গত সপ্তাহে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ'র প্রধান দপ্তরে যান ভারতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত ওয়াল্টার লিন্ডনার৷ কেন হঠাৎ হিটলার-প্রেমী এই সংগঠনের সাথে এই সাক্ষাৎ?
বিজ্ঞাপন
ভারতের ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ' বা ‘আরএসএস' বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন৷ মোট সদস্য সংখ্যা ৬ লক্ষেরও বেশি৷ হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শে চালিত বিশাল এই সংগঠনের সাথে চিরকালই লেগে রয়েছে চরমপন্থি হিন্দু জাতীয়তাবাদের তকমা৷
শুধু তাই নয়, সংঘের প্রথম ‘সরসংঘচালক' বা প্রধান এম এস গোলওয়ালকর বা অন্যতম নেতা ভি ডি সাভারকর বারবার প্রকাশ্যে জানিয়েছেন এই সংগঠনের ‘হিটলার'-প্রীতির কথা৷ তবুও গত ১৭ জুলাই ভারতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত ওয়াল্টার জে লিন্ডনার নাগপুরে আরএসএসের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে বর্তমান সরসংঘচালক মোহন ভাগবতের সাথে দেখা করেন৷
একটি টুইটে তিনি সে কথা জানালে, জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাথে তথাকথিত হিটলারপ্রেমী এই সংগঠনের নেতার দেখা হওয়া নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন পড়ে গেছে৷
এই সাক্ষাতের সমালোচনা করছেন ভারতের সাংবাদিক, সমাজকর্মী থেকে সাধারণ জনতার অনেকে৷
‘দ্য ওয়ার' নিউজ পোর্টালের প্রধান সিদ্ধার্থ ভাটিয়া জানান, ‘‘আরএসএসের এই হিটলার-প্রেম কোনোদিনই গোপন ছিল না৷ সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের নামে ইহুদিদের ওপর নির্যাতনের বারবার প্রশংসা করেছেন সাভারকর-গোলওয়ালকর৷''
উল্লেখ্য, এই আরএসএসেরই রাজনৈতিক দল ভারতে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা ভারতীয় জনতা পার্টি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিজেপির অনেক নেতাই ছিলেন ‘হিন্দু স্বাভিমান' নিয়ে লড়া এই সংঘের সাথে জড়িত৷
লিন্ডনারের পদত্যাগ চেয়ে...
জার্মান রাষ্ট্রদূত লিন্ডনার নাগপুরে আরএসএস নেতৃত্বের সাথে দেখা করার পর পিটার ফ্রিডরিশ একটি অনলাইন আবেদন শুরু করেছেন৷ সেই আবেদনে সই সংগ্রহের মাধ্যমে লিন্ডনারের পদত্যাগ চাইছেন জার্মানিতে দক্ষিণ এশীয় রাজনীতির এই গবেষক৷
পিটার জানান, ‘‘লিন্ডনারের এই সাক্ষাৎ আসলে ভারতে গড়ে ওঠা হিন্দুত্ববাদ বা হিন্দু ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থনের আভাস৷'' এবিষয়ে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাসের হস্তক্ষেপ দাবি করেন ফ্রিডরিশ৷
কেন এইসাক্ষাৎ?
ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘দ্য হিন্দু'কে একটি সাক্ষাৎকারে লিন্ডনার আরএসএসের সাথে বৈঠক বিষয়ে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন৷ সেখানে তিনি বলেন যে বর্তমান ভারতে আরএসএস বা হিন্দু জাতীয়তাবাদের উপস্থিতিকে অস্বীকার করার মতো বাস্তবতা এখন নেই৷
ভারতে জার্মান রাষ্ট্রদূত হিসাবে কর্মভার সামলানোর সবে দু'মাস পেরিয়েছে লিন্ডনারের৷ এ অবস্থায় তাঁর নাগপুর-ভ্রমণ শুধুই ছিল বর্তমান ভারতের সাংস্কৃতিক গঠনকে বুঝতে চেয়ে একটি প্রয়াস, যা অনেকেই হয়ত ভুলভাবে উপস্থাপন করছে, বলে জানান তিনি৷
বিজেপিকে চিনে নিন
ভারতে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি৷ বর্তমানে জাতীয় ও রাজ্যস্তরে সর্বাধিক প্রতিনিধিত্ব রাখা দলটি সদস্য সংখ্যায় বিশ্বের বৃহত্তম৷ ঐতিহাসিকভাবে হিন্দু-জাতীয়তাবাদী অবস্থানের বিজেপির গল্প এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. K. Singh
আদর্শগত উৎস
বিজেপিকে চিনতে হলে ‘সংঘ পরিবার’-এর অন্তর্গত হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির উৎস আরএসএস অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে জানা দরকার৷ বিশ্বের বৃহত্তম এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মারাঠি চিকিৎসক কেশব হেডগেওয়ার৷ ১৯২৫ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি৷ ভি ডি সাভারকরের ‘হিন্দুত্ব’ চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণই আরএসএস-এর প্রধান উদ্দেশ্য৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে দূরত্ব
কংগ্রেসের নেতৃত্বে চলা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে দূরে ছিল আরএসএস৷ ১৯৪০-এর দশকে সংগঠনের নেতা হিসেবে এম এস গোলওয়ালকর হিন্দু রাষ্ট্র গড়তে ব্রিটিশ বিরোধিতার বদলে ধর্ম ও সংস্কৃতি রক্ষার ডাক দেন৷ উল্লেখ্য, পরবর্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়া অটলবিহারী বাজপেয়ী ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় সত্যাগ্রহীদের সাথে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন৷ লিখিত মুচলেকা দিয়ে আন্দোলনে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে ছাড়া পান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M.Desfor
