1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ অক্টোবর ২০১৮

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এখন ইতিহাস৷ ২৮ বছর আগে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের আমলে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়৷ এরপর স্বৈরাচারের পতন হলো, গণতন্ত্র এলো, ছাত্র সংসদ নির্বাচন বিদায় নিলো৷

১৯৫২ সালে ডাকসু নেতাদের নেতৃত্বে ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইছবি: Journey/A. Hoque

গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ আশরাফ  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য দুই দফা টানা অনশন করেন৷ তাঁর দাবি ছিল, ওই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে৷ তিনি অনশনের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ভিসির বাড়ির সামনের সড়কদ্বীপকে৷ ওই অনশনে সাধারণ ছাত্র, ছাত্র নেতা ও শিক্ষকরা সংহতি জানিয়েছিলেন৷ তবে তিনি হুমকির মুখেও পড়েন৷ রাতের আঁধারে তাঁর ওপর হামলা হয়েছিল৷ তাঁর ব্যবহৃত সাইকেলটিও তখন ভেঙে ফেলা হয়৷

ওয়ালিদ আশরাফ ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিশ্রুতি পেয়ে অনশন ভঙ্গ করেছিলাম৷ তিনি দ্রুতই ডাকসু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন৷ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য,  এক বছর হয়ে গেলেও এখনো তিনি ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করেননি৷''

একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবে তাঁর কাছে ডাকসু নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘ ডাকসু না থাকায় সাধারণ ছাত্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ তাঁদের নানা সমস্যা এবং যৌক্তিক দাবি আদায়ের প্ল্যাটফর্ম হলো ডাকসু৷ সেটা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের দিকে নজর দিচ্ছে না৷ স্বৈরাচারী হয়ে উঠছে৷''

ওয়ালিদ আশরাফ

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে৷ আমরা জাতীয় পর্যায়ে নতুন নেতৃত্ব পাই না৷ নির্বাচন না হওয়ায় নেতৃত্ব দুই পরিবারের মধ্যেই সীমবদ্ধ৷ আর ছাত্র সংসদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও প্রতিভার বিকাশ ঘটে৷ ২৮ বছর ধরে তা রুদ্ধ হয়ে আছে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ছাত্র সংগঠনগুলো কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে৷ আর প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন ডাকসু নির্বাচন চায় না৷ কারণ, ডাকসুতে সরকারের বাইরের ছাত্র সংগঠন থেকে নির্বাচিত হলে তা সরকারের জন্য ভয়ের৷ তাই তারা নির্বাচন চায় না৷ তাই ছাত্র সংগঠনগুলোও ওই সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারে না৷ আবার ছাত্র সংঘঠনের নানা পদে যাঁরা আছেন, তাঁরা মনে করেন, ডাকসু নির্বাচন হলে তাঁরা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন৷ নানা গোষ্ঠী নানা স্বার্থে তাই ডাকসু নির্বাচন হতে দেয় না৷ শিক্ষকদের নির্বাচন হয়, সিনেট , সিন্ডিকেট নির্বাচন হয়৷ শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়৷ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না৷''

১৯৯০ সালের ৬ জুন সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-র  নির্বাচন হয়৷ সেই নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল জয়ী হয়৷ আমান উল্লাহ আমান ভিপি এবং খায়রুল কবির খোকন জিএস নির্বাচিত হন৷ ১৯৮৯ সালেও ডাকসু নির্বাচন হয়৷ আর সেই নির্বাচনে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ভিপি এবং মুশতাক আহমেদ জিএস নির্বাচিত হন৷ এই প্যানেলটি ছিল ছাত্রলীগসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর একটি যৌথ প্যানেল৷ ১৯৭১ সালের পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাত বার৷

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতনের পর ২৮ বছরে শুধু ডাকসু নয়, কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনই হয়নি৷  নির্বাচনের জন্য নেক আন্দোলন হয়েছে৷ দেশের সর্বোচ্চ আদালতে একাধিকবার রিট হয়েছে৷ কিন্তু ছাত্র সংসদ নির্বাচন আর হয়নি৷ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডাকসু নির্বাচন করার উপায় খুঁজতে সব ছাত্র সংগঠন নিয়ে বৈঠকও করেছেন৷ তবে ওই বৈঠক পর্যন্তই শেষ৷

