রাশিয়া বিশ্বকাপ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা ছিল আগে থেকেই৷ কিন্তু সব ছাপিয়ে ঘটন-অঘটন-অতিঘটনের এক বিশ্বকাপ উপহার দিলো দুই মহাদেশে ছড়িয়ে থাকা দেশটি৷
বিজ্ঞাপন
এই বিশ্বকাপ শুরুর আগে কত আলোচনা! আয়োজনের ভার কেন দেয়া হলো রাশিয়াকে? সেখানে রাজনৈতিক চাপ ছিল কতটা৷ কতটা হলো টেবিলের তলের হিসেব৷ কিংবা সোচি অলিম্পিকের কথা মনে করিয়ে দিতে ভুলেননি কেউ৷ স্বাগতিক অ্যাথলেটদের ডোপিং কেলেঙ্কারিও মনে পড়েছে অনেকের৷
এর বাইরেও ছিল রাজনৈতিক টানাপোড়েন৷ বিশেষ করে ইংল্যান্ডের সঙ্গে তো সম্পর্ক যায় যায় অবস্থা৷ যোগ দেয় ইউরোপের অন্য অনেক দেশও৷ কিন্তু সবকিছুর পরও শুরু হলো বিশ্বকাপ৷
যতই দিন গড়াতে লাগলো, সবার মুখে শুধু রাশিয়ানদের প্রতি মুগ্ধতা৷ আতিথেয়তার প্রশংসা৷ অনেকের ধারণা তো ১৮০ ডিগ্রিই পাল্টে গেল৷ তবে সবচেয়ে কঠিন হয়ে রইলো ভাষার প্রতিবন্ধকতা৷ ইংরেজি বলতে না পারা রাশিয়ানদের সঙ্গে যোগাযোগটা ঠিকভাবে হচ্ছিলো না৷ অবশ্য এই বিষয়টিই দর্শনার্থীরা যুগ যুগ ধরে মনে রাখবেন৷ তাই এই বিশ্বকাপকে মনে রাখার এটি একটি কারণ বলা যেতে পারে৷
বিশ্বকাপ ফাইনালের যে ছবিগুলো আপনার দেখা উচিত
দুর্দান্ত ফিনিশিং, মুহুর্মুহু আক্রমণ-পালটা আক্রমণ আর বিতর্কিত এক পেনাল্টি৷ বিশ্বকাপ ফাইনালে আপনি যা যা চান তার প্রায় সবই ঘটেছে মস্কোয় অনুষ্ঠিত ফাইনালে৷ ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়ার এ ফাইনালের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
দুর্ভাগ্যজনক আত্মঘাতী গোল
মারিও মানসুকিচ (বাম থেকে পঞ্চম) চেয়েছিলেন বলটি বাইরে পাঠাতে৷ কিন্তু, প্রতিপক্ষের গ্রিসমানের ফ্রি কিকটি কিনা তাঁর মাথায় লেগেই ঢুকে গেল নিজের দলের গোল পোস্টে! ফাইনালের শুরুতে ক্রোয়েশিয়া দল বড় ধাক্কা খেয়েছে তাঁর এই আত্মঘাতী গোলে৷
ছবি: Reuters/C. Recine
তবে ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেয়নি ক্রোয়েশিয়া
আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়লেও হতাশা পেয়ে বসেনি এই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা ক্রোয়েশিয়াকে৷ বরং ইভান পেরিসিচ চমৎকার এক গোল করে খেলায় সমতা ফেরান৷ আর সেটা ঘটেছে প্রথম গোলের দশ মিনিট পরেই৷
ছবি: Reuters/C. Recine
ভিএআর বিতর্ক
ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি, অর্থাৎ ভিএআর প্রযুক্তির সুবিধা আবার এগিয়ে দেয় ফ্রান্সকে৷ পেরিসিচ নিজ দলের ডি-বক্সের মধ্যে বলে হাত লাগিয়েছিলেন কিনা তা পরীক্ষা করতে ভিএআর-এর সহায়তা নেন আর্জেন্টিনার রেফারি নেস্তঁর পিটানা৷ পিটানা টিভিতে রিপ্লে দেখে ফ্রান্সকে পেনাল্টি দেন৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়া
গ্রিসমানের পেনাল্টি শটের গোল ফ্রান্সকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেয়৷ এবারের বিশ্বকাপে রীতিমতো বড় তারকা বনে যাওয়া ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক সুবাসিচকে পুরোপুরি বোকা বানান গ্রিসমান৷ এটা ছিল চলতি বিশ্বকাপে তাঁর চতুর্থ গোল৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
পগবাও আবার চেনালেন নিজেকে
ফাইনালে নিজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল পা দিয়ে গোল করে সমালোচনার জবাব দিলেন পল পগবা৷ ফ্রান্সের বড় কোনো টুর্নামেন্টে এটা তাঁর তৃতীয় গোল এবং ইউরো ২০১৬ কোয়ার্টার ফাইনালের পর প্রথম গোল৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
