চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ক্ষমতায় থাকার দশ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। কেমন ছিল এই দশ বছর?
বিজ্ঞাপন
শি জিনপিং যখন চীনের প্রেসিডেন্ট হলেন, তখন প্রত্যাশা ছিল, তিনি সংস্কারের পথে চলবেন। কিন্তু ক্ষমতা পাওয়ার পরই তিনি সমাজের উপর নিয়ন্ত্রণ আরো আঁটসাঁট করার চেষ্টা করেন। শুরু করেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধরপাকড়। আন্তর্জাতিক নেতা ও বিশ্লেষকরা বুঝে যান, শি জিনপিং অন্য ধাতের মানুষ।
ক্ষমতায় আসার পরই শি দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান চালান। সেখানে মূলত তিনি তার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকে টার্গেট করেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির(সিসিপি) উপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।
তাইওয়ানের ন্যাশনাল চেঙ্গেজি ইউনিভার্সিটির চীন নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সিন-সিয়েন ওয়াং বলেছেন, ''প্রথম থেকেই রাজনৈতিক বিরোধীদের সরিয়ে দিতে বাছাই করা মানুষের উপর দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালিয়েছেন।''
শি জিনপিং ও তাঁর রাজনীতি
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। ছবিঘরে দেখুন তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার৷
ছবি: Reuters/Jason Lee
দেরিতে শুরু
কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা শি ঝংজুন ছিলেন তাঁর পিতা৷ পিতার কীর্তি তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়তে শুরুর দিকে বাধা তৈরি করে৷ ১৯৬২-তে দল থেকে বহিষ্কৃত হন ঝংজুন৷ কয়েক বছর পর চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় নিপীড়িত হন, এমনকি জেলেও যেতে হয় তাঁকে৷ সেই পিতার ছেলের আবেদন বারবার প্রত্যাখ্যান করে অবশেষে ১৯৭৪-এ সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে কমিউনিস্ট পার্টি৷ সেই থেকে শুরু শি জিনপিংয়ের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media/Pictures From History
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন
রসায়ন প্রকৌশলের ছাত্র শি আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে৷ কঠিন পরিশ্রম করেন৷ আট বছর পর দলের পক্ষে প্রথম বড় পদটি পান৷ ১৯৮২ সালে নির্বাচিত হন দলের হের্বেই রাজ্যের সম্পাদক৷ এরপর একে একে বেশ কয়েকটি প্রদেশের গভর্নর নির্বাচিত হন৷ এমনকি চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য ও ব্যবসাকেন্দ্র সাংহাই রাজ্যদলের প্রধানের পদটিও ঝুলিতে পুরে নেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/CPA
রাষ্ট্রপ্রধান শি
শি’র ক্যারিয়ারে ২০১২ সালের ১৫ নভেম্বর খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন৷ যে দল তাঁর পিতাকে বহিষ্কার করেছে সেই কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি৷ এমন কি কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকে সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত করে, যার অর্থ হলো, অলিখিতভাবে তিনি হয়ে ওঠেন চীনের নেতা৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও-এর দু’বারের মেয়াদ শেষ হবার পর চীনের জাতীয় কংগ্রেস তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে৷
ছবি: GOH CHAI HIN/AFP/Getty Images
দ্য চাইনিজ ড্রিম
নির্বাচনের পর শি-এর রাজনৈতিক শ্লোগান হয় ‘চাইনিজ ড্রিম’৷ অনেকে একে আমেরিকান ড্রিমের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললেও আসলে এর অর্থ চীনের নবউত্থান৷ শি একে ‘চীনা জাতির মহাউত্থান’ হিসেবেই উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, চীনকে পৃথিবীতে এর ‘প্রাপ্য জায়গা’ নিশ্চিত করতে হবে৷ তাঁর মতে, সেই জায়গা করতে গিয়ে ‘শত্রুর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে’ যেতেও পিছপা হবে না চীন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Wong
ঐতিহাসিক বৈঠক
১৯৪৯ সালের চীনের গৃহযুদ্ধের পর শি’ই প্রথম কোনো চীনা নেতা যিনি তাইওয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট মা ইয়িং-জু’য়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি৷ তার মানে এই নয় যে তিনি ছাড় দিতে রাজি আছেন৷ ২০১৮ সালের মার্চে তিনি তাইওয়ানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যদি আলাদা হবার চিন্তা আসে মাথায়, তাহলে ‘ইতিহাসের শাস্তি’ জুটবে তাদের কপালে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/W. Maye-E
মূল নেতা
