ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা প্রাণ নিল অন্তত ২০ জন ভারতীয় সেনার। মৃত্যু হয়েছে চীনের সেনারও। তারপর প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই সংঘাত, এরপরই বা কী হবে?
বিজ্ঞাপন
বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারত অভিযোগ করছে, লাদাখেপ্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়ছে চীন। কখনও পাথরের ওপর চীনা ভাষায় লিখে যাচ্ছে। কখনও ভারতের এলাকায় চীনের সেনা বেশ কিছুদিন থেকে যাচ্ছে। তারপর প্রতিবাদ, আলোচনার পর তারা আবার ফিরে যায়। ভারত, চীন ও ভূটান সীমান্তে ডোকলামে রাস্তা বানানো নিয়ে ৭৩ দিন ধরে সংঘাত ও উত্তেজনা ছিল। কিন্তু এই বার লাদাখে যা হয়েছে, তার কারণটা ভিন্ন বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
এ বারের সংঘাতের কারণ হিসাবে বেশ কেয়কটি বিষয় উঠে আসছে। তার মধ্যে অন্যতম বলা হচ্ছে, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত। কিছুদিন আগে জম্মু ও কাশ্মীরকে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। সেটা নিয়ে সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, আকসাই চীনও ভারতের অভিন্ন অঙ্গ। এটা নতুন কথা নয়। ভারতের বরাবরের অবস্থান। কিন্তু লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, চীনের দাবি, লাদাখের বেশ কিছু এলাকা বিতর্কিত ও তাঁরা সেই এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। সেই সঙ্গে আকসাই চীন নিয়ে ভারতের দাবিকেও তারা হালকাভাবে নিচ্ছে না।
চীন-ভারত: সামরিক শক্তিতে কে কত এগিয়ে
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেনাবাহিনীকে বলেছেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে৷ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী ভারতও প্রস্তুত৷ যুদ্ধ কখনো কাম্য নয়৷ তবু দেখে নেয়া যাক সামরিক শক্তিতে চীন আর ভারতের বর্তমান অবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
পিডাব্লিউআর ব়্যাঙ্কিং
সামরিক শক্তির এই ব়্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে চীন৷ যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার ঠিক পরে, অর্থাৎ তিন নাম্বারে আছে চীন আর ভারত আছে চার নাম্বারে৷
ছবি: APTN
সক্রিয় সেনাসদস্য
১৩৮ টি দেশের মধ্যে পিআরডাব্লিউ ইনডেক্সে তৃতীয় স্থানে থাকা চীনের মোট ২১ লক্ষ ২৩ হাজার সেনাসদস্য রয়েছে, ভারতের রয়েছে ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার সেনাসদস্য৷ তবে রিজার্ভ সৈন্যর সংখ্যায় ভারত এগিয়ে৷ চীনের পাঁচ লাখ ১০ হাজারের বিপরীতে তাদের রয়েছে ২১ লাখ রিজার্ভ সৈন্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
প্রতিরক্ষা বাজেট
প্রতিরক্ষা খাতে চীনের বাজেট ২৩৭০ কোটি ডলারের এবং ভারতের ৬১০ কোটি ডলারের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Goya
এয়ারক্রাফট
এখানেও চীন এগিয়ে৷ চীনের ৩২১০টির বিপরীতে ভারতের রয়েছে ২১২৩টি এয়ারক্রাফট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Li Jianshu
যুদ্ধজাহাজ
চীনের ৭৭৭টি আর ভারতের রয়েছে ২৮৫টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP
যুদ্ধবিমান
চীনের যুদ্ধবিমান ভারতের দ্বিগুণেরও বেশি৷ চীনের ১২৩২টি আর ভারতের ৫৩৮টি৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Imago-Images/StockTrek Images
