মাল্টা দ্বীপের রান্না, তা-তে ‘কেপার' থাকবে না? আর ‘বাস' নামের স্থানীয় মাছ কি ওভেনে ভাপানো বেগুন ‘ভর্তা' দিয়ে খাওয়া যায়? এ সব রান্না শেখা যায় মাল্টার ‘‘ইল কার্তেল'' রেস্টুরেন্টের শেফ ফিলিপ স্পিতেরি-র কাছ থেকে৷
বিজ্ঞাপন
গোজো হলো মাল্টা দ্বীপপুঞ্জের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ৷ দ্বীপটি মাল্টার ‘‘সবজি বাগান'' বলেও পরিচিত৷ ‘‘ইল কার্তেল'' রেস্টুরেন্টে শুধুমাত্র স্থানীয় শাক-সবজি, মাছ-মাংস দিয়ে রান্না করা হয়৷ ফিলিপ স্পিতেরি ১৯৭৩ সাল থেকে এই রেস্টুরেন্টের মালিক এবং প্রধান কুক৷ প্রতিদিন ভোরে তিনি টাটকা আনাজ সংগ্রহ করেন৷ কয়েক ঘণ্টা আগেও এই সব আনাজ মাঠেই ছিল৷ মাল্টার জল-হাওয়া ভালো: জমি উর্বর, আবহাওয়া সারা বছর ধরে নাতিশীতোষ্ণ৷ ফিলিপ স্পিতেরি বলেন:
‘‘এতে দিনটা বেশ টাটকা-টাটকা শুরু হয়৷ এটা না করলে ঠিক মুড আসে না৷ কাজেই এটা করা খুব জরুরি৷ তারপর ঠিক করতে হবে, মাংস রাঁধা হবে নাকি মাছ রাঁধা হবে৷ কাজেই রোজ সকালের এই কেনাকাটার সঙ্গে পারিপার্শ্বিকেরও একটা যোগ আছে৷....রান্নার টাটকা আনাজ দেখার সঙ্গে সঙ্গে রেসিপিটা মাথায় কাজ করতে শুরু করে৷ এখানে নানা ধরনের জিনিসপত্র পাওয়া যায়: বিশেষ কিছু একটা চোখে পড়লে ভাবি, রান্নায় এটাও দেওয়া যেতে পারে৷''
বেগুন, পেঁয়াজ দিয়ে মাছ রান্না
আজ বেগুন আর পেঁয়াজ দিয়ে মাছ রান্নার কথা ভাবছেন ফিলিপ৷ মৎস্যশিকারই গোজো-র অধিকাংশ বাসিন্দার জীবিকা৷ বহু ধরনের মাছ৷ ফিলিপ আজ কেপার সস দিয়ে ডোরা-কাটা ‘বাস' মাছ রান্না করবেন৷
রেস্টুরেন্টে যাবার আগে ফিলিপ স্পিতেরি একবার লুঞ্জিয়াটা ভ্যালি হয়ে যান৷ এখানে প্রচুর সবজির চাষ হয়, তাঁর রেস্টুরেন্টের কেপারগুলোও আসে এখান থেকে৷ গোজোর সর্বত্র বুনো কেপার গাছ, কাজেই মাল্টার রান্নায় কেপার বাদ পড়তে পারে না৷ ফিলিপ বলেন: ‘‘সে আমলে এই কেপার দিয়ে একটা সস তৈরি করা হতো৷ গ্রীষ্মের সূচনায় সস তৈরি করে তা সারা বছর রাখা চলতো৷ কাজেই আমাদের রান্নায় কেপার তো থাকবেই৷''
আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না | অন্বেষণ
04:01
ফিলিপ স্পিতেরি সুপ্রাচীন দেশি রেসিপি অনুযায়ী রাঁধেন, অর্থাৎ ভূমধ্যসাগরীয় রান্না, কিন্তু তা-তে আরব ছোঁয়া আছে৷ বেগুনগুলো একটা ছুরি দিয়ে একটু কেটে নিতে হয়, যা-তে ওগুলো ফেটে না যায়৷ তারপর সেগুলো কোনোরকম নুন-মশলা ছাড়াই ওভেনে দু'শো ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে পাকিয়ে নিতে হয়৷ এবার কেপারগুলো দিয়ে সস তৈরি, গোজো-র নানা টাটকা জড়িবুটি আর এখানকার ঝাঁঝবিহীন অলিভ অয়েল দিয়ে৷ এবার কাঁচা অলিভ, সেই সঙ্গে টাটকা পার্সলে পাতা আর বেসিল – মানে বিলিতি ধনে আর তুলসি পাতা৷ এছাড়া একটি লাল লঙ্কা এবং একটি লেবুর খোসা৷ সব কিছু একসঙ্গে ফুটিয়ে নিতে হয়৷ মাছটা এবার কোনোরকম নুন-মশলা না মাখিয়ে ছেড়ে দিতে হবে৷
রান্না শেষ৷ নরম মাছটি এবার একটি পাত্রে দেওয়া হবে; পেঁয়াজগুলোর খোসা ছাড়ানো হবে৷ তারপর অলিভ অয়েল, লবণ, গোলমরিচ, টাটকা জড়িবুটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা হবে৷
এই হলো কেপার সস দিয়ে ‘বাস' মাছ, সঙ্গে বেগুন আর পেঁয়াজ৷
বিভিন্ন দেশের খাওয়ার ধরন
খাওয়া-দাওয়া ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না৷ তবে এই খাবার খাওয়ার রীতি কিন্তু একেক দেশে একেক রকম৷ ছুরি-কাঁটাচামচ, ছুরি-চামচ, শুধু চামচ, চপস্টিক্স নাকি হাত? কোন দেশে কিভাবে খাওয়া হয় – চলুন জানা যাক এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: DW
নিজের মতো করে খাওয়া
খাবার টেবিলে বসে সুন্দর করে খাওয়াটাও যে আসলে শিখতে হয় তা বোঝা যায় যখন পাশে বা কাছাকাছি কেউ খুব এলোমেলোভাবে, শব্দ বা তাড়াহুড়ো করে খায় তখন৷
ছবি: Laurin Rinder - Fotolia
জার্মানদের খাবার টেবিল
