প্রচারে বেরিয়ে বাধার মুখে বাম প্রার্থীরা। মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা তারা আক্রমণের, বিরোধিতার শিকার হচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
কখনো অভিযোগ তাদের পতাকা ছিঁড়ে নেওয়ার, কখনো বা প্রার্থীর গাড়ি লক্ষ করে ইট ছোড়ার। কখনো ভোটের দিনে তাদের কেন্দ্রের বুথে ভুয়া এজেন্ট বসানোর অভিযোগ। এই অভিযোগের তীর শাসক দলের দিকে। তবে কি পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বামেরা আবার ফ্যাক্টর হতে চলেছে?
লোকসভা নির্বাচনে পাঁচ দফার ভোট ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। বাকি রয়েছে আর দুই দফার ভোট। ২৫ মে ও পয়লা জুনের নির্বাচন যে উত্তপ্ত হবে, তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শেষ পর্বে যাদবপুর, দমদম লোকসভা কেন্দ্রে ভোট। তার আগে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়ছে।
যাদবপুরে উত্তেজনা
মঙ্গলবার যাদবপুরের বাম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্যের প্রচার গাড়ি লক্ষ করে ইট ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। প্রার্থীর উদ্দেশে 'গো ব্যাক' স্লোগান দেয়া হয়। সিপিএমের দাবি, সোমবার রাতে বাম প্রার্থীর ফেস্টুন, ফ্লেক্স ব্যানার ইত্যাদি ছেঁড়া হয়েছে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে। অভিযোগের তীর শাসকদলের দিকেই। প্রতিবাদে মঙ্গলবার নাকতলায় সভার ডাক দিয়েছে সিপিএম।
‘মানুষের ইস্যু মিডিয়া প্রচার করে না বলে মনে হয় বামেরা নেই‘
গত সপ্তাহ থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়ছে। শুক্রবার পাটুলিতে সিপিএম কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। এর প্রতিবাদে সৃজন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পাটুলি থানা ঘেরাও করে বামেরা। সেখানে হাজির হন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। শাসক দলের অভিযোগ সৃজনদের বিরুদ্ধে। এর ফলে থানা চত্বরে উত্তেজনা চরমে ওঠে। যুযুধান দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
অন্য কেন্দ্রের ছবি
মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন আগেই হয়ে গিয়েছে। যেখানে প্রার্থী ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। প্রচারের পাশাপাশি নির্বাচনের দিন খুবই তৎপর ছিলেন তিনি। এমনকি নিজে অভিযান চালিয়ে শাসক দলের ভুয়া এজেন্টকে চিহ্নিত করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।
গতকাল শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। সেখানকার সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর দিনভর বিভিন্ন বিধানসভা এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মতো হুগলিতেও তৃণমূলের সংগঠন খুবই শক্তিশালী। শুধু প্রচারে নয়, ভোটের দিনও তৃণমূলের তিনবারের জয়ী সংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দেয়ার চেষ্টা করেছেন তরুণ বাম নেত্রী।
একই কথা বলা যায় দমদমের সুজন চক্রবর্তী ও ডায়মন্ড হারবারের প্রতিকুর রহমান সম্পর্কে। সাবেক সাংসদ সুজন প্রচারে তার প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের বিদায়ী সংসদ সৌগত রায়কে টেক্কা দিতে না পারলেও, অবশ্যই এগিয়েই রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্তের থেকে। টেলিভিশনের পরিচিত মুখ সুজন এবার ভোটের অংক পাল্টে দিতে পারেন বলে জল্পনা শোনা যাচ্ছে।
