কেন বৈশ্বিক তেল সরবরাহে হরমুজ প্রণালী গুরুত্বপূর্ণ?
১৮ জুন ২০২৫
হরমুজ প্রণালী ওমান ও ইরানের মাঝখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ, যা পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য কর্তৃপক্ষ ইআইএ একে ‘বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহণ চোকপয়েন্ট' হিসেবে বর্ণনা করেছে৷
এর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশ মাত্র ৩৩ কিলোমিটার বা ২১ মাইল চওড়া, যেখানে শিপিং লেন মাত্র দুই মাইল করে৷ তাই এটি অত্যন্ত ব্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ৷
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও ইরাকের মতো ওপেক দেশগুলোর তেল, যা সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হয়, এই প্রণালী দিয়েই পরিবাহিত হয়৷
জ্বালানি ও পরিবহণ বাজার পরামর্শক সংস্থা ভরটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল, কনডেনসেট এবং জ্বালানি এই জলপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়৷
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি রপ্তানিকারক দেশ কাতারও এই প্রণালীর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল৷
বর্তমান পরিস্থিতি কী?
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সংঘাতে এই জলপথের নিরাপত্তার বিষয়টি আবারো সামনে নিয়ে এসেছে৷ ইরান অতীতে হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়েছিল পশ্চিমা চাপের জবাবে৷
যদিও বর্তমানে সরাসরি কোনো বাণিজ্যিক জাহাজে বড় হামলার খবর নেই, তবে অনেক জাহাজ মালিক এখন জলপথ ব্যবহার নিয়ে সতর্ক৷ কেউ কেউ নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে, আবার কেউ কেউ রুট বাতিল করেছে বলে এপি জানিয়েছে৷
রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, সম্প্রতি এই অঞ্চলে নৌযান পরিচালনায় ইলেকট্রনিক হস্তক্ষেপ বেড়ে গেছে, যা জাহাজ চলাচলে প্রভাব ফেলছে৷
এই সংঘাত দ্রুত শেষ হওয়ার কোনো ইঙ্গিত নেই, ফলে তেলের বাজারে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে৷ প্রণালীতে কোনো ধরনের বিঘ্ন বা অবরোধ তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে৷ এটি বিশেষত এশিয়ার আমদানিকারকদের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলবে৷
তেলবাহী ট্যাংকারের ভাড়া ইতিমধ্যেই বেড়েছে৷ ব্লুমবার্গের মতে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্ব এশিয়ায় জ্বালানি পরিবহণের খরচ মাত্র তিন সেশনে প্রায় ২০% বেড়েছে৷ পূর্ব আফ্রিকার ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি ৪০%-এরও বেশি৷
সরবরাহ বিঘ্ন হলে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
ইআইএর তথ্য অনুযায়ী, হরমুজ প্রণালী দিয়ে যাওয়া জ্বালানি ও তেলের প্রায় ৮২% গন্তব্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ৷
চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এই চারটি দেশ সম্মিলিতভাবে এই প্রণালী দিয়ে যাওয়া তেল ও কনডেনসেটের প্রায় ৭০% আমদানি করে৷ ফলে এই দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যদি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে৷
ইরান ও উপসাগরীয় দেশগুলোর ওপর কী প্রভাব পড়বে?
ইরান যদি প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে তা মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ টেনে আনতে পারে৷ এই অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন পঞ্চম নৌবহর বাণিজ্যিক জাহাজ রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে৷
ইরানের এমন কোনো পদক্ষেপ সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ককে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে৷
তাছাড়া, ইরান নিজেও এই প্রণালী ব্যবহার করে তেল রপ্তানি করে৷ ফলে এটি বন্ধ করা আত্মঘাতী পদক্ষেপ হবে৷
জেপি মর্গানের বিশ্লেষকরা বলেছেন, ‘ইরানের অর্থনীতি এই জলপথে পণ্যের অবাধ চলাচলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল৷ এই প্রণালী বন্ধ করা তার প্রধান গ্রাহক চীনের সঙ্গে সম্পর্কের জন্যও ক্ষতিকর হবে৷'
প্রণালীর বিকল্প কী?
সৌদি আরব ও আরব আমিরাত ইতিমধ্যেই বিকল্প রুট তৈরি করেছে৷ সৌদি আরব ‘ইস্ট-ওয়েস্ট ক্রুড অয়েল পাইপলাইন' চালায়, যার ক্ষমতা দৈনিক ৫০ লাখ ব্যারেল৷ সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি পাইপলাইন স্থাপন করেছে, যা তাদের স্থলভাগের তেলক্ষেত্রকে ওমান উপসাগরের ফুজাইরাহ বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করে৷
ইআইএর হিসেব অনুযায়ী, হরমুজ প্রণালীতে বিঘ্ন ঘটলে দৈনিক প্রায় ২৬ লাখ ব্যারেল তেল বিকল্প পথে পরিবহণ সম্ভব৷
শ্রীনিবাস মজুমদারু/জেডএ