মিয়ানমারের পুনর্জাগরণের নেতা তিনি৷ সেনাবাহিনী যখন তাঁকে গৃহবন্দি করে, তাঁর মুক্তির দাবিতে জেল খাটেন অনেকে, করেন মৃত্যুবরণও৷ কিন্তু সু চির ঘনিষ্ঠরাই এখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাঁর অবস্থানে অবাক৷ ফিঁকে হয়ে এসেছে তাঁদের স্বপ্নও৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/W. Maye-E
বিজ্ঞাপন
সু চির এই বিস্ময়কর পরিবর্তনের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে বার্মা থা দিন নেটওয়ার্ক নামে মিয়ানমারের একটি ব্যাঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন৷ তারা বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ভাড়া করা রুশ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়াররা অং সান সু চির শরীর থেকে গণতন্ত্রের জিন সরিয়ে একটা ক্লোন তৈরি করেছে৷ সত্যিকারের সু চি এখনও সেনাবাহিনীর কারাগারে বন্দি বলেও উল্লেখ করেছে থা দিন নেটওয়ার্ক৷
স্পষ্টতই এটা একটা বানানো গল্প৷ কিন্তু মিয়ানমারের অসাম্প্রদায়িক জনগণের বিস্ময়ের সত্যিকার মাত্রা প্রকাশ পেয়েছে এই ব্যাঙ্গাত্মক গল্পে৷ কয়েক বছর আগেও যে সু চি ধর্ম, সম্প্রদায়ের উর্ধ্বে উঠে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলতেন, সেই সু চি কীভাবে এতটা বদলে গেলেন?
সহিংসতার শিকার মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা
02:13
This browser does not support the video element.
সু চি যখন কয়েক দশকের সেনা শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন, এক মেডিকেল ছাত্রী সব বাধা উপেক্ষা করে তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়েছিল৷ সু চির প্রতি আনুগত্যের কারণে তাঁকে ছ'বছর কারাগারে কাটাতে হয়৷ অসুস্থ হয়ে একবার বন্দি অবস্থাতেই মরতে বসেছিলেন তিনি৷ সেই ছাত্রী মা থিডাও এখন সুচির কর্মকাণ্ডে অবাক৷ মা থিডার মতো যারা সু চির প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন, এখন তাঁদের অনেকেই নিন্দা জানানোর ভাষাও খুঁজে পান না৷
সু চির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের কিছু হলো – নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং মুসলিমদের প্রতি রাষ্টীয় সহিংসতাকে উপেক্ষা করা, সাংবাদিক এবং অ্যাকটিভিস্টদের কারাগারে পাঠানো, এখনও যথেষ্ট ক্ষমতাধর সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি নত হওয়া এবং পরবর্তী নেতা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যর্থ হওয়া৷
সু চির বয়স এখন ৭২৷ অনেকেই বলছেন, যখন সু চি থাকবেন না, তখন নেতৃত্বে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে৷ আর সে শূন্যতা পূরণে আবার সেনাবাহিনীর হাতেই ক্ষমতা যাবে বলেও তাদের আশংকা৷ সু চি সবসময় গণতন্ত্রের কথা বলে আসলেও, তার মধ্যে সবসময়ই স্বৈরাচারী মনোভাব ছিল বলেও মনে করছেন অনেকে৷ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা শুধু সেই মনোভাবকে উসকে দিয়েছে৷
‘‘মাত্র দেড় বছরে পুরো দেশ পরিবর্তন করে ফেলবেন তিনি, তা আমরা আশাও করি না৷ কিন্তু মানবাধিকার রক্ষায় তাঁর অন্তত শক্ত ভূমিকা দরকার ছিল'', বলেন এককালে সু চির ঘনিষ্ঠ সহচর মা থিডা৷ একসময় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চিকে দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ভারতের মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তুলনা করা হতো৷
অং সান সু চির কিছু তথ্য
ছবিঘরে তাই তাঁর ঘটনাবহুল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শৈশবেই বাবার মৃত্যু
১৯৪৫ সালের ১৯ জুন তখনকার ব্রিটিশ উপনিবেশের অংশ বার্মার রেঙ্গুনে জন্ম অং সান সু চি-র৷ বাবা জেনারেল অং সান-কে যখন হত্যা করা হয় সু চি-র বয়স তখন মাত্র ৩ বছর৷ ওপরের ছবিটি তোলা হয়েছিল জেনারেল অং সান-এর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে৷
ছবি: gemeinfrei
রাজনীতিতে পদার্পণ