সেলিম সকাল থেকে পথে, ভুয়া ভোটার, এজেন্টদের ধরলেন
মুর্শিদাবাদে সিপিএম প্রার্থী সেলিম সকাল থেকে ব্যস্ত। কখনো ভুয়া ভোটার ধরছেন, কখনো ভুয়া এজেন্টকে বের করছেন। গো ব্যাক স্লোগানের মুখেও পড়লেন।
ছবি: Subhadip Basak/DW
সকাল থেকেই ব্যস্ত সেলিম
মহম্মদ সেলিম এবার মুর্শিদাবাদে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী। সকাল থেকেই তিনি ঘুরছেন বিভিন্ন বুথে। কখনো ভুয়া এজেন্ট ধরছেন। কখনো ভুয়া ভোটদাতা। তার সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি পর্যন্ত হয়েছে। তাঁকে ঘিরে গো ব্যাক স্লোগান উঠেছে। সবমিলিয়ে মুর্শিদাবাদের ভোটে দিনভর ভয়ংকর ব্যস্ত ছিলেন মহম্মদ সেলিম।
ছবি: Subhadip Basak/DW
ভুয়া এজেন্ট ধরলেন
গোপীনাথপুরে সিপিএমের এজেন্টকে মারধর করে বের করে দিয়ে তৃণমূলই এজেন্ট দিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সেখানে পোঁছে যান সেলিম। ভুয়া এজেন্টের কাছ থেকে কাগজপত্র দেখতে চান। ধরা পড়ে যান ভুয়া এজেন্ট। তাকে বের করে আনেন সেলিম। তারপর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
ছবি: Subhadip Basak/DW
ভুয়া ভোটার ধরলেন
এরপর একাধিক বুথে যান সেলিম। সেখানে ভুয়া ভোটদাতাদের খুঁজে বের করেন তিনি। এবার কংগ্রেস কর্মীরাও সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের জন্য যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন। হরিহরপাড়ায় কংগ্রেস সভাপতির বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা মারা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ছবি: Subhadip Basak/DW
তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি
সেলিম তৃণমূল কর্মী হিটলার সরকারের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতেও জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। পরে হিটলার অভিযোগ করেন, সেলিম তাকে মেরেছেন। কলার ধরে টেনেছেন। তিনি সেলিমকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। হিটলারের দাবি, সাংবাদিকদের সামনে সিপিএম নেতা তার গায়ে হাত দিয়েছেন। ছবিতে হিটলার সরকার অভিযোগ করছেন টিভি ক্যামেরার সামনে।
যারা স্লোগান দিচ্ছিলেন, তাদেরই একজনের বাড়িতে ঢুকে গেলেন সেলিম। জল খেলেন। সৌজন্য বিনিময় করলেন। তারপর হাসিমুখে বেরোলেন সেই ঘর থেকে।
ছবি: Subhadip Basak/DW
পুলিশ-কর্তাদের সঙ্গে কথা
নিজের জোটের কর্মী এবং ভোটদাতাদের সুরক্ষা নিয়ে পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেল সেলিমকে। দরকার হলে তিনি নিজেও পা বাড়ালেন গ্রামের পথে। ভোটদাতারা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে।
ছবি: Subhadip Basak/DW
আশীর্বাদ নিলেন আবু তাহের
তৃণমূলের প্রার্থী আবু তাহেরও ভোটের দিন বুথে বুথে ঘুরলেন। ঘুরতেই ঘুরতেই দেখা এক বৃদ্ধার সঙ্গে। মাথা ঝুঁকিয়ে দিলেন তার সামনে। প্রণাম করলেন। বৃদ্ধাও তাকে আশীর্বাদ করলেন।
ছবি: Subhadip Basak/DW
বাচ্চাদের দেখে
মুর্শিদাবাদে ভোটের দিনও ছিল প্রচণ্ড গরম। এই অবস্থায় বাচ্চাদের দেখেই আবু তাহের তাদের দিকে বাড়িয়ে দিলেন ফলের রসের একটা টেট্রাপ্যাক। বাচ্চারা খুশি। আনন্দিত আবু তাহেরও।
ছবি: Subhadip Basak/DW
প্রচুর নিরাপত্তা কর্মী
শুধু মুর্শিদাবাদের জন্য ১১৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তাই প্রতিটি বুথে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। বুথের বাইরে ছিল প্রচুর পুলিশ। তা সত্ত্বেও ভোটদাতাদের বুথে আসতে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ছবি: Subhadip Basak/DW