হেলিকপ্টার
চীনের আছে ৯১১টি হেলিকপ্টার আর ভারতের ৭২২টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/J. Singh
ট্যাঙ্ক
ভারতের ট্যাঙ্ক চীনের চেয়ে অনেক বেশি৷ চীনের আছে ৩৫০০টি ট্যাঙ্ক আর ভারতের ৪২৯২টি৷ ওপরে চীন, রাশিয়া ও ইরানের যৌথ মহড়ার ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Grits
সাঁজোয়া যান
চীনের সাঁজোয়া যানবাহনের সংখ্যা ৩৩ হাজার, ভারতের আট হাজার ৬৮৬৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/Z. Hesong
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি
এখানে দু দেশের তুলনাই হয় না৷ চীনের আছে ৩৮০০, ভারতের মাত্র ২৩৫৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
ফিল্ড আর্টিলারি
এখানে ভারত কিছুটা এগিয়ে৷ চীনের ৩৮০০-র বিপরীতে তাদের রয়েছে ৪০৬০টি ফিল্ড আর্টিলারি৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
রকেট প্রজেক্টর
চীনের ২৬৫০, ভারতের ২৬৬৷ সুতরাং এখানে চীন প্রায় দশগুণ এগিয়ে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
সাবমেরিন
সাবমেরিনের সংখ্যার দিক থেকেও ভারত অনেক পিছিয়ে৷ চীনের ৭৪টির বিপরীতে ভারতের আছে ১৬টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters/S. Andrade
বিমানবাহী জাহাজ
চীনের ২টি, ভারতের ১টি৷
ছবি: picture-alliance/newscom/S. Shaver
ডেস্ট্রয়ার
চীনের ৩৬টি, অন্যদিকে ভারতের ১০টি৷
ছবি: picture-alliance/Imagechina
ফ্রিগেট
চীনের ৫২, ভারতের তার ঠিক চার ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ ১৩টি৷
ছবি: AFP/Iranian Army office
রণতরি
রণতরি চীনের ৫০টি, ভারতের ১৯টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
উপকূলীয় টহল
চীনের ২২০, ভারতের ১৩৯৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/Meng Zhongde
বিমানবন্দর
চীনের আছে মোট ৫০৭টি বিমানবন্দর আর ভারতের ৩৪৭টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
নৌবন্দর এবং টার্মিনাল
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন প্রায় সব জায়গার মতো এখানেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশের চেয়ে এগিয়ে৷ চীনের২২টির বিপরীতে তাদের রয়েছে মোট ১৩টি বন্দর ও টার্মিনাল৷
ছবি: picture-alliance/Costfoto/Yu Fangping
ভারতের বহরে রাফাল
২০১৬ সালে ফ্রান্সে গিয়ে রাফাল যুদ্ধ বিমান চুক্তিতে সই করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোট ৩৬টি বিমান ফ্রান্সের থেকে কেনার চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে বুধবার ভারতে পৌঁছেছে নতুন পাঁচটি যুদ্ধ বিমান। সেগুলোকে লাদাখে পাঠানোর কথা রয়েছে৷ চীন-ভারত সংঘাতের কারণে আপাতত সেখানেই রাখা হবে বিমানগুলিকে। এরপর আসবে হ্যামার মিসাইলও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Indian Air Force
21 ছবি1 | 21
প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''চীন আমাদের কাছ থেকে সব চেয়ে বড় সম্পদ যেটা নিয়ে নিয়েছে তা হলো আকসাই চীন। সেখান দিয়েই তিব্বত থেকে পাকিস্তানের মধ্যে রাস্তা যাচ্ছে। এরপর লাদাখ নিয়ে সিদ্ধান্তে চীন উদ্বিগ্ন।''
