1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্ব মা দিবস

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১০ মে ২০১৫

মা যে একজন নারী, এ বিষয়টি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে এখনও স্পষ্ট নয়৷ বরং সন্তানের কাছে পরম ভরসা আর ভালোবাসার প্রতীক মায়েরা বারংবার স্বামী বা অন্য পুরুষের হাতে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন৷

Bangladesch Kinderarbeit Hausangestellte
ছবি: imago/imagebroker

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে দু'বছর আগে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে বেশ ভালো বেতনের চাকরি করছেন আহমেদ জুবায়ের৷ তাঁর বাবা আছেন, কিন্তু তিনি আলাদা থাকেন৷ তাই মায়ের সঙ্গেই থাকেন জুবায়ের৷ আসলে জুবায়েরের মা তাঁর সন্তানকে নিয়ে আলাদা হয়েছেন জুবায়েরের বয়স যখন ১২, তখন৷ এরপর নিজে চাকরি করে একা হাতে সন্তানের পড়াশুনা এবং সংসার সামলিয়েছেন তিনি৷

জুবায়েরের ভাষায়, ‘‘আমি দিনের পর দিন দেখেছি বাবা কীভাবে মাকে নির্যাতন করতেন৷ তারপরও মা মুখ বুজে সব সহ্য করতেন শুধুমাত্র আমার কথা চিন্তা করে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেননি৷ আমিও মায়ের সাথেই চলে যাই বাবার সংসার ছেড়ে আর এখনও পর্যন্ত মায়ের সঙ্গেই আছি৷ মায়ের চেয়ে বড় কিছু আমার কাছে নেই৷''

জুবায়েরের কাছে প্রশ্ন ছিল – মাকে আপনি খুব কাছাকাছি থেকে দেখেছেন৷ তিনি একজন নারীও৷ তা আপনার বিবাহিত জীবনে আপনার স্ত্রী, মানে আরেকজন নারীর প্রতি আপনার আচরণ কেমন হবে? জুবায়েরের জবাব, ‘‘আমি সব নারীর প্রতিই শ্রদ্ধাশীল৷''

বাস্তবে কিন্তু সবসময় এমনটা দেখা যায় না৷ বাংলাদেশের নারীদের নিয়ে যে সমস্ত পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, তা ঠিক সেটাই প্রমাণ করে৷

নারী নির্যাতনের চিত্র এখনও ভয়ংকর

পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত চার বছরে সারা দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৬৭ হাজার ২২৯টি৷ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১২ হাজার ৯৭১ জন৷ যৌতুক ও নানা কারণে স্বামীর ঘরে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দু'হাজার পাঁচজন নারী৷ অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ৪৪২ জন আর নির্যাতনের কারণে প্রাণ দিতে হয়েছে আরো এক হাজার ৬৬১ জন নারীকে৷

জাতীয় মহিলা পরিষদ গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মাত্র ছ'মাসে নারী নির্যাতনের একটি পরিসংখ্যান তৈরি করে৷ তাতে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা ভয়াবহ৷ এই ছয় মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন নারী৷ এ সময়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৫ জনকে আর ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন আরো ৫১ জন৷

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রধান মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘এখান থেকেই আমাদের স্ববিরোধিতা পরিষ্কার হয়ে যায়৷ একই নারী যখন আমার মা না হয়ে অন্য কেউ হন, তখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়৷ তাঁদের ওপর ঘরে-বাইরে সবখানেই নির্যাতন চালানো হয়৷ কোথাও তাঁরা নিরাপদ নয়৷ আমরা ভুলে যাই যে অন্য নারীটিও কারুর মা, বোন বা স্ত্রী হতে পারে৷ অবশ্য সংখ্যায় কম হলেও সন্তানের হাতে মা যে নির্যাতনের শিকার হন না, তা কিন্তু নয়৷''