২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শি কমিউনিস্ট পার্টির মূল নেতার স্বীকৃতি পান৷ এ স্বীকৃতি এর আগে কেবল আধুনিক চীনের স্থপতি, দলের সাবেক চেয়ারম্যান মাও সেতুং এবং আরেক সাবেক চেয়ারম্যান দেং জিয়াওপিং ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন পেয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/Feng Li
সামরিক প্রভাব
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চীনের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীকে কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (যেটি মূলত সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে) নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয়৷ এতে করে ৬ লাখ ৬০ হাজার শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ক্ষমতায় অনির্দিষ্টকাল
একনায়কতন্ত্রের খড়গ হতে দেশকে বাঁচাতে ১৯৮২ সালে জিয়াওপিং নিয়ম করেন যে, একজন দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না৷ ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ, চীনের সংসদ শি’কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে এবং ভোটের মাধ্যমে সংশোধনী প্রস্তাব পাশ করে যে, একজন প্রেসিডেন্টের দু’বার নয়, বরং অনির্দিষ্টবারের জন্য নির্বাচিত হতে পারবেন৷ তাই শি-এর সামনে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রেসিডেন্ট থাকার পথ খোলা৷
ছবি: Reuters/Jason Lee
8 ছবি1 | 8
শি জিনপিংয়ের চিন্তাভাবনা
ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করার পাশাপাশি শি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। তার নাম দেয়া হয় 'শি জিনপিংয়ের চিন্তাভাবনা'। সেটাই দলের কাছে নীতিনির্ধারক হয়। ওয়াং জানিয়েছেন, ''শি বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচিও নিয়েছিলেন। কিন্তু মতাদর্শের প্রশ্নে তিনি তার চিন্তাভাবনা অনুসারে বেশ কিছু আইন পাস করেন।''
শি জিনপিং থট বা চিন্তাভাবনায় তিনটি ক্ষেত্রে ক্ষমতা আরো কুক্ষিগত করার কথা রয়েছে। সেগুলি হলো, দেশ, দল ও শি-র নিজের জন্য।
দলে নিজের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার পর শি সেখানে কিছু সংস্কার চালু করেন। তিনি দেঙ-এর থেকে ভিন্নপথ নিয়ে সকলের জন্য সমৃদ্ধি বা কমন প্রসপারিটির কথা বলেন। ওয়েং বলেছেন, ''দেঙ-এর থেকে সরে এসে তিনি শি জিনপিংয়ের লিগ্যাসি শুরু করেন।''
অ্যামেরিকা-ভিত্তিক চীনা বিশেষজ্ঞ তেং বিয়াও বলেছেন, ''চীনা কমিউনিস্ট পার্টির যৌথ নেতৃত্ব থেকে পুরো নেতৃত্ব শি-কেন্দ্রিক হয়ে যাওয়াটা বিশাল পরিবর্তন। শি যখন ক্ষমতায় এলেন, তখন চীনের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন শুরু হলো।'' ১৯৪৯ সাল থেকে কমিউনিস্ট পার্টিই চীন শাসন করছে।
শি জিনপিংয়ের মিয়ানমার সফর এবং আঞ্চলিক রাজনীতি
চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবারের মত মিয়ানমার সফরে গেছেন শি জিনপিং৷ আঞ্চলিক মিত্র হলেও গত প্রায় দুই দশকে চীনের কোনো প্রেসিডেন্ট মিয়ানমার যাননি৷ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে জিনপিংয়ের এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Shine Oo
৭০ বছরের বন্ধন
দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে দুই প্রতিবেশী চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে মিত্রতা সম্পর্ক৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব সময় মিয়ানমারের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন৷ দীর্ঘ এ সময়ে মিয়ানমারে ক্ষমতার পালাবদল হলেও মিত্রতার সম্পর্কে তার প্রভাব পড়েনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Shine Oo
উৎসবের সাজে রাজধানী
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয় বছর আগে মিয়ানমার সফর করলেও প্রেসিডেন্ট শির এটাই প্রথম৷ শির আগমন উপলক্ষে তাই রাজধানী নাই পি তাও উৎসবের সাজে সেজেছে৷
ছবি: Reuters/A. Wang
আনন্দ নেই কাচিন রাজ্যে
শির আগমন চীন সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের উত্তরের রাজ্য কাচিনের কয়েক হাজার গ্রামবাসীকে দুঃসহ কষ্টের কথা মনে করে দিয়েছে৷ বেইজিংয়ের টাকায় একটি হাইড্রোপাওয়ার বাঁধ নির্মাণ করতে ওই এলাকার মানুষদের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হতে হয়৷ বিক্ষোভের কারণে ২০১১ সালে বাঁধের কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও গ্রামবাসীদের ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না৷
ছবি: Reuters/A. Wang
শি’র ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’