বিরোধের আরেকটি বড় কারণ, লে থেকে দারবুক, শাইয়োক হয়ে দৌলত বেগ ওল্ডি বায়ুসেনা ঘাঁটি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করছে ভারত। দৌলত বেগ ওল্ডিতে ১৬,৬১৪ ফুট উচ্চতায় বিশ্বের সর্বোচ্চ এয়ারস্ট্রিপ নির্মাণ করেছে ভারত। এই রাস্তা কারাকোরাম পাসের কাছে সিয়াচেন হিমবাহ পর্যন্ত গিয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া এই রাস্তাই হলো বিরোধের অন্যতম কারণ। ভারত আবার এই রাস্তাকে আরও বিস্তার করতে চাইছে।
অবসরপ্রাপ্ত লেফটানান্ট জেনারেল সুব্রত সাহা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''চীনের মনে হয়েছে এই রাস্তা তাঁদের কাছে বিপদের কারণ। আমি এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এই জায়গায় রাস্তা বানানো যে কী অসুবিধেজনক তা আমি জানি। অনেক চেষ্টা করে আমরা সফল হয়েছি। এর ফলে দৌলত বেগ ওল্ডি পর্যন্ত আমরা সহজে সেনা নিয়ে যেতে পারব। এর পূর্ব দিকেই আকসাই চীন এবং ওদের হাইওয়ে। উত্তরদিকে সাকসাম উপত্যকা যেটা পাকিস্তান বেআইনিভাবে চীনকে দিয়ে দিয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সে জন্যই চীন রাস্তাটা নিয়ে এতটা চিন্তিত।''
প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন,'' চীন নানাভাবে ভারতকে বিব্রত করতে চাইছে। বিশেষ করে ভারত যখন লাদাখ সীমান্তে কয়েকটি রাস্তা নির্মাণ করেছে, তাতে চীনের ঘোরতর আপত্তি আছে। একইভাবে নেপালের পাশ দিয়ে রাস্তা তৈরি নিয়েও তারা ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছে। সংঘাতের অনেকগুলি কারণ আছে। তার মধ্যে রাস্তা তৈরি একটি কারণ।''
ভারত-চীন সংঘাতের কাহিনি
ভারত ও চীনের মধ্যে একবারই যুদ্ধ হয়েছিল। ১৯৬২ সালে। কিন্তু তার আগে ও পরে অনেকবারই সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে এই দুই দেশ। সেই সংঘাতের কাহিনি দীর্ঘ এবং রক্তাক্ত।
ছবি: Getty Images/Three Lions/Radloff
তিব্বত থেকে শুরু
চীন তিব্বতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলো ১৯৫১ সালে। তার আট বছর পরে চতুর্দশ দলই লামা পালিয়ে ভারতে আসেন। ভারত তাঁকে আশ্রয় দেয়। চীন তার বিরোধিতা করে। তারপর শুরু হয় সীমান্তে দুই সেনার সংঘর্ষ।
ছবি: AP
একমাত্র যুদ্ধ
সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে প্রচুর। কিন্তু যুদ্ধ একবারই। ১৯৬২ সালে এক মাস এক দিনের লড়াইয়ে ভারতীয় ভূখন্ডে ঢুকে পড়ে চীন। অরুণাচল প্রদেশে ও লাদাখের ভিতরে। ভারত ছিলো অপ্রস্তুত। চীন সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলো।
ছবি: Getty Images
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা
ভারত ও চীনের মধ্যে চার হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত রয়েছে। সহজভাবে বললে, যুদ্ধের পর দুই দেশের সেনা যেখানে অবস্থান করছে, সেটাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা।
ছবি: Getty Images
নাথু লা পাসে সংঘর্ষ
পাঁচ বছরের মধ্যে অবস্থা বদলে গেলো। ১৯৬৭-র ১১ সেপ্টেম্বর চীনা সেনা নাথু লা-য় ভারতীয় পোস্ট আক্রমণ করে। পাঁচ দিন ধরে সংঘর্ষ চলে। এ বার ভারত ছিলো সুবিধাজনক অবস্থায়। তারা চীনা সেনাকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করে। সংঘর্ষ হয় চো লা-তেও।
ছবি: Diptendu Dutta/AFP/Getty Images
বছর কুড়ি পরে
আবার উত্তেজনা ২০ বছর পরে, সামডরং উপত্যকায়। ভারত তখন অপারেশন চেকারবোর্ড চালাচ্ছিলো। কত তাড়াতাড়ি আসাম থেকে সীমান্তে সেনা পৌঁছনো যায় তা নিয়ে। সেখান থেকেই উত্তেজনা। দুই দেশের সেনা সামনাসামনি। তবে সংঘর্ষ হয়নি।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ডোকলামে ৭৩ দিন
