বুধবার ভারতীয় সময় সন্ধ্য়া ছয়টা চার মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি স্পর্শ করার কথা চন্দ্রযান-৩-এর।
বিজ্ঞাপন
ভারতের মহাকাশসংস্থা ইসরো জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত সব ঠিক আছে। পরিকল্পনা অনুসারে ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদে নামবে বলে তারা শতভাগ আশাবাদী।
চাঁদের থেকে ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে বিক্রম নামার প্রক্রিয়া শুরু করবে। তারপর থেকে চাঁদে নামা পর্যন্ত বিক্রমের সময় লাগবে মিনিট পনেরোর মতো।
এর জন্য বিক্রমের গতি ক্রমশ কমিয়ে আনা হবে। প্রথমে তাকে নিয়ে আসা হবে চাঁদের থেকে সাত দশমিক চার কিলোমিটার উচ্চতায়। এটা করতে ১১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড লাগার কথা। তারপর গতি আরো কমিয়ে তাকে ছয় দশমিক আট কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হবে।
যখন বিক্রম চাঁদের থেকে ৮০০ মিটার দূরে থাকবে, তখন লেজার রশ্মি দিয়ে নামার উপযুক্ত জায়গা খুঁজবে। এরপর আরো গতি কমিয়ে তাকে ১৫০ মিটারে নামিয়ে আনা হবে।
তারপর প্রতি সেকেন্ডে ১০ মিটার গতিতে নামবে বিক্রম। একেবারে শেষে তা সেকেন্ডে এক দশমিক ৬৮ মিটার গতিতে নামবে। এটাকে বলা হচ্ছে সফট ল্যান্ডিং।
চন্দ্রযান-২ চাঁদে নামার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছিল। এবার তাই বিক্রমে অনেকগুলি সেন্সর লাগানো হয়েছে। এমনকী বিজ্ঞানীদের দাবি, সেন্সর যদি কাজ নাও করে, তারপরেও ঠিকভাবে চাঁদে নামতে পারবে বিক্রম।
বিক্রম চাঁদে নামার পর রোভার প্রজ্ঞান কাজ শুরু করবে মূলত সৌরশক্তির সাহায্যে। পৃথিবীর হিসাবে চাঁদের মাস হয় ২৮ দিনে। সেখানে ১৪ দিন রাত, আবার ১৪ দিন সূর্যের আলো থাকে। বুধবার থেকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ১৪ দিন ধরে সূর্যের আলো থাকবে। তাই এই বুধবারকেই অবতরণের জন্য বেছে নিয়েছে ইসরো। সৌরশক্তির সাহায্যে প্রজ্ঞানের কাজ করতে কোনো অসুবিধা হবে না।
মহাকাশে ভারতের কয়েকটি সাফল্য
৭ সেপ্টেম্বর ভারতের চন্দ্রযান-২ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয় পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ৷ ফলে চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদ স্পর্শ করার সফলতার জন্য ভারতের অপেক্ষা বাড়লো৷
ছবি: Reuters/Indian Space Research Organisation
চন্দ্রমিশন
ভারতের প্রথম চন্দ্রমিশন চন্দ্রযান-১৷ চাঁদে নামার উদ্দেশ্য এর ছিল না৷ এটি শুধু অর্বিটে ঘুরেছে৷ ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর রওয়ানা হয়েছিল এটি৷ দশ মাস তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল৷ এরপর ২০০৯ সালের ২৮ আগস্ট হঠাৎ করে চন্দ্রযান-১ এর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়৷ তবে এই সময়ের মধ্যে অভিযানের মূল উদ্দেশ্যের ৯৫ ভাগ কাজ সম্পাদিত হওয়ায় একে সফল অভিযান হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ চাঁদে পানির উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছিল চন্দ্রযান-১৷
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images
চন্দ্রযান-২
২০১৯ সালের ২২ জুলাই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিল চন্দ্রযান-২৷ ৭ সেপ্টেম্বর তার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ৷ ফলে চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদ স্পর্শ করার সফলতার জন্য ভারতের অপেক্ষা বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
রকেট
স্যাটেলাইট প্রেরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যরা স্পেসএক্স-এর মতো বাণিজ্যিক কোম্পানির রকেটের উপর নির্ভরশীল৷ তবে ভারতের রয়েছে নিজস্ব রকেট, নাম জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক- থ্রি (জিএসএলভি এমকে-থ্রি)৷ এতে করেই চন্দ্রযান-২ পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Indian Space Research Organisation
জিপিএস-এর পরিবর্তে নাভিক
‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম’ বা জিপিএস ছাড়া জীবন যাপন আজকাল কঠিন৷ তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের এই সিস্টেম কোনো দিন কোনো কারণে বন্ধ করে দেয় তাহলে কী হবে? এই অবস্থায় যেন সমস্যায় পড়তে না হয় তাই ভারত নিজেই একটি সিস্টেম গড়ে নিয়েছে, যার নাম ‘নাভিক’ (ন্যাভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কনসটেলেশন)৷ এটি ভারত ও তার সীমান্তের আশেপাশে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত কাজ করতে পারে বলে দাবি করা হয়৷
ছবি: Reuters/U.S. Marine Corps
মঙ্গলযান
পোশাকি নাম ‘মার্স অর্বিটার মিশন’ বা এমওএম৷ ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে ভারতের মঙ্গলযান৷ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মঙ্গলের কক্ষপথে যেতে সক্ষম হয় ভারত৷ এছাড়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে প্রথম প্রচেষ্টাতেই কক্ষপথে ঢুকতে সফল হয় মঙ্গলযান৷ ভারতের আগে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ মঙ্গলের কক্ষপথে গিয়েছিল৷ মঙ্গলযান এখনও কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Indian Space Research Organisation
স্যাটেলাইট
১৯৮৮ সালে ভারত প্রথম মহাকাশে রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট পাঠায়৷ এরপর একে একে বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে৷ এগুলোর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ থেকে শুরু করে টেলিভিশন সম্প্রচার, আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজ করা হচ্ছে৷ বর্তমানে ভারতের ১৫টি রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট রয়েছে৷
ছবি: ISRO
6 ছবি1 | 6
ইসরোর ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইউটিউব পেজে পাঁচটা ২০ মিনিট থেকে চাঁদে নামার লাইভ সম্প্রচার শুরু হবে। সেই লাইভ দেখার জন্য ভারতীয়রা উৎসুক থাকবেন। নজর থাকবে গোটা বিশ্বের।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এখন ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে সাউথ আফ্রিকায় আছেন। তিনি সেখান থেকেই দেখবেন চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে নামার দৃশ্য।
ভারতের এই চন্দ্রাভিযান সফল হলে এই প্রথম কোনো দেশের মহাকাশযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামবে। ইতিহাস তৈরি হবে। অ্যামেরিকা, রাশিয়া, চীনের পর ভারতও চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর ক্ষেত্রে সফল হবে। কয়েকদিন আগে লুনা-২৫ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামতে গিয়ে ভেঙে পড়েছে। ইসরো এবার অনেক সতর্ক হয়েছে। বিক্রমের চাঁদে নামার মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছেন কোটি কোটি মানুষ।