উচ্ছ্বসিত ফরাসি প্রেসিডেন্ট
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্সে বসে প্রতিপক্ষ দল ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার-কিটারোভিচ এবং আয়োজক দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে খেলা দেখেছেন৷ ফাইনালে ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
ইতিহাসের অংশ এমবাপ্পে
কিলিয়ান এমবাপ্পে (বামে) ফাইনালে দলের পক্ষে চতুর্থ গোলটি করে ক্রোয়েশিয়ার সব সম্ভাবনা কার্যত শেষ করে দেন৷ ১৯ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় হচ্ছেন ১৯৫৮ সালে পেলের পর বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা প্রথম টিনএজার৷
ছবি: Reuters/D. Staples
ক্রোয়েশিয়াকে উপহার
ফরাসি গোলরক্ষক উগো ল্যরিস (ডানে) ক্রোয়েশিয়াকে একটি গোল বলতে গেলে উপহারই দিয়েছেন৷ সতীর্থ ডিফেন্ডারের কাছ থেকে ব্যাক পাসে বল পেয়েছিলেন তিনি৷ মারিও মানসুকিচ ছুটে এসেছিলেন বল কেড়ে নিতে৷ তাঁকে কাটাতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন ল্যরিস৷বল নাগালে পেয়ে এক টোকাতেই ফরাসি গোলরক্ষককে বোকা বানান মানসুকিচ৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
হাওয়ায় ভাসছেন কোচ
দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের পর কোচ দিদিয়ে দেশঁ-কে এভাবেই শূণ্যে ছুঁড়ে দেন ফরাসি খেলোয়াড়রা৷ দেশঁ ছিলেন ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি দলের অধিনায়ক৷ বিশ্বকাপ ইতিহাসে খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ী তৃতীয় ব্যক্তি তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
সবই জিতলো ফ্রান্স!
ফরাসি খেলোয়াড়রা যখন বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে ধরেন, তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো মস্কোর লুঝনিকি মাঠে৷ এবার গোটা আসরে ভালো খেলে বিশ্বকাপ জয় করেছে ফ্রান্স৷ আগামী চারবছরের জন্য তারাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন৷ ২০২২ সালে কাতারে অন্য কেউ কী পারবে ফরাসিদের বিজয় রথ থামাতে?
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
কিন্তু সংস্কৃতির আদান প্রদানের চেয়ে খেলাটাই মুখ্য এমন আসরে৷ সেদিক থেকেও হতাশ তো করেইনি, বরং রীতিমতো একের পর এক চমক নিয়ে এসেছে৷ দু-একটা ম্যাচ হবার পর থেকেই বোঝা যেতে লাগলো যে দূরত্ব কমে এসেছে ‘বড়' দলগুলোর সঙ্গে ‘ছোট' দলগুলোর৷ যেমন, লুকাকু-ফেলাইনিরা খেললেও বেলজিয়ামের কথা কেউ ভাবেনি যে দলটি এতদূর যাবে, এবং দাপট দেখিয়ে খেলবে৷ ক্রোয়েশিয়াকে এমন রূপে দেখা যাবে, কে ভেবেছিল? ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স ও ২০১০ সালে স্পেন প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছিল এবং ট্রফিও জিতেছে৷ ২০১৮-তে ক্রোয়েশিয়াও ফাইনাল খেললো প্রথমবার৷ যদিও জিততে পারেনি৷
কিংবা স্বয়ং পুটিনও হয়তো ভাবেননি যে, তাঁর রাশিয়া শেষ চারের টিকেট প্রায় নিশ্চিতই করে ফেলবে৷ তাই এই চমকগুলো বহুদিন মনে থাকবে সবার৷
এবার আসুন, তারকাদের প্রসঙ্গে৷ ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, মেসি আর নেইমার – এই তিন মায়েস্ত্রোর দিকে চোখ ছিল সবার৷ কিন্তু দু-একটা ম্যাচের পরই সবার মনে হয়েছে, না, চোখ অন্যদিকে ঘোরাতে হবে!
