1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংঘাত?

১৯ জানুয়ারি ২০২৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে সংঘর্ষে শনিবার তিন বাংলাদেশি নাগরিক আহত হওয়ার পর রোববার সীমান্ত এলাকা শান্ত রয়েছে। তবে সীমান্তের বাংলাদেশিরা কিছুটা আতঙ্কে আছেন।

 কাঁটাতারের বেড়া
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে তিন হাজার ২৭১ কিলোমিটার এলাকায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করেছে, ৮৮৫ কিলোমিটার এলাকায় তা নির্মাণ করা হয়নিছবি: Dipa Chakraborty/Pacific Press/picture alliance

এদিকে রোববার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, "রক্ত ঝরলেও সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে।”

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে চায় ভারত। এই কারণেই বার বার তারা সীমান্তে উসকানিমূলক কাজ করছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে শনিবার বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে আবার উত্তেজনা তৈরি হয়। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নে বাংলাদেশের সীমান্তের ভিতরে গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সীমান্তের নাগরিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ইউনিয়নের চৌকা এবং কিরণগঞ্জ বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ির মধ্যবর্তী এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই দেশের নাগরিকরাই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। হাতাহাতি, বোমা বিস্ফেরণ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এতে তিন বাংলাদেশি নাগরিক আহত হন। অভিযোগ রয়েছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সহায়তার ভারতীয় নাগরিকরা উসকানিমূলক কাজ করেছে। বিএসএফ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। পরে বিকালে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠকে বিএএসএফ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। দিনভর উত্তেজনা রাতে শান্ত হয়ে আসে।

ওই সীমান্তের বাসিন্দা আমীর আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বাংলাদেশিরা ভারতের সীমান্তে ঢুকে গম কেটে এনেছে এই অভিযোগ তুলে ভারতীয়রা বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে বেশ কয়েকটি আম গাছ কেটে ফেলে। এই খবরে দুই দেশের সীমান্তবর্তী মানুষ জড়ো হলে সংঘর্ষ শুরু হয়।”

তিনি বলেন, "এখন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও সীমান্তে বাংলাদেশিরা ভিড় করছেন। সবার মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। কয়েকদিন আগে হলো কাঁটাতারের বেড়া দেয়া নিয়ে ঝামেলা। এর এখন গম আর গাছ কাটা নিয়ে।”

সীমান্তের বিনােদপুর ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের মেম্বার শফিকুল ইসলাম বলেন, "শনিবারের ঘটনায় আহতরা এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন। তারা এখন বাড়িতেই আছেন।”

তিনি আরো বলেন, "সীমান্ত এখন শান্ত থাকলেও সীমান্ত এলাকায় যাদের জমি ও গাছগাছালি আছে, তারা সেখানে অবস্থান করে পাহারা দিচ্ছেন। বিজিবির টহলও বাড়ানো হয়েছে।   সীমান্তের ভারতের দিকে বিএসএফ টহল দিলেও সেখানকার নাগরিকরা এখন আর নেই। তারা চলে গেছেন।”

তারা সীমান্ত এখন উত্তপ্ত রাখতে চায়: জানিবুল

This browser does not support the audio element.

এর আগে ৬ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে ওপারে ভারতের সুখদেবপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। ৬ জানুয়ারির পর কুঁড়িগ্রাম ও নওগাঁ সীমান্তের ওপারেও কাঁটাতারে বেড়া তৈরির চেষ্টা করে বিএসএফ। মোট পাঁচটি পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অভিযোগ বাংলাদেশের । তবে বাংলাদেশের প্রতিবাদের মুখে পাঁচদিন পর তারা কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ করে দেয় বিএসএফ।

ওই ঘটনায় ঢাকায় ভারতের হাইকমিমনারকে পররাষ্ট্র দপ্তর তলব  করে। একদিন পরে দিল্লিতে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কশিমনারকে তলব করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে সীমান্তে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে ভারত। সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জানিবুল হক বলেন, "আমার মনে হয় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারত নতুন পলিসি নিয়েছে। তারা সীমান্ত এখন উত্তপ্ত রাখতে চায়। সেটা হলে বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকবে। ফলে অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলাসহ অন্য বিষয়ে কম নজর দিতে পারবে।”