ছবিতে দেখুন জার্মানদের খাবার টেবিল৷ তবে এটা প্রতিদিনের খাবার টেবিল নয়, একটি অনুষ্ঠানের জন্য টেবিলটি সাজানো হয়েছে৷ কাঁটাচামচ, টেবিল চামচ, ছুরি, চায়ের চামচ – এ সব কি সুন্দরভাবে সাজানো রয়েছে প্লেটের তিন দিকে৷ তাই না? কোন চামচ দিয়ে কী খেতে হয়, যেমন জার্মানিতে ডান হাতে ছুরি আর বাঁ হাতে কাঁটাচামচ ধরা হয় – তাই ঠিক সেভাবেই রাখা হয়েছে এ টেবিলে৷
ছবি: Imago
শব্দ না করে খাওয়া
খাবার টেবিলে ঠিকঠাক মতো ছুরি-কাঁটা দিয়ে খাওয়া জার্মানদের ভদ্রতার মধ্যেই পরে৷ এছাড়া মুখ দিয়ে শব্দ করে খাওয়া, ছুরি-কাঁটা ঠিক মতো ধরতে না পারা, চামচের শব্দ বেশি জোরে করা – এ সবই জার্মানদের কাছে অভদ্রতা বলে গণ্য হয়৷
ছবি: Philips
ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা
জার্মানিতে বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে ছুরি-কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়া শেখানো হয়৷ তবে ছোট বাচ্চারা অনেক সময় শুধু চামচ দিয়ে খেতেই ভালোবাসে৷ হোক তা নিজের ঘর বা আকাশে উড়ন্ত অবস্থায়৷
ছবি: vsurkov/Fotolia
এই প্রজন্মের জার্মানরা
বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েরা এ সব ব্যাপারে অনেকটাই শিথিল, অর্থাৎ পিৎসা, আলু ইত্যাদির মতো ‘ফিঙার ফুড’ হাত দিয়ে খেতেই ভালোবাসে তারা৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online
চাইনিজ
ইউরোপ-অ্যামেরিকায় খাওয়ার সময় সাধারণত সকলেই কাঁটাচামচ, ছুরি অথবা টেবলচামচ ব্যবহার করে থাকে৷ তবে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে চামচ, চপস্টিক্স বা কাঠি অথবা শুধু হাত দিয়ে খাওয়ার চল আছে৷ চীনারা খেয়ে থাকে চপস্টিক্স বা চিকন দুটো কাঠি আঙুল দিয়ে ধরে৷ কাঠি দিয়ে তুলতে সুবিধার জন্য থালায় নয়, বাটিতে খেয়ে থাকেন তাঁরা৷ অন্যদের কাছে খাওয়ার এ রীতিকে হয়ত শিল্প বলেই মনে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Chang
জাপানিজ
জাপানিরাও খাওয়ার সময় কাঠি ব্যবহার করেন৷ জাপানিদের বিশেষ খাবার ‘সুশি’ অবশ্য চাইনিজ খাবারের তুলনায় সহজেই চপস্টিক্স দিয়ে খাওয়া যায়৷ দেখলে অন্তত এমনটাই মনে হয়!
ছবি: picture-alliance/dpa
ভাতে মাছে বাঙালি
বাঙালিদের কাছে ভাত-মাছ খেতে হাত ব্যবহার না করলে মনে হয় যেন খাওয়াই হলো না, তাই না? সেকথা আর বাঙালিদের কাছে ঘটা করে বলা কিছু নেই৷
ছবি: CNC
আফ্রিকাতেও হাত দিয়ে খাওয়া
আফ্রিকার দেশগুলোতেও কিন্তু বাঙালি বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের অন্যান্য কিছু অঞ্চলের মতো হাত দিয়ে খাওয়ার চল আছে৷
ছবি: picture alliance/Godong
একসাথে বসে খাওয়া
একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করার মজা কিন্তু আলাদা৷ ছবিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে একটি অনুষ্ঠানে সবাই মিলে রোদে বসে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছেন দেখুন৷ কেমন মজা, তাই না?
ছবি: Getty Images
ইউরোপের অন্যন্য দেশের মানুষ
ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের মানুষই ছুরি, কাঁটাচামচ দিয়ে খান৷ তবে তুর্কিরা শুধু চামচ দিয়ে খেতেই পছন্দ করেন৷ তাঁদের খাবার অনেকটা বাঙালিদের মতো – টুকরো টুকরো করা মাছ, মাংস, সবজি সাথে ভাত বা নান-রুটি, যা এক হাতেই খাওয়া সম্ভব৷ ছবিটি জার্মানিতে একটি ইফতার পার্টির৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাত দিয়ে খাচ্ছেন বিদেশিরাও
প্রয়োজনে জার্মানরাও হাত দিয়ে খেতে পারেন৷ ভারতে কর্মরত এক জার্মান বললেন, ‘‘জার্মানিতে আমি ডান হাতে ছুরি আর বাঁ হাতে কাঁটাচামচ দিয়ে খেতাম, তবে বাঁ হাত ব্যবহার না করে একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু শুধু ডান হাত দিয়েও মানুষ সুন্দর করে গুছিয়ে খেতে পারে৷’’