সন্দেশখালির ঘটনায় পুলিশ মূল অভিযুক্ত শাহজাহান শেখকে কেন ধরতে পারছে না, এই প্রশ্ন উঠছে। পুলিশি তদন্ত নিয়ে ক্ষুব্ধ ইডিও।
বিজ্ঞাপন
৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতির তদন্তে গিয়ে সন্দেশখালিতে আক্রান্ত, রক্তাক্ত হন ইডি আধিকারিকরা। তারা উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিলেন।
লঘু ধারায় ক্ষোভ
গত শুক্রবারের ঘটনায় সন্দেশখালি থানায় অভিযোগ দায়ের করে ইডি। খুনের চেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু পুলিশের ভূমিকায় খুশি নয় কেন্দ্রীয় সংস্থা।
ইডি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, "তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ শাহাজাহানের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা–সহ একাধিক অভিযোগ থাকলেও, লঘু ধারায় মামলা দায়ের করেছে রাজ্য পুলিশ। খুনের চেষ্টার ধারা দেওয়া হয়নি। বেশিরভাগই ধারাই জামিনযোগ্য।"
পুলিশের নবনিযুক্ত ডিজি রাজীব কুমার বলেছেন, অপরাধী যে-ই হোক, কাউকে ছাড়া হবে না। কিন্তু ইডির উপর হামলাকারী কেউ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। একই ভাবে ঘটনার পর প্রায় ১০০ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও অধরা মূল অভিযুক্ত শাহজাহান।
বিস্ফোরক প্রবীণ মন্ত্রী
তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ কার্যত শাহজাহানের পাশেই থাকছেন। বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন মমতা সরকারের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
ইডির বিরুদ্ধে অভিষেক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাম, চাকুরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ
কলকাতায় রাজভবনের বাইরে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডি-সিবিআই ও অভিষেকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখালো সিপিএম। তার কিছুটা দূরেই হবু শিক্ষকরা প্রায় তিন বছর ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রাজভবনের সামনে
কলকাতায় রাজভবনের সামনে মঞ্চ তৈরি করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতেই তিনি রাজভবন অভিযানের ঘোষণা করেছিলেন। বুধবার সেই অভিযানও করেন। কিন্তু রাজ্যপাল তখন কলকাতা ছিলেন না। অভিষেক ঘোষণা করেন, রাজ্যপাল না আসা পর্যন্ত তারা ওখানেই অবস্থান করবেন। দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে হেনস্থা ও ইডি-সিবিআই যেভাবে কাজ করছে, তার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বন্যা দেখতে রাজ্যপাল
অভিষেক যখন রাজভবন অভিযান করছেন, তখন রাজ্যপাল বন্যা পরিস্থিতি দেখতে উত্তরবঙ্গে। সেখান থেকে তিনি দিল্লি চলে যান। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তিনি কলকাতা ফেরেননি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভিষেক বিক্ষোভে
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখনো বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন। রাতে তিনি বিক্ষোভস্থলের পিছনে চলে যান। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ তিনি আবার মঞ্চে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা না করে তিনি যাবেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রচুর পুলিশ মোতায়েন
বিক্ষোভস্থলে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে রাজভবনের সামনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কী করে মঞ্চ করে বিক্ষোভ দেখানোর অনুমতি দেয়া হলো, সে প্রশ্নও তুলছেন বিরোধীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভিষেকের মঞ্চে নেতা-মন্ত্রী
অভিষেকের মঞ্চে তৃণমূলের প্রচুর নেতা-মন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে। সেখানে গান-বাজনাও হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কাছেই শিক্ষক-প্রার্থীদের বিক্ষোভ
অভিষেক যেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গত প্রায় তিন বছর ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের কথা তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য কানে নেন না বলে বিক্ষোভকারীদের দাবি। তারা সকলেই শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষায় পাস করেছেন। কিন্তু দুর্নীতির জন্য চাকরি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এখনো বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন
