সম্প্রতি জার্মানির কেমনিৎস শহরে এক জার্মান নাগরিকের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে চরম ডানপন্থিরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন৷ এই সময় বর্ণবাদ ও বিদেশি বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশও ঘটে৷
বিজ্ঞাপন
ডানিয়েল এইচ. নামে ৩৫ বছর বয়সি ঐ জার্মান নাগরিকের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক সিরীয় ও এক ইরাকি নাগরিককে আটক করা হয়েছে৷ আরো এক ইরাকি ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ৷
মঙ্গলবার ঐ সন্দেহভাজন ব্যক্তির পুরো নাম ও ছবি (এই প্রতিবেদনের সঙ্গেও যুক্ত করা হলো) প্রকাশ করেছে স্যাক্সনি রাজ্যের পুলিশ৷ তাকে ধরার জন্য পোস্টারও ছাপা হয়েছে৷ ঐ ব্যক্তির নাম ফরহাদ রমাজান আহমেদ, বয়স ২২৷ তিনি ইরাকের নাগরিক৷
পুলিশ বলছে, আহমেদের কাছে অস্ত্রও থাকতে পারে৷
পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি
জার্মান নাগরিককে হত্যার দায়ে ইতিমধ্যে আটক হওয়া দুই ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে৷ কারণ, পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজন ইরাকি ব্যক্তির নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র ও অন্যান্য নথিপত্র ‘পুরোপুরি নকল'৷
অপর সন্দেহভাজন ব্যক্তি সিরীয় শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে নিবন্ধিত আছেন৷ তবে শুধুমাত্র তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তাকে সিরীয় হিসেবে দেখানো হয়েছে৷
চাপে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার অভিবাসনবিরোধী বলে পরিচিত৷ ফলে এই সময়ে দু'জন সহিংস ব্যক্তি কীভাবে শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে আছেন - স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এখন সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইছেন অনেকে৷
জার্মানির কেমনিৎসে ডানপন্থিদের বিক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
এক জার্মান-কিউবান নাগরিকের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জার্মানির কেমনিৎস শহরে বিদেশিদের উপর হামলা হয়েছে৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলরসহ অনেক নেতা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/O. Andersen
জার্মান-কিউবানের মৃত্যু
রবিবার ভোরে জার্মানির কেমনিৎস শহরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ডানিয়েল এইচ. নামে ৩৫ বছর বয়সি এক জার্মান-কিউবান নাগরিক ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান৷ পুলিশ বলছে, বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ জন মানুষ এই বিবাদে জড়িত ছিলেন৷ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২২ বছর বয়সি এক ইরাকি ও ২৩ বছর বয়সি এক সিরীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে৷ ‘যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই’ তারা ডানিয়েলকে কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: DW/B. Knight
বিক্ষোভ ও বিদেশিদের উপর হামলা
ডানিয়েল এইচ. স্থানীয় কয়েকটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ ফলে তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে রবিবার বিকালে প্রায় ৮০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন৷ এদের মধ্যে চরম ডানপন্থিরাও ছিলেন৷ বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ছোড়েন এবং তাঁরা পুলিশের কাজে সহযোগিতা করেননি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ডেকে আনা হয়৷ এই সময় বিক্ষোভকারীরা পথেঘাটে বিদেশিদের উপর নির্বিচারে হামলাও চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
সোমবারও বিক্ষোভ এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সোমবারও কেমনিৎস শহর উত্তপ্ত ছিল৷ সন্ধ্যার সময় প্রায় ২,০০০ চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভে নামেন৷ আর তাঁদের বিক্ষোভের প্রতিবাদে মাঠে নামেন প্রায় ১,০০০ মানুষ (ছবিতে তাঁদের একাংশকে দেখা যাচ্ছে), যাদের মধ্যে বামপন্থিরাও ছিলেন৷ চরম দক্ষিণপন্থি ও বামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬ জন আহত হন৷ দুই পক্ষ একে অপরের উপর আতসবাজিসহ নানা বস্তু নিক্ষেপ করে৷ ৪ জন চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভকারীর উপর হামলার ঘটনাও ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
সরকারের প্রতিক্রিয়া
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে রবি ও সোমবারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ ম্যার্কেল বলেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলার ভিত্তিতে যে শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তার সঙ্গে এমন আচরণ খাপ খায় না৷ প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেন, ছুরিকাঘাতের ঘটনার ফায়দা তুলে বিদেশিবিদ্বেষ ও হিংসা ছড়ানো হয়েছে৷ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, জনতা ভিন্ন চেহারার মানুষকে বাছাই করে হামলা চালাবে, এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
তাণ্ডবের পেছনে ‘ভুয়া খবর’
‘ভুয়া খবর ছড়িয়ে কেমনিৎসে দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্যাক্সোনি রাজ্য প্রশাসন৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শুধু স্থানীয় চরম দক্ষিণপন্থিরা নয়, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে অনেক রাজ্য থেকে সমমনস্ক মানুষকে কেমনিৎসে আকর্ষণ করা হয়েছে৷ নিহত ডানিয়েল এইচ. নাকি এক নারীর সম্মানরক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
5 ছবি1 | 5
উত্তরে সেহোফার জার্মানির অভিবাসন বিষয়ক কার্যালয় ‘বাম্ফ'-এর বক্তব্য তুলে ধরেছেন৷ বাম্ফ জানিয়েছে, কাগজপত্রের সত্যতা যাচাই করার মতো পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব রয়েছে৷ তাই ঐ দুই ব্যক্তির কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে ‘অনেক বেশি সময়' লেগেছে৷
বাম্ফের এই বক্তব্য তুলে ধরে সেহোফার জানান, তিনি ছয় মাস আগেই বাম্ফকে জনবল বাড়ানোর অনুরোধ করেছিলেন৷
সম্পাদকের নোট: ডয়চে ভেলে জার্মান প্রেস কোড অনুসরণ করে৷ এই কোড অনুযায়ী একজন সন্দেহভাজন অপরাধী কিংবা ভুক্তভোগীর গোপনীয়তা রক্ষার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়৷ ফলে তাদের পুরো নাম প্রকাশ করা যায় না৷ কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু পুলিশ সন্দেহভাজনকে খুঁজছে এবং সেজন্য পোস্টারও ছাপিয়েছে, তাই এই প্রতিবেদনের সঙ্গে সন্দেহভাজনের পুরো নাম প্রকাশ করা হলো৷