এ বার বিরোধ ২০১৭-তে, ডোকলামে। ভারত, ভূটান ও চীনের সীমান্তে। চীনের সেনা একটা রাস্তা বানাতে থাকে। ভারতীয় সেনাও বুলডোজার নিয়ে চলে যায় তা থামাবার জন্য। সেই সংঘাত ৭৩ দিন চলে। অবশেষে কূটনৈতিক আলোচনার পর বিরোধ মেটে।
ছবি: AP
আবার সংঘর্ষ
এ বার ২০২০-তে। আবার লাদাখ। প্রথমে দুই সেনার হাতাহাতি লড়াই। সিকিমেও একই ঘটনা ঘটলো। চীনের প্রেসিডেন্ট বললেন, তিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। তারপর ভারত ও চীন দুই পক্ষই সীমান্তে প্রচুর সেনা মোতায়েন করেছে। দুই দেশই প্রচুর কামান ও গোলাবারুদ নিয়ে গিয়েছে।
ছবি: Eesha Kheny
চীনের দাবি
চীন দাবি করে অরুণাচল প্রদেশ তাঁদের এলাকা। বিশেষ করে তাওয়াং শহর। অরুণাচলের লোকের চীনে যেতে ভিসা লাগবে না। ভারত জানায়, অরুণাচল তাদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
ছবি: picture-alliance/dpa/dinodia
আকসাই চীন
ভারতের দাবি, আকসাই চীন তাদের এলাকা। চীন জবরদখল করে রেখেছে। ১৯৬২ থেকেই এ নিয়ে বিরোধ চলছে। এখানে কোনও মানুষের বসতি নেই। কিন্তু সামরিক দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
নরমে-গরমে
ভারত ও চীনের সম্পর্ককে বলা হয় ব্লো হট, ব্লো কোল্ড রিলেশন বা নরমে-গরমের সম্পর্ক। মাঝে মাঝেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনা হয়। আবার শান্তি আসে। দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর। দুই দেশের সেনা শক্তিশালী। তাই তা আর যুদ্ধের দিকে যায় না।
ছবি: Reuters/Handout
10 ছবি1 | 10
সিবিএসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুমিত দত্ত মজুমদার সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন আর্টিকেল ৩৭০ নিয়ে। তখন তিনি কাশ্মীর, আকসাই চীন, পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে প্রচুর পড়াশুনো করেছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''যদি ইতিহাস দেখা যায়, তা হলে দেখা যাবে অনেক যুদ্ধই হয়েছে ওয়ার্ম ওয়াটার নিয়ে। শীতপ্রধান দেশে অনেক সমুদ্র শীতে নাব্য থাকে না। চীনেরও একই সমস্যা আছে। সাউথ চায়না সমুদ্র নিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রবল বিতর্ক চলছে। পাকিস্তানের দাক্ষিণ্যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভিতর দিয়ে চীন গুঞ্জেরা পাস হয়ে, স্কার্ডু হয়ে, ইসলামাবাদ গাদার পোর্ট পর্যন্ত রাস্তা বানায়। সেই বন্দর চীন ব্যবহার করে। ওরা খুব ভালো রাস্তা বানিয়েছে। কিন্তু শীত ও বর্ষায় রাস্তাটা বারবার বন্ধ হয়ে যায়।''
সুমিতবাবুর মতে, ''আমার মনে হয়েছে, ওরা বিকল্প রাস্তা বানাতে চাইছে। সেই রাস্তা তিব্বত থেকে সোজা স্কার্ডু পর্যন্ত যাবে। কিন্তু এই রাস্তাটা গালওয়ান হয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে নিয়ে দিয়ে যাবে। তখন এলএসি বদলাতে হবে। সেই প্রয়াসটাই চীন শুরু করেছে। চীনের মধ্যে বরাবর একটা আগ্রাসী মনোভাব আছে। তারই ঝলক দেখা যাচ্ছে লাদাখে।''
অমলবাবুর মতে, চীনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা আছে। তিব্বত দখলের পর থেকে তা বেড়েছে। তার ওপর অ্যামেরিকা এখন ভারতের কাছাকাছি এসেছে, তাই চীন বড় চিন্তিত। চীন এখন ভারতকে নানাভাবে বিব্রত করতে চাইছে। নেপালকে দিয়েও তারা ভারতকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। চীনের প্রবণতা হলো, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে আসা।