সকাল থেকেই লাইন
মুর্শিদাবাদের বুথে সকাল থেকেই ছিল লম্বা লাইন। সকলে তাড়াতাড়ি ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে চেয়েছেন। প্রচণ্ড গরম। তাই দুপুরের দিকে ভোট দিতে বেরোতে চাননি অনেকে।
ছবি: Subhadip Basak/DW
11 ছবি1 | 11
ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে বিরোধীরা দেরিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এখানে লড়বেন বলে হুংকার ছেড়েছিলেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন বিদায়ী সাংসদ, তৃণমূলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। নওশাদ লড়াইয়ে নেই। সেই দায়িত্ব সিপিএম তুলে দিয়েছে প্রতীকের হাতে। তৃণমূলের শক্তপোক্ত সংগঠনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, যতটা সম্ভব প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তরুণ সিপিএম নেতা।
জোটের জোর
এই নির্বাচনে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হয়েছে। শুধু বোঝাপড়া নয় কার্যত জোট গড়েই লড়ছে দুই দল। তাদের নেতারা বলছেন, এবারের মতো সমন্বয় অতীতের কোনো নির্বাচনে দুই দলের মধ্যে হয়নি। বিশেষত সেলিমের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন।
গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দুটি আসনে জিতলেও বামেদের খাতা ছিল শূন্য। বিজেপির আচমকা উত্থান নজর কেড়েছিল। বাম ভোটে নেমেছিল ধস। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ বোঝাপড়া করে মোট প্রাপ্ত ভোটে বিজেপিকে পিছনে ফেলেছিল। কিন্তু এবার দিল্লির সরকার গড়ার নির্বাচন। আইএসএফ সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। কতটা ভালো ফল করতে পারে বামেরা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
যাদবপুরে তিন নতুন প্রার্থী সায়নী, সৃজন, অনির্বাণের লড়াই
অতীতে যাদবপুর কেন্দ্র অনেক অঘটনের সাক্ষী থেকেছে। এখানে সোমনাথ হেরেছেন, এখান থেকেই ভোটে জিতে যাত্রা শুরু করেছেন মমতা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তৃণমূলের প্রার্থী সায়নী
গতবার যাদবপুর থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী। কিন্তু তিনি এবার ভোটে দাঁড়াননি। তার জায়গায় তৃণমূল প্রার্থী করেছে আরেক তারকা সায়নী ঘোষকে। সায়নী অবশ্য কিছুদিন হলো রাজনীতির জগতে আছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে আসানসোল দক্ষিণ থেকে লড়েছিলেন। কিন্তু বিজেপি-র অগ্নিমিত্রা পালের কাছে হেরে যান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কখনো গাড়িতে
যাদবপুরে প্রতিদিন সায়নীর প্রচার চলছে। কখনো তিনি গাড়িতে দাঁড়িয়ে। সেখান থেকেই হাত মেলাচ্ছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কখনো হেঁটে
কখনো হেঁটে প্রচার করছেন তিনি। সোজা চলে যাচ্ছেন মানুষের মধ্যে। তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তৃণমূলকে ও তাকে ভোট দেয়ার আবেদন জানাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পাশের বাড়ির মেয়ে
সায়নীর মধ্যে চিত্রতারকাসুলভ ভাবভঙ্গি নেই। বরং তিনি পাশের বাড়ির মেয়ের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে চাইছেন। সহজে তিনি মিশে যেতে পারেন মানুষের সঙ্গে। কখনো তার কোলে উঠে আসছে শিশু। কখনো তিনি গান গেয়েও শুনিয়ে দিচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কী বলছেন সায়নী?
