মা যে একজন নারী, এ বিষয়টি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে এখনও স্পষ্ট নয়৷ বরং সন্তানের কাছে পরম ভরসা আর ভালোবাসার প্রতীক মায়েরা বারংবার স্বামী বা অন্য পুরুষের হাতে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে দু'বছর আগে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে বেশ ভালো বেতনের চাকরি করছেন আহমেদ জুবায়ের৷ তাঁর বাবা আছেন, কিন্তু তিনি আলাদা থাকেন৷ তাই মায়ের সঙ্গেই থাকেন জুবায়ের৷ আসলে জুবায়েরের মা তাঁর সন্তানকে নিয়ে আলাদা হয়েছেন জুবায়েরের বয়স যখন ১২, তখন৷ এরপর নিজে চাকরি করে একা হাতে সন্তানের পড়াশুনা এবং সংসার সামলিয়েছেন তিনি৷
জুবায়েরের ভাষায়, ‘‘আমি দিনের পর দিন দেখেছি বাবা কীভাবে মাকে নির্যাতন করতেন৷ তারপরও মা মুখ বুজে সব সহ্য করতেন শুধুমাত্র আমার কথা চিন্তা করে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেননি৷ আমিও মায়ের সাথেই চলে যাই বাবার সংসার ছেড়ে আর এখনও পর্যন্ত মায়ের সঙ্গেই আছি৷ মায়ের চেয়ে বড় কিছু আমার কাছে নেই৷''
জুবায়েরের কাছে প্রশ্ন ছিল – মাকে আপনি খুব কাছাকাছি থেকে দেখেছেন৷ তিনি একজন নারীও৷ তা আপনার বিবাহিত জীবনে আপনার স্ত্রী, মানে আরেকজন নারীর প্রতি আপনার আচরণ কেমন হবে? জুবায়েরের জবাব, ‘‘আমি সব নারীর প্রতিই শ্রদ্ধাশীল৷''
পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় মা
ভালোবাসার মানুষ মায়ের প্রতি বিশেষ সম্মান জানাতেই ‘মা’ দিবসের সূচনা৷ দিনটির প্রচলন প্রথম শুরু হয় প্রাচীন গ্রিসে৷ জার্মানিতে বিশেষ এই দিনটি পালনের ছবি ও তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: SARI GUSTAFSSON/AFP/Getty Images
বিশ্ব মা দিবস
প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব মা দিবস পালিত হয়৷ নানা সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রথম মা দিবস উদযাপন শুরু হয় গ্রিসে৷ গ্রিকরা তাদের মাতা-দেবি ‘রেয়া’র নামে পূজা করত৷ ১৯১৩ সালে অ্যামেরিকান কংগ্রেস মা দিবসকে সরকারিভাবে পালনের অনুমতি দেয়৷ তারপর থেকেই বিভিন্ন দেশে মা দিবস উদযাপন শুরু হয়৷ তবে মা দিবস উদযাপনের প্রথম ভাবনাটি এসেছে অ্যামেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ডের মাথা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সকাল থেকেই শুরু
জার্মানিতে ‘মা’ দিবসে মা’কে কোনো কাজ করতে দেয়া হয় না৷ বাবাসহ বাচ্চারা সকালের নাস্তা তৈরি করে মায়ের জন্য উপহার সহ টেবিলে সাজিয়ে রাখে৷ সঙ্গে অবশ্যই থাকে ফুল৷ পরে মাকে নিয়ে যাওয়া হয় কোনো রেস্তোরাঁয়৷ তবে সব পরিবারেই যে এমনটা হয় তা কিন্তু নয়৷
ছবি: Fotolia/Tatyana Gladskih
উপহার
পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর এবং প্রিয় শব্দ ‘মা’৷ তবে কারো কারো প্রশ্ন মা’কে ভালোবাসা দেখানোর জন্য ঘটা করে ‘মা দিবস’ পালন করার কি তেমন কোনো প্রয়োজন আছে? কেউ মনে করেন প্রয়োজন নেই, আবার অনেকের মতে উপহার দিয়ে একটি বিশেষ দিনে মা’কে ভালোবাসা দেখানোর পরিকল্পনাটা খারাপ না৷
ছোটবেলা থেকেই শেখা
‘মা’ দিবস আসার আগে থেকেই জার্মানিতে একেবারে ছোট বেলা অর্থাৎ কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চাদের মায়েদের জন্য নিজ হাতে কিছু না কিছু উপহার তৈরি করতে হয় বা ছবি আঁকতে হয়৷ একটু বড় বাচ্চারা কেউ কেউ আগে থেকেই নিজেদের হাত খরচ থেকে মায়ের জন্য উপহার কিনতে কিছু পয়সা জমিয়ে রাখে৷
ছবি: DW
মায়েদের ভাবনা