দেশভাগ ও আরএসএস
দেশভাগের সময় আরএসএস পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে আসা হিন্দু উদ্বাস্তুদের সাহায্য করে৷ আরএসএস ও বর্তমানের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কর্মীরা মনে করেন, দেশভাগ মুসলিমদের প্রতি নরম আচরণের ফল৷ এজন্য গান্ধী ও নেহরুকে বিশেষভাবে দায়ী মনে করেন তাঁরা৷ স্বাধীনতার পর কংগ্রেসকে ঠেকাতে ১৯৫১ সালে জনসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ সেই জনসংঘই আসলে বিজেপির উৎস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জরুরি অবস্থা ও জনতা পার্টির জন্ম
১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেন৷ বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে জনসংঘের অসংখ্য সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থা শেষে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন৷ কংগ্রেসকে হারাতে অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলে যায় জনসংঘ, জন্ম নেয় জনতা পার্টি৷ নির্বাচনে জিতেও যায় জনতা পার্টি৷ প্রধানমন্ত্রী হন মোরারজি দেশাই৷ স্বাধীন ভারতে সূচিত হয় হিন্দুত্ববাদীদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ জয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজেপির জন্ম
১৯৮০’র পর দল ও আরএসএসের দ্বৈত সদস্য হবার বিধান না থাকায় জন্ম নেয় ভারতীয় জনতা পার্টি৷ নতুন দলে নতুন সদস্য যোগ দিলেও, গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল পুরোনোদের দাপট৷ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন বাজপেয়ী৷ মূলত, ইন্দিরা হত্যার পর ভোটে খারাপ করার কারণেই নেতৃত্বে এই পরিবর্তন৷ তবে বিজেপির উত্থান শুরু ১৯৮৪ সালে৷ সে বছর দলের সভাপতি হন লালকৃষ্ণ আডবানি৷ রাম জন্মভূমির দাবিকে ঘিরে তাঁর নেতৃত্বেই শক্তিশালী হতে থাকে বিজেপি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Raveendran
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও বাবরি মসজিদ
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই বিজেপি সরাসরি ধর্মের রাজনীতিতে নামে৷ বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির গঠনের দাবিতে সারা দেশ থেকে অযোধ্যার পথে রওয়ানা দেয় হাজার হাজার ‘করসেবক’৷ পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে উত্তেজিত জনতা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে৷ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হন দু’ হাজারেরও বেশি মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/D .E. Curran
সরকার গঠন ও জোটের রাজনীতি
সাম্প্রদায়িক আবেগকে হাতিয়ার করে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি ১৬১টি লোকসভা আসনে জয়ী হয়৷ প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন অটলবিহারী বাজপেয়ী৷ কিন্তু ১৩ দিন পর, লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার গঠন করতে পারেনি বিজেপি৷ ১৯৯৬ সালে আঞ্চলিক দলগুলির একটি জোট সরকার গঠন করে৷ কিন্তু সেই সরকারের স্থায়িত্ব দীর্ঘ হয়নি৷ ১৯৯৮ সালে আবার নির্বাচন হয়৷
ছবি: UNI
প্রথম এনডিএ সরকার
নির্বাচনে জিতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকার গড়ে৷ জোটে অংশগ্রহণ করে সমতা পার্টি, অকালী দল, শিব সেনা, নিখিল ভারত আন্না দ্রাবিড় মুন্নেত্র কড়গম (এআইএআইডিএমকে), বিজু জনতা দল ও শিব সেনা৷ ১৯৯৯ সালে তাঁরা সংসদে ৩০৩টি আসন জিতলে বাজপেয়ী তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন৷ পাঁচ বছরের পূর্ণমেয়াদী এই জোট সরকার প্রতিরক্ষা ও সন্ত্রাসের মোকাবিলার পাশাপাশি নব্য-উদার অর্থনীতির ওপর জোর দেয়৷
ছবি: Imago/photothek/T. Koehler
দুর্নীতি ও দাঙ্গায় কোণঠাসা বিজেপি
বিজেপির জয়রথে প্রথম ‘বাধা’ গোধরা দাঙ্গা৷ তীর্থযাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন লাগাকে ঘিরে প্রায় ২০০০ মানুষ মারা যান৷ তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি নেতার নাম এই দাঙ্গার সাথে জড়ায়৷ বিজেপি-প্রধান বঙ্গারু লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ৷ সব মিলিয়ে বিপন্ন বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট ২০০৪ সালে নতুন সরকার গড়ে৷ প্রধানমন্ত্রী হন মনমোহন সিং৷
ছবি: AP
নেতৃত্বে কে? মোদী, না আডবাণী?