তারা এখনো বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। হাতে পোস্টার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তারা। তাদের বক্তব্য, রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে অভিষেক দিল্লি গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, কলকাতায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তারাও তো এতদিন ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কথা কেউ শোনে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিপিএমের প্রতিবাদ
সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, অন্য রাজ্যে ইডি-সিবিআই দুর্নীতির নামে বিরোধী দলের নেতাদের হেনস্থা করছে। আর পশ্চিমবঙ্গে তারা দুর্নীতির চাঁইদের ছেড়ে রাখছে। সেজন্যই সিজিও কমপ্লেক্সে অভিযানের ডাক দিয়েছিল সিপিএম। সেখানে কর্মী-সমর্থদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিপিএমের প্রচার
এই বাম দল বেশ কিছুদিন বলো বিজেমূলের তত্ত্ব সামনে এসেছে। এর অর্থ, বিজেপি ও তৃণমূল আসলে গোপনে হাত মিলিয়ে চলেছে। বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেবরা সমাবেশে এই অভিযোগই করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া জোট নয়
সিপিএম আগেই জানিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে তারা তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাবে না। এখানে বিরোধীদের জোট হবে না। ভোটের আগে তারাও দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করে রাস্তায় নেমে পড়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
মন্ত্ৰী বলেন, "ক্যাগ রিপোর্টে কেন্দ্রের লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি ধরা পড়েছে। তার কাছে শাহজাহান কিছুই না। একটা জায়গায় প্রতিরোধ হয়েছে, এর পর কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে জনবিস্ফোরণ হবে। ওদের ইডি থাকলে, আমাদের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আছে।"
সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, "মন্ত্রীর বক্তব্য শুনেই বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূল শাহজাহানের পাশে আছে। তাই তাকে ধরা হচ্ছে না। সন্দেশখালির মতো হিংসাকে তৃণমূল সমর্থন করছে। অন্য জায়গায় যাতে একই ঘটনা ঘটে, তার প্ররোচনাও দিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা।"
মন্ত্রীর মন্তব্যে ভবিষ্যতে আরো উত্তেজনার ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করছে বিরোধীরা। পশ্চিমবঙ্গে একাধিক দুর্নীতির তদন্ত চালাচ্ছে ইডি। চলতি পরিস্থিতিতে কৌশল কী হবে, তা ঠিক করতে আলোচনা করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। ইডি ডিরেক্টর রাহুল নবীন সোমবার মাঝরাতে কলকাতা পৌঁছন। আজ এখানকার ইডি কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।
পাল্টা দুর্নীতির তাস
চড়া আক্রমণের পাশাপাশি দুর্নীতির তীরে পাল্টা ইডিকে বিঁধতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখপাত্র কুণাল ঘোষের অভিযোগ, সেদিনের অভিযানে অংশ নেয়া ইডির উচ্চপদস্থ আধিকারিক রাজকুমার রামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে।
তৃণমূলের দাবি অনুযায়ী, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি থাকার অভিযোগে এফআইআর হয়। সিবিআই এর তদন্ত করছে। বেঙ্গালুরুতে নিযুক্ত থাকাকালীন রামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। পরে তাকে গুয়াহাটি শাখায় বদলি করা হয়। সেখান দুর্নীতির তদন্তে কলকাতায় এসেছেন রাম।
কলকাতায় ইডি হানা দিলেই মিলছে টাকার পাহাড়
পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া গিয়েছিল ৫২ কোটি। এবার কলকাতায় ব্যবয়াসীর বাড়ি থেকে ১৭ কোটি পেল ইডি। এর আগে হালিশহরের পুরপ্রধান রাজু সাহনির বাড়ি থেকে পাওয়া গেছিল ৮০ লাখ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ব্যবসায়ী আমির খানের বাড়ি
কলকাতার গার্ডেনরিচে ব্যবসায়ী নিসার আহমেদ খানের ছেলে আমির খানের বাড়ি থেকে উদ্ধার হলো ১৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগে থেকে খবর পেয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ইডি)-এর কর্মীরা আমির খানের বাড়ি, অফিস মিলিয়ে ছয় জায়গায় হানা দেয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাশি রাশি নোট
আমির খানের খাটের তলায় প্লাস্টিকের প্যাকেটে টাকা রাখা ছিল। সেই রাশি রাশি নোট উদ্ধার করে ইডি। বেশিরভাগ ৫০০ টাকার নোট। দুই হাজার ও দুইশ টাকার নোটও ছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
টাকা গুনতে মেশিন
টাকা গোনার জন্য স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার কর্মকর্তাদের সাহায্য নেয় ইডি। সেখান থেকে আসে টাকা গোনার মেশিন। আসেন ব্যাংক কর্মীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে টাকা গোনা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কে এই আমির খান?