জার্মানিতে মা দিবস উদযাপন শুরু হয় ১৯২২ সাল থেকে৷ জার্মান মা’দের, বিশেষ করে বয়স্ক মায়েদের প্রায়ই বলতে শোনা যায় শুধু বিশেষ দিনে নয়, তাঁদের সন্তানরা যেন সময় সুযোগ পেলেই মায়েদের সাথে যোগাযোগ রাখে, মায়ের কথা মনে করে৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
বাণিজ্যিক দিক
মা দিবস উপলক্ষ্যে প্রতি বছরই কিছু না কিছু নতুন জিনিস বাজারে আসে৷ ফুলের ব্যবসা দারুণ জমজমাট হয়ে ওঠে৷ কত ভাবেই না সাজানো ফুল পাওয়া যায় এই দিনে৷ অন্যান্য উপহারের সাথে প্রিয় মায়ের জন্য এক গুচ্ছ ফুল সব ছেলে-মেয়ের হাতেই যেন থাকে৷
ছবি: DW/H. Sirat
দিনটা অবশ্যই রবিবার
প্রতিবছরই তারিখের একটু এদিক সেদিক হলেও বারটি থাকে রবিবার অর্থাৎ ছুটির দিন৷ ফলে অনেক সন্তান কাছে এসে তাদের প্রিয় মা’কে ভালোবাসা জানাতে পারে৷ অনেক বৃদ্ধা মা শুধুমাত্র এই দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষাও করে থাকেন, বিশেষ করে যাঁরা বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিদেশি পরিবার
জার্মানিতে বিদেশিদের মধ্যে তুর্কি বংশোদ্ভূত পরিবারের সংখ্যা সবচয়ে বেশি৷ তাছাড়া ওরা উপমহাদেশের পরিবারগুলোর মতো একসাথে মিলেমিশে থাকতেই পছন্দ করে, যে-কোনো উপলক্ষ্যে তো অবশ্যই৷ তাই ‘মা’ দিবসও এর ব্যতিক্রম নয়৷
ছবি: DW/K. Jäger
নিরাপদ আশ্রয়
মানুষ যখন ভয় পায়, অসুস্থ হয়, কোনো সমস্যা বা বিপদে পড়ে তখন তারা মায়ের কাছেই ভয়ার্ত শিশুর মতোই আশ্রয় খোঁজে, আকড়ে ধরে৷ মাকেই তখন পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে হয়৷ আর তা যে-কোনো দেশের সন্তান এবং মায়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷
ছবি: imago/imagebroker
মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী সারা বিশ্বে মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৯০ সাল থেকে শতকরা ৪৫ ভাগ কমেছে৷ তবে দুঃখের ব্যাপার হলো, যেসব মা প্রসবকালীন সময়ে মারা যান তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই ছিল ডায়েবেটিস বা মেদবহুল শরীর৷
ছবি: DW/S. Schlindwein
ফিনল্যান্ডের অবস্থা সবচেয়ে ভালো
শিশু সাহায্য সংস্থা ‘সেভ দ্যা চিলড্রেন’-এর এক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে উত্তর ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ডের মায়েদের অবস্থা সবচেয়ে ভালো৷ অর্থাৎ সেখানে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, লেখাপড়া, মায়েদের আয় এবং সামাজিক অবস্থান অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে ওপরে৷ সেখানে শিশুর জন্মের পর মা ও শিশুকে বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: SARI GUSTAFSSON/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
বাস্তবে কিন্তু সবসময় এমনটা দেখা যায় না৷ বাংলাদেশের নারীদের নিয়ে যে সমস্ত পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, তা ঠিক সেটাই প্রমাণ করে৷
নারী নির্যাতনের চিত্র এখনও ভয়ংকর
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত চার বছরে সারা দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৬৭ হাজার ২২৯টি৷ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১২ হাজার ৯৭১ জন৷ যৌতুক ও নানা কারণে স্বামীর ঘরে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দু'হাজার পাঁচজন নারী৷ অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ৪৪২ জন আর নির্যাতনের কারণে প্রাণ দিতে হয়েছে আরো এক হাজার ৬৬১ জন নারীকে৷