শির এই মেগা প্রকল্পে চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে মিয়ানমারে সরাসরি যোগাযোগের জন্য রেলপথ তৈরি হবে৷ রেলপথ দিয়ে চীনের পণ্য দ্রুত রাখাইন বন্দরে পৌঁছাবে৷রেলপথ তৈরির জন্য কাচিনের মাইইজোং বাঁধের নির্মাণ কাজ আবার শুরু হওয়া জরুরি৷ শির এবারের সফরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Wu Yue
রাখাইনে সমুদ্র বন্দর
শির এবারের সফরে রাখাইনে চীনের সমুদ্র বন্দর তৈরি নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হতে পারে৷ যদিও রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাখাইন রাজ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে৷
ছবি: picture ´-alliance/AP Photo/A. Shine Oo
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাল চীন
সন্ত্রাস দমনের নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে যে নিপীড়ন চালিয়েছে জাতিসংঘ তাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলেছে৷ কিন্তু চীনের কারণে জাতিসংঘ দেশটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না৷ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ায় শুধু চীনের আপত্তিতে সব প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Shine
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস
সেনা নিপীড়ন থেকে বাঁচতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে রাজি করানোর চেষ্টার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চীন৷ কিন্তু কার্যত তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: Reuters/A. Wang
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা
রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে আইসিজে গাম্বিয়ার করা যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফেঁসে যেতে পারে মিয়ানমার৷ শির সফরে এই মামলা স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে৷
ছবি: DW/A. Islam
হাজার হাজার ডলার বিনিয়োগ
শি যে দেশেই সফরে যান ওই দেশে হাজার হাজার ডলার বিনিয়োগের চুক্তি করেন৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়৷ তার উপর আঞ্চলিক প্রভাব বড়াতে কৌশলগত দিক দিয়ে মিয়ানমারের ভৌগলিক অবস্থান তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ রাখাইনে বন্দর নির্মাণ করতে পারলে বাণিজ্য ছড়াও এই অঞ্চলে তাদের সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করার সুযোগ বাড়বে৷
ছবি: Reuters/R. Dela Pena
ভারত মহাসাগরে চীনের পদার্পণ
চীন মিয়ানমারের সঙ্গে যে ‘ওয়াই’ আকৃতির ইকোনোমিক করিডোর তৈরি করতে চাইছে তাতে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে দেশটি সংযুক্ত হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP
ভারতের দুশ্চিন্তা
তিন বছর আগে রাখাইনের রাজধানী সিটওয়েতে কালাদান নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বন্দর নির্মাণ করেছে ভারত৷ এখন মাত্র ১০৫ কিলোমিটার দূরে কিউকপুতে চীনের বন্দর সিতওয়ে বন্দরকে গুরুত্বহীন করে দিতে পারে৷ এই বন্দর হয়ে বঙ্গোপসাগরে চীনের নজরদারিও শুরু হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Reuters/A. Wang
11 ছবি1 | 11
শি-র ক্ষমতায় থাকা আরো মসৃণ করার জন্য কমিউনিস্ট পার্টি প্রেসিডেন্ট পদে থাকার সময়সীমাও বাড়িয়ে দিয়েছে। দলের ২০তম পার্টি কংগ্রেসে ঠিক হয়, যতবার খুশি একজন প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন। তারপরই শি জিনপিং তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তেং বলেছেন, অনেক পশ্চিমা দেশ মনে করত, চীন ধীরে হলেও গণতন্ত্রের পথে যাবে। কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি।
সমাজের উপর নিয়ন্ত্রণ
শি সুশীল সমাজের উপরেও নিজের নিয়ন্ত্রণ জোরালো করেছেন এবং গত ১০ বছরে ব্যাপক ধরপাকড় করেছেন। তিনি কয়েকশ মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছেন। অনেকে জেলে বন্দি। অনেকে আর মানবাধিকারের বিষয় নিয়ে লড়াইয়ের জায়গায় নেই।
তেং বলেছেন, সিভিল সোসাইটির জন্য খুবই কম পরিসর রয়েছে। শি ক্ষমতার আসার পর মানবাধিকার আইনজীবী, ফ্যামিলি চার্চ, নারীদের আন্দোলন, এনজিও-র উপর প্রবল কড়াকড়ি ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাদের কাজ করার জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে।
শতবর্ষে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি
১৯২১ থেকে ২০২১, শতবর্ষে পৌঁছে কীভাবে ভাবছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, দেখুন এই ছবিঘরে...