সু চি-র শৈশব কেটেছে ভারতে৷ উচ্চ শিক্ষার্থে ইংল্যান্ডে যাওয়ার পর সেখানে মাইকেল অ্যারিসের সঙ্গে পরিচয় হয়৷ পরবর্তীতে অ্যারিসকেই বিয়ে করেছিলেন সু চি৷ দুটি ছেলে আছে এই দম্পতির৷ ১৯৮৮ সালে নিজের দেশ মিয়ানমারে ফেরেন সু চি৷ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণাও দেন প্রথম জনসভাতেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
নির্বাচিত হয়েও বঞ্চিত
১৯৯০ সালে নির্বাচন হয়৷ নির্বাচনে শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পায় সু চি-র দল এনএলডি৷ কিন্তু তখনকার সামরিক শাসক নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে ক্ষমতায় পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক দাবিকে পাত্তাই দেয়নি৷
ছবি: picture alliance/AP Images/M. Sato
গৃহবন্দি
নির্বাচনের কিছুদিন আগেই সু চি-কে গৃহবন্দি করা হয়৷ ২০১০ সালে পুরোপুরি মুক্তি প্রাপ্তির আগে বার কয়েক বাইরে আসার সুযোপ পেয়েছিলেন ‘মিয়ানমারের গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ হিসেবে পরিচিত এই রাজনীতিবিদ৷
ছবি: picture-alliance/epa/N. Chan Naing
নোবেল পেলেন সু চি
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অহিংস আন্দোলন করায় ১৯৯১ সালে সু চি-কে শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর স্বীকৃতি দেয় নোবেল কমিটি৷ গৃহবন্দি ছিলেন বলে সু চি নিজে যেতে পারেননি৷ তাঁর পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন তাঁর ব্রিটেনে নির্বাসিত পুত্র কিম৷
ছবি: AP
মুক্তির দাবি
সু চি-কে মুক্তি দেয়ার দাবি উঠছিল বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ কিন্তু তখনকার সামরিক বাহিনী তাতে কর্ণপাত করেনি৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
অবশেষে মুক্তি
অবশেষে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর মুক্তি পান অং সান সু চি৷
ছবি: picture alliance/epa/N. C. Naing
সংসদ সদস্য সু চি
২০১২ সালে আবার নির্বাচন হয় মিয়ানমারে৷ ১৯৯০ সালে সু চি-কে গৃহবন্দি করার পর থেকে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি সু চি-র দল এনএলডি৷ ২২ বছর পর আবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে ঠিকই নির্বাচিত হন সু চি৷ সেই সুবাদে এখন তিনি বিরোধী দলের নেত্রী৷
ছবি: AP
২০ বছর পর
২০১২ সালে মুক্ত সু চি-র হাতেই তাঁর পুরস্কারটা তুলে দেয় নোবেল কমিটি৷ সু চি জানান, এই পুরস্কার তাঁকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অনেক প্রেরণা জুগিয়েছে৷
ছবি: Reuters
জার্মানিতে সু চি
২০১৪ সালে সু চি জার্মানির রাজধানী বার্লিনেও এসেছিলেন৷ তখন মানবাধিকার রক্ষা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে দীর্ঘদিন লড়াই করার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁর হাতে ভিলি ব্রান্ড পুরস্কার তুলে দেন জার্মান প্রেসিডেন্ট গাউক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে সমালোচিত
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন সত্ত্বেও এর প্রতিবাদ করেননি অং সান সু চি৷ অনেক রোহিঙ্গা দেশছাড়া হয়ে সাগরে ডুবে মরলেও সু চি নীরব ভূমিকাই পালন করছেন৷ শান্তিতে নোবেল জয়ী হয়েও একটি সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের বিষয়ে তাঁর নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করেছেন অনেকেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
২৫ আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মি নামের একটি সংগঠন ৩০টি পুলিশ চেকপোস্টে হামলার পর থেকে রাখাইন রাজ্যে শুরু হয়েছে নতুন করে সহিংসতা৷ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে৷ সু চি এ জন্য দায়ী করেছেন ‘জঙ্গিদের'৷ বলেছেন, ‘‘রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও ঐক্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা রুখে দিতে এই হামলা৷''