প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে ছাত্র সংসদের বিষয়টি রয়েছে৷ ছাত্র সংসদের জন্য আলাদা গঠনতন্ত্র আছে৷ ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্সে ডাকসুর কথা বলা হয়েছে৷ আর ডাকসুর গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, প্রতি বছর ডাকসু নির্বাচন হবে৷ কীভাবে হবে, কাদেরকে নিয়ে হবে, সেগুলো বিস্তারিত  বলা আছে গঠনতন্ত্রে৷ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি ও জিএসসহ সব কর্মকর্তা ছাত্রদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার বিধান আছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্র সংসদ আছে৷ সেখানেও সরাসরি ভোটে কর্মকর্তাদের নির্বাচিত হওয়ার বিধান৷ একই দিনে ভোট হয়, ছাত্ররা যে যার হলে ভোট দেন৷ আর দুটি ব্যালট পেপারে তাঁরা হল ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন৷ প্রার্থীরা প্যানেল করতে পারেন৷ তবে কেউ প্যানলের বাইরেও এককভাবে নির্বাচন করতে পারেন৷

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদাধিকার বলে ছাত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ৷

ছাত্র সংসদের মূল উদ্দেশ্য হলো নেতৃত্বে বিকাশ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশ৷ ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা৷ ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখা৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সিদ্ধান্ত ও উন্নয়নে ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ আগামী মার্চে ডাকসু নির্বাচন করার একটা প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তবে সেটা যে তারা নিজ থেকেই নিয়েছেন, তা নয়৷ হাইকোর্ট গত জানুয়ারি মাসে এক রিটের রায়ে ৬ মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে৷ এরপর গত ৪ সেপ্টেম্বর আইনজীবী মনজিল মোরশেদ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আক্তারুজ্জামানসহ তিন জনকে আইনি নোটিশ দেন৷ অন্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. একেএম গোলাম রাব্বানী ও কোষাধ্যক্ষ ড. কামাল উদ্দিন৷

মনজিল মোরশেদ

This browser does not support the audio element.

মনজিল মোরশেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালত ৬ মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করতে বলেছিলেন৷ তা না করায় প্রথমে আইনি নোটিশ এং পরে আদালত অবমাননার রুল চেয়ে  মামলা করি৷ তবে অ্যাটর্নি জেনারেলের আবেদনের কারণে সেটার শুনানি এখনো কার্যতালিকায় আসেনি৷ আমরা শুনানির জন্য আবেদন করব৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ডাকসু নির্বাচন হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না৷ তাদের একক প্রশাসনিক ক্ষমতা খর্ব হবে, তাই তারা ডাকসু নির্বাচন চান না৷ আর সব সময়ই ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন এই নির্বাচনের বিরোধিতা করে৷ কারণ, তারা মনে করে, তারা সংগঠনের নেতা হলেও ডাকসুর নির্বাচিত নেতা হয়তো হতে পারবেন না৷ তারা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা হওয়ার কারণে এক ধরনের প্রভাব- প্রতিপত্তি ভোগ করেন৷ তা খর্ব হওয়ার আশঙ্কায় থাকেন৷ আর সবশেষ কারণ হলো, যারা জাতিকে নেতৃত্বশুণ্য করতে চায়, তারাও ডাকসু নির্বাচন হতে দিতে চায় না৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির কথা ছাত্র সংসদের নির্বাচন না দেয়ার অজুহাত হিসেবে দেখানো হয়৷ আমার কথা হলো, দেশের পরিস্থিতি তো আরো খারাপ৷ তাহলে জাতীয় নির্বাচন হয় কিভাবে?''

গত মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে একটি বৈঠক করে৷ ওই বৈঠকে আগামী মার্চে ডাকসু নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়৷ বৈঠকে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের উদ্যোগে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা ছিলেন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, পরিবেশ পরিষদের শিক্ষক, হলের প্রভোস্টসহ আরো অনেকে ছিলেন৷ সেখানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু এবং হল সংসদের নির্বাচন নিয়ে সবাই মতামত দিয়েছেন৷ মার্চে ডাকসু নির্বাচনের টার্গেট ধরে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ তার মধ্যে রয়েছে ডাকসুর গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করা, ভোটার তালিকা তৈরি করা, তফসিল ঘোষণা করার সময় সীমা নির্ধারণ৷ সম্মানিত উপাচার্য মহোদয় মার্চের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ আমরা তাঁর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই৷''