আমির খান ও তার সহযোগীরা মিলে একটি গেম অ্যাপ চালাত। 'ই নাগেটস' নামে এই মোবাইল গেমিং অ্যাপের সাহায্যে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিত তারা। গ্রাহকরা গেম খেললে কমিশন পেতেন। অ্যাপের ওয়ালেট থেকে কমিশনের টাকা তুলতে পারতেন। তার জন্য ওয়ালেটে টাকা রাখতে হত। বেশি কমিশন পাওয়া যাবে ভেবে গ্রাহকরা প্রচুর টাকা সেখানে রাখতেন। তারপর সেই টাকা হাতিয়ে নেয়া হত বলে ইডি সূত্র জানাচ্ছে। অনেক ভুয়া অ্যাকাউন্টের খোঁজ মিলেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এর পিছনে কারা?
আমির খানের সঙ্গে এখনো কোনো রাজনৈতিক দলের যোগাযোগের কথা সামনে আসেনি। কিন্তু রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, রাজনীতিক থেকে ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে কী করে এভাবে কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে? এভাবে উদ্ধার করা টাকার পাহাড় কলকাতা আগে দেখেনি। তৃণমূল বলছে, বিজেপি কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে রাজ্যের ব্যবয়াসীদের টার্গেট করছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মন্ত্রীর বক্তব্য
গার্ডেনরিচ হলো রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের এলাকা। প্রথমে ফিরহাদ বলেন, ''বন্দর এলাকা বলেই ব্যবসায়ীদের চেনা র দায় কি আমার নাকি? ইডি রাজ্যের ব্যবসায়ীদের টার্গেট করছে।'' একদিন পরেই তিনি সুর বদল করে বলেন, ''ইডি তার কাজ করবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।''
ছবি: picture-alliance/ZumaPress
বাড়ির মানুষ
তল্লাশি চালানোর সময় বাড়ির মানুষ তা দেখার চেষ্টা করেন। এক নারী তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তবে বাড়ির মানুষ এই টাকা নিয়ে মুখ খোলেননি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী
ইডি যখন তল্লাশি চালাচ্ছিল, তখন বাইরে মোতায়েন করা হয়েছিল সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী। স্থানীয় মানুষ সেখানে আসেন। কিন্তু কেউই কিছু বুঝতে পারছিলেন না। পরে এত টাকা উদ্ধার হয়েছে জেনে তারা অবাক।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সংবাদমাধ্যমের ভিড়
বাড়ির সামনে ছিল সংবাদমাধ্যম বিশেষ করে টিভির সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের ভিড়। কেউ মুখ খুললেই তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ছিলেন তারা। তাদের প্রশ্ন ছিল, কী করে এত টাকা পাওয়া গেল? ইডি কীভাবে জানল এই টাকার কথা? এর সঙ্গে কি কোনো রাজনৈতিক যোগ আছে? এই সব প্রশ্নের জবাব এখনো পাওয়া যায়নি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
9 ছবি1 | 9
শাহজাহান কোথায়?