২০১৪’র লোকসভা নির্বাচনে জেতার পর নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে বিজেপি৷ অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দলের নেতৃত্বের দায়ভার বর্ষীয়ান নেতা এল কে আডবানির ওপর বর্তানোর কথা উঠলেও, বাস্তবে তা হয়নি৷
ছবি: AP
মোদীর উত্থান
বিজেপির ইতিহাসে ব্যক্তিকেন্দ্রীক নির্বাচনী প্রচার মোদীর ক্ষেত্রেই প্রথম৷ পূর্ববর্তী সরকারের দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে মোদীর ‘গুজরাট মডেল’-কে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা হয় প্রচারে৷ সুবক্তা মোদী শীঘ্রই হয়ে ওঠেন তরুণ প্রজন্ম থেকে সংবাদমাধ্যম, সকলের প্রিয়পাত্র৷ নির্বাচনের আগে বিজেপি হিন্দু জাতীয়তাবাদকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে গেলেও, মোদীর প্রাক-নির্বাচন বক্তব্যের বড় অংশ জুড়েই ছিল ‘হিন্দুত্ব’৷
ছবি: picture alliance/AA/M. Aktas
মোদী থেকে ‘মোদীজি’
২০১৪ সালে বিজেপি ২৮২টি আসন জিতে ক্ষমতায় আসে৷ ভোটারদের কংগ্রেসের প্রতি অনাস্থার পাশাপাশি বিজেপির সাফল্যের আরেকটি কারণ ছিল আরএসএসের নিঃশর্ত সমর্থন৷ নরেন্দ্র মোদীই হন প্রধানমন্ত্রী৷ পিউ গবেষণা কেন্দ্রের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, প্রথম বছরের তুলনায় বর্তমানে মোদীর জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে, যা ২০১৯-র নির্বাচনে কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলির জন্যও নিঃসন্দেহে ভাবনার বিষয়৷
ছবি: Reuters
12 ছবি1 | 12
উল্লেখ্য, নাগপুরে বর্তমানে চলছে মেট্রোরেল বসানোর কাজ, যেখানে প্রচুর অর্থ লগ্নি করেছে জার্মান সরকার৷ হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের প্রাণকেন্দ্রে তাই লিন্ডনারের ভ্রমণ যে শুধুই আদর্শিক কারণে ছিল, তা বলা যাবে না৷
ভ্রমণের আদর্শগত কোনো পিছুটান না থাকলেও, লিন্ডনার আরএসএসের কর্মকাণ্ডে নাৎসি জার্মানি বা ফ্যাসিস্ত ইটালির ছোঁয়া দেখতে পেলেও ‘দ্য হিন্দু'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একবারও আরএসএসের বিপক্ষে কোনো কথা বলেননি৷ তাঁর মতে, ভারতে হিন্দুত্ববাদী চিন্তা ও রাজনীতি গোটা বিষয়টাই তাঁর কাছে এখনও ‘অপরিষ্কার অথচ ইন্টারেস্টিং'৷
সম্প্রতি, ২০ জুলাই ‘অপারেশন ভ্যালক্যুরি'র (সাবেক নাৎসি কর্ণেল ক্লাউস ফন স্টাওফেনব্যের্গের হিটলারকে মারার পরিকল্পনা) ৭৫ বছর পূর্ণ হলো৷ এই উপলক্ষে জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল রাষ্ট্রীয় পরম্পরায় শ্রদ্ধা জানান ফন স্টাওফেনব্যের্গকে৷
যে জার্মান সরকার হিটলারকে মারার পরিকল্পনার রাষ্ট্রীয় উদযাপন করে, ‘সাচ্চা দেশপ্রেমিক' নাম দেয় স্টাওফেনব্যের্গকে, সেই সরকারেরই রাষ্ট্রদূত যখন ভারতে হিটলার-প্রেমী সংগঠনের জন্য প্রকাশ্যে একটিও নিন্দাবাক্য উচ্চারণ করেননা, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য৷