সায়নী লড়াই করতে ভালোবাসেন। এর আগে ভোটের লড়াইয়ে হেরে গিয়েও তিনি দলের যুব নেত্রী হিসাবে লড়াই করে গেছেন। সায়নী বলছেন, জিততে পারলে তিনি যাদবপুরকে মডেল কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে চান। আর জয় নিয়ে তার সংশয় নেই। তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা দিনরাত খাটছেন। তিনি নিজেও গরম উপেক্ষা করে সমানে ঘুরছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বামের যুব প্রার্থী
এবার একাধিক যুব নেতাকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। যার মধ্যে অন্যতম সৃজন ভট্টাচার্য। তার বয়স ৩১ বছর। তিনি সিপিএমের ছাত্র শাখা এসএফআইয়ের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য। সৃজনের পরিবার হলো বামপন্থি পরিবার। যাদবপুর থেকে স্নাতকোত্তর সৃজন কবিতা লেখেন। কবিতার বইও আছে। এহেন যুব নেতাকে এবার ভোটের লড়াইয়ের ময়দানে পাঠিয়েছে সিপিএম।
ছবি: Subrata Goswami/DW
যাদবপুরে বামেরা
এই কেন্দ্র থেকে জিতেছেন ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত। তখন অবশ্য কেন্দ্রের নাম আলাদা ছিল। জিতেছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। আবার ১৯৮৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিনি হেরেও গেছিলেন। পরে মালিনী ভট্টাচার্য জিতেছেন। ২০০৪ সালে জিতেছেন সুজন চক্রবর্তী। তারপর আর কোনো বাম প্রার্থী এখানে জিততে পারেননি। সৃজন কি পারবেন?
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রচারে খামতি নেই
সকাল থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে সৃজনের প্রচার। কখনো গাড়িতে, কখনো হেঁটে। যাদবপুরে এই নতুন প্রজন্মের বাম নেতাকে নিয়ে উৎসাহ আছে। তার সঙ্গে সেলফি তোলার একটা হিডি়কও দেখা যাচ্ছে। তবে এখন প্রত্যেক প্রার্থীকেই প্রচারে মানুষের সঙ্গে সেলফি ও ছবি তোলার জন্য অনেকটা সময় রাখতে হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
টি শার্টে সৃজনের ছবি নিয়ে
বামেদের প্রচারেও দেখা যাচ্ছে সৃজনের ছবি-সহ টি শার্ট পরে সিপিএমের কর্মীরা লাল পতাকা হাতে চলেছেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বাম দলের প্রচারের কায়দাও বদলেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রশ্নের মুখেও শান্ত
সৃজন এর মধ্যে ভাঙড়ে প্রচার করতে গেছিলেন। গত বিধানসভায় এখান থেকে জিতেছিলেন নওসাদ সিদ্দিকি। তখন বামেদের সঙ্গে তার জোট ছিল। লোকসভায় বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছে। তাই নিয়ে ভাঙড়ে আইএসএফ কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন সৃজন। মানুষ বলেন, তারা ভাইজানকে ভোট দেবেন। সৃজন শান্তভাবে বলেন, সেটা আপনাদের ব্যাপার। তবে তার আগে ভাববেন, কাকে দেয়া উচিত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিজেপি-রও নতুন প্রার্থী
বিজেপি যাদবপুর থেকে প্রার্থী করেছে অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তিনি গত বিধানসভা নির্বাচনে বোলপুরে বিজেপি প্রার্থী ছিলেন। জিততে পারেননি। তাকেই এবার যাদবপুরে প্রার্থী করেছে বিজেপি। কঠিন লড়াই এবং শক্তশালী বিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন অনির্বাণ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মানুষের মাঝে চিকিৎসক অনির্বাণ
অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় পেশায় চিকিৎসক। তিনি যাদবপুর কেন্দ্র চষে ফেলছেন। সোজা চলে যাচ্ছেন মানুষের কাছে। বলছেন, জিতলে তিনি নারী সুরক্ষা ও দুর্নীতিমুক্ত রাজ্যের লক্ষ্যে কাজ করবেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কঠিন কাজ
গত লোকসভা নির্বাচনে মিমি যাদপবপুর থেকে প্রায় তিন লাখ ভোটের ব্যাবধানে জিতেছিলেন। ফলে নতুন জায়গায় প্রার্থী হয়ে অনির্বাণকে লড়তে হচ্ছে। কাজটা কঠিন। তবে তিনি বলছেন, যাদবপুর কেন্দ্রের সব জায়গায় ঘুরে তার মনে হয়েছে, আগের সাংসদ কোনো কাজই করেননি, মানুষের পাশে দাঁডা়ননি, মানুষ তাকে দেখেননি। মানুষের মনে এই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বলে তার দাবি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তিনজনই যাদবপুরে নতুন
যাদবপুরের তিনজন প্রধান প্রার্থীই এই কেন্দ্রে নতুন। তারা কেউই আগে এখান থেকে লড়েননি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নতুনদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। অনির্বাণও মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। বিজেপি-কে ভোট দেয়ার আবেদন জানাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কী হবে যাদবপুরে?