রোনাল্ডোর শুরুটা স্বপ্নময় ছিল, স্পেনের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক দিয়ে৷ কিন্তু এরপর থেকেই ম্রিয়মান হতে থাকেন তিনি৷ যদিও একা কতটা টানবেন দলকে, সে প্রশ্নও আছে৷ তবে প্রথম ম্যাচের মতো তাঁকে পরের ম্যাচগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
এদিকে, আর্জেন্টাইন সমর্থকদের বড় আশা ছিল যে, ৩২ বছরের খরা এবার কাটবে৷ কাটাবেন তাঁদের ভরসা মেসি৷ কোচেরও ভরসা ছিলেন মেসি৷ কিন্তু মেসিকে যেন তাঁর ছায়াই মনে হচ্ছিল৷ যদিও ফ্রান্সের বিপক্ষে আশা জাগানিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি৷ কিন্তু এমবাপ্পের গাঢ় নীলের আলোকছটায় তাঁর আকাশি রং আরো ফিকে হয়ে যায়৷
বিশ্বকাপ ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট, মাক্রোঁ ও পুটিন
বিশ্বকাপ ফাইনালে সবার চোখ থাকবে মাঠে, এটাই খুব স্বাভাবিক৷ কিন্তু এবার গ্যালারিতেও বার বার চলে যাচ্ছিলো ক্যামেরার চোখ৷ গ্যালারিতে পুটিনের পাশাপাশি ছিলেন ক্রোয়েশিয়ার সুন্দরী প্রেসিডেন্ট এবং ফ্রান্সের সুদর্শন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
অভিবাদন
রোববার রাতে ৪-২ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে ২০ বছর পর আবার বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে ফ্রান্স৷ ম্যাচের আগে দুই দলের সফলতা কামনা করে একে অপরকে অভিবাদন জানাচ্ছেন ফাইনালের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রান্স আর ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ আর কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচ৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
আত্মঘাতী গোলের পর প্রতিক্রিয়া
ক্রোয়েশিয়ার আত্মঘাতী গোলের পর হতাশ সে দেশের প্রেসিডেন্ট৷ এ সময় সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলেন স্বামী ইয়াকভ কিটারোভিচ৷
ছবি: Reuters/D. Martinez
পেনাল্টিতে গোল
ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারের হাতে বল লাগার পর পেনাল্টিতে গোল দেয় ফ্রান্স৷ সেই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে ভিআইপি গ্যালারিতে, প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর মাঝেও৷
শিরোপার স্বপ্ন পূরণ হয়নি, কিন্তু লুকা মদ্রিচরা ক্রোয়েশিয়াকে এনে দিয়েছেন ইতিহাসের সেরা সাফল্য৷ পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলার জন্য মদ্রিচ পেয়েছেন গোল্ডেন বল৷ আর তাই প্রেসিডেন্ট উষ্ণ আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরেন মদ্রিচকে৷
ছবি: Reuters/
পরের বার হবে হয়ত
এবারের বিশ্বকাপে আয়োজক দেশ রাশিয়া শিরোপা না জিতলেও অনেক দূর গিয়েছিল৷ পুটিন যেভাবে কাপটি ছুঁয়ে দেখছেন তাতে মনে হচ্ছে তিনি মনে মনে যেন বলছেন, ‘‘এবার হয়নি, কিন্তু পরের বার এই কাপ আমাদের হবে৷’’
ছবি: Reuters/
10 ছবি1 | 10
নেইমারও হতাশ করেছেন ব্রাজিল সমর্থকদের৷ যদিও কখনো কখনো তিনি অপার্থিবও হয়ে উঠছিলেন তাঁর নৈপুণ্য আর কৌশলে৷ কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই কিছুদিন আগের পিএসজি'র নেইমারকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না৷ বরং আরো বিতর্কিত হলেন তাঁর অভিনয়ের কারণে৷
কিন্তু এই বিশ্বকাপ চিনিয়েছে এমবাপ্পেকে৷ বলের পেছনে এই টিনএজ দৌঁড়ান বোল্টের চেয়েও জোরে৷ স্কিলও আছে৷ আছে বিগ ম্যাচ টেম্পারামেন্ট৷ যেমন, তিনি জ্বলে উঠেছিলেন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে৷ গোল করেছেন ফাইনালে৷ বুঝিয়েছেন যে তিনি ফ্লুক নন৷ লম্বা রেসের ঘোড়া৷
একইভাবে, লুকা মদ্রিচের বুকে জ্বলজ্বলে আরেকটি তারকা জুড়ে দিল এই বিশ্বকাপ৷ ক্রোয়েশিয়া দলে তিনি ছিলেন খেলনার চাবি৷ তিনি ঘুরলেই ক্রোয়েশিয়া এগোতো সামনের দিকে৷ সেন্ট্রাল মিডফিল্ড থেকে যেভাবে গোল করিযেছেন কিংবা নিজে করেছেন, তা এক কথায় অতিমানবীয়৷ শুধু দলকে সেরা মুকুটটা পরাতে পারলে হয়তো সব কষ্ট ভুলে যেতেন৷ তারপরও ফিফা যোগ্য সম্মান তাঁকে দিয়েছে৷ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল উঠেছে তাঁর হাতে৷
তবে গোল্ডেন বুট যাঁর ঘরে গিয়েছে, তিনি তাঁর বিষয়ে প্রশ্ন করছেন তাঁর দেশের লোকেরাই৷ বলছি, হ্যারি কেনের কথা৷ পানামা বা টিউনিশিয়ার জন্য তিনি ‘ভয়ঙ্কর' হয়ে উঠলেও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তাঁকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি৷ বরং ‘ওয়ার্ল্ডকাপ কামিং হোম' বলে বলে যাঁরা গলা ফাটিয়েছেন, তাঁদের কাছে শূন্য হাতে ফিরেছেন তিনি৷ ভুল বললাম, গোল্ডেন বুট ঘরে নিয়ে গেছেন তিনি৷
অবশ্য গোলরক্ষকদেরও মনে রাখবে এবারের বিশ্বকাপ৷ পেনাল্টি শুটআউটে স্পেনকে বিদায়ের দিন রাশিয়ার গোলরক্ষক আকিনফ্যিফের পড়ে গিয়েও পা দিয়ে লাথি মেরে বল আটকে দেয়ার মুহূর্তটুকু কে ভুলতে পারবে?
