1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেমন আছেন যৌনকর্মীরা?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশে ‘গণিকাবৃত্তি' বৈধ৷ নানা কারণে উচ্ছেদ হয়েছে বেশ কিছু যৌনপল্লি৷ অনেকক্ষেত্রে উচ্ছেদের আসল কারণ জমি দখল৷ দেশে বৈধ যৌনকর্মী আছেন প্রায় ১ লাখ৷ অবৈধভাবে আছেন আরো তিন-চার লাখ৷ কেমন আছেন তাঁরা?

বাংলাদেশের এক যৌনকর্মী
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের মধ্যে মাদরীপুর, খুলনার ফুলতলা এবং টাঙ্গাইল মিলিয়ে মোট তিনটি যৌনপল্লি উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে টাঙ্গাইল ছাড়া আর দু'টি এখন বহুতল মার্কেট৷ টাঙ্গাইলের রেজিস্টার্ড যৌনপল্লির যৌনকর্মী হাসি ডয়চে ভেলেক জানান, ‘‘আমাদের নির্মম নির্যাতন আর অত্যাচার করে উচ্ছেদ করা হয়েছিল৷ আমাদের অনেকের নিজেদের জমি ও ঘর থাকার পরও আমরা সেখানে থাকতে পারিনি৷ পরে আদালতের রায়ে আমরা ফিরে আসতে পারলেও সবাই আসেনি৷ তারা এখন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে৷ জানি না তাদের সন্তানরা কেমন আছে, কেমনভাবে চলছে তাদের জীবন৷''

যৌনকর্মী হাসি

This browser does not support the audio element.

হাসি বলেন, ‘‘আমরা ফিরে এলেও এখন আমাদের ওপর পুলিশের নতুন নির্যাতন শুরু হয়েছে৷ পুলিশ হামলা চালায়, খদ্দের ধরার নামে চাঁদা নেয়৷ ওদিকে বাড়িওয়ালারাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে৷ ছোট একটা রুমের একদিনের ভাড়া ৬০০ টাকা৷ তার ওপর মাস্তানদের চাঁদা তো আছেই৷ তাই যৌনকর্মীদের অনেকেরই এখন পেটে ভাত নেই৷ কেউ কেউ ধার-দেনা ও ঋণ করে চলছে৷''

টাঙ্গাইলের যৌনপল্লিকে আবার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে যাঁরা আন্দোলন করেছেন, তাঁদের মধ্যে সবার আগে আসে মাহমুদা শেলির নাম৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে, পুলিশ প্রশাসন এখন কৌশলে এই যৌনপল্লিটি উচ্ছেদ করতে চায়৷ তাই খদ্দেররা যাতে আসতে না পারে, সেজন্য তারা নানাভাবে হয়রানি করে৷ খদ্দের না আসলে যৌনকর্মীরা তাদের কাজ টিকিয়ে রাখতে পারবে না৷''

তিনি জানান, ‘‘এই যৌনপল্লিটি উচ্ছেদের পিছনে প্রভাবশালী মহলের হাত ছিল৷ তাদের টার্গেট ছিল এখানকার জমি দখল করা৷ তাই তারা দু'ঘণ্টার মধ্যে যৌনপল্লিটি উচ্ছেদ করেছিল৷''

মাহমুদা শেলি

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে এখন রেজিস্টার্ড যৌনপল্লির সংখ্যা ১০টি৷ গত দুই দশকে বেশ কিছু যৌনপল্লি উচ্ছেদ হয়েছে৷ নারায়লগঞ্জের টানবাজার এবং ঢাকার ইংলিশ রোডের যৌনপল্লিও এক রাতের মধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছিল৷ এই দু'টি যৌনপল্লির যৌনকর্মীদেরও মারপিট ও নির্যাতন করে উচ্ছেদ করা হয়৷ প্রভাবশালীরা প্রশাসনের সহায়তায় এ কাজ করে৷ যৌনকর্মীদের আটক করে ‘প্রিজন ভ্যানে' ভবঘুরে কেন্দ্রে পঠানো হলেও, তাঁরা শেষ পর্যন্ত সেখানে থাকেননি৷ তাঁদের অনেকেই এখন ভাসমান যৌনকর্মী৷

জয়া শিকদার যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা ‘অ্যাক্টিভিস্ট মুভমেন্ট' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান নির্বাহী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ করা হলে তাঁদের ভাসমান না হয়ে উপায় থাকে না৷ তাঁদের বিকল্প পেশা নেই৷ ফলে দিন দিন ভাসমান যৌনকর্মীদের সংখ্যা বাড়ছে৷ তাছাড়া ভাসমান যৌনকর্মীরা স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সুবিধা পায় না৷ ফলে তাঁরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়৷ তাঁদের সন্তানরাও দুর্বিষহ জীবনযাপন করে৷''

জয়া শিকদার

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে ‘গণিকাবৃত্তি' অবৈধ নয়৷ প্রাপ্তবয়স্ক নারী, যাঁদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি, তাঁরা স্বেচ্ছায় ঘোষণা দিয়ে এই পেশা বেছে নিতে পারেন৷ তবে রাষ্ট্র গণিকাবৃত্তি বন্ধে ব্যবস্থা নেবে৷ এখানে জোর করে কাউকে এই পেশায় নিয়োজিত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ তাছাড়া ১৮ বছরের নীচে কোনো নারী এই পেশা বেছে নিতে পারবেন না৷ তবে এই পেশা স্বেচ্ছায় বেছে নিতেও পুলিশকে ঘুস দিতে হয়৷ ২০ হাজার টাকার কমে অনুমতি মেলে না৷