মো. সাদ্দাম হোসেন

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘২৮ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন হচেছ না৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আধুনিক ধারণা, তাতে ছাত্র- শিক্ষকদের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া প্রয়োজন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত, প্রগতি এসব বিষয়ে ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন৷ ডাকসু না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না৷ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন যার যার আদর্শিক অবস্থান থেকে ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করে৷ কিন্তু তার জন্য একটি সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম থাকলে কাজটি আরো ভালো হয়৷ সেই প্ল্যাটফর্ম হলো ছাত্র সংসদ৷ বর্তমানে যারা জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের বড় একটি অংশ অতীতে ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন৷ আর দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ না থাকায় নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে না৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘‘ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার জন্য ছাত্র সংগঠনগুলো কোনোভাবেই দায়ী নয়৷ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের৷ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সংঘাত বা সংঘর্ষ নাই৷ সব ছাত্র সংগঠন শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে৷ ঠিক মতো ক্লাস, পরীক্ষা হচ্ছে৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদি তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা একটা ভালো দিক যে, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে পরিবেশ পরিষদের মিটিংয়ে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ তবে এর আগে ডাকসু ক্যাফেটারিয়ায় আরেকটি আলোচনায় আমরা যাওয়ার পর আমাদের ওপর হামলা হয়েছিল৷ এবার অনেকদিন পর ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত আমি সন্দিহান৷ কারণ, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা৷ ১৫৫ জন এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷ এই পরিস্থিতিতে ডাকসু নির্বাচন কি আদৌ হবে?''

আল মেহেদি তালুকদার

This browser does not support the audio element.

তিনি দাবি করেন, ‘‘৯০-এর বিরোধী ছাত্র সংগঠন ডাকসু নির্বাচনবিরোধী ছিল৷ কিন্তু এবার আমরা বিরোধী ছাত্র সংগঠন হয়েও ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে৷''

তবে তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তারা তখন ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় না৷''

এদিকে ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘‘সামনে আমাদের কনভোকেশন৷ আমরা এখন সেটা নিয়ে ব্যস্ত আছি৷'' আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি৷

রাশেদ খান মেনন, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, আ স ম আবদুর রব, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মাহমুদুর রহমান মান্না, আখতারুজ্জামান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, মুশতাক হোসেন, আমানুল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকনের মতো ডাকসুর আরো অনেক সাবেক ভিপি-জিএস জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়৷ সারা দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংদের অনেক নির্বাচিত নেতাও জাতীয় রাজনীতিতে অবদান রাখছেন৷ জেলা এবং স্থানীয় পর্যায়ের ডিগ্রী কলেজগুলোর ছাত্র সংসদ থেকেও পরবর্তীতে স্থানীয় নেতৃত্বের জন্ম হয়েছে৷ কিন্তু গত ২৯ বছর ধরে এই প্রক্রিয়া রুদ্ধ হয়ে আছে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও উন্নয়নে ছাত্রদের অংশগ্রহণ নেই৷ তাঁদের সমস্যা বা চিন্তার কথা তুলে ধরার কোনো ফোরাম নেই৷ ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিকেন্ত্রিক কথিত নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছে৷ তারা কোনো-না-কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করেন৷

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ

This browser does not support the audio element.

দীর্ঘ বিরতির পর এরশাদের সময় ১৯৮৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়৷ সেই নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ছাত্রলীগের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ৷ তিনি এবং মুশতাক আহমেদ ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে তখন হাইকোর্টে রিট করেছিলেন৷ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর পরের বছর আবার ডাকসু নির্বাচন হয়৷ এরপর গত ২৮ বছরে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা শিক্ষা প্রকিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি৷ এটা দুর্ভাগ্যজনক৷ এর কারণ হলো বর্তমান সিস্টেম চায়নি নতুন কোনো নেতৃত্ব বা সৃষ্টিশীল নেতৃত্ব তৈরি হোক৷ পাশাপাশি সামাজিক এবং সৃজনশীল কাজের প্রতি মানুষের যে আগ্রহ, তা থেকে বিমুখ করার জন্যই এটা করা হয়েছে৷ কারণ, দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব তৈরি হলে যা খুশি তাই করা যাবে না৷ এখন যে অকার্যকর রাষ্ট্র এর মূল কারণ এটাই৷''

তিনি বলেন, ‘‘ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাতের কারণে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা যায় না, এটা একটা ভুয়া যুক্তি৷ ছাত্ররা সংঘাত-সংঘর্ষ করে না, তাদের দিয়ে করানো হয়৷ সংঘাত হবে কেন? সংঘাত হলে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ ডাকসু বা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নীতিমালা আছে৷ সেটা অনুসরণ করলেই আর কোনো সমস্যা হবে না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘সারা দেশে যদি ঠিকমতো এবং নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়, তাহলে জাতীয় পর্যায়ে নতুন এবং সৃষ্টিশীল নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে৷ স্থানীয় পর্যায়েও নতুন নতুন নেতৃত্ব আসবে, যা দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে৷ আর দেশে ছাত্ররা তাঁদের অধিকার আদায় করতে পারবে৷ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটবে৷ একটা মননশীল পরিবেশ তৈরি হবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