কিংবা ওচোয়া, কোর্তোয়া, শ্মাইকেল, সুবাসিচ, কাওয়াশিমা, জমারদের দুর্দান্ত সব সেভগুলো কি মনে দাগ কেটে থাকবে না?
আরেকটি কারণে এবারের বিশ্বকাপ মন থেকে মুছতে পারবেন না কেউই৷ তা হলো, অতিরিক্ত সময়ের গোল৷ গ্রুপ পর্বেই তো অতিরিক্ত সময়ে গোল হলো ১৯টি৷ এতেই বোঝা যায়, খেলার মোড় যে পরতে পরতে ঘুরেছে, তা ভোলার নয়৷
এছাড়া যুক্ত হয়েছে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআর প্রযুক্তি৷ এ প্রযুক্তি অনেকাংশেই খেলার স্বচ্ছতা বাড়িয়েছে৷ অনেক খেলার ফলাফলই বদলে গেছে এই প্রযুক্তির কারণে৷ এমনকি ফাইনালেও দেখুন, পেরিসিচের হ্যান্ডবলটি না হলে খেলার চূড়ান্ত ফলাফল অন্যকিছুও হতে পারতো৷
সব মিলিয়ে এক স্বপ্নের বিশ্বকাপ৷ ফ্রান্স হেসেছে শেষ হাসি৷ ক্রোয়েশিয়াও হেসেছে মন খারাপের হাসি৷ কিন্তু আরো হেসেছেন কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী৷ হৃদয়ও ভেঙেছে তাঁদের অনেকের৷
সে যা-ই হোক, ফুটবল তো আর শুধু খেলা নয়৷ ফুটবল একটা জীবনপদ্ধতি৷ ফুটবল একটা অনুভূতি৷ সেই অনুভূতির চুড়ান্ত রূপ বিশ্বকাপ৷ তার প্রকাশ তো এমনই হবে৷
তবে কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, শেষ হাসি ফ্রান্সের নয়, পুটিনের!
বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮-এর শিরোপা ঘরে তুলেছে ফ্রান্স৷ ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট পড়েছে তারা৷
ছবি: Reuters/C. Hartmann
গোল্ডেন বল
রাশিয়া বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় কে? কয়েকজনের নাম আসতে পারে৷ যেমন, বেলজিয়ামের হ্যাজার্ড, ফ্রান্সের এমবাপ্পে কিংবা গ্রিসমান৷ কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন যিনি, তিনি লুকা মদ্রিচ৷ ক্রোয়েশিয়ান ‘নাম্বার টেন’ তাই এবার জিতেছেন গোল্ডেন বল৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Hertzog
গোল্ডেন বুট
ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে হেরেছে ক্রোয়েশিয়ার কাছে৷ এরপর তৃতীয় নির্ধারণী ম্যাচেও হেরেছে বেলজিয়ামের কাছে৷ এই দুই ম্যাচে কোনো গোল করেননি ইংলিশ ফরোয়ার্ড হ্যারি কেন৷ এমনকি সুইডেনের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে জয়ের দিনও কোনো গোল পাননি তিনি৷ কিন্তু তার আগেই করে ফেলেছেন ছয় গোল, যা আর কেউ টপকাতে পারেননি৷ তাই তিনি জিতেছেন গোল্ডেন বুট৷
বলাই বাহুল্য এই কৃতিত্বের ভাগীদার একমাত্র ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার এমবাপ্পেই৷ ৭ ম্যাচে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ গোল করেছেন৷ একইসঙ্গে পেলের পর তিনিই একমাত্র টিনএজার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন৷
ছবি: REUTERS
ফেয়ার প্লে
ফিফা ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ডটি ঘরে তুলেছে স্পেন৷ রাশিয়ার কাছে হেরে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে বিদায় নিলেও এই স্বীকৃতি সান্তনা হয়ে থাকবে টিকি-টাকাদের৷