গর্ভবতী মায়েদের প্রতি অবহেলা

বাংলাদেশে সন্তান প্রসবকালে এখনও মায়েদের মৃত্যুর হার বেশি৷ এর কারণ ও তাঁর প্রতি অবহেলা৷ নারীকে ছোট করে দেখার প্রবণার কারণই এই অবহেলার মূলে, মনে করেন সুলতানা কামাল৷ তাছাড়া সন্তান প্রসবকালে নারী মৃত্যুর হার কমলেও, তা সাম্প্রতিক৷ এটা সরকার ও বেসরকরি প্রতিষ্ঠানের নানা উদ্যোগ এবং সচেতনতা কর্মসূচির কারণে হচ্ছে৷ কিন্তু মানসিকতায় গর্ভবতী মায়েদের প্রতি অবহেলা থেকেই গেছে৷

সর্বশেষ পরিস্যংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১০ জন মায়ের মধ্যে ছ'জনকেই মাকেই প্রচলিত পদ্ধতি, অর্থাৎ হাতুড়ে দাই-এর হাতে সন্তান প্রসব করতে হচ্ছে৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাদানকারীর সাহায্য পাচ্ছেন ১০ জনের মধ্যে মাত্র চারজন৷ আর শতকরা হিসেবে ৬০ জন মা এখনও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাদানকারীর সেবা পাচ্ছেন না৷

এখনও প্রতি এক লাখে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ১৬৫ জন৷ অবশ্য ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই হার ছিল ৩২২৷ বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর গড়ে ৬ ভাগ করে মাতৃমৃত্যুর হার কমছে৷ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ১৪৩-এ নামিয়ে এনে বাংলাদেশ এমডিজি-৫ অর্জনে সক্ষম হবে৷

তবে এর বিপরীতে খারাপ খবর হলো, প্রতি ১০ জনের মাত্র তিনজন মা গর্ভকালীন সময়ে চিকিৎসকের কাছে যান৷ এই বিপরীত চিত্রের সঙ্গে মাতৃমৃত্যুর হার কমাকে মেলানো যায় না৷ নারী ও শিশু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিবিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের প্রতি সেবা বাড়ার কারণ মা না ভবিষ্যৎ সন্তান – এটা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন৷''

জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বৃদ্ধাশ্রম?

বাংলাদেশে শতকরা ২০ জন প্রবীণ হয় একাকী অথবা স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকেন৷ দরিদ্র প্রবীণদের সংখ্যা শতকরা ৩৭ জন৷ আর তাই বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যাও বাড়ছে৷ সরকার দেশের ছ'টি বিভাগে ছয়টি বৃদ্ধাশ্রম তৈরির কাজও হাতে নিয়েছে৷ এছাড়া একাকী এবং বৃদ্ধাশ্রমে যাঁরা থাকেন, তাঁদের ৭০ ভাগই নারী, এবং তাঁদের বেশিরভাগই কারো না কারুর মা৷

বাংলাদেশে ২০১১ সালে পাশ হওয়া পিতা-মাতার ভরনপোষন আইনে সন্তানকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, মা-বাবা যেখানে থাকতে চাইবেন তাঁদের সেখানে থাকতে দিতে হবে৷ শুধু তাই নয়, তার সঙ্গে ভরনপোষনও দিতে হবে সন্তানকে৷ সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘মা-বাবা যদি স্বাধীনভাবে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে চান, তাহলে কোনো কথা নেই৷ তবে তাঁদের জোর করে পাঠানো আইন এবং মানবিকতার লঙ্ঘন৷''

আইনে ভরনপোষন না দিলে সন্তানকে দু'লাখ টাকা জরিমানা এবং তিন মাসের কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে৷ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘বৃদ্ধ বয়সেও নারীরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার হন৷ তাই আইন থেকে সুফল পেতে হলে সরকারকে ‘মনিটরিং' করতে হবে৷ কারণ বিষয়টি নিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা আদালতে যেতে এখনও উৎসাহী হচ্ছেন না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