ছবি: Thomas Peter/Reuters
যেভাবে উদযাপন করবে চীন
বৃহস্পতিবার শতবর্ষে পা রাখলো চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিসিপি৷ এই উপলক্ষে সাজ সাজ রব গোটা চীনজুড়ে৷ দলের নেতৃত্বের সাফল্যের কাহিনী আঁকা নানা ফেস্টুন=ব্যানারে ছেয়ে গেছে গোটা দেশ৷ সোমবার থেকে বেইজিঙের জাতীয় স্টেডিয়ামে চলছে নানা ধরনের অনুষ্ঠান৷
ছবি: Noel Celis/AFP/Getty Images
দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল
ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির পরেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল চীনের সিসিপি৷ ২০১৯ সালে এই দলের সদস্য সংখ্যা ছিল নয় কোটি ১৯ লাখ৷ ১৯৪৯ সালে গৃহযুদ্ধের পর থেকেই দেশটির শাসনে রয়েছে এই দল৷
ছবি: Ng Han Guan/AP/picture alliance
সিসিপির হাতে চীন
সিসিপির আমলে চীন প্রত্যক্ষ করেছে বহু যুদ্ধ, অনাহার ও সামাজিক বদল৷ গত ২০ বছরে লাখ লাখ চীনা নাগরিক দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছেন৷ আর্থসামাজিক ভাঙাগড়া চীনকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি করে তুলেছে৷
ছবি: Aly Song/REUTERS
সমালোচনা
সাফল্যের স্বীকৃতি এলেও বিশ্বজুড়ে বারবার সমালোচিত হয়েছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি নেতৃত্বের নানা সিদ্ধান্ত৷ সাম্প্রতিক সময়ে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই প্রবণতা৷
ছবি: Aly Song/REUTERS
সিসিপির সমালোচিত কিছু ইস্যু
হংকঙে গণতন্ত্রপন্থিদের প্রতি সিসিপির মনোভাব, উইগুর মুসলিমদের প্রতি রাষ্ট্রের আচরণ, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা নজরদারী - সব ক্ষেত্রেই সিসিপির ভূমিকা বিশ্বে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে৷ কিন্তু তা আদৌ আমল পায়নি পার্টির অন্দরমহলে৷
ছবি: Thomas Peter/Reuters
ইতিহাসের পুনর্গঠন
ফেব্রুয়ারিতে জিনপিং ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ দ্য কমিউনিস্ট পার্টি অফ চাইনা’ প্রকাশ করেন যা ৫০০ পাতা দীর্ঘ পার্টির ইতিহাসের দলিল৷ বিশেষজ্ঞদের মত, এই দলিল আসলে সরকারের দুর্বলতা লুকিয়ে সাফল্যের দিকে জোর দেয়৷ তিয়েনআনমেন স্কয়ার বা অনাহারের মতো সময়ের উল্লেখ সেখানে খুবই কম, বরং শি জিনপিঙের দৃঢ় নেতৃত্বের কথাই বেশি৷
ছবি: Thomas Peter/Reuters
বিশ্বে চীনকে উপস্থাপন যেভাবে
বিশেষজ্ঞদের মতে, শি জিনপিঙের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে চীনকে এমনভাবে উপস্থাপন করা, যাতে করে বিশ্বে দেশটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে বিবেচিত হয়৷ এমন শক্তি, যাকে কোনো অর্থনৈতিক ধাক্কা বা অতিমারি, কোনো কিছুই নোয়াতে পারে না৷ বিশেষ করে, পশ্চিমা দেশগুলির চীন সম্পর্কিত ধারণাকে উড়িয়ে দিয়ে নিজের বিকল্প ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে সিসিপির শতবর্ষকে ব্যবহার করছে সরকার, বলছেন তারা৷
ছবি: Thomas Peter/Reuters
7 ছবি1 | 7
এছাড়া চীন শিনজিয়াংয়ে প্রচুর সংখ্যক উইগুর মুসলিম ও অন্য জনজাতিকে শিবিরে রেখেছে। পশ্চিমা দেশগুলি বারবার এর নিন্দা করেও কিছু করতে পারেনি।
শি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছেন। তিনি বিপুল অর্থব্যয়ে সড়ক নির্মাণ প্রকল্প নিয়েছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বিস্তার করেছেন, জাতিসংঘের উপরও প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছেন। তার কূটনীতি হলো রীতিমতো আক্রমণাত্মক। এই কূটনীতির নামই হয়েছে 'উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি'।