যাদবপুর লোকসভা ও বিধানসভা কেন্দ্রে অতীতে অনেক চমক দেখা গেছে। ১৯৮৪ সালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে মমতার হারিয়ে দেয়া অন্যতম বড় চমক। আবার বিধানসভার ভোটে যাদবপুর থেকে হারতে হয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। সেই যাদবপুরে এবার সেই অর্থে কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী নেই। সায়নী, সৃজন দুজনেই যুব প্রার্থী। সেখানে পদ্ম ফোটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন অনির্বাণ। পারবেন কিনা, কে জিতবেন, সেটা জানা যাবে ৪ জুন, ফলপ্রকাশের দিন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
15 ছবি1 | 15
তবে মুর্শিদাবাদ থেকে যাদবপুর, শ্রীরামপুর হয়ে ডায়মন্ড হারবার, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সিপিএম এবার দৃশ্যমান একটি শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সিপিএমের তরুণ নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেন, "যে কোনো নির্বাচনে বামেরা প্রচারে থাকে। মানুষের ইস্যুকে মিডিয়া প্রচার করে না বলে, টিভি দেখলে মনে হয় বামেরা নেই। রাস্তায় দাঁড়ালে বামেরা সব সময় ভোটে আছে। পাড়ায় আছে, বুথে আছে। সেখানে বিজেপি, তৃণমূল নেই।"
বামের সম্ভাবনা
পশ্চিমবঙ্গে সাত দফায় ৪২টি কেন্দ্রে ভোট নেয়া হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সহিংসতার ঘটনা কম। প্রচারের ব্যাপ্তি থেকে বুথ পরিচালনা কিংবা নির্বাচন কমিশনে দরবার, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নজর কাড়ছে বামেরা। গতকাল পঞ্চম দফার ভোটে দলগত ভাবে সিপিএম সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। অভিযোগের সংখ্যা ২৪৫।
সব মিলিয়ে বামেদের অনেকটাই সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মইদুল ইসলাম। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "বাম কংগ্রেস জোট এবার ২০টি আসনে জোর টক্কর দেবে, ভালো ফল করবে। জাতীয় দল লোকসভা নির্বাচনে বেশি ভোট পায়, কংগ্রেস ও সিপিএম দুটি জাতীয় দল যাদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়েছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে এই জোট তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ দিতে পেরেছিল। তারপর বাম কংগ্রেস জোট করেনি বলে, তাদের সমর্থকদের একাংশ বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে।"
করোনা অতিমারির সময় রেড ভলেন্টিয়ার-এর তৎপরতা থেকে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে উঠে আসার ফলে বামেরা উজ্জীবিত হয়েছে বলে মনে করেন মইদুল। তার মতে, "এবার জোটের প্রাপ্ত ভোটের হার নিঃসন্দেহে বাড়বে। মালদহ দক্ষিণ, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদের মতো আসনে জোট জিতেও যেতে পারে। বাকি অনেক আসনে তারা বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে পেতে পারে।"
যদিও প্রচারের জোয়ার দেখে এখনই ফলের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো মন্তব্যে রাজি নন প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "গত লোকসভা ভোটে বাম ও কংগ্রেস মিলিয়ে ১২ শতাংশের মতো ভোট পেয়েছিল। সামগ্রিকভাবে এই ভোট এবার কিছুটা বাড়বে। কোনো কোনো আসনে বেশ ভালো বাড়বে। বামেদের সামনের সারিতে নতুন নেতৃত্ব আসায় মানুষের বিরক্তি অনেকটা কেটেছে। জনতা পছন্দ করে, ঝকঝকে তরুণ প্রার্থীরা ভোটের ময়দানে লড়াই করুন। এর কিছুটা সুফল জোট পেতে পারে।"