1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন চাওয়া হচ্ছে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ নভেম্বর ২০২০

বাংলাদেশে বৈবাহিক ধর্ষণের শাস্তির আইন চেয়ে আদালতে রিট করা হয়েছে৷ রিটকারীরা মনে করেন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইনগুলো বৈষম্যমূলক৷ সেখানে বিবাহিত ও অবিবাহিত আলাদা করা হয়েছে৷ তাদের কথা, ‘ধর্ষণ সব ক্ষেত্রেই ধর্ষণ৷’

ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma

দন্ডবিধির ৩৭৫ ও ৩৭৬ ধারা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯(১) ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছে চারটি মানবাধিকার সংগঠন৷ হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মুজিবর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ মঙ্গলবার সরকারে ওপর রুল জারি করেছে৷ রুলে নারী ও ১৩ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের ‘বৈবাহিক ধর্ষণ' অনুমোদন দেয়ার আইনি বিধান বাতিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে৷

বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক না হলে আইনে বিয়েতে বাধা থাকলেও যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে যারা এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত তাদের শাস্তি হবে৷ কিন্তু বিয়ে অবৈধ হবে না৷ তবে বৈধভাবে বিয়ের জন্য নারীর ১৮ এবং পুরুষের ২১ বছর পূর্ণ হওয়া প্রয়োজন৷

কিন্তু বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা বলছে, যদি কোনো বিবাহিত মেয়ের বয়স ১৩ বছরের কম না হয় তাহলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামীর যৌনসঙ্গম ধর্ষণ বলে গণ্য হবে না৷

আবার দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নারী বা মেয়েকে যদি তার স্বামী ধর্ষণ করেন, আর ওই নারী বা মেয়ের বয়স যদি ১২ বছরের কম হয় তাহলে স্বামীর শাস্তি হবে৷ আবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারার ব্যাখ্যায় বৈবাহিক ধর্ষণ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি৷

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর পক্ষে এই রিটে আদালতে শুনানি করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা পুরো আইন চ্যালেঞ্জ করিনি, আংশিক করেছি৷ ১৩ বছরের বেশি বয়স না হলে ধর্ষণ হবেনা এটা বৈষম্যমূলক আইন৷ আর ধর্ষণে বিবাহিত-অবিবাহিত এই পার্থক্য করা চলেনা৷ বয়স যাই হোক স্বামী তার স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করলে সেটা ধর্ষণ হবে না কেন? আমরা তাই আইনের সংশোধন চেয়েছি৷’’  

ধর্ষণে বিবাহিত-অবিবাহিত এই পার্থক্য করা চলেনা: সারা হোসেন

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশে বাল্য বিয়ে নিরোধের আইন আছে৷ পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ আইনেও যৌন নির্যাতন অপরাধ হিসেবে গণ্য৷ তবে এই দুই আইনে সমস্যা আছে৷ দণ্ডবিধিতে বলা হয়েছে, ১৩ বছরের কম না হলে ধর্ষণ হবে না৷ আবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা হয়েছে, ১৬ বছরের বেশি হলে ধর্ষণ হবে না৷ এই আইন দু'টিতে সমস্যা আছে৷ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ব্যাখ্যাও অস্পষ্ট৷’’

রিটে বলা হয়েছে আইনের এই ব্যতিক্রমগুলো সংবিধানের ২৭, ২৮ , ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি৷ রিটের পক্ষে আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, ‘‘সংবিধানের এই অনুচ্ছেদগুলোতে নাগরিকদের আইনের দৃষ্টিতে সমতা ও আশ্রয় লাভের অধিকার, বৈষম্যহীনতা, আইনের আশ্রয় লাভের সমান অধিকার এবং জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত না হওয়ার অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু ধর্ষণ বিরোধী আইনগুলোতে বৈষম্য করা হয়েছে, যা সংবিধান পরিপন্থি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বিবাহিত নারীর বয়স ১৩ বছরের বেশি হলে ধর্ষণ হবেনা এটা স্পষ্টই একটা বৈষম্য৷ আর ধর্ষণ, ধর্ষণই৷ সেটা স্বামী তার স্ত্রীকে করলেও৷ একজন বিবাহিত নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার কেনো দাম থাকবেনা? তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করা হবেনা৷ এটা কীভাবে সম্ভব?’’

তিনি বলেন, এখনো সেই ঔপনিবেশিক আইন চলছে এখানে৷ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা আগেই এই আইন সংশোধন করেছে৷ তারা বৈবাহিক ধর্ষণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করছে৷ আর এখানে কোনো পরিবর্তন নাই৷

বৈবাহিক ধর্ষণকে শাস্তির আওতায় আনার মত পরিবেশ বাংলাদেশে এখনো হয়নি: মনজিল মোরশেদ

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশের বৈবাহিক ধর্ষণের পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়েছে রিটে৷ বিবিএস-এর জরিপ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শতকরা ২৭ ভাগ বিবহিত নারী বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার৷

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘‘বৈবাহিক ধর্ষণকে শাস্তির আওতায় আনার মত পরিবেশ বাংলাদেশে এখনো হয়নি৷ এই ধরনের আইন মানবাধিকারের প্রশ্নে হয়তো জরুরি কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে৷ এটা করার আগে বাংলাদেশে নারীদের আর্থিক এবং পেশাগত সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে৷ তা না হলে পুরুষ যদি ওই আইনের ভয়ে বিয়ে করতে নিরুৎসাহিত হয় তাহলে আরেকটি সংকট তৈরি হতে পারে৷ কারণ বাংলাদেশে এখনো বিবাহিত নারীদের বড় একটি অংশ আর্থিকভাবে স্বামীরও ওপর নির্ভরশীল৷’’

তার মতে, ১৩ বছর নয়, স্ত্রীর বয়স ১৬ বছরের বেশি হলে ধর্ষণ হবে না৷ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন একটি বিশেষ আইন৷ অন্য আইনের ওপর এটা প্রাধান্য পাবে৷

প্রসঙ্গত, গত মাসে টাঙ্গাইলের ১৪ বছরের এক কিশোরী বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার হয়ে বিয়ের ৩৪ দিনের মাথায় মারা যান৷ প্রচুর রক্ত ক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়৷ প্রবাস ফেরত এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল৷ এই ঘটনায় অবশ্য থানায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা হয়েছে৷ এই ঘটনাকে রিটে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