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নির্যাতন, রাষ্ট্রীয়ভাবে রোহিঙ্গাদের অধিকার কেড়ে নেয়ার অভিযোগ বিষয়ে সু চির কোনো বক্তব্য আজ পর্যন্ত স্থানীয়, জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসেনি৷ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সরাসরি এ প্রশ্নের মুখোমুখি হলেও উত্তরটা এড়িয়ে গেছেন সু চি৷
উলটো, রাখাইনের অবস্থা পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘ একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন পাঠাতে চাইলেও তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সু চির সরকার৷ উড়িয়ে দেয়া হয়েছে ‘মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং জাতিগত নির্মূল অভিযান চলছে', জাতিসংঘের এমন বক্তব্যও উড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷
ফেব্রুয়ারির এই প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, শিশুদের আগুনে নিক্ষেপ, মুসলিম নারীদের গণধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়৷ এর সবকিছুর জন্যই মিয়ানমার সরকার দায়ী করে আসছে ‘মুসলিম জঙ্গিদের'৷ গণধর্ষণের অভিযোগ সম্পর্কে সু চির অফিশিয়াল ফেসবুক থেকে দেয়া হয় একটি ম্যাসেজ – ‘ফেক রেপ' বা ‘ভুয়া ধর্ষণ'৷
‘‘আমাদের অবশ্য দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই৷ জনগণকে তাঁর দল এবং সরকারকেই সমর্থন করতে হবে৷ কিন্তু সমস্যার শেকড় এতটাই গভীরে যে, আমাদের উচিত প্রত্যাশার মাত্রাটা কমিয়ে দেয়া'', বলেন থান্ট থাও কাউং৷ থান্ট মিয়ানমার বুক এইড অ্যান্ড প্রিজারভেশন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক৷
ভুলে যাওয়া শরণার্থীরা: বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা
গত অক্টোবরে মিয়ানমারে দমনপীড়ন শুরুর পর ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন৷ মুসলিমপ্রধান দেশটিতে বর্তমানে পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করছেন৷ কুতুপালংয়ের মতো জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে তাদের অনেকের বাস৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
মিয়ানমার থেকে পালানো
মিয়ানমারে গত অক্টোবরে নয় পুলিশ হত্যার অভিযোগ ওঠে এক রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে৷ তারপর থেকে সেদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর আবারো দমনপীড়ন শুরু হয়৷ ফলে সত্তর হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ তারা যেসব ক্যাম্পে বসবাস করেন সেগুলোর একটি এই কুতুপালং৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
স্বনির্ভরতা দরকার
কুতুপালং ক্যাম্পের শরণার্থীরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপদ আছে বটে, তবে জীবন সেখানে মোটেই সহজ নয়৷ সেখানে সত্যিকারের কোনো অবকাঠামো নেই, সবই শরণার্থীদের গড়া অস্থায়ী আবাস৷ তারা নিজেদের দেশ ছেড়ে এসেছেন, কেননা, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং অসংখ্য মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ করেছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
শিশুদের খেলা নয়
আশ্রয়শিবিরটির অধিকাংশ এলাকায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই৷ কয়েক হাজার শরণার্থী শিশুর খেলোধুলারও কোন ব্যবস্থা নেই৷ ক্যাম্পের লেক থেকে মাটি সংগ্রহ করছে এই শিশুটি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
কুঁড়েঘরে বসবাস
কাদা মাটি এবং সহজলভ্য অন্যান্য উপাদান দিয়ে ঘর তৈরি করে বাস করেন শরণার্থীরা, যাতে মাথার উপরে অন্তত ছাদ থাকে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস
সেই ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সেদেশে রোহিঙ্গারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷ তাদেরকে নাগরিকত্ব এবং ভোট দেয়ার অধিকার দিচ্ছে না সরকার৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
বাংলাদেশেও বৈষম্যের শিকার?
