1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন ঝরে গেল শিশুটির প্রাণ?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ জুলাই ২০১৮

এক শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে তিনটি তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে৷ শিশুটির মৃত্যুতে চিকিৎসায় অবহেলা এবং ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে৷ এসব অভিযোগে কর্তব্যরত চিকিৎসকসহ তিনজনকে আটক করা হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়৷

প্রতীকী ছবিছবি: DW

গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপতালে মারা যায় পৌনে তিন বছর বয়সের শিশু রাইফা খান৷ তার বাবা সাংবাদিক রুবেল খানের অভিযোগ, অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে তাঁর শিশু কন্যা মারা গেছে৷ওই রাতে  তিনি তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে চকবাজার থানায় মামলাও করতে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-র নেতারা থানায় গিয়ে হুমকি দেন বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ রুবেল খান বলেন, ‘‘সাংবাদিকরা সমঝোতায় এসে তদন্তের পর মামলার সিদ্ধান্ত নেন তারা৷’’

রুবেল খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার আমার মেয়েকে গলায় ব্যথা নিয়ে হাসপপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম৷ প্রথম দফা তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দিলে তার খিচুনি হয়৷ এর একদিন পর আবারো তাকে সেই অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়৷ এর ফলে তার মৃত্যু হয়েছে৷’’ তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘‘অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পর আমার মেয়ে যখন মৃত্যুর মুখে, তখনো ডাক্তার আসেনি৷’’

অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পর আমার মেয়ে যখন মৃত্যুর মুখে, তখনো ডাক্তার আসেনি: রুবেল খান

This browser does not support the audio element.

এ নিয়ে চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা আন্দোলন করছেন৷ তাঁরা দায়ী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন৷ চট্টগ্রাম সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা, পুলিশ ও চিকিৎসক এই তিনপক্ষ সমঝোতার মাধ্যমে মামলা থেকে বিরত আছি৷ তিনটি তদন্ত কমিটি হয়েছে৷ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলা হবে৷ আমরা মনে করি, আমাদের সহকর্মী রুবেল খানের সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে৷ তারপরও আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে চাই৷’’

তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘‘ম্যাক্স হাসপতালটি শুধু ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে চলছে৷ তাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন নেই৷ হাসপাতালটিও বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানাই৷’’

এই ঘটনায় চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে৷ ডা. আজিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের তদন্ত চলছে৷ তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করা যাবে না৷ তবে তদন্তে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’

অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে: ডাঃ রহমান

This browser does not support the audio element.

এদিকে ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘আমাদের  অভ্যন্তরীণ তদন্তও চলছে৷ আমরা এখন পর্যন্ত অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার প্রমাণ পাইনি৷ তাই আমাদের ধারণা শিশুটি মৃগী রোগে মারা গেছে৷ খিচুনির বিষয়টি চিকিৎসককে জানালে হয়তো এমন হতো না৷’’

হাসপাতালের অনুমোদন না থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘তদন্তকারীরা বলেছেন, আমাদের হাসপাতালের অনুমোদনের কাগজে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে কর্মকর্তা সই করেছেন, তার অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা নেই সেটা আমাদের দোষ নয়৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘তদন্তে ভুল চিকিৎসা বা অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’

এদিকে মারা যাওয়া শিশুটির বাবা রুবেল খান বলেন, ‘‘অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পর প্রথম দফা খিচুনি হওয়ার পর চিকিৎসককে জানানো হয়েছে৷ তারপর অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করা হয়৷ এরপরও ডা. বিধান রায় দ্বিতীয়বার একই অ্যান্টিবায়োটিক দেন৷ আমার সন্তান যখন মারা গেছে, তখনও ওই ডাক্তারকে পাওয়া যায়নি৷ এর আগে ডিউটি ডাক্তারকে ডাকলেও আসেননি৷’’

খিচুনির বিষয়টি চিকিৎসককে জানালে হয়তো এমন হতো না: লিয়াকত আলী

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে প্রায়ই হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া যায়৷ তবে এসব ঘটনায় সরসরি ফৌজদারী মামলা করা যায় না বললেই চলে৷ দু'একটি মামলা হলেও শেষ পর্যন্ত তার তদন্ত শেষ হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায় না৷ তবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)-তে অভিযোগ করার সুযোগ আছে৷ বিএমডিসির চেয়ারম্যান ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পেলে তদন্ত করি৷ অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থাও নিই৷’’ তবে এ ধরনের অভিযোগের সংখ্যা এবং কোনো অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে কিনা তাৎক্ষণিকভাবে তিনি তা জানাতে পারেননি৷ আর এর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রারের সঙ্গেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি৷

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ৩৩৩টি অভিযোগের হিসাব আছে বিএসডিসি’র কাছে৷ এর মধ্যে ভুল চিকিৎসা বা অবহেলার অভিযোগ আলাদা করা নেই৷ তবে অধিকাংশ অভিযোগই চিকিৎসকদের ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহারের বিরুদ্ধে৷ ওই বছরে চিকিৎসায় অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার ৫টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়৷ তবে তাতে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি বলে জানা গেছে৷

তবে ভুক্তভোগীদের অনেকেই মনে করেন, এইসব অভিযোগ তদন্তে একটি আলাদা স্বাধীন কমিশন হওয়া প্রয়োজন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