1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন নিখোঁজ আশরাফ মাহদী?

সমীর কুমার দে ঢাকা
৮ আগস্ট ২০২০

ইসলামী ঐক্যজোটের প্রয়াত চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীর দৌহিত্র আশরাফ উদ্দীন মাহদী নিখোঁজ হওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরগরম৷ এর কারণ কেউ বলছেন রাজনৈতিক বিভক্তি, কেউ বলছেন পারিবারিক বিরোধ৷

Bangladesch - die Stunde der Islamisten
প্রতীকী ছবিছবি: DW/H. C. Ostermann

মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহদী সম্প্রতি দেশে আসেন৷ একটি মামলায় গ্রেফতারও হন এবং জামিন পান৷ এরপর হঠাৎ করে নিখোঁজ হন এবং নিখোঁজ হবার আগে ইসলামী ঐক্যজোটের একাধিক শীর্ষ নেতাকে এর জন্য দায়ী করেন৷

এ বিষয়ে হেফাজতে ইসলামীরসাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আশরাফ মাহদীর ঘটনার সঙ্গে হেফাজতের কোন সম্পর্ক নেই৷ আসলে ইসলামী ঐক্যজোটের মধ্যে আমিনী সাহেবের পরিবারের সদস্যদের বিরোধ থেকেই আলোচনায় এসেছেন আশরাফ মাহদী৷ আমিনী সাহেবকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে আশরাফ যখন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তখনই বিবাদের শুরু৷ এরপরই আমিনীর পরিবার দুই ভাগ হয়ে যায়৷ এক গ্রুপে আছেন ইসলামী ঐক্যজোটের বর্তমান মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, আমিনী সাহেবের ছেলে হাসনাত, সাবেক খাদেম মাওলানা আলতাফ৷ আর অন্য গ্রুপে আছেন আমিনী সাহেবের দুই জামাই যারা লালবাগ মাদ্রাসায় আছেন৷ আশরাফ মাহদীর বাবা মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মুফতি সাখাওয়াত হোসেন ও মাওলানা জুবায়ের৷''

আশরাফ মাহদী নিখোঁজ ও ফেসবুক স্ট্যাটাস

গত ৬ আগস্ট রাতে আশরাফ মাহাদী নানীর (মুফতি ফজলুল হক আমিনীর স্ত্রী) সঙ্গে দেখা করে বাসায় ফেরার সময় লালবাগ কেল্লার সামনে থেকে নিখোঁজ হন৷ রাত ১১টা ২৭ মিনিটে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের নিখোঁজের কথা বলেন আশরাফ৷ সেখানে তিনি লিখেছেন, তার কিছু হলে ফয়জুল্লাহ-আলতাফ গংকে দায়দায়িত্ব নিতে হবে৷ এই ঘটনার পর ইসলামী দলগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়৷ শনিবার পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি৷

ঘটনার সঙ্গে হেফাজতের কোন সম্পর্ক নেই: আজিজুল

This browser does not support the audio element.

আশরাফ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার বাবা মাওলানা জসিম উদ্দিন লালবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন৷ জসিম উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত পুলিশের তৎপরতায় আমি সন্তুষ্ট৷ আমার সঙ্গে তাদের সার্বক্ষণিক কথা হচ্ছে৷ আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই আশরাফ মাহদী আমাদের কাছে ফিরে আসবে৷''

নিখোঁজ হওয়ার আগে সর্বশেষ আশরাফের দেখা হয় তার খালু মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে৷ মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নানুর সঙ্গে দেখা করে যখন আশরাফ বাসায় ফিরে যাচ্ছিল তখন পথের মধ্যে আমার সঙ্গে দেখা হয়৷ কুশলাদি বিনিময়ের পর সে বাসায় যাওয়ার কথা বলে৷ কয়েক মিনিট পরে ১১টা ২৭ মিনিটে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেখি৷ সেখানে সে লিখেছে, লালবাগের বাসা থেকে ফেরার পথে ওরা আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে৷ আমার কিছু হলে দায়ী থাকবে ফয়জুল্লাহ-আলতাফ গং৷''

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আশরাফ মাহদী আমার ছেলের মতো৷ ওর বাবা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু৷ একসঙ্গে রাজনীতি করি৷ কেন সে এই অভিযোগ করল সেটা বুঝতে পারছি না৷ ও নিখোঁজ হওয়াতে আমরাও উদ্বিগ্ন৷ আমরাও বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজাখুজি করছি৷''

আশরাফের কোন সন্ধান পাওয়া গেছে কি-না জানতে চাইলে পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিখোঁজ আশরাফের বাবার সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষনিক যোগাযোগ আছে৷ আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি তাকে খুঁজে বের করার জন্য৷''

হঠাৎ কেন আলোচনায় আমিনী পরিবার

কয়েকদিন আগে ফেসবুকে আশরাফ মাহদী একটি স্ট্যাটাস দেন৷ সেখানে তিনি অভিযোগ আনেন মুফতি আমিনীকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে৷ এই হত্যার জন্য মুফতি ফয়জুল্লাহ ও আলতাফসহ কয়েকজনকে দায়ী করেন তিনি৷ এছাড়া কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের বৃহৎ বোর্ড ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ' এর বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ করেন৷

