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়৷ তাঁর গ্রেপ্তারি আটকাতে মুখ্যমন্ত্রী, যিনি প্রশাসনিক প্রধান, তিনি রাস্তায় নামলেন৷ এটা কখনোই কাম্য নয়৷ ‌পশ্চিমবঙ্গে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে সিবিআই৷ এই কেলেঙ্কারিতে কোটি কোটি মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছে৷ যা ঘটেছে তা অনুচিত৷ পুরো ঘটনাটি ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য কলঙ্ক হয়ে রইল৷‌'‌'

কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের দ্বন্দ্ব সমীচীন নয়, মনে করেন সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরি

This browser does not support the audio element.

অনেকেই বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করা উচিত৷ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরি মনে করেন, ‘‌‘‌কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের এই দ্বন্দ্ব সমীচীন নয়৷ সিবিআই, ইডি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হলে সেই সংস্থাগুলির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়ায়, যা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক৷'‌'‌ সমাধান কী?‌ তাঁর মতে, ‘‘‌এই সমস্যায় সম্ভবত রাজনৈতিক সমাধান বা বোঝাপড়ার আর জায়গা নেই৷ লোকসভা নির্বাচন আসন্ন৷ তবে সাংবিধানিক সংকট হলে আদালতে মীমাংসা হতে পারে৷ সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি শুনতে চেয়েছে৷ তাই আদালতের দিকেই নজর রাখতে হবে৷'‌'‌

তবে বিষয় যখন দুর্নীতি তখন সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ ভারতীয় জনতা পার্টি৷ তারা তৃণমূল নেত্রীকে কোণঠাসা করার চেষ্টায় কসুর করছে না৷ দলের নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের অভিযোগ, অভিযুক্তদের আড়াল করছে তৃণমূল৷ সারদা মামলায় কারা জড়িত, তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ মামলাকারীরা ছিলেন বামপন্থি ও কংগ্রেসের নেতা৷ বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগেই এই দুর্নীতি সামনে এসেছিল৷ ২০১৪ সালের ৮ মে রাহুল গান্ধীর এক টুইটের উল্লেখ করেছেন তিনি৷ টুইটে রাহুল চিটফান্ডকাণ্ডে ২০ লক্ষ আমানতকারীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা বলেছিলেন৷ এখনো কংগ্রেস ও বাম দলের রাজ্য নেতারা সিবিআই তদন্ত চাইছেন৷ তাহলে বিজেপির ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে কেন?‌ ‌বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিং অভিযোগ করেছেন, ‘‌‘‌সারদাকাণ্ড অনেক বড় কেলেঙ্কারি৷ তৃণমূলের সব নেতা, নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে৷ রাজীব কুমার মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ পুলিশ অফিসার৷ সিবিআইয়ের অভিযোগ, তিনি তথ্য-‌প্রমাণ নষ্ট করেছেন৷ এমন একজন অফিসারকে আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷'‌'‌ সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও৷ তাঁর অভিযোগ, ‘‌‘‌মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে৷ রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তার করলেই সত্য প্রকাশ পাবে৷'‌'‌

যদিও তৃণমূল বিষয়টিতে রাজনীতিই দেখছে৷

‌তাই ‌তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও'‌ব্রায়েন বলেন, ‘‌‘‌গত ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাবেশে ২২ দলের উপস্থিতি দেখে ভয় পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা৷ রাজনৈতিকভাবে লড়াইয়ে পরাজয় নিশ্চিত জেনে সিবিআইকে অপব্যবহার করা হচ্ছে৷ এর পেছনে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল৷'‌'

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