তৃণমূলের দাপুটে নেতা কোথায় আছেন, তা নিয়ে বিস্তার জল্পনা চলছে দিন চারেক ধরে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান হাজি সিদ্দিকি মোল্লা দাবি করেছেন, ঘটনার পর এলাকাতেই তার সঙ্গে শাহজাহানের দেখা হয়েছিল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, এই প্রধানের বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন ফেরার শাহজাহান।
শাহজাহানের ভাই শেখ আলমগির ইডির উপর হামলার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত। মঙ্গলবারও তিনি টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে এসে বক্তব্য রেখেছেন। আলমগির বলেন, দাদা কোথায় আছেন সেটা তার জানা নেই। ফোনেও যোগাযোগ করতে পারছেন না।
বিরোধীদের প্রশ্ন, সাংবাদিকরা যার নাগাল পাচ্ছেন, তাকে কেন এখনো গ্রেপ্তাত করতে পারল না পুলিশ? তা হলে কি শাহজাহান সন্দেশখালিতে থাকলেও তাকে ধরা হচ্ছে না?
পুরনো মামলার ফাঁস
শাহজাহানের উপর চাপ আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা। শুধু সন্দেশখালির সাম্প্রতিক ঘটনাই নয়, ফিরে আসছে ২০১৯ সালের হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি।
সেই বছর জুনে তিন বিজেপি কর্মীকে খুনের অভিযোগ ওঠে শাহজাহানের বিরুদ্ধে। প্রদীপ, সুকান্ত ও দেবদাস মন্ডলকে হত্যা করে দেহ লোপাটের অভিযোগও উঠেছিল। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "প্রদীপ মন্ডলের চোখে গুলি করেছিল। দেবদাস মন্ডলের দেহ আজো পাওয়া যায়নি। সেই শাহজাহানকে পুলিশ ধরবে না। পুলিশকে ওই নেতাই চালান। তাই সন্দেশখালিতে নিজের সাম্রাজ্যের মধ্যেই পুলিশের তত্ত্বাবধানে তিনি রয়েছেন।"
এই হত্যা মামলা ফের শুরু করে, সিবিআইকে তদন্তভার দেয়ার আর্জি জানিয়েছে নিহতদের দুই পরিবার। তাদের দাবি, সিআইডির চার্জশিটে শাহজাহানের নাম ছিল। পরে তার নাম বাদ দেয়া হয়। হাইকোর্ট মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে। চলতি সপ্তাহে শুনানি শুরু হতে পারে।
প্রবীণ সাংবাদিক দেবাশিস দাশগুপ্ত বলেন, "ভারতেএমন ঘটনা হয়তো আরও পাওয়া যেতে পারে। অতীতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ তার টিকি ছুঁতে পারেনি। এবারও একই দৃশ্য। শাসকের প্রশ্রয়ে তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।"
তৃণমূলের জেলা কোর কমিটি সোমবার শাহজাহানকে মৎস্য কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এটাকে 'আইওয়াশ' বলেই মনে করছেন দেবাশিস।
সন্দেশখালি বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। সেখানে গতবার সহজেই জিতেছিল তৃণমূল। তাতে সুন্দরবন লাগোয়া প্রত্যন্ত সন্দেশখালির বড় ভূমিকা ছিল। লোকসভা নির্বাচনের আগে সারা রাজ্যের নিরিখে চলতি ঘটনাবলীর কী তাৎপর্য রয়েছে?
রবিবার সিপিএমের যুব সংগঠনের ব্রিগেড উদ্দীপনা দেখেও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভাশিস মৈত্র বলেন, "শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশে ভোট দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। একদল বিজেপির পক্ষে। বিজেপি বিরোধীরা কোনো একটি শক্তিশালী প্রার্থীকে বেছে নিচ্ছেন। এই রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপির লড়াই দেখা যাবে। সাগরদিঘি ছাড়া সাম্প্রতিক সব উপনির্বাচন এটাই দেখিয়ে দিয়েছে।"