পরবর্তিতে মুফতি আমিনীর ছেলে আবুল হাসনাত আমিনী (যিনি আশরাফ মাহদীর আপন মামা) তিনিসহ আরও কয়েকজন ফেসবুক লাইভে এসে এসব অভিযোগ অমূলক উল্লেখ করেন৷ এরপরই বিষয়টি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়৷

কয়েকদিন পর ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ছাত্র খেলাফত চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি মাওলানা ওসমান কাসেমের উপর অজ্ঞাত পরিচয় কিছু যুবক হামলা করে৷ যে হামলার পর ১৯ জুলাই তাদের রক্তাক্ত ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ ওই দিন চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় ওসমান কাসেম একটা মামলা দায়ের করেন৷

মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জনকে আসামী করা হয়৷ নাম উল্লেখ করা সর্বশেষ অর্থাৎ ৯ নম্বর আসামি হিসেবে হাফেজ মাওলানা আশরাফ মাহদীর নাম বলা হয়েছে৷ এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ২৮ জুলাই আশরাফ মাহদীকে আদালতে তোলা হয়৷ আদালত তার জামিন দেন৷ এরপর থেকে তিনি বাসাতেই ছিলেন৷

মামলাটির তদন্ত করছেন চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আব্দুর রহিম৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৯ জন আসামীর মধ্যে একমাত্র আশরাফ মাহাদী গ্রেফতার হয়েছে৷ তাকে আদালত জামিন দিয়েছেন৷ বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন৷''

পুলিশ ছেলেকে এনে দেবে, সে আশায় আছি: জসিম উদ্দীন

This browser does not support the audio element.

দুবাই থেকে ফেরত আনা হয় আশরাফকে

আশরাফ মাহদীর বাবা মাওলানা জসিম উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি পাওয়ার পর ৪ জুলাই আমার ছেলে মিশর থেকে দেশে আসে৷ ২৫ জুলাই তার ফিরে যাওয়ার কথা৷ এর মধ্যে সে ফেসবুকে কিছু স্ট্যাটাস দেয় যা অনেককেই কষ্ট দিয়েছে, যদিও সে সন্দেহের কথা বলেছে৷ তারপরও বিষয়গুলো মিটমাট হয়ে যায়৷ ২৫ জুলাই সকালে সে মিশরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করে৷ ট্রান্সজিট হিসেবে দুবাই নামার পর সেখানে ইমিগ্রেশন তাকে জানায়, ওয়ান্টেড হিসেবে বাংলাদেশ তাকে ফেরত পাঠাতে বলেছে৷ সে সেখানে অবস্থানের চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায় থেকে চাপ দেওয়ায় দুবাই ইমিগ্রেশন তাকে ২৭ জুলাই দুপুরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়৷ রাতে পৌঁছার পর বিমানবন্দরে বসিয়ে রেখে সকালে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়৷ সেখানে আদালতে তুলতে আদালত জামিন দেন৷ এরপর থেকে সে বাসায়ই ছিলো৷ কিন্তু ৬ আগস্ট রাতে সে নিখোঁজ হয়ে যায়৷ তবে পুলিশ আমাকে আশ্বস্ত করেছে আগামী দু'চার দিনের মধ্যে যেভাবেই হোক ছেলেকে ফিরিয়ে এনে দেবে৷ আমি এখন সেই আশায় আছি৷''

আশরাফ মাহদীকে কি দুবাই থেকে ফেরত আনা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আব্দুর রহিম বলেন, ‘‘আমরা তাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছি, বিদেশ থেকে ফেরত আনার বিষয়টি ঠিক নয়৷''

আশরাফ মাহদী ইস্যুতে সোচ্চার ইসলামী রাজনীতিকরাও

আশরাফ মাহদীকে নিয়ে কওমী শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে বেশ সক্রিয়৷ আশরাফ মাহদিকে নিয়ে মতামত ও বিবৃতি দিয়েছেন অনেকেই৷ একই সাথে ওসমান কাসেমের উপর হামলার ঘটনাকে সাজানো বলেও দাবি করেন তারা৷

এ বিষয়ে হেফাজত নেতা আল্লামা জুনায়েদ আহমেদ বাবুনগরীর খাদেম মাওলানা এনামুল হাসান ফারুকী বাবুনগরীর পক্ষে এক বিবৃতি দিয়ে বলেন, ঢাকা চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন এবং আমার প্রিয় আশরাফ মাহদির নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন৷ এটাই শান্তির পথ, আমরা শান্তি প্রিয়, আমরা সবকিছুই শান্তির জন্য করে থাকি৷ এই নাটক এবং মিথ্যা মামলা অশান্তির মূল৷ দ্রুত এটা প্রত্যাহার করা হোক৷

বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক তার ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডিতে লিখেছেন, ‘‘আশরাফ মাহদীর ঘটনা গোটা কওমী মহল ও বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির অঙ্গনকে ভাবিয়ে তুলেছে৷ একটি ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত ইসলামি পরিবারের একজন উচ্চশিক্ষার্থী মেধাবী সন্তান শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বিদেশ থেকে তাকে ধরে আনা- মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো ঘটনা৷

এ বিষয়ে আমিনীর ছেলে মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনীর বরাত দিয়ে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান গাজী ইয়াকুব ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রামের মামলা এবং ভাগ্নে আশরাফ মাহদীর বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