বিশ্বে সামরিক ব্যয়ে ভারত এখন তৃতীয়
সুইডেনের ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ বা সিপ্রি ২০২১ সালে সামরিক খাতে বিভিন্ন দেশের খরচের তথ্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভারত তৃতীয়
২০২১ সালে ভারতের সামরিক ব্যয় ছিল ৭৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন, যা বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২০২০ সাল থেকে এই ব্যয় শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০১২ সালের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ।
ছবি: picture alliance/AP Photo/C. Anand
শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে সামরিক খাতে খরচ করেছে ৮০১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কম। প্রতিবেদন মতে, ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নে খরচ বাড়িয়েছে ২৪ শতাংশ এবং অস্ত্র কেনায় খরচ কমিয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
ছবি: picture-alliance/A. Widak
চীন দ্বিতীয়
তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ চীন ২০২১ সালে সামরিক খাতে খরচ করেছে ২৯৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
ছবি: Reuters
চতুর্থ যুক্তরাজ্য
তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য গত বছর সামরিক খাতে খরচ করেছে ৬৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৩ শতাংশ কম।
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
পঞ্চম রাশিয়া
পঞ্চম অবস্থানে থাকা রাশিয়া ২০২১ সালে সামরিক খাতে খরচ করেছে ৬৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। সেসময় রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনের সীমান্তে সামরিক স্থাপনা তৈরি করছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ছবি: picture-alliance/TASS/A. Demianchuk
ছয় নেমে গেছে সৌদি আরব
আগের তালিকায় তিন নম্বরে ছিল সৌদি আরব৷ ২০১৯ সালে ১৬ শতাংশ ব্যয় কমিয়েছে দেশটি৷ গতবছর দেশটি ৬১.৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে৷ ইয়েমেনে সামরিক অভিযান ও ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে সৌদি আরবের সামরিক ব্যয় কমানোতে বিস্মিত হয়েছেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
শীর্ষ পাঁচেই ৬২ শতাংশ
সিপ্রি বলছে, ২০১৯ সালে সামরিক খাতে বৈশ্বিক খরচ ছিল ১৯১৭ বিলিয়ন ডলার৷ এর মধ্যে ৬২ শতাংশই করেছে শীর্ষ পাঁচটি দেশ৷
ছবি: Reuters/J. Lee
প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি
২০১৯ সালে ২০১৮ সালের তুলনায় সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৩.৬ শতাংশ৷ এটি ২০১০ সালের পর কোনো এক বছরে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির হার৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
ইইউতে প্রথম ফ্রান্স, বিশ্বে সপ্তম
২০১৯ সালে ফ্রান্স ৫০.১ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, যা দেশটির জিডিপির ১.৯ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে তাদের ব্যয় ছিল ৫১.৪ বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Reuters/G. Fuentes