জাতীয় মহিলা পরিষদ গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মাত্র ছ'মাসে নারী নির্যাতনের একটি পরিসংখ্যান তৈরি করে৷ তাতে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা ভয়াবহ৷ এই ছয় মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন নারী৷ এ সময়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৫ জনকে আর ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন আরো ৫১ জন৷
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রধান মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘এখান থেকেই আমাদের স্ববিরোধিতা পরিষ্কার হয়ে যায়৷ একই নারী যখন আমার মা না হয়ে অন্য কেউ হন, তখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়৷ তাঁদের ওপর ঘরে-বাইরে সবখানেই নির্যাতন চালানো হয়৷ কোথাও তাঁরা নিরাপদ নয়৷ আমরা ভুলে যাই যে অন্য নারীটিও কারুর মা, বোন বা স্ত্রী হতে পারে৷ অবশ্য সংখ্যায় কম হলেও সন্তানের হাতে মা যে নির্যাতনের শিকার হন না, তা কিন্তু নয়৷''
গর্ভবতী মায়েদের প্রতি অবহেলা
বাংলাদেশে সন্তান প্রসবকালে এখনও মায়েদের মৃত্যুর হার বেশি৷ এর কারণ ও তাঁর প্রতি অবহেলা৷ নারীকে ছোট করে দেখার প্রবণার কারণই এই অবহেলার মূলে, মনে করেন সুলতানা কামাল৷ তাছাড়া সন্তান প্রসবকালে নারী মৃত্যুর হার কমলেও, তা সাম্প্রতিক৷ এটা সরকার ও বেসরকরি প্রতিষ্ঠানের নানা উদ্যোগ এবং সচেতনতা কর্মসূচির কারণে হচ্ছে৷ কিন্তু মানসিকতায় গর্ভবতী মায়েদের প্রতি অবহেলা থেকেই গেছে৷
হবু মায়েদের জন্য ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
‘মা’ ডাক শোনার স্বপ্ন প্রতিটি নারীর আর একজন নারী হয়ত পূর্ণতা পান মাতৃত্বেই৷ কিন্তু মা হতে যে দশ মাসের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়! এই পথকে সহজ করা এবং সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়ার কিছু সহজ উপায় নিয়েই এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW
হবু মায়ের অনুভূতি
‘মা’ – এটি একটি মাত্র শব্দ, যার সাথে মিশে আছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা৷ সন্তানের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা না করেই সন্তানকে মা পরম যত্নে বড় করে তোলেন, সেই গর্ভাবস্থা থেকেই৷ পৃথিবীতে একমাত্র মা-ই জানেন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করার কষ্ট, ধৈর্য আর আনন্দের অনুভূতিটুকু৷
ছবি: imago/CTK Photo
স্বামী ও পরিবারের অন্যান্যদের সহযোগিতা
গর্ভবতী মায়েদের শরীরে হরমন পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে তাঁদের অনেকেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে৷ আর এ কথাটি স্বামীসহ পরিবারের সকলকেই মনে রাখতে হবে৷ তাঁকে খুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে, কারণ এতে পরিবারের অনাগত সদস্যটিরই মঙ্গল৷ শারীরিক এবং মানসিকভাবে মা সুস্থ থাকলে তার প্রভাব যে পড়ে শিশুটির ওপরও৷
ছবি: fotolia/diegoa8024
হবু মায়ের দিনের শুরু
‘‘সকালে উঠেই কুসুম গরম পানিতে গোসল সেরে নিন৷ তারপর পুরো শরীরে আস্তে আস্তে অলিভ অয়েল মাসাজ করে নিন৷ অন্য তেলও অবশ্য মালিশ করা যেতে পারে, তবে অলিভ অয়েলে সন্তান জন্মের পর সাধারণত পেটে আর কোনো দাগ থকে না৷’’ এমনটাই বলেন জার্মান ধাত্রী হাইকে শোয়ার্ৎস৷
ছবি: Fotolia/Subbotina Anna
সুন্দর ত্বক
গর্ভকালীন সময়ে শরীরে হরমনের পরিবর্তনের কারণে হবু মায়ের ত্বকেও দেখা দেয় নানা সমস্যা, বিশেষকরে মুখমণ্ডলে৷ তাই সপ্তাহে একবার ‘মাস্ক’ ব্যবহার করতে পারেন৷ যেমন একটি পাকা অ্যাভোকাডোর সাথে দু’চামচ ছানা মিশিয়ে চোখ ছাড়া পুরো মুখে লাগিয়ে দশ মিনিট পর গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন৷ তারপর ভালো কোনো ‘সানস্ক্রিন’ লাগিয়ে ফেলুন৷
