সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করেছে মিয়ানমার৷ ফাঁকা গুলিও ছুড়েছে৷ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর আগে কেন এভাবে উত্তেজনা তৈরি করছে মিয়ানমার?
বিজ্ঞাপন
ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ৷ বার্তা সংস্থা এপি-কে বিজিবি-র অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মজিবুর রহমান বলেছেন, সীমান্তে মিয়ানমারের উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ৷ তিনি জানান, বিজিবি-র পক্ষ থেকে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে৷
এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ-কে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদপত্র দিয়ে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে৷
কিন্তু এ সব উদ্যোগের পরও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি৷ বরং ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী,বৃহস্পতিবার রাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্তের ওপারে অবস্থানরত মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরা দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছুড়েছে৷
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া মুসলিম রোহিঙ্গাদের ফের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাখাইন প্রদেশে ঘরে ফেরা রোহিঙ্গাদের জন্য ক্যাম্প তৈরির কাজ শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters
রোহিঙ্গা ক্যাম্প
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা, ত্রাণ এবং পুনর্বাসন মন্ত্রক ক্যাম্প তৈরির কাজ করছে৷ পুরো অঞ্চলটিকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে কাঁটাতার দিয়ে৷ ক্যাম্পে জাতিসংঘের তরফ থেকে এইড দেওয়া হবে৷ তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, তাদের এইড প্রদানকারী সংস্থাকে ক্যাম্পে ঢোকার সমস্ত ব্যবস্থাপনা করে দিতে হবে৷ খবর, ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্যাম্পে থাকতে পারবেন৷
ছবি: Reuters
অতন্দ্র প্রহরা
ইতিমধ্যেই ক্যাম্পের বাইরে মিয়ানমার সরকার পুলিশ মোতায়েন করেছে৷ ক্যাম্পে যাতে নতুন করে কোনো সমস্যা না হয়, তার দিকে নজর রাখার জন্যই নাকি অতন্দ্র প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters
শেষ পর্যায়ের কাজ
ক্যাম্প তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে বলে জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে৷ বাংলাদেশের শিবির থেকে রোহিঙ্গারা ফিরলেই তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হবে৷
ছবি: Reuters
অভিবাসন দফতরের উপস্থিতি
মিয়ানমারের অভিবাসন দফতরের কর্মীরাও নিয়মিত যাচ্ছেন ক্যাম্পে৷ রোহিঙ্গারা ফিরতে শুরু করলে তাঁদের সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত করার জন্য অভিবাসন দফতরের অফিসও তৈরি হয়েছে ক্যাম্পে৷
ছবি: Reuters
কাজ চলছে পুরোদমে
শেষ পর্যায়ের কাজে হাত লাগিয়েছেন রাখাইন প্রদেশের সাধারণ মানুষও৷ দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য বহু শ্রমিককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ক্যাম্পে৷
ছবি: picture-alliance/AP/T. Zaw
জেলখানার মতো
বলা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে ক্যাম্পে৷ যদিও কেউ কেউ বলছেন, বাইরে থেকে ক্যাম্পটিকে দেখতে লাগছে জেলখানার মতো৷
ছবি: Reuters
হেলিকপ্টার দর্শন
ইতিমধ্যেই ক্যাম্প তৈরির কাজ দেখে গিয়েছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষার সংস্থাগুলি৷ হেলিকপ্টারে করে তাদের এলাকা ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters
7 ছবি1 | 7
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি-র অবস্থানও জোরদার করা হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবরে জানানো হয়৷
সম্প্রতি তমব্রু সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে ছয় হাজারের মতো রোহিঙ্গা জড়ো হয়৷ তারপরই সীমান্তে বিজিপি মোতাযেন শুরু করে মিয়ানমার৷ বিজিপি সদস্যরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে রোহিঙ্গাদের চলে যাওয়ার আহ্বান জানান৷ আহ্বানের ভাষা ছিল ভীতিকর৷ তাই রোহিঙ্গাদের অনেকেই ভয়ে পালিয়ে যান৷ বাকিদের অবস্থানও মেনে নিতে পারছে না বিজিপি৷
ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রবেশের জন্যই সীমান্তে জড়ো হয়েছেন রোহিঙ্গারা৷ তবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘‘নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের কোনোভাবেই বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না৷'' পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, ‘‘মিয়ামনমার সীমান্ত নীতি ভঙ্গ করলে সমূচিত জবাব দেয়া হবে৷''
এসিবি/ডিজি
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