বাংলাদেশে ১০টি যৌনপল্লিতে এবং ভাসমান মিলিয়ে মোট রেজিস্টার্ড যৌনকর্মীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ হবে বলে ধারণা করা হয়৷ ‘সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক'-এর আরিফুর রহমান সবুজ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমাদের হিসেবে সারা দেশে ২৫ হাজার ভাসমান এবং যৌনপল্লিগুলোতে ৭০ হাজার বৈধ যৌনকর্মী আছেন৷''

তবে জয়া শিকদার মনে করেন, ‘‘বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে এই সংখ্যা পাঁচ লাখের কম হবে না৷''

বাংলাদেশের যৌনপল্লিগুলোতে বেসরকারি উদ্যোগে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়৷ সরকারি উদ্যোগ তেমন চোখে পড়ে না৷ গত তিন মাস ধরে তহবিলের অভাবে অধিকাংশ এনজিও-র তৎপরতাও বন্ধ আছে বলে জানান মাহমুদা শেলি৷ তিনি আরো জানান, এনজিওগুলোর নানা ধরনের ক্লিনিক থাকলেও স্বাস্থ্য সমস্যাই যৌনকর্মীদের প্রধান সমস্য৷

হাসি জানান, ‘‘যৌনপল্লির স্কুলের পর আরো শিক্ষার জন্য আমাদের সন্তানদের তেমন কোনো সুযোগ নেই৷ বাইরের স্কুলে ভর্তি নিতে চায় না৷ কেউ কেউ পরিচয় গোপন করে সন্তানদের বাইরের স্কুলে ভর্তি করান৷''

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী রাজবাড়ি জেলার দৌলতদিয়ায় এখন রেজিস্টার্ড যৌনকর্মীর সংখ্যা ১,৫০০ জন৷ তাদের চিকিৎসাসুবিধা দিতে তৎপর ‘পিয়াকট' নামের একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার শেখ রাজিব ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘যৌনকর্মীদের একটি অংশ সিফিলিস এবং গনোরিয়ার মতো যৌনরোগে আক্রান্ত হন৷ তবে এখানে এইডস বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড এখনো নাই, কারণ, এটা পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি৷''

ওসি আবুল কালাম আজাদ

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান, ‘‘দৌলতদিয়া এলকার যৌনপল্লির আশেপাশে প্রায় ৭০টির মতো ওষুধের দোকান-কাম-চিকিৎসা কেন্দ্র আছে৷ সেখান থেকেও তাঁরা চিকিৎসা নেন৷ তবে এখান থেকে তাঁরা যে ওষুধ নেন তাতে রোগ আরো বাড়ে৷''

এই যৌনপল্লিকে ঘিরে জোর করে যৌনকর্মী বানানোর একটি চক্র সক্রিয় আছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান গোয়ালন্দ থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ৷ তিনি জানান, ‘‘গত এক বছরে আমরা কম করে হলেও ২০ জন নারীকে উদ্ধার করেছি, যাঁদের জোর করে এখানে আনা হয়েছিল৷ দেশের নানা এলাকা থেকে দালালরা তাঁদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এনে এখানে বিক্রি করে দিয়েছিল৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘ফাঁদে ফেলে এখানে প্রতিজন নারীকে ৪০-৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়৷ তবে আমরা খবর পেলেই তাঁদের উদ্ধার করি৷ এনজিওগুলোও আমাদের তথ্য দেয়৷ এছাড়া আমরা অন্য সোর্সের মাধ্যমে নজরদারি করি৷''

সেক্সওয়ার্কার নেটওয়ার্কের আরিফুর রহমান সবুজ জানান, ‘‘বাংলাদেশের আরো কয়েকটি যৌনপল্লি এখন হুমকির মুখে রয়েছে৷ মঙলার বানিশান্তা এর মধ্যে অন্যতম৷ সেখানে নানা কারণে যৌনকর্মীরা বিপদে রয়েছেন৷ বন্দর জমজমাট না থাকায় যৌনকর্মীদের উপার্জন নেই৷’’ তিনি আরো জানান, ‘‘প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী এখন যৌনকর্মীদের নানাভবে হুমকি দিচ্ছে৷ পুলিশ ও মাস্তানরাও তাঁদের যা আয় তার একটি অংশ কেড়ে নিচ্ছে৷''

আরিফুর রহমান সবুজ

This browser does not support the audio element.

মাহমুদা শেলি এবং জয়া শিকদার জানান, যৌনকর্মীরা সারা দেশেই প্রভাবশালীদের হাতে উচ্ছেদের শিকার হন৷ উচ্ছেদের সময় ধর্মকেও ব্যবহার করা হয়৷ তবে উচ্ছেদের মূল কারণ যৌনকর্মীদের সহায়-সম্পদ দখল করা৷ কিন্তু এই উচ্ছেদের মাধমে তাঁরা ছড়িয়ে পড়েন, পরিণত হন ভাসমান যৌনকর্মীতে৷

বন্ধু, এ বিষয়ে আপনি কিছু বলতে বা জানাতে চান? তাহলে লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