ছবি: Fotolia/studiovespa
গর্ভকালীন হালকা ব্যায়াম
ঘরের মেঝেতে পা মুড়ে বসুন এবং হতের তালু সামনে নিয়ে বুকের কাছে রাখুন৷ খুবই মনোযোগ দিয়ে আস্তে আস্তে গভীরভাবে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন এবং পেটে থেকে নিঃশ্বাস ছাড়ুন আর ভাবুন – ‘‘এই নিঃশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমার সন্তানের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে৷’’ ব্যায়াম কোনো গ্রুপের সাথে করতে পারলে আরো ভালো লাগবে৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
হালকা খাবার
এই সময়টাতে অনেকেরই সকালে বেশ খারাপ লাগে বা বমিভাব হয়৷ তাই এক কাপ ভেষজ চা পান করতে পারেন সাথে একটা টোস্ট বা বিস্কুট৷ ধাত্রী হাইকে বলেন, ‘‘এ সময় অনেকেই সকালে গরম নাস্তা পছন্দ করেন৷ আসলে নিজের যা ভালো লাগে সেটাই খাবেন৷ তবে লক্ষ্য রাখবেন যে, সেই খাবার যেন ফাইবার বা আঁশযুক্ত হয়৷ এছাড়া তার সঙ্গে অবশ্যই ফল খেতে ভুলবেন না৷’’
পানি
একজন সুস্থ গর্ভবতীর দিনে কম পক্ষে দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত৷ তাই মাঝে মাঝেই অল্প অল্প পানি পান করে নেবেন৷ এতে শরীরটা সারা দিন ঝরঝরে লাগবে এবং রক্ত ঘনও হয়ে যাবে না৷
ছবি: Fotolia/photo 5000
চুলের যত্ন
সাধাণত গর্ভবতী মায়েদের মাথার চুল তেমনভাবে ঝরে না৷ তবে কারো কারো চুলের আগা শুকিয়ে যায়৷ তাই তাঁরা বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন, এতে চুল নরম থাকে৷ তাছাড়া চুলকে সুন্দর ও ঝরঝরে রাখতে সপ্তাহে একদিন রান্নাঘর থেকে দুই টেবল চামচ অলিভ অয়েল, দুই চামচ সাদা দই এবং একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে মাথায় দিয়ে দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন৷
ছবি: Fotolia/Masson
মুক্ত বাতাস সেবন
‘‘শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে এবং দুটোর মধ্যে সমতা রক্ষা করতে এই বিশেষ সময়টিতে মুক্ত বাতাস সেবন খুবই জরুরি৷ হাঁটাহাঁটি খুব ভালো, তবে গায়ে জোড় দিয়ে কোনোরকম ব্যায়াম করা উচিত নয়৷ এতে হিতে বিপরিত হতে পারে৷ অন্য ব্যায়াম, অর্থাৎ যাঁরা সাঁতার জানেন তাঁদের জন্য কিছুক্ষণ পানিতে থাকা কোমর এবং পিঠে বেশ আরাম দেয়৷’’ বলেন ধাত্রী হাইকে শোয়ার্ৎস৷
ছবি: imago/emil umdorf
দাঁত ব্রাশ
গর্ভবতী মাকে যেন সব সময় আকর্ষণীয় লাগে, সেজন্য দিনে অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে, তবে নরম ব্রাশ দিয়ে৷ এ সময় অনেকের মাড়ি নরম হয়ে রক্ত ঝরতে পারে৷ তাই দাঁতের মাড়ি শক্ত রাখতে ক্যামেলিয়া চা দিয়ে কুলি করতে পারেন৷ এছাড়া প্রথম ছয় মাস নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত বলে জানান ধাত্রী শোয়ার্ৎস৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
হোম স্পা
‘‘সন্ধ্যায় বাথটবে কুসুম কুসুম গরম পানি ভর্তি করে তাতে এক গ্লাস দুধ ঢেলে দিন, যা ত্বককে মসৃণ করবে৷ কিছুক্ষণ টবে থাকার পর উঠে গায়ে তেল মালিশও করতে পারেন৷ চাইলে বাথটবে হবু মায়ের সঙ্গী বা কোচ হতে পারেন হবু বাবা৷’’ বলেন হাইকে৷
ছবি: Fotolia/Ariwasabi
পায়ের যত্ন
গর্ভবতী মায়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ভারী বোধ হয় তাঁর পা দুটো৷ তাই সকালে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই দুই পা খানিকটা উঁচু করে একটু একটু করে ঘোরাবেন৷ এতে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়৷ রাতে যদি পা দুটোকে ভারী মনে হয়, তাহলে একটি বাটিতে ঠান্ডা পানি দিয়ে সামান্য লেবুর রস দিন৷ এতে ছোট টাওয়েল ভিজিয়ে পানিটা চিপে উঁচু করা পায়ে দুই মিনিট পেচিয়ে রাখুন৷