"আমি স্বরাষ্ট্র সচিব থাকাকালেও সীমান্ত হত্যা ও সংঘাত কমাতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারা বলত ওদের বিএসএফ ট্রিগার হ্যাপি। কিন্তু সেটা তো অন্য দেশের সীমান্তে তারা করেনা। এটা শুধু বাংলাদেশের সঙ্গেই করে,” যোগ করেন তিনি।

তার কথা, "ভারতের সাথে আমাদের চার হাজার  কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত। ওরা চোরাচালানের কথা বলে। কিন্তু এটা একপাক্ষিক নয়। ওরা বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে ফেনসিডিলের কারখানা করেছে পাচারের জন্য। আবার সীমান্তে তো ভারতীয় গরু থাকেনা।  আনা হয় ভারতের ভিতরে বহুদূর থেকে।”

তিনি বলেন, "বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা আরো জোরদার করা দরকার। প্রয়োজনে এটা আন্তর্জাতিক ফোরামে নেয়া যায়। তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। সীমান্তে  উসকানি দিচ্ছে। এখানে একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে চায় তারা।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমানা নির্ধারণ ও উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব পালন-সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মোট চারটি চুক্তি আছে। বাংলাদেশ-ভারত যুগ্ম সীমান্ত নির্দেশাবলি-১৯৭৫ অনুযায়ী উভয় দেশের শূন্যরেখা ১৫০ গজের মধ্যে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো কাজ সম্পন্নের বিষয়ে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া উভয় দেশের প্রয়োজনে শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে যেকোনো উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্নের ক্ষেত্রে একে অপরের সম্মতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ভারত যা করছে তা নতুন নয়: শহীদুল

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান চার হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে তিন হাজার ২৭১ কিলোমিটার এলাকায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করেছে এবং ৮৮৫ কিলোমিটার এলাকায় তা নির্মাণ করা হয়নি।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন, "আসলে সীমান্তে ভারত যা করছে তা নতুন নয়। গত ১৫ বছরে  বিএএসফ সীমান্তে হত্যা চালিয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। তখন সরকার কিছু বলেনি। সাধারণ মানুষকেও প্রতিবাদ করতে দেয়নি। তবে ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি বদলেছে। এখন বিজিবিও শক্ত অবস্থানে গেছে। সীমান্তের মানুষও প্রতিবাদ করছে। ফলে ঘটনাগুলো বেশি করে আমাদের সামনে আসছে।”

তার কথা, "বাংলাদেশের সীমান্তে এখন একটা অস্থির পরিস্থিতি দেখাতে চায় ভারত। এটা নিয়ে তার রাজনীতি আছে। আমাদের তাই দেশের অভ্যন্তরে প্রতিরোধ ও রাজনৈতিক ঐক্যের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে ডনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়া পর্যন্ত। তারপর আমাদের পরিস্থিতি বুঝে তৎপর হতে হবে।”

এদিকে  ঢাকায় রোববার এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, "দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত আছে। সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। রক্ত ঝরলেও সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে। আমাদের পাশে এখন জনগণ আছে। সীমন্তের নিরাপত্তা নিয়ে আগে কোনো ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এখন সেটা করা হচ্ছে বলেই সমস্যা সামনে আসছে।”

তার কথা, "বর্ডারে ঝামেলা হচ্ছে। বিজিবি সবসময় সতর্ক আছে। সীমান্ত সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত। এই সীমান্তে ওপারের কেউ আসতে পারবে না। রক্ত ঝরবে, কিন্তু সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে ।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে হামলা ও উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, "চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনার সূত্রপাত জমির ধান ও গাছকাটাকে কেন্দ্র করে। এতে দুপক্ষের লোকজন আহত হয়েছেন। গুরুতর কিছু ঘটেনি। এ বিষয়ে বিজিবি-বিএসএফ আলোচনায় সমাধান হয়ে গেছে।”

 

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