অষ্টম-এ জার্মানি
২০১৯ সালে জিডিপির ১.৩৮ শতাংশ ব্যয় করেছে জার্মানি, সংখ্যার হিসেবে যা ৪৯.৩ বিলিয়ন ডলার৷ ২০১৮ সালে ছিল ৪৬.৫ বিলিয়ন৷ অর্থাৎ, জার্মানির ব্যয় বেড়েছে ১০ শতাংশ, যা সিপ্রির তালিকার শীর্ষ ১৫টি খরুচে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ৷ রাশিয়ার কাছ থেকে হুমকি বাড়া এর একটি কারণ বলে মনে করছেন সিপ্রির বিশ্লেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
শীর্ষ দশে এশিয়ার আরো দুই দেশ
সিপ্রির তালিকায় শীর্ষ ১০ খরুচে দেশের তালিকায় নয় ও দশ নম্বরে যথাক্রমে আছে জাপান (৪৭.৬ বলিয়ন ডলার) ও সাউথ কোরিয়া (৪৩.৯ বিলিয়ন ডলার)৷
ছবি: AP
বাংলাদেশ
২০১৯ সালে বাংলাদেশের সামরিক ব্যয় ছিল ৪,৩৫৮ মিলিয়ন ডলার, ২০১৮ সালে যা ছিল প্রায় ৩,৬৯২ মিলিয়ন ডলার৷
ছবি: DW/M. Mamun
12 ছবি1 | 12
যে প্রশ্নটা এরপর সঙ্গতভাবে ওঠে, তা হলো, এরপর কী হবে? অমলবাবু মনে করেন, ''চীনের মনোভাব বদলাবে না। কিন্তু ভারত যুদ্ধের দিকে যাক, আমি তা চাইব না। আমি চাইব, চীনকে উচিত শিক্ষা দিতে ওদের সঙ্গে সব আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ করুক ভারত। তাতে ভারতের থেকে চীনের অনেক বেশি ক্ষতি হবে।''
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটানান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলের ফেসবুক লাইভে বলেছিলেন, ''ভারতের তরফেও কিছু কৌশল আছে। ভারত কিছুতেই চীনের আগ্রাসন মানবে না। আর আলোচনায় বসতে হয় সমানে সমানে। ভারতও সেটাই করবে।'' সুব্রত সাহাও বলছেন, ''চীন যদি এরপরও তাঁদের মনোভাব না বদলায়, তা হলে ভারতের সেনাও প্রস্তুত। কিন্তু চীনের বোঝা উচিত, সংঘাত বাড়লে ওদেরই ক্ষতি হবে বেশি।''
জয়ন্তও মনে করেন, ''একটাই পথ ভারতের সামনে রয়েছে। সেটা হলো, জবাব দেওয়া। তার জন্য গুলি চালাতে হয়, চালাতে হবে। এমনিতে প্রথমে গুলি চলে, তারপর মর্টার এবং কামান। তারপর বিমান হানা। পুরোপুরি যুদ্ধে দুই দেশ যাবে না। কিন্তু অতীতে '৬৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী, '৮৪-৮৫তে রাজীব গান্ধী প্রত্যাঘাতের নীতিই নিয়েছিলেন। চীন আসলে দেখাতে চায়, ভারত আদতে দুর্বল। ভারত যদি জবাব না দেয়, তা হলে চীনের প্রচার আরও জোরদার হবে।''
তবে ভারতের এই অভিযোগ মানতে নারাজ চীন। তাদের দাবি, ভারত লাদাখ এবং অরুণাচল সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা মানছে না। চীনের এলাকায় ঢুকে পড়ছে বার বার। আকসাই চীন নিয়ে ভারতের বক্তব্যেরও একাধিকবার বিরোধিতা করেছে চীনের প্রশাসন। সাম্প্রতিক ঘটনার ক্ষেত্রেও চীনের দাবি, ভারতীয় সেনা প্রোটোকল ভেঙে চীনা ভূখণ্ডে ঢুকে তাদের টেন্ট ভাঙার চেষ্টা করেছে। অর্থাৎ, যাবতীয় উত্তেজনার জন্য চীন আঙুল তুলছে ভারতের দিকে।
দুই দেশই যে অন্যের দিকে আঙুল তুলবে, তা স্বাভাবিক। তবে নজর রাখতে হবে আন্তর্জাতিক মহল বিষয়টিকে কোন দৃষ্টিতে দেখছে। এখনও পর্যন্ত অ্যামেরিকা যা মন্তব্য করেছে, তাতে সামান্য হলেও ভারতের দিকে ঝুঁকে। এখন দেখার বাকি দেশগুলি বিষয়টিকে কোন চোখে দেখে। আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়ার উপরেও দুই দেশের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ খানিকটা নির্ভর করবে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।