ছবি: superfood - Fotolia.com
ডাক্তারি ‘চেকআপ’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেটের সন্তানটি যেন ভালোভাবে বড় হতে পারে সেজন্য চাই যথেষ্ট সবুজ শাক-সবজি এবং আয়োডিন৷ আরো দরকার আয়রন এবং ক্যালসিয়াম৷ তাই এ সবের কোনোটারই যেন ঘাটতি না থাকে৷ সুতরাং শারীর আর মনের যত্নের পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়মিত ডাক্তারি ‘চেকআপ’-ও৷
ছবি: DW
13 ছবি1 | 13
সর্বশেষ পরিস্যংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১০ জন মায়ের মধ্যে ছ'জনকেই মাকেই প্রচলিত পদ্ধতি, অর্থাৎ হাতুড়ে দাই-এর হাতে সন্তান প্রসব করতে হচ্ছে৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাদানকারীর সাহায্য পাচ্ছেন ১০ জনের মধ্যে মাত্র চারজন৷ আর শতকরা হিসেবে ৬০ জন মা এখনও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাদানকারীর সেবা পাচ্ছেন না৷
এখনও প্রতি এক লাখে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ১৬৫ জন৷ অবশ্য ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই হার ছিল ৩২২৷ বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর গড়ে ৬ ভাগ করে মাতৃমৃত্যুর হার কমছে৷ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ১৪৩-এ নামিয়ে এনে বাংলাদেশ এমডিজি-৫ অর্জনে সক্ষম হবে৷
তবে এর বিপরীতে খারাপ খবর হলো, প্রতি ১০ জনের মাত্র তিনজন মা গর্ভকালীন সময়ে চিকিৎসকের কাছে যান৷ এই বিপরীত চিত্রের সঙ্গে মাতৃমৃত্যুর হার কমাকে মেলানো যায় না৷ নারী ও শিশু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিবিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের প্রতি সেবা বাড়ার কারণ মা না ভবিষ্যৎ সন্তান – এটা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন৷''
জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বৃদ্ধাশ্রম?
বাংলাদেশে শতকরা ২০ জন প্রবীণ হয় একাকী অথবা স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকেন৷ দরিদ্র প্রবীণদের সংখ্যা শতকরা ৩৭ জন৷ আর তাই বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যাও বাড়ছে৷ সরকার দেশের ছ'টি বিভাগে ছয়টি বৃদ্ধাশ্রম তৈরির কাজও হাতে নিয়েছে৷ এছাড়া একাকী এবং বৃদ্ধাশ্রমে যাঁরা থাকেন, তাঁদের ৭০ ভাগই নারী, এবং তাঁদের বেশিরভাগই কারো না কারুর মা৷
বাংলাদেশে ২০১১ সালে পাশ হওয়া পিতা-মাতার ভরনপোষন আইনে সন্তানকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, মা-বাবা যেখানে থাকতে চাইবেন তাঁদের সেখানে থাকতে দিতে হবে৷ শুধু তাই নয়, তার সঙ্গে ভরনপোষনও দিতে হবে সন্তানকে৷ সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘মা-বাবা যদি স্বাধীনভাবে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে চান, তাহলে কোনো কথা নেই৷ তবে তাঁদের জোর করে পাঠানো আইন এবং মানবিকতার লঙ্ঘন৷''
আইনে ভরনপোষন না দিলে সন্তানকে দু'লাখ টাকা জরিমানা এবং তিন মাসের কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে৷ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘বৃদ্ধ বয়সেও নারীরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার হন৷ তাই আইন থেকে সুফল পেতে হলে সরকারকে ‘মনিটরিং' করতে হবে৷ কারণ বিষয়টি নিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা আদালতে যেতে এখনও উৎসাহী হচ্ছেন না৷''