বাংলাদেশেও বৈষম্যে শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা৷ ক্যাম্পে আর জায়গা নেই- বলে বাংলাদেশে জলপথে আশ্রয় নিতে আসা অসংখ্য রোহিঙ্গাকে তাদের নৌকাসহ ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে সীমান্তরক্ষীরা৷ পাশাপাশি কক্সবাজার ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের একটি দুর্গম দ্বীপে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার৷ স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দ্বীপটি বর্ষাকালে অধিকাংশ সময় পানির নীচে তলিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
নির্জন দ্বীপে সরিয়ে নেয়া
ঠ্যাঙ্গার চর বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর মোহনায় কয়েকবছর আগে জেগে ওঠা এক দ্বীপ৷ শুধুমাত্র নৌকায় করে সেখানে যাওয়া যায় এবং চরটিতে অতীতে একাধিকবার জলদস্যু হানা দিয়েছে৷ এক উন্নয়নকর্মী সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে দ্বীপটিতে কর্মসংস্থানেরও তেমন কোনো সুযোগ নেই৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী স্বীকার করেছেন যে, ঠ্যাঙ্গার চরকে বসবাসের উপযোগী করতে আরো অনেক কাজ করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘দ্বীপটিতে উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার পর রোহিঙ্গাদের সেখানে সরিয়ে নেয়া হবে৷’’ তবে সরকার অতীতে এরকম প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি৷ কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের তেমন কোন উন্নয়ন সাধন করা হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
ইতিহাস থেকে মোছার চেষ্টা
নিরাপদ আবাসভূমি না থাকায় রোহিঙ্গাদে ভবিষ্যত ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে৷ অন্যদিকে, মিয়ানমার তাদের অতীত মুছে ফেলতে কাজ করছে৷ দেশটির সংস্কৃতি এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতিহাস বিষয়ক পাঠ্যবই প্রকাশের পরিকল্পনা করেছে যেখানে রোহিঙ্গাদের কথা একেবারেই উল্লেখ থাকবে না৷ গত ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়টি দাবি করেছে, মিয়ানমারের ইতিহাসে কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে কখনো রোহিঙ্গা নামে আখ্যায়িত করা হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
9 ছবি1 | 9
কী হয়েছে সু চির!
বছরের পর বছর ধরে সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করে গেছেন সু চি৷ ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দি ছিলেন, দেখা করতে পারেননি তাঁর ব্রিটিশ স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গেও৷ এই অনমনীয় মনোভাব তাঁকে এনে দেয় বিশ্বজুড়ে খ্যাতি৷
২০১৫ সালের নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয় পায় তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি৷ সু চিকে সেনাশাসন থেকে মুক্তির প্রতীক হিসেবেই দেখতো সাধারণ জনগণ৷ কিন্তু ২০১৬ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে ‘নির্লিপ্ত' এবং ‘তথ্য নিয়ন্ত্রণের' অভিযোগ আসছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ তবে এর কারণ বুঝতে পারছেন না বিশ্লেষকরাও৷ সু চির বাবা জেনারেল অং সানকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মিয়ানমারের স্বাধীনতার লড়াইয়ে একজন নায়ক হিসেবেই দেখা হয়৷ সেদিকে ইঙ্গিত করে কেউ কেউ বলছেন, সেনাবাহিনীর সাথেই সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে সু চি৷
আবার কেউ ধারণা করছেন, কষ্টে পাওয়া এই ক্ষমতা হারানোর ভয়ই তাঁকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধা দিচ্ছে৷ তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ তাম্পাডিপা ইনস্টিটিউটের প্রধান খিন সাও উইন৷ সেনা শাসনের বিরোধীতা করে ১১ বছর জেল খেটেছেন খিন সাও৷
তিনি মনে করেন, ‘‘এগুলো অযৌক্তিক কথাবার্তা৷ সু চি এখন আর সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি না৷'' তিনি মনে করেন, মূল কারণ হলো সু চির নৈতিক সাহসের অভাব৷
এডিকে/ডিজি (এপি)
আপনার কী মনে হয় বন্ধুরা? গণতন্ত্রের প্রতীক সু চির কি সত্যিই নৈতিক সাহসের অভাব রয়েছে? জানান নীচের